শহরের হট্ররোল থেকে দূরে, বহুদূরে জ্যোৎস্নাস্নাত এক
জনহীন অনন্য আশ্রমে মাঝে মাঝে
গানের স্বর্গীয় সুর ধ্বনি প্রতিধ্বনি
হয়ে যেন অমরাবতীকে স্পর্শ করে বার বার।

যখন আবার নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়
আশ্রমের অপরূপ অপরূপ অস্তিত্বে, জ্যোৎস্নায় একজন
দীর্ঘকায় দেবতুল্য পুরুষ করেন পায়চারি ঘাসময়
উঠোনের বুকে, তার শ্বেত শ্মশ্রু আর
মাথার সফেদ চুল কী মোহন নড়ে
নিশীথের রুপালিহাওয়ায় আর মাঝে মাঝে তাকে
গাছের পাতারা নুয়ে প্রণতি জানায়। তিনি
কৃতজ্ঞতাবশত করেন উচ্চারণ সদ্যসৃষ্ট কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা।

বহু পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় মধ্যরাতে
পৌঁছে যাই সে আশ্রমে একান্ত একাকী। অকস্মাৎ
ডাগর জ্যোৎস্নায় দেখি, একজন ঋষি ঈষৎ সমুখে ঝুঁকে
হাঁটছেন বড় একা। মনে হলো, চিনি তাকে, তবুও কেমন
অন্য কোনো গ্রহের দেবতা বলে ভ্রম হয়। তিনি
অকস্মাৎ তাকান আমার দিকে। একি সত্য? নাকি কালো মিথ্যা!

সত্য, মিথ্যা যা-ই হোক, দৃষ্টি তার আমাকে করেছে
ধন্য, ভেবে যদি নিমেষের জন্যে আনন্দের পেয়ালায়
ক্ষণকাল চুমো খাই, তা হ’লে এ বিশ্বে ক্ষতি কার?
অন্তত আমাকে করবেন ক্ষমা জানি বিশ্বকবি।
১আগস্ট ২০০৩

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান