বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?
এমন অধনম জাতি,
বুকে মার শত লাথি,
মুখে মার শত ঝাঁটা, অনায়াসে সয়!
না দেখিতে লেইয়ে পুঁ’ছে,
সে ফেলে যে দাগ মু’ছে,
যাহারে মেরেছে এ যে সে-যন সে-নয়!
তার নাই স্পর্শ বোধ,
ঘৃণা পিত্তি হর্ষ ক্রোধ,
শূয়রের চেয়ে চর্ম স্থুল অতিশয়।
মেড়ার ডলিলে কাণ,
সেও করে অভিমান,
সে-ও এসে মারে ঢুস্ , নাহি করে ভয় ;
----------------------------------------
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়
মানুষের মত নহে,
এদের শোণিতে বহে,
নরক-নর্দ্দমা শিরা পচাগন্ধময়।
কেবলে হৃৎপিণ্ড উহা,
নীচতার অন্ধগুহা,
পাতিত্যের প্রস্রবণ, প্রাণ উহা নয়!
অস্থিতে ও-নহে মজ্জা,
ভরা শুধু ঘৃণা লজ্জা,
কলঙ্কে গাঢ় ক্লেদ হয়েছে সঞ্চয়!
প্রতি লোম কূপে কূপে,
অপমান অনুরূপে,
করেছে অনন্ত ছিদ্র নাহিক সংশয়!
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?
কি আছে মানবধর্ম্ম,
কি করে মানবধর্ম্ম,
কি দিয়ে চিনিব বল পশু এরা নয়?
এ-কি মত খায় @@
আর কাযে নাহি লাগে,
এদের জীবন শুধু বিষ্ঠামূত্রময়।
নাহি বীর্য্য নাহি তেজ,
উদরে গুণ্ঠিত লেজ,
বিলুণ্ঠিত পরপদে সকল সময়!
অলস শিথিল অতি,
স্খলিত জীবন-গতি,
আখিভরা অশ্রুজল বুকভরা ভয়,
বিচার বিতর্কহীন,
আত্মজ্ঞানে উদাসীন,
অবিচারে পরবাক্যে করিবে প্রত্যয়!
এমন পশ্চাদ্গামী,
সদা ঘৃণা করি আমি,
@ মাখিয়া মারি ঝাঁটা যত মনে লয়!
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?
যত মুসলমান হিন্দু,
পতনের মহাসিন্ধু,
নাহি ধর্ম্ম এক বিন্দু অতি নীচাশয়!
বৃথা ও তিলক ফোটা,
পাঁচ ওক্ত মাথা-কোটা,
ধূর্ত্তামি ভণ্ডামি ওটা নিশ্চয় নিশ্চয়!
একমেবাদ্বিতীয়ং,
সে-ও থিয়েটারি সং,
কলেজি নলেজি ঢং আর কিছু নয়।
শত ভাল কীট কৃমি,
এরা নরকের তিমি,
ইহাদের আদি অন্ত অনন্ত নিরয়!
অধম পিশাচগুলি,
গর্দ্দভের পদধূলি
মাথায় মাখিয়া ছি ছি বড়লোক হয়,
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?
হেন ঘোর মিথ্যাভাষী,
অনুগ্রহ অভিলাষী,
জগতে ধনীর দাস আর কেহ নয়।
হ’তে তার কৃপা-পাত্র,
কি শিক্ষক কিবা ছাত্র,
উকীল ডাক্তার আদি সম্পাদক-চয়,
যারা বড় মান্য গণ্য,
দেশের উদ্ধার জন্য,
“বঙ্গের উজ্জ্বল আলো” যাহাদের কয় ;
যত তার অবিচার,
যত তার ব্যভিচার,
যত তার ভয়ঙ্কর কার্য্য পাপময়,
জানিয়া নাহিক জানে,
শুনিয়া শোনেনা কাণে,
তাহারি প্রশংসা গানে করে জয় জয়।
এমন সাহস-হীন,
ভীরু কাপুরুষ ক্ষীণ,
বলিতে উচিত কথা সঙ্কুচিত হয় ;
পাপেরেও বলে পুণ্য,
হেন মনুষ্যত্ব শূন্য,
এমন করিয়া করে বিবেক-বিক্রয়।
এ নীচ নিরয়গামী,
সদা ঘৃণা করি আমি,
দেখিলে এদের মুখ মহাপাপ হয়,
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?
বৃথা ও ইংরাজী শিক্ষা,
বৃথা ও পাশ্চাত্য দীক্ষা ;
প্রসবে যে বি.এ., এম.এ. বিশ্ব-বিদ্যালয়,
কি বলিব শেম্ শেম্,
রাস্কেল ফুল্ ডেম্,
গোল্ড্ পাম্প্ কিন সব আর কিছু নয়!
বৃথা অই হেট্ কোট্.
বিজাতী কথার চোট্,
হৃদয়ে নাহিক মোটে জ্ঞানের উদয় ;
আপনার প্রতিবেশী,
আত্মীয় স্বজন দেশী,
দরিদ্র দীনের দুঃখে গলে না হৃদয়,
করে না জীবন-পণ
উদ্ধারে বিপন্নজন,
অত্যাচারে যদি দেশ ছারখার হয়।
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?
এই যে ভাওয়ালবাসী,
নিত্য অশ্রুজলে ভাসি,
অবিচারে ব্যভিচারে ভস্মীভূত হয়,
কে করে তাহার খোঁজ,
অসুরেরা রোজ রোজ,
কত যে কূলের বধু চুলে ধরি লয়!
দিবালোকে দ্বিপ্রহরে,
পতিরে বাঁধিয়া ঘরে,
কোলের কাড়িয়া লয় কত কুবলয়।
কত যে জননী বোন্,
কাটিয়া ঘরের কোণ,
চুরি করে পিশাচেরা নিশীথ সময়।
কি ব্রাহ্মণ কিবা শুদ্র,
কিবা বড় কিবা ক্ষুদ্র,
@@@@@@@@@
তিলে তিলে পলে পলে পুড়িছে হৃদয়,
এরা আহা চক্ষু খেয়ে,
একটু দেখে না চেয়ে,
ইহাদেরি একদেশী প্রতিবেশী হয়!
ও উচ্চ শিক্ষায় ধিক্,
আমি যা’ দিয়েছি ---ঠিক্,১
জগতে জঘণ্য হেন নাহি নীচাশয়,
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?


বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়!
কোথায় সাগর পারে,
তুরুকে আর্মাণি মারে,
ইংরেজ রুষের তারা কেহই ত নয়!
এক গোষ্ঠি এক জাতি,
নহে তার এক জাতি,
কেবল খৃষ্টের সনে এক পরিচয়!
তবু যে আর্মাণি-নারী,
ত্যজিল আখির বারি,
তাহাতে ডুবিল ‘আল্প্’ অল্প কি বিস্ময়!
অবিচারে ব্যভিচারে,
তাহাদেরি হাহাকারে,
বিলাতী আকাশ ভেঙ্গে চূরমার হয়!
তাদেরি---তাদেরি জন্য,
কি হৃদয় ধন্য ধন্য,
খেপিয়াছে খৃষ্টানের জাতি সমুদয়,
শিক্ষিত বীরের প্রাণ,
কি মহান্! কি মহান্!
করুণায় যেন এক কালান্ত প্রলয়!
নাহি বুঝে আত্মপর,
নাহি বুঝে দেশান্তর,
বিপন্ন উদ্ধারে তারা প্রাণ করে ব্যয়,
না ছাড়ে সম্রাট রাজা,
পাপীরে প্রদানে সাজা,
উত্পীড়িত নারী নরে দিতেছে অভয়!
স্বাধীন তুরষ্ক---রুম,
সুলতানের সিংহভূম,
এস্ লামের প্রিয় পূজ্যস্থান পুণ্যময়।
আশী বছরের বুড়া২
তাহারে করিতে গুড়া
করিয়াছে পদাঘাত সহস দুর্জ্জয়!
মোদের শিক্ষাভিমানী,
নব্য বাবু সভ্য জ্ঞানী,
থাক্ তার পর-দুঃখে গলিবে হৃদয়,
রেলে কি জাহাজে গেলে,
কেহ তারে ঠে’লে ফে’লে
নিলে তার মা বোনের চুপ্ করে রয়।
জুতা, লাথি, ঝাঁটা বেতে,
এরা না কিছুতে চেতে,
অচেতন জড়ে কবে ব্যথা বোধ হয়?
দেও তারে শত গালি,
দেও গালে চূণ কালী,
বেহায়ার তাতে কিবা লোক-লাজ-ভয়।
বাঙালী মানুষ যদি, প্রেত কারে কয়?

   ---------------------------------------        

১ - ‘আমি যা দিয়েছি---ঠিক’ - কবি মগের মুল্লুক নামক পুস্তিকায় ভাওয়ালের রাজা ও ম্যানেজারের
ব্যভিচার-অবিচারের যে কাহিনী লিখিয়াছিলেন, এখানে ঐ পুস্তিকার প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন। মগের মুল্লুক
বাজেয়াপ্ত।                                                                             
২ - গ্ল্যাডস্টোন, ইংলণ্ডের মন্ত্রী                                                                              
লেইয়ে - লেহন                                                                                                
ডলিলে - মলিলে                                                                                               

------------- এই অক্ষরগুলি ছাপা নেই বা পড়া যাচ্ছে না।                                                      

Gobinda Chandra Das ।। গোবিন্দচন্দ্র দাস