চিরমায়া
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

বাহিরে দেখি না, শুধু স্থির জানি ভিতরে কোথাও
চৌকাঠে পা রেখে তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ,
চিরমায়া।
দাঁতে-চাপা অধরে কৌতুক স্থির বিদ্যুতের মতো
লগ্ন হয়ে আছে,
ভুরু বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বাঁকানো,
জ্বলে কোমল আগুন
সিঁথি ও ললাটে।
স্থির সরসীর মতো দুই চোখে
চক্ষু রেখে জগৎ-সংসার
অকস্মাৎ তার
কার্যকারণের-সূত্রে গাঁথা মাল্যখানিকে ঘোরাতে
ভুলে যায়।
বাহিরে দেখি না, কিন্তু ভিতরে এখনও
ওই মূর্তি জাগিয়ে রেখেছ,
চিরমায়া!
বুঝি না কী মন্ত্রে তুমি জয়ে-বিপর্যয়ে
লগ্ন আজও রয়েছ হৃদয়ে।
কী রয়েছে ওই চোখে,
অধরে অথবা
ওই যুগ্ম ভুরুতে তোমার?
প্রত্যাশা, না পরিহাস?
নাকি যুদ্ধশেষে ফের যুদ্ধঘোষণার অভিপ্রায়?
কিছুই বুঝি না, চিরমায়া,
এক অর্থ উদ্ধার না-হতে যেন সহসা আর-এক অর্থ
খুলে যায়।
বেঁধেছ অলক্ষ্য ডোরে।
যে-রকম উড্ডীন পাখীও
বস্তুত অরণ্যে বাঁধা, কিংবা দিগ্বিজয়ীও যেমন
অদৃশ্য সুতোয়
টান পড়বামাত্র তার একমাত্র-নারীর
জঙ্ঘা অবলোকনের জন্য বড় ব্যস্ত হয়ে ওঠে,
চিরমায়া,
আমিও তেমন ফিরি, নতজানু হয়ে
নিরীক্ষণ করি ওই জঙ্ঘা ও জঘন,
স্তনসন্ধির গোপনে রাখি মুখ।
আমিও তেমন
বুঝে নিতে চেষ্টা করি দাঁতে-চাপা ওষ্ঠের ইঙ্গিত।
এবং দেখি যে, স্থির সরসীর মতো দুই চোখে
পলকে পলকে
স্বর্গ-মর্ত-পাতালের ছায়া
দুলে যায়।

Nirendranath Chakravarty ।। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী