একজন সুকান্ত বেদেকে প্রায় প্রতিরাতে স্বপ্নে দেখি, তার
ঠোঁট কাঁপে যেন কিছু বলবার আছে,
অথচ হয় না বলা কিছুতেই। এত দিনে তার মুখ বিশদ মুখস্থ
হয়ে গেছে আমার এবং
যখন কখনও জানালার বাইরে তাকাই, হাঁটি
বারান্দায়, অথবা লিখতে বসি, সধূম চায়ের পেয়ালায়
ওষ্ঠ রাখি, চোখের সমুখে সেই মুখ
ভেসে ওঠে, নিষ্পলক চেয়ে থাকে হতবাক আমার দিকেই।

কখনও কখনও সেই মুখ
সালভাদর দালির ঘড়ি হয়ে গলে যেতে থাকে
তারপর অকস্মাৎ একগুচ্ছ জলপাই হয়ে
শূন্যে ঝোলে, কখনও বা হরিণের প্রাচীন ভঙ্গুর
করোটিতে সহজে রূপান্তরিত। করোটিতে একটি গোলাপ
গুঁজে রেখে গেছে যেন কোনও নারী, যার
চৈতন্যে মধুর চন্দ্রোদয়। বেদে তাকে বহু যুগ
ধরে বুঝি ব্যাকুল বেড়ায় খুঁজে নদীতীরে, বিজন প্রান্তরে, লোকালয়ে।

কখনও যে সেই বেদে আমার ভেতরে কী কৌশলে
প্রবেশ করেছে, ঠিক বুঝতে পারিনি। বারবার পথ ডাকে,
জলপাইবন, দ্রাক্ষাকুঞ্জ ডাকে ইশারায় আর ঢ্যাঙা ডিঙি
দুলে দুলে জানায় মোহন আমন্ত্রণ, ধু ধু চর বাসর গড়বে ভেবে
বেদের সারিন্দা হাতে গান গাই অমাবস্যা আর
পূর্ণিমায়। কেউ কি আরশিতে মুখ দেখে পুলকিত
ফিকে অন্ধকারে। অন্ধকার কত গাঢ় হ’লে তাকে
রাত বলা যায়, এই প্রশ্ন বেদেকে উত্তাল নদী করে তোলে।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান