নেহার, ছোট্র বোন আমার, বহুকাল পর
তোকে আবার মনে পড়ল। মনে পড়ল, তুই
আমার পেন্সিল আর কলম নিয়ে
মেতে উঠতি খেলায়। আমার খাতার পাতা
কী সব এঁকে ভরিয়ে তুলতি। জানি না তোর সেই
আঁকিবুকি অনেক পরে আমার খাতায়
পদ্যের পঙ্‌ক্তিমালা সাজানোর প্রেরণা জোগাত কিনা।
নেহার, তোর অমন সৌন্দর্য-ছড়ানো মুখটি
ফুল হয়ে ফোটার আগেই একটি কলিকে সংহার
করল মৃত্যু বড় আক্রোশে। তোকে ছিনিয়ে
নেয়া হলো আমার সান্নিধ্য থেকে।

আজ একটি উঁচু দরের পুরস্কার পাওয়ার সময়
বারবার তোর কথা মনে পড়ছিল আমার।
খেলায় মগ্ন হতি, সেই কমলেই আমি প্রথম
লিখতে শুরু করি তোর চলে যাওয়ার কথা। আমার
কেন জানি মনে হয় নেহার, তোর হাতের স্পর্শময়
কলম দিয়েই সবসময় কবিতা লিখছি। সেই কলম
আমার ওপর ভর করে, দেয় প্রবল ঝাঁকুনি।

রাত্রি আর প্রত্যুষের মিলন-মুহূর্তে যেন তোর
মধুর কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘শোনো ভাইয়া, তুমি যে
এত বছর পরেও আমাকে মনে রেখেছ, এ আমার
মস্ত পাওয়া। জানো ভাইয়া, তুমি যখন আশ্চর্য-সুন্দর
কবিতার একটি পঙ্‌ক্তি রচনা করো, তখন আমি
সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলো ছড়াই। তোমার একটি
নতুন উপমা আমাকে হাওয়া বানিয়ে তোমার গালে
চুমো দিতে পাঠায়। তুমি যখন কোনও ব্যর্থ পঙ্‌ক্তি
লেখো, তখন আমার অশ্রু শিশিরবিন্দু হয়ে ঝরে
পোড়ো জমিতে। লিখে যাও ভাইয়া, আমাদের
সিএ কলমকে বিসর্জন দিও না কোনওদিন।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান