গাছ  পাখি  মাঠ  ঘাট  হাট  দেখে
              আসছিলাম চলে ---

হঠাৎ পিছন থেকে
কে  যেন  চিত্কার  করে  ডাকতে লাগল
‘কমোরে-ড !’    ‘কমোরে-ড !’ ব’লে |

ফিরে দেখি চেনামুখ
দেখে থাকব হয়তো কোনো মিছিলে-মিটিঙে ;
মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি
ভাঙা গাল,  একেবারে রোগা টিঙটিঙে
খাটো ধুতি, মার্কামারা খাঁকির হাফশার্ট |

কাছে যেতে মনে পড়ে গেল অকস্মাৎ---
এক সময় আমরা সব
             একই জেলে একসঙ্গে ছিলাম,
মুখচ্ছবি মনে ছিল ;
কিছুতেই মনে করতে পারলাম না নাম |
আমার কপাল,
         স্মৃতির অ্যালবামে যত ছবি
                   সব নাম-মোছা |

বেঞ্চিতে বসলাম আমরা
           এসে গেল তক্ষুনি দুটো চা—
গরম গেলাস দুটো ভাঙাচোরা টেবিলে বসিয়ে
পুরনো দিনের গল্প,  সেও খুব রসিয়ে রসিয়ে,
বলা হল |
            দাঁতে  দাঁত  দিয়ে সব বসে থাকা
                        কিছুতে না-খাওয়া,
সারা সিঁড়ি ব্যারিকেড, বারান্দায় জল ঢেলে রাখা
টিয়ার গ্যাসের জন্যে, সারা রাত ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ---
তবু কী আনন্দে, ভাবো,
             কেটেছিল জীবনের সেই দিনগুলি |
বলতে বলতে জল আসে আমাদের দুজনেরই চোখে
মুখগুলো ভেসে ওঠে  মনে  পড়ে
                        প্রভাত-মুকুল-সুমথকে |

তারপর ওঠে
        আজকের দিনের কথা |
            কে  কোথায় আছে,
কে কী করছে—এই সব | দেখা গেল,
                ভয়টা ছোঁয়াচে |

দুজনেই চুপ,  কিছু ভাঙতে চায় না দুজনের কেউ |
কে আজ কোথায় আছি  কোনদিকে
          কোন তরফে—  যেই বলা,
              অমনি প্রকাণ্ড একটা ঢেউ
ছুটে এসে
      দুহাতে দুজনকে তুলে
            দিল এক প্রচণ্ড আছাড় |

সামনে দেয়াল শুধু,
      লোহার গরাদে ধরে
         বাইরে দাঁড়িয়ে অন্ধকার |
চেয়ে দেখি, আমরা আবার সেই পাশাপাশি সেলে |

নিজেদের জালে বন্দী ; নিজেদেরই তৈরি-করা জেলে ||

Subhash Mukhopadhyay ।। সুভাষ মুখোপাধ্যায়