দেখে যাতে তোমাদের কষ্ট না হয়
চোখে যাতে ভালো লাগে

তার জন্যে

আমার বুকে-বেঁধানো সমস্ত কাঁটায়
আমি গুঁজে দিয়েছি
একটি করে ফুল---

তোমরা হাসো |

শুনে যাতে তোমাদের দুঃখ না হয়,
কানে যাতে ভালো ঠেকে

তার জন্যে

আমার বুক-ভাসানো সমস্ত কান্নায়
আমি জুড়ে দিয়েছি
একটি করে সুর---

.        তোমরা হাসো গো,
.        আনন্দ করো |

আগুনে তো অনেক পুড়েছি
এবার যাব জল সইতে |

নঙর তুলে ফেলেছি
গাঙ থেকে দরিয়ার দিকে
ফেরানো আছে
আমার গলুইয়ের মুখ |

তোমরা এবার
আমার মনপবনের নাওটাকে
পায়ের ডগা দিয়ে একটু ঠেলে দিলেই
হৈ হৈ করে পালে বাতাস লাগবে ||



চালের বাতায় গুঁজে রেখে এসেছি
গাজীর পট

শিকের ওপর তোলা রইল
গুপীযন্ত্র

কালের হাত সেখানে পোঁছুতে না পৌঁছুতে
আমি ফিরে আসব |

সঙ্গে নিয়েছি চালচিঁড়ে
হুঁকোতামাক
আর মাছ ধরার জাল

আপাতত ওতেই চলুক |

ফুলছে ফুঁসছে ঢেউ---

একবার তুলছে মাথায়
একবার ফেলছে পায়ে |

.          ও মাঝির পো,
.          দরিয়া আর কতদূর ?

.          ঘর-বার সমান রে বন্ধু
.          আমার ঘর-বার সমান
.          পায়ের নীচে একটুকু মাটি
.          পেলাম না তার সন্ধান
.          আমার সেই পোষা পাখি
.          আকাশের নীল রঙে আঁকি
.          যত্নে বুকে করে রাখি

.          তবু কেন সে করে আনচান
.          আমার ঘর-বার সমান



দিন আসে রাত আসে এইভাবেই যায়
দিন আসে রাত আসে এইবাবেই যায়

.           জল সইতে যাই
.           একবার এ-চরে
.           একবার ও-চরে |

একটু করে ঘটে ভরি
আর কাপড়ের খুঁটে গেরো দিই |

পিটুলিতে-গড়া সুখসোহাগের ছিরিছাঁদে
সব-পেয়েছির নয়
সবাই-পেয়েছির দেশ গো !

মোহনার ঠিক মুখে
বিদ্যুতের বাঘনখে
আশমানে চেরাই হচ্ছে যখন আবলুশ কাঠ
ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে যখন তারার দল

ঠিক তখনই ধেয়ে এল বান ---

.        ও মাঝির পো,
.        ভাটি ছেড়ে নাও কি যায়
.        উজানে ?
.        তবে তাই সই
.        দরিয়া থেকে গাঙে ফিরে
.        এবার পট নাচিয়ে
.         চৌদুনে
,        কি রকম চব্বর বাধিয়ে দিই দেখো ||

Subhash Mukhopadhyay ।। সুভাষ মুখোপাধ্যায়