আজি এই প্রভাতের আশীর্ব্বাদ খানি,
                লও তব মাথে,
               হে নগরী,
লও তব ধূলি-ধূম-ধূম্র-জটা-বিভূষিত, শিরে,
       তব লৌহ-কাষ্ঠ-শিলা কারাগার হতে,
          রক্তমসী-কলঙ্কিত, যন্ত্র-জর্জ্জরিত তব
                   কর দুটি জুড়ি
           আজি এই প্রভাতেরে কর নমস্কার |
মোহের দুঃস্বপ্নজাল বারেক ছিঁড়িয়া দুই হাতে
                       ঊর্দ্ধে চাহ অভিশপ্তা
            ওই নীল আকাশের পানে,
পূরব সীমান্তে যেথা দিবসের মাঙ্গলিক বাজে
                              আলোকের সুরে |

             তোমার ব্যথিত বক্ষে
                অন্ধকারে যেথা
অনির্ব্বাণ অগ্নিকুণ্ড জ্বলে দিকে দিকে,
             হারায় কঙ্কাল-পথ
             বিকারের পয়োনালী মাঝে,
লুকায় সুড়ঙ্গ লাজভরে মৃত্তিকার তলে,
                  লোভ হিংসা ফেরে ছদ্মবেশে
                  অন্ধকারে নিঃশব্দ লোলুপ,--
সেথা আজ ডেকে আন প্রভাত আলোরে ;
                   তার সাথে আন শান্তি,
                   লোভ দীর্ণ তব ক্ষুব্ধ বুকে,--
               লালসার দৈন্য যাক ঘুচে |

যন্ত্রের চক্রান্ত ভাঙি,
ভেদ করি ষড়যন্ত্র লৌহে আর লোভে
আসুক প্রভাতখানি,
  ---সৌম্য-শুচি কুমার সন্ন্যাসী
   হে পতিতা তোমার আলয়ে |
পুঞ্জীভূত সমস্ত কালিমা,
    সমস্ত সঞ্চিত ব্যথা, লজ্জা গ্লানি পাপ,
               মনস্তাপ বহু মানবের
              ব্যাধি ও বিকার
               সযত্নে লালিত,
---দূর হোক সব আবর্জ্জনা,
          আলোকের কল্যাণ ধারায় |

শক্তির সাধনে মাতি,
    হে উন্মত্তা নারী-কাপালিক,
         অগণন জীবনের আশার শ্মশানে
               আনন্দের শবাসনে বসি,
   সুন্দরেরে গিয়াছিলে ভুলি ;

সীমাহীন আকাশের সুনীল বিস্ময়
       রাত্রির রহস্য আর আলো গন্ধ রূপ,
               ভুলেছিল সহজ প্রাণেরে |
সেই স্বেচ্ছা-নির্ব্বাসন হয়ে যাক শেষ |

আজ তব
    শক্তি-সুরা-রক্ত-নেত্রে ভ্রূকুটির তলে
               বিহঙ্গেরা বাঁধে নাই নীড় ;
     প্রস্তর-নিষেধ-প্রান্তে জাগিছে সভয়ে
               শীর্ণ তৃণ, বিবর্ণ কুসুম,
               ----সঙ্কুচিত দুর্ব্বল কাতর |
          যন্ত্রের জটিল পথে
               বিকলাঙ্গ জীবনের
                 হেরি শুধু ব্যঙ্গ-সমারোহ

Premendra Mitra ।। প্রেমেন্দ্র মিত্র