অগ্নি-আখরে আকাশে যাহারা লিখিছে আপন নাম,
       চেন কি তাদের ভাই
দুই তুরঙ্গ জীবন-মৃত্যু জুড়ে তারা উদ্দাম,
       দুয়েরি বল্গা নাই !

পৃথিবী বিশাল তারা জানিয়েছে, আকাশের সীনা নাই,
ঘরের দোওয়াল তাই ফেটে চৌচির |
প্রভঞ্জনের বিবাগী মনের দোলা লেগে নাচে ভাই,
তাদের হৃদয়-সমুদ্র অস্থির !

বলি তবে ভাই, শোন তবে আজ বলি,
অন্তরে আমি তাদেরই দলের দলী ;
রক্তে আমার অমনি গতির নেশা ;
নাশায় অগ্নি স্ফুরিছে যাহার, বিজলী ঠিকরে খুরে
       আমি শুনিয়াছি সেই হয়রাজের হ্রেষা !

যে শেণিতধারা ঘুমায়ে কাটালো পুরুষ চতুর্দশ,
দেখি আজো ভাই লাল তার রঙ, তাজা তার জৌলস !
আজো তার মাঝে শুনি সে প্রথম সাগরের আহ্বান ;
করি অনুভব কল্পনাতীত সৃষ্টির ঊষা হ’তে,
       তার জয় অভিযান |

তপতী কুমারী মরু আজ চাহে প্রথম পায়ের ধূলি |
অজানা নদীর উত্স ডাকিছে ঘোমটা আধেক খুলি |
       নিঃসঙ্গ গিরিচূড়া,
তুহিন তুষার-শয়নে আমারে স্মরিছে বিরহতুরা |

উত্তর মেরু মোরে ডাকে ভাই, দক্ষিণ মেরু টানে,
ঝটিকার মেঘ মোরে কটাক্ষ হানে ;
       গৃহ-বেষ্টনে বসি,
কখন প্রিয়ার কন্ঠ বেড়িয়া হেরি পূর্ণিমা-শশী |

সুশীতল ধারা নদীটি বহুক মন্থরে তব তীরে,
গৃহবলিভুক্ পারাবতগুলি কূজন করুক ঘিরে,
পালিত তরুর ছায়ে থাক ঢাকা তোমাদের গৃহখানি,
স্তোত্র রচিও, যদি পার তব প্রিয়ার আঁখি বাখানি |
              ছোট এই আশা, সুখ,
ঈর্ষা করি না, ঘৃণা নহে ভাই, শুধু নহি উত্সুক |

মনের গ্রন্থি জটিল বড়ো যে খুলিতে সহে না তর ;
সোহাগের ভাষা কখন শিখি যে নাই মোটে অবসর ;
       শুনে কাল হল ভাই,
অরণ্য-পথ গভীর গহন, সাগরের তল নাই |

অগ্নি-আখরে আকাশে যাহারা লিখেছে আপন নাম,
       আমি যে তাদের চিনি |
দুই তুরঙ্গ তাহাদের রথে, উদ্ধত উদ্দাম,
       ----শোনো তার শিঞ্জিনী |

মোদের লগ্ন-সপ্তম ভাই রবির অট্টহাসি,
       জন্ম-তারকা হয়ে গেছে ধূমকেতু !
নৌকা মোদের নোঙর জানে না,
       শুধু চলে স্রোতে ভাসি—
       কেন যে বুঝি না, বুঝিতে চাহি না হেতু !

Super User