কে ডাকল? দরজা খুলি। কেউ নেই। পাতাবাহারের

ডালে-ডালে লুটোপুটি হাওয়ার হাসির খিলখিল।

হঠাৎ তোমার মুখ। বুকভর্তি দুপুরের খাঁ খাঁ।

বলো, কেন ভাঙলে নির্বাসন?

 

নিজের ব্যথার ছুঁচে নিজে আমি সেলায়ে-সেলায়ে

নকশি কাঁথার মতো। চতুর্দিকে প্রাণের প্রাণীর

প্রাত্যহিক দিনলিপি। প্রত্যেকের নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে

মুহূর্তে-মুহূর্তে কাঁপা। একেই কি বলে সংলগ্নতা?

 

উত্তরবঙ্গের জল, স্বদেশে ভাসানো বন্যজল!

রিলিফের নৌকো, দেখতে এত সাধ? সর্বস্ব হারানো

এক বাটি অন্নে নুয়ে, এ দৃশ্যে তো খল খল হেসেছ অনেক।

আর কোন ধ্বংসদৃশ্য, বলো, দেখে জিঘাংসা জুড়োবে?

 

উড়ছে খরার ভস্ম উত্তরভারতে। ট্রেনে ট্রেনে

নিদ্রাহীন দেখে ক্লিষ্ট যার চোখ, সে কবিকে বলো

কিছু লিখে দিতে। জানি। প্রতিবেশী তারাও জানুক

কত খরা মুছে মুছে ছিড়ে গেছে আমাদেরও আঁচলের পাড়।

 

শীতের পোশাকহীন বালিকার নগ্নশরীরের

হিহি কাঁপা, এই দৃশ্যে মানুষের দিনলিপি পড়ে নেওয়া যায়।

মাইকেলএঞ্জেলো এত গড়ে গেল পাথরে-পাথরে,

তবুও মানুষ তাঁর ভাস্কর্যের চেয়ে ঢের ম্লান রয়ে গেল।

 

মেঘ-পঞ্চায়েত থেকে রিলিফের দুর্গত অঞ্চলে

রোদের কম্বল, খান, ত্রিপল কত কী পৌছে গেল।

ডাকবাকসে উপছে পড়ে খাম তবু, পোস্টকার্ড তবু।

অক্ষরের পরিবর্তে আর্তস্বর। বলো, কী লিখেছে?

 

ডাকো, কাছে ডাকো, ডেকে বলো কী কী চাই।

বৃষ্টি চাও? বৃষ্টি পাবে জুই ফুল খসানো খরায়।

নাকি চাও কলমের কান্না মুছতে ব্লটিং পেপার?

শীতের চাদর? আমি কাঁথা বুনছি শোকের সুতোয়।

 

মৃত্যু এসেছিল। তাকে একটু বোসো বলে সত্যবান

কাঠ কাটতে চলে গেল। আমিও তোমাকে সেইভাবে

চেয়ার এগিয়ে দিয়ে চলে যাবো চিরন্তন শিমূল-ছায়ায়।

তুমি কী সাবিত্রী হবে? ভালোবাসা? বলো, শুনে বাঁচি।।

Purnendu Patri ।। পূর্ণেন্দু পত্রী