বয়স আমার হবে তিরিশ , 
          দেখতে আমায় ছোটো , 
আমি নই মা , তোমার শিরিশ , 
          আমি হচ্ছি নোটো । 
আমি যে রোজ সকাল হলে 
যাই শহরের দিকে চলে 
          তমিজ মিঞার গোরুর গাড়ি চড়ে । 
সকাল থেকে সারা দুপর 
ইঁট সাজিয়ে ইঁটের উপর 
          খেয়ালমতো দেয়াল তুলি গড়ে । 
ভাবছ তুমি নিয়ে ঢেলা 
ঘর - গড়া সে আমার খেলা , 
          কক্‌খনো না সত্যিকার সে কোঠা । 
ছোটো বাড়ি নয় তো মোটে , 
তিনতলা পর্যন্ত ওঠে , 
          থামগুলো তার এমনি মোটা মোটা । 
কিন্তু যদি শুধাও আমায় 
ওইখানেতেই কেন থামায় ? 
          দোষ কী ছিল ষাট - সত্তর তলা ? 
ইঁট সুরকি জুড়ে জুড়ে 
একেবারে আকাশ ফুঁড়ে 
          হয় না কেন কেবল গেঁথে চলা ? 
গাঁথতে গাঁথতে কোথায় শেষে 
ছাত কেন না তারায় মেশে ? 
          আমিও তাই ভাবি নিজে নিজে । 
কোথাও গিয়ে কেন থামি 
যখন শুধাও , তখন আমি 
          জানি নে তো তার উত্তর কী যে । 
যখন খুশি ছাতের মাথায় 
           উঠছি ভারা বেয়ে । 
সত্যি কথা বলি , তাতে 
          মজা খেলার চেয়ে । 
সমস্ত দিন ছাত - পিটুনি 
গান গেয়ে ছাত পিটোয় শুনি , 
          অনেক নিচে চলছে গাড়িঘোড়া । 
বাসনওআলা থালা বাজায় ; 
সুর করে ওই হাঁক দিয়ে যায় 
          আতাওআলা নিয়ে ফলের ঝোড়া । 
সাড়ে চারটে বেজে ওঠে , 
ছেলেরা সব বাসায় ছোটে 
          হো হো করে উড়িয়ে দিয়ে ধুলো । 
রোদ্ দুর    যেই আসে পড়ে 
পুবের মুখে কোথায় ওড়ে 
          দলে দলে ডাক দিয়ে কাকগুলো । 
আমি তখন দিনের শেষে 
ভারার থেকে নেমে এসে 
          আবার ফিরে আসি আপন গাঁয়ে । 
জান তো , মা , আমার পাড়া 
যেখানে ওই খুঁটি গাড়া 
           পুকুরপাড়ে গাজনতলার বাঁয়ে । 
তোরা যদি শুধাস মোরে 
খড়ের চালায় রই কী করে ? 
          কোঠা যখন গড়তে পারি নিজে ; 
আমার ঘর যে কেন তবে 
সব - চেয়ে না বড়ো হবে ? 
          জানি নে তো তার উত্তর কী যে ! 
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর