জগতের বাতাস করুণা ,
করুণা সে রবিশশীতারা ,
জগতের শিশির করুণা --
জগতের বৃষ্টিবারিধারা ।
জননীর স্নেহধারা - সম
এই - যে জাহ্নবী বহিতেছে ,
মধুরে তটের কানে কানে
আশ্বাস - বচন কহিতেছে --
এও সেই বিমল করুণা
হৃদয় ঢালিয়া বহে যায় ,
জগতের তৃষা নিবারিয়া
গান গাহে করুণ ভাষায় ।
কাননের ছায়া সে করুণা ,
করুণা সে উষার কিরণ ,
করুণা সে জননীর আঁখি ,
করুণা সে প্রেমিকের মন ।
এমন যে মধুর করুণা ,
এমন যে কোমল করুণা ,
জগতের হৃদয়জড়ানো
এমন যে বিমল করুণা --
দিন দিন বুক ফেটে যায় ,
দিন দিন দেখিবারে পাই ,
যারে ভালোবাসি প্রাণপণে
সে করুণা তার মনে নাই ।
পরের নয়নজলে তার না হৃদয় গলে ,
দুখেরে সে করে উপহাস ,
দুখেরে সে করে অবিশ্বাস ।
দেখিয়া হৃদয় মোর তরাসে শিহরি উঠে ,
প্রেমের কোমল প্রাণে শত শত শেল ফুটে ,
হৃদয় কাতর হয়ে নয়ন মুদিতে চায় ,
কাঁদিয়া সে বলে , “ হায় হায় ,
এ তো নহে আমার দেবতা ,
তবে কেন রয়েছে হেথায় ?”
তুমি নও সে জন তো নও ,
তবে তুমি কোথা হতে এলে ?
এলে যদি এসো তবে কাছে ,
এ হৃদয়ে যত অশ্রু আছে
একবার সব দিই ঢেলে ,
তোমার সে কঠিন পরান
যদি তাহে একতিল গলে ,
কোমল হইয়া আসে মন
সিক্ত হয়ে অশ্রুজলে - জলে ।
কাঁদিবারে শিখাই তোমায় --
পরদুঃখে ফেলিতে নিশ্বাস ,
করুণার সৌন্দর্য অতুল
ও নয়নে করে যেন বাস ।
প্রতিদিন দেখিয়াছি আমি
করুণারে করেছ পীড়ন ,
প্রতিদিন ওই মুখ হতে
ভেঙে গেছে রূপের মোহন ।
কুবলয় - আঁখির মাঝারে
সৌন্দর্য পাই না দেখিবারে ,
হাসি তব আলোকের প্রায়
কোমলতা নাহি যেন তায় ,
তাই মন প্রতিদিন কহে ,
“ নহে নহে , এ জন সে নহে । ”
শোনো বন্ধু , শোনো , আমি করুণারে ভালোবাসি ।
সে যদি না থাকে তবে ধূলিময় রূপরাশি ।
তোমারে যে পূজা করি , তোমারে যে দিই ফুল ,
ভালোবাসি বলে যেন কখনো কোরো না ভুল ।
যে জন দেবতা মোর কোথা সে আছে না জানি ,
তুমি তো কেবল তার পাষাণপ্রতিমাখানি ।
তোমার হৃদয় নাই , চোখে নাই অশ্রুধার ,
কেবল রয়েছে তব পাষাণ - আকার তার ।
<