তুমি কেন আসিলে হেথায়
এ আমার সাধের আবাসে ?
এ আলয়ে যে নিবাসী থাকে ,
এ আলয়ে যে অতিথি আসে ,
সবাই আমার সখা , সবাই আমার বঁধু ,
সবারেই আমি ভালোবাসি ,
তারাও আমারে ভালোবাসে --
তুমি তবে কেন এলে হেথা
এ আমার সাধের আবাসে ?
এ আমার প্রেমের আলয় ,
এ মোর স্নেহের নিকেতন ;
বেছে বেছে কুসুম তুলিয়া
রচিয়াছি কোমল আসন ।
কেহ হেথা নাইকো নিষ্ঠুর ,
কিছু হেথা নাইকো কঠিন ,
কবিতা আমার প্রণয়িনী
এইখানে আসে প্রতিদিন ।
সমীর কোমল - মন আসে হেথা অনুক্ষণ ,
যখনি সে পায় অবকাশ
যখনি প্রভাত ফুটে , যখনি সে জেগে উঠে ,
ছুটিয়া সে আসে মোর পাশে ;
দুই বাহু প্রসারিয়া আমারে বুকেতে নিয়া
কত শত বারতা শুধায় ,
সখা মোর প্রভাতের বায় ।
আকাশেতে তুলে আঁখি বাতায়নে বসে থাকি
নিশি যবে পোহায় - পোহায় ;
উষার আলোকে হারা সখী মোর শুকতারা
আমার এ মুখপানে চায় ।
নীরবে চাহিয়া রহে , নীরব নয়নে কহে ,
“ সখা , আজ বিদায় , বিদায় । ”
ধীরে ধীরে সন্ধ্যার বাতাস
প্রতিদিন আসে মোর পাশ ।
দেখে , আমি বাতায়নে , অশ্রু ঝরে দু নয়নে ,
ফেলিতেছি দুখের নিশ্বাস ।
অতি ধীরে আলিঙ্গন করে ,
কথা কহে সকরুণ স্বরে ,
কানে কানে বলে , “ হায় হায় । ”
কোমল কপোল দিয়া কপোল চুম্বন করি
অশ্রু বিন্দু সুধীরে শুকায় ।
সবাই আমার মন বুঝে ,
সবাই আমার দু : খ জানে ,
সবাই করুণ আঁখি মেলি
চেয়ে থাকে এই মুখপানে ।
যে কেহ আমার ঘরে আসে
সবাই আমারে ভালোবাসে --
তবে কেন তুমি এলে হেথা
এ আমার সাধের আবাসে ?
ফেরো ফেরো , ও নয়নরসহীন ও বয়ন
আনিয়ো না এ মোর আলয়ে ,
আমরা সখারা মিলি আছি হেথা নিরিবিলি
আপনার মনোদু : খ লয়ে ।
এমনি হয়েছে শান্ত মন ,
ঘুচেছে দু : খের কঠোরতা ;
ভালো লাগে বিহঙ্গের গান ,
ভালো লাগে তটিনীর কথা ।
ভালো লাগে কাননে দেখিতে
বসন্তের কুসুমের মেলা ,
ভালো লাগে সারাদিন বসে
দেখিতে মেঘের ছেলেখেলা ।
এইরূপে সায়াহ্নের কোলে
রচেছি গোধূলি - নিকেতন ,
দিবসের অবসান - কালে
পশে হেথা রবির কিরণ ।
আসে হেথা অতি দূর হতে
পাখিদের বিরামের তান ,
ম্রিয়মাণ সন্ধ্যা - বাতাসের
থেকে থেকে মরণের গান ।
পরিশ্রান্ত অবশ পরানে
বসিয়া রয়েছি এইখানে ।
যাও মোরে যাও ছেড়ে নিয়ো না নিয়ো না কেড়ে ,
নিয়ো না নিয়ো না মন মোর ;
সখাদের কাছ হতে ছিনিয়া নিয়ো না মোরে ,
ছিঁড়ো না এ প্রণয়ের ডোর ।
আবার হারাই যদি এই গিরি , এই নদী ,
মেঘ বায়ু কানন নির্ঝর ,
আবার স্বপন ছুটে একেবারে যায় টুটে
এ আমার গোধূলির ঘর ।
আবার আশ্রয়হারা , ঘুরে ঘুরে হই সারা
ঝটিকার মেঘখণ্ড - সম ,
দু : খের বিদ্যুৎ - ফণা ভীষণ ভুজঙ্গ এক
পোষণ করিয়া বক্ষে মম --
তাহা হলে এ জনমে , নিরাশ্রয় এ জীবনে
ভাঙা ঘর আর গড়িবে না ,
ভাঙা হৃদি আর জুড়িবে না ।
কাল সবে গড়েছি আলয় ,
কাল সবে জুড়েছি হৃদয় -
আজি তা দিয়ো না যেন ভেঙে ,
রাখো তুমি রাখো এ বিনয় ।
<