আমার ছায়া

সতীশের মৃত্যু হলো, জিভ দিয়ে চেটেছিল শ্বেতবর্ণ বিষ।
আমরা সব বেঁচে আছি ঠিকঠাক, কী আশ্চর্য দেখা হে সতীশ,
ব্যস্ত হয়ে কাজ করছি উদ্ভিদের মতো এক লোবরেটরিতে
রোদ্দুর মেশাচ্ছি দেহে প্রতিদিন, ঝরে যাইনি বর্ষা কিংবা শীতে।
তোমার নবোঢ়া পত্নী কিস্তি হারে শেলাইয়ের কল কিনেছে কাল
দিনরাত ঘর্ঘর শব্দ, টুকরো কাটা ছিটকাপড়, নানান জঞ্জাল
রোজ তাকে ঘিরে থাকবে, সময়ের দাম পাবে গুনে বারোমাস,
আমিও এক-একদিন হঠাৎ হাজির হয়ে করে বসবো চায়ের ফরমাশ।
একটা হাত টেনে তার রেখা গুনে ভবিষ্যৎবানাবো নির্ভীক,
কপালে অশেষ দুঃখ! বললে, তুমি টিকটিকির সঙ্গে মিশে বলবে ঠিক ঠিক!
ফোটো হয়ে ঝুলে থাকবে, হা সতীশ, নাকের উপর বসবে মশা
নিতান্ত ডাক্তারি মতে আমি ও তোমার পত্নী করবো শোয়া-বসা।
অধুনা স্বাধীন নারী আমাকে ছুয়েই হয়তো তোমার মৃত্যুর কথা বলবে
একদিন
তোমার জীবন ছিল কী শীতল, মানুষেরই মতো, তবু মনুষ্যত্বহীন।
পিঁপড়ের মতন তুমি জীবনকে খুঁটে-খুঁটে চেয়েছো বাঁচাতে
রমণী-শরীর ঘিরে চামচিকে হয়ে শুধু জেগে উঠতে রাতে।
এই সব কথা শুনে আমিও তখন উঠে দাঁড়াবো আলস্যে, কিছু ক্লান্ত
তেতো মনে।
নিজেকে চিমনির ধোঁয়া মনে হতে পারে হয়তো বাইরের নির্জনে।
দীর্ঘ কালো ছায়া পড়বে স্বল্পালোকে চকচকানো পিচ-বাঁধা পথে
কার ছায়া? আমারই তো,–বলে আমি মিশে যাবো সশরীরে
অদৃশ্য জগতে।

<

Sunil Gangapadhyay।। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়