ছয়
ডাক্তারের দল অল্পক্ষণ হইল বিদায় লইয়াছেন। পারিবারিক চিকিৎসক বৃদ্ধ জ্ঞানবাবু যাইবার সময় বলিয়া গেলেন, বোধ হয় সমস্ত আফিঙটাই বার করে ফেলা গেছে,—বৌমার জীবনের আর কোন শঙ্কা নেই।
হরিশ একটুখানি ঘাড় নাড়িয়া কি ভাব যে প্রকাশ করিল, বৃদ্ধ তাহাতে মনোযোগ করিলেন না, কহিলেন, যা হবার হয়ে গেছে, এখন কাছে কাছে থেকে দিন-দুই সাবধানে রাখলেই বিপদটা কেটে যাবে।
যে আজ্ঞে, বলিয়া হরিশ স্থির হইয়া বসিয়া পড়িল।
সেদিন বার-লাইব্রেরির ঘরে আলোচনা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও কঠোর হইয়া উঠিল। ভক্ত বীরেন কহিল, আমার গুরুদেব স্বামিজী বলেন, বীরেন, মানুষকে কখনো বিশ্বাস করবে না। সেদিন গোঁসাইবাবুর বিধবা পুত্রবধূর সম্বন্ধে যে স্ক্যান্ডালটা প্রকাশ হয়ে পড়েছিল তোমরা তা বিশ্বাস করলে না, বললে, হরিশ এ-কাজ করতেই পারে না। এখন দেখলে? গুরুদেবের কৃপায় আমি এমন অনেক জিনিস জানতে পারি তোমরা যা ড্রিম কর না।
ব্রজেন্দ্র বলিল, উঃ—হরিশটা কি স্কাউন্ড্রেল! ও-রকম সতীসাধ্বী স্ত্রী যার, কিন্তু মজা দেখেচ সংসারে? বদমাইশগুলোর ভাগ্যেই কেবল এ-রকম স্ত্রী জোটে!
বৃদ্ধ তারিণী চাটুয্যে হুঁকা লইয়া ঝিমাইতেছিলেন, কহিলেন, নিঃসন্দেহে। আমার ত মাথার চুল পেকে গেল, কিন্তু ক্যারেক্টারে কেউ কখনো একটা স্পট্ দিতে পারলে না। অথচ আমারই হ’লো সাত-সাতটা মেয়ে, বিয়ে দিতে দিতে দেউলে হয়ে গেলাম।
যোগীনবাবু কহিলেন, আমাদের মেয়ে-ইস্কুলের পরিদর্শক হিসাবে লাবণ্যপ্রভা মহিলাটি দেখচি একেবারে আদর্শ! গভর্নমেন্টে বোধ করি মুভ করা উচিত।
ভক্ত বীরেন বলিলেন, অ্যবসোলিউট্লি নেসেসরি!
সম্পূর্ণ একটা দিন পার হইল না, সতী-সাধ্বীর স্বামী হরিশের চরিত্র জানিতে শহরে কাহারও আর বাকি রহিল না। এবং সুহৃদ্বর্গের কৃপায় সকল কথাই তাহার কানে আসিয়া পৌঁছিল।
উমা আসিয়া চোখ মুছিয়া কহিল, দাদা, তুমি আবার বিয়ে কর।
হরিশ কহিল, পাগল!
গল্প : সতী Chapter : 6 Page: 15
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 169