ঠিক করে ত এখুনি বলতে পারিনে, যে-ক’টা দিন দয়া করে আপনি থাকতে দেন।
দিন-কয়েক পারি, কিন্তু বেশীদিন ত পারব না। তখন কোথায় যাবেন?
সেই চিন্তাই ত দিনরাত করি।
লোকে বলে, আপনি গগন চাটুয্যের ঠিকানা জানেন।
তারা আর কি বলে?
বিজয় এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিল না। অনুরাধা কহিল, জানিনে তা আপনাকে আগেই বলেচি, কিন্তু জানলেও নিজের ভাইকে ধরিয়ে দেব এই কি আপনি আদেশ করেন?
তাহার কণ্ঠস্বরে তিরস্কার মাখানো। বিজয় ভারী অপ্রতিভ হইল, বুঝিল আভিজাত্যের চিহ্ন ইহার মন হইতে এখনো বিলুপ্ত হয় নাই। বলিল, না, সে কাজ আপনাকে আমি করতে বলিনে, পারি নিজেই খুঁজে বার করব, তাকে পালাতে দেব না। কিন্তু এতকাল ধরে সে যে আমাদের এই সর্বনাশ করছিল—এও কি আপনি জানতে পারেন নি বলতে চান?
কোন উত্তর আসিল না।
বিজয় বলিতে লাগিল, সংসারে কৃতজ্ঞতা বলে ত একটা কথা আছে। নিজের ভাইকে এটুকু পরামর্শ কি কোনদিন দিতে পারেন নি? আমার বাবা নিতান্ত নিরীহ মানুষ, আপনাদের বংশের প্রতি তাঁর অত্যন্ত মমতা, বিশ্বাসও ছিল তেমনি বড়, তাই গগনকেই দিয়েছিলেন সমস্ত সঁপে, এ কি তারই প্রতিফল? কিন্তু নিশ্চিত জানবেন আমি দেশে থাকলে কখনও এমন ঘটতে পারত না।
অনুরাধা নীরব। কোন কথারই জবাব পাইল না দেখিয়া বিজয় মনে মনে আবার উষ্ণ হইয়া উঠিল। তাহার যেটুকু করুণা জন্মিয়াছিল সমস্ত উবিয়া গেল, কঠিন হইয়া বলিল, সবাই জানে আমি কড়া লোক, বাজে দয়ামায়া করিনে, দোষ করে আমার হাতে কেউ রেহাই পায় না, দাদার সঙ্গে দেখা হলে এটুকু অন্ততঃ তাকে জানিয়ে দেবেন।
অনুরাধা তেমনি মৌন হইয়া রহিল।
বিজয় কহিল, আজ সমস্ত বাড়িটার আমি দখল নিলাম। বাইরের ঘরগুলো পরিষ্কার হলে দিন-দুই পরে এখানে চলে আসব, মেয়েরা আসবেন তার পরে। আপনি নীচের একটা ঘরে থাকুন যে ক’দিন না যেতে পারেন, কিন্তু কোন জিনিসপত্র সরাবার চেষ্টা করবেন না।
কুমার বলিল, বাবা, তেষ্টা পেয়েচে আমি জল খাব।
এখানে জল পাব কোথায়?
অনুরাধা হাত নাড়িয়া ইশারায় তাহাকে কাছে ডাকিল, রান্নাঘরের ভিতরে আনিয়া কহিল, ডাব আছে খাবে বাবা?
হাঁ খাব।
সন্তোষ কাটিয়া দিতে ছেলেটা পেট ভরিয়া শাঁস ও জল খাইয়া বাহিরে আসিল, কহিল, বাবা তুমি খাবে? খুব মিষ্টি।
না।
খাও না বাবা অনেক আছে। সব তো আমাদের।
কথাটা কিছুই নয়, তথাপি এতগুলি লোকের মধ্যে ছেলের মুখ হইতে কথাটা শুনিয়া হঠাৎ কেমন তাহার লজ্জা করিয়া উঠিল, কহিল, না না খাব না, তুই চলে আয়।
গল্প : অনুরাধা Chapter : 2 Page: 8
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 199