প্রবন্ধ : নারীর মূল্য Chapter : 1 Page: 41
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 229
মানব-সমাজের যত নিম্নস্তরে অবতরণ করা যায়, ততই চোখে পড়িতে থাকে এই ভুলটাই তাহারা ক্রমাগত করিয়া আসিয়াছে, এবং তাহাতে কিছুতেই সুবিধা করিয়া উঠিতে পারে নাই। অধিকাংশ স্থলেই পুরুষ শুধু লড়াই করে, এবং শিকার করে,—আর কিছু করে না। জীবন-ধারণের বাকী কাজগুলা সমস্তই একা নারীকে করিতে হয়। তাহারা জল তোলে, কাঠ কাটে, মোট বয়, জমি চাষ করে, সন্তান প্রসব করে, রাঁধাবাড়া সমস্তই করে। এমন কি, শিকারলব্ধ পশুটাকেও বহিয়া আনিবার জন্য বনে-জঙ্গলে পুরুষের পিছনে পিছনে ঘুরিয়া বেড়াইতে হয়। এবং ইহার অনিবার্য ফলও যাহা হইবার ঠিক তাই হয়। অবশ্য স্বীকার করি, সব দেশেই কিছু নর-নারীর কাজের ধারণা এক হইতে পারে না—হয়ও না। কিন্তু একটু মনোযোগ করিলেই টের পাওয়া যায় সভ্যতার অনুপাতে কর্তব্য-বিভাগের একটা সাদৃশ্য আছে এবং, এই অনুপাত যত বাড়িতে থাকে সাদৃশ্যও তত কমিয়া আসিতে থাকে। যেমন, ব্যবহারের নিমিত্ত দূর হইতে জল আনিবার আবশ্যক হইলে একজন ফরাসী কিংবা ইংরাজ হয়ত তাহা নিজেরাই করিবেন, কিন্তু, আমরা লজ্জায় মরিয়া যাইব; এবং তাহার পরিবর্তে গর্ভবতী স্ত্রীর কাঁকালে একটা মস্ত ঘড়া তুলিয়া দিয়া জলাশয়ে পাঠাইয়া দিয়া লজ্জা নিবারণ করিব। পেরুর উন্নত অবস্থার দিনে পুরুষ চরকা কাটিত এবং কাপড় বুনিত, স্ত্রীলোক লাঙ্গল ঠেলিত। এখনো সামোয়ার অধিবাসীরা রাঁধাবাড়া করে, স্ত্রীলোক হাটেবাজারে যায়। আবিসিনিয়ার পুরুষদের বাজারে যাইতে মাথা কাটা যায়, কিন্তু প্রফুল্লমুখে ঘাট হইতে নর-নারী উভয়েরই কাপড় কাচিয়া আনে। এইরূপ কাজকর্মের ধারণা সব দেশে এক নয়, এবং ছোটখাটো বিষয়ে এক না হইলেও বেশিকিছু আসিয়া যায় না সত্য, কিন্তু এই ধারণা স্বাভাবিক নিয়মকে অতিক্রম করিয়া গেলে অমঙ্গল অনিবার্য। অর্থাৎ, পুরুষ সর্ববিষয়ে স্ত্রীলোকের কাজ করিতে গেলে যেমন করডোদের মত অকর্মণ্য হীন হইয়া পড়ে, তেমনি ডাহোমি রাজার স্ত্রী-সৈন্যও যথার্থ unsexed হইয়াই তবে লড়াই করিতে পারে। তাহাতে নিজেরও কল্যাণ হয় না, দেশেরও না। কিন্তু, এই সমস্ত পুরুষোচিত কাজকর্মের দরুনই একদল পণ্ডিতের এমন বিশ্বাসও জন্মিয়া গিয়াছে যে, আদিম যুগে নর-নারীর মধ্যে নারীর স্থানই উচ্চে ছিল। তাহারাই leader of civilization, অথচ কেন সংসারে নারীর স্থান এমন উত্তরোত্তর নামিয়া পড়িয়াছে তাহার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসন্ধান করিয়া স্পেন্সর সাহেব স্থির করিয়াছেন, দেশের লোক যত যুদ্ধপ্রিয়, অন্ততঃ আত্মরক্ষার জন্য যাহাদিগকে ঘরে-বাহিরে যত বেশী লড়াই করিতে হইয়াছে তাহারাই তত বেশী নারীর উপর অত্যাচার করিয়া আসিয়াছে, তত বেশি গায়ের জোর খাটাইয়াছে। নারী যে স্বাভাবিক কোমলতা ও নম্রতার জন্যই স্বেচ্ছায় এত নির্যাতন এবং অধীনতা স্বীকার করিয়াছে তাহা নয়। তাহারা গায়ের জোরে পারিয়া উঠে নাই বলিয়াই স্বীকার করিয়াছে, পারিলে স্বীকার করিত না।