বিন্দুর চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল এবং যাহা কোনদিন করে নাই, আজ তাহাও করিল। হেঁট হইয়া স্বামীর দুই পা চাপিয়া ধরিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, একটি উপায় করে দাও, রোগা মানুষ এমন করে দুটো দিনও বাঁচবেন না।
মাধব নিজের চোখের জল কোন গতিকে মুছিয়া লইয়া কহিল, আমি কি উপায় করব? বৌঠান আমাদের এক কণা চাল পর্যন্ত নেবেন না; কিছু না করলে তাঁদের সংসারই বা চলবে কি করে?
বিন্দু রুদ্ধস্বরে বলিল, তা আমি জানিনে। ওগো, তুমি আমার দেবতা, তিনি তোমার চেয়েও বড় যে! ছি ছি, যে কথা মনে আনাও যায় না, সেই কথা কিনা—বিন্দু আর বলিতে পারিল না।
মাধব বলিল, বেশ ত, অন্তত যাও বৌঠানের কাছে। যাতে তাঁর রাগ পড়ে, তিনি প্রসন্ন হন, তাই কর। আমার পা ধরে সমস্ত দিন বসে থাকলেও উপায় হবে না।
বিন্দু তৎক্ষণাৎ পা ছাড়িয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, পায়ে-ধরা অভ্যাস আমার নয়। এখন দেখচি, কেন সে-রাত্রে তিনি জলস্পর্শ করেন নি, অথচ তুমি সমস্ত জেনেশুনে শত্রুর মত চুপ করে রইলে! আমার অপরাধ বেড়ে গেল, তুমি কথা কইলে না!
মাধব কাগজপত্রে মনোনিবেশ করিয়া কহিল, না। ও বিদ্যে আমার দাদার কাছে শেখা। ঈশ্বর করুন, যেন অমনি চুপ করে থেকেই একদিন যেতে পারি।
বিন্দু আর কথা কহিল না। উঠিয়া গিয়া নিজের ঘরে দোর দিয়া পড়িয়া রহিল।
মাধব তখন উঠিবার উপক্রম করিতেছিল, বিন্দু আবার আসিয়া ঘরে ঢুকিল। তাহার দুই চোখ রাঙ্গা। মাধবের দয়া হইল, বলিল, যাও একবার তাঁর কাছে। জান ত তাঁকে, একটি বার গিয়ে শুধু দাঁড়াও, তাহলেই সব হবে।
বিন্দু অত্যন্ত করুণ-কণ্ঠে বলিল, তুমি যাও—ওগো, আমি ছেলের দিব্যি কচ্চি—
মাধব তাহার মনের ভাব বুঝিয়া কিছু উষ্ণ হইয়াই জবাব দিল, হাজার দিব্যি করলেও আমি দাদাকে বলতে পারব না। তিনি নিজে জিজ্ঞাসা না করলে গিয়ে বলব, এত সাহস আমার গলা কেটে ফেললেও হবে না।
বিন্দু তথাপি নড়িল না।
মাধব কহিল, পারবে না যেতে?
বিন্দু জবাব দিল না, হেঁট মুখে ধীরে ধীরে চলিয়া গেল।
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 7 Page: 41
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 173