জীবানন্দ। তবে দেওয়া হয় না কেন?
পূজারী। (তারাদাসকে ইঙ্গিত করিয়া) উনি বলেন, যে বলেছিল তার কাছে গিয়ে আদায় করতে।
[জীবানন্দ ক্রুদ্ধ-চক্ষে তারাদাসের প্রতি চাহিতে]
তারাদাস। অনেকগুলো টাকা—
জীবানন্দ। অনেকগুলো টাকাই দেবে ঠাকুর।
তারাদাস। কিন্তু খরচটা ন্যায্য কিনা—
জীবানন্দ। দেখ তারাদাস, ও-সব শয়তানি মতলব তুমি ছাড়ো। ষোড়শীর ন্যায়-অন্যায় বিচারের ভার তোমার ওপরে নেই। যা বলে গেছেন তাই কর গে। (পূজারীর প্রতি) মিস্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে?
পূজারী। আছে হুজুর।
জীবানন্দ। চল, আমি নিজে গিয়ে সমস্ত মিটিয়ে দিচ্ছি।
[জীবানন্দ, প্রফুল্ল, তারাদাস ও পূজারীর প্রস্থান। রহিল শুধু এককড়ি]
[শিরোমণি ও জনার্দন রায়ের প্রবেশ]
জনার্দন। বাবু গেলেন কোথা?
এককড়ি। (তিক্তকণ্ঠে) কে জানে!
জনার্দন। কে জানে কি হে? পুলিশে খবর দেবার কথাটা তাঁকে বলেছিলে?
এককড়ি। পারেন, আপনিই বলুন না।
জনার্দন। ব্যাপার কি এককড়ি?
এককড়ি। কে জানে কি ব্যাপার। না আছে মেজাজের ঠিক, না পাই কোন কথার ঠিকানা। তারা ঠাকুরকে তেড়ে মারতে গেলেন, আমাকে পাঠাতে চাইলেন জেলে—
শিরোমণি। অত্যধিক মদ্যপানের ফল। হুজুর কি এখনি ফিরে আসবেন মনে হয়?
এককড়ি। বুঝলেন রায়মশায়, মিথ্যে সন্দেহ করে সাগর সর্দারের নাম পুলিশে জানানো চলবে না।
জনার্দন। মিথ্যে সন্দেহ কি হে? এ যে একরকম স্পষ্ট চোখে দেখা।
শিরোমণি। একেবারে প্রত্যক্ষ বললেই হয়।
এককড়ি। বেশ, তাই একবার বলে দেখুন না?
জনার্দন। বলবই ত হে। নইলে কি গুষ্টিবর্গ মিলে পুড়ে কয়লা হবো! ষোড়শীকে তাড়ানোর কাজে আমিও ত একজন উদ্যোগী।
শিরোমণি। আমার কথাই না কোন্ তারা শুনেছে!
জনার্দন। যারা এতবড় জমিদারের বাড়িতে আগুন দিতে পারে, তারা পারে না কি?
এককড়ি। আমিও তাই ভাবি।
জনার্দন। ভেবো পরে। এখন শীঘ্র কিছু একটা করো। এখানে যদি প্রশ্রয় পায় ত আমাকে ঘরে শিকল দিয়ে মানকচুর মত সেদ্ধ করে ছাড়বে।
শিরোমণি। ব্যাটারা গুরুর দোহাই মানবে না। ডাকাত কিনা! হয়ত বা ব্রহ্মহত্যাই করে বসবে। (শিহরিয়া উঠিলেন)
জনার্দন। আর শুধু কি কেবল বাড়ি? আমার কত ধানের গোলা, কত খড়ের মাড়, সবসুদ্ধ যদি—
শিরোমণি। দেখ ভায়া, আমি বরঞ্চ দিন-কতক শিষ্যবাড়ি থেকে ঘুরে আসি গে।
জনার্দন। কিন্তু আমার ত শিষ্যবাড়ি নেই? আর থাকলেও ত ধানের গোলা, খড়ের মাড় নিয়ে শিষ্যবাড়ি ওঠা যায় না?
শিরোমণি। না। গেলেও ও সকল ফিরিয়ে আনা কঠিন। আজকালকার শিষ্য-সেবকদের মতিগতিও হয়েছে অন্য প্রকার।
এককড়ি। চারিদিকে কড়া পাহারা মোতায়েন করে রাখুন।
জনার্দন। তা ত রেখেচি, কিন্তু পাহারা কি তোমাদেরই কম ছিল এককড়ি!
এককড়ি। আর একটা কথা শুনেছেন? ভূমিজ প্রজারা গিয়ে কাল আদালতে নালিশ করে এসেছে। শুনচি কান্নাকাটি শুনে স্বয়ং হাকিম আসবেন সরজমিন তদারকে।
জনার্দন। বল কি হে! চণ্ডীগড়ে বাস করে জমিদার আর আমার নামে নালিশ?
শিরোমণি। শিষ্যগণের আহ্বান উপেক্ষা করা আমার কর্তব্য নয় জনার্দন।
এককড়ি। দেখুন আস্পর্ধা! জীবনে বেশীদিন যারা পেটভরে খেতে পায় না, শীতের রাতে যারা বসে কাটায়, মড়কের দিনে যারা কুকুর-বেড়ালের মত মরে—
নাটক : ষোড়শী Chapter : 4 Page: 47
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 177