তৃতীয় দৃশ্য
সরস্বতী নদীতীর
[শরৎ অন্তে শীর্ণ সঙ্কীর্ণ সরস্বতী নদী। এ-তটে বিস্তীর্ণ মাঠ, ও-তটে লতাগুল্ম-পরিব্যাপ্ত ঘন বন। বনান্তরালে দিঘ্ড়া গ্রাম। নদীর উভয় তীর ক্ষুদ্র বাঁশের সেতু দিয়া সংযুক্ত। একটা পায়ে-হাঁটা সঙ্কীর্ণ পথ বনের মধ্য দিয়া দিঘ্ড়া গ্রামে গিয়া প্রবেশ করিয়াছে। এই সকলের অন্তরালে নরেনের বৃহৎ অট্টালিকার কিছু কিছু দেখা যায় মাত্র। নদীর তীরে বসিয়া নরেন ছিপে মাছ ধরিতেছিল। বিজয়া ও কানাই সিং প্রবেশ করিল।]
বিজয়া। এই নদীর পারেই দিঘ্ড়া, না কানাই সিং?
কানাই। হাঁ মা-জী।
বিজয়া। এই গাঁয়েই জগদীশবাবুর বাড়ি, না?
কানাই। হাঁ মা-জী, বহুৎ বড়া বাড়ি।
বিজয়া। এই পুল পেরিয়ে বুঝি ঐ গাঁয়ে যেতে হয়?
[বিজয়া পুলের কাছে অগ্রসর হইতে নরেন্দ্র তাহাকে দেখিয়া]
নরেন। এই যে—নমস্কার! বিকেলবেলা একটুখানি বেড়াবার পক্ষে নদীর ধারটি মন্দ জায়গা নয় বটে, কিন্তু এ সময় ম্যালেরিয়ার ভয়ও ত বড় কম নয়। এ বুঝি আপনাকে কেউ সাবধান করে দেয়নি?
বিজয়া। না, কিন্তু ম্যালেরিয়া ত লোক চিনে ধরে না। আমি ত বরং না জেনে এসেছি, আপনি যে জেনেশুনে জলের ধারে বসে আছেন? কৈ দেখি কি মাছ ধরলেন?
নরেন। (পুলের অপর প্রান্ত হইতে) পুঁটি মাছ। কিন্তু দু ঘণ্টায় মাত্র দুটি পেয়েছি, মজুরি পোষায় নি। সময়টা ত কোনমতে কাটাতে হবে?
বিজয়া। কিন্তু মামার পূজোবাড়িতে এসে তাঁকে সাহায্য না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যে বড়ো? গুটি-দুই পুঁটি মাছ দিয়ে ত তাঁর সাহায্য হবে না!
নরেন। (হাসিয়া) না, কিন্তু প্রথমতঃ, মামার বাড়িতে আমি আসিনি, দ্বিতীয়তঃ, তাঁকে সাহায্য করবার বহুলোক আছে। আমার প্রয়োজন নেই।
বিজয়া। মামার বাড়ি আসেন নি? এখানে তবে আছেন কোথায়?
নরেন। বাড়ি আমার ঐ দিঘ্ড়া গ্রামে। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে যেতে হয়।
বিজয়া। দিঘ্ড়ায়? তা হলে নরেনবাবুকে তো আপনি চেনেন? তিনি কি রকম লোক বলতে পারেন?
নরেন। ও—নরেন? তার বাড়িটা ত আপনি দেনার দায়ে কিনে নিয়েছেন? এখন তার সম্বন্ধে অনুসন্ধানে আর ফল কি? যে উদ্দেশ্যে নিলেন সে কথাও এ অঞ্চলের সবাই শুনেছে।
বিজয়া। একেবারে নেওয়া হয়ে গেছে এই বুঝি এদিকে রাষ্ট্র হয়েছে?
নরেন। হবারই কথা। জগদীশবাবুর সর্বস্ব আপনার বাবার কাছে বিক্রি-কবলায় বাঁধা ছিলো, তাঁর ছেলের সাধ্য নেই তত টাকা শোধ করে। মেয়াদও শেষ হয়েছে—এ খবর সবাই জানে কিনা!
বিজয়া। আপনি নিজেই যখন গ্রামের লোক তখন খবর জানবেন বৈ কি। আচ্ছা, শুনেছি নরেনবাবু বিলেত থেকে ভাল করেই ডাক্তারি পাস করে এসেছেন। কোন ভাল জায়গায় practice আরম্ভ করে আরও কিছুদিন সময় নিয়ে কি বাপের ঋণটা শোধ করতে পারেন না?
নরেন। সম্ভব নয়। শুনেছি practice করাই নাকি তার সঙ্কল্প নয়।
বিজয়া। তবে তাঁর সঙ্কল্পটাই বা কি? এত খরচপত্র করে বিলেত গিয়ে কষ্ট করে ডাক্তারি শেখবার ফলটাই বা কি হতে পারে? একেবারে অপদার্থ।
নাটক : বিজয়া Chapter : 1 Page: 10
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 276