ইউরোপ-প্রসিদ্ধ লাটিন ধর্মযাজক টারটুলিয়ান নারীর সম্বন্ধে লিখিয়াছেন—“Thou art the devil’s gate, the betrayer of the true, the first deserter of the Divine law.” ধর্মযাজক সেন্ট অগস্টিন,
যিনি সেন্ট পদবী পাইয়া গিয়াছেন, তিনি তাঁহার শিষ্যমণ্ডলীকে শিখাইতেছেন, “What does it matter whether it be in person of mother or sister; we have to be beware of Eve in every woman.” সেন্ট অ্যাম্ব্রোস—ইনিও ‘সেন্ট’—তর্ক করিয়া গিয়াছেন, “Remember that God took a rib out of Adam’s body not a part of his soul to make her.”
৫৭৮ খৃস্টাব্দে আহুত ওসিয়ায় ক্রিশ্চান ধর্মসঙ্ঘে নাকি স্থির হইয়াছিল, স্ত্রীলোকের আত্মা নাই। ধর্মের জন্যে যে নারীজাতি মরে বাঁচে, যে ধর্মগ্রন্থের প্রত্যেক অক্ষরের প্রতি নারীর অচলা ভক্তি, সেই ধর্মগ্রন্থ লিখিবার সময় পুরুষ নারীজাতিকে কি শ্রদ্ধাই দেখাইয়া গিয়াছে! মধ্যযুগের প্রসিদ্ধ সেন্ট বার্নার্ড (ইনিও সেন্ট) জননীর উদ্দেশে পত্র লিখিয়াছেন, “What have I to do with you? What have I received from you but sin and misery? Is it not enough for you that you have brouhgt me into this miserable world, that you being sinners have begotten me in sin…”
আজ ইউরোপবাসীরা অহঙ্কার করিয়া বলে, তাহারা যেমন নারীর dignity বোঝে, এমন আর কেহ নহে। অথচ, নারীজাতিকে গত ১৩|১৪ শত বৎসর ধরিয়া যেরূপ অসহ্য ঘৃণা করিয়াছে, যত ক্লেশ দিয়াছে, যত অবনত করিয়াছে, তত আর কোন জাতি করিয়াছে কিনা সন্দেহ! ইহাদের Sacredotal celibacyর ইতিহাস, চার্চের ইতিহাস প্রভৃতির পাতায় পাতায় যে পুণ্য-কাহিনী লিপিবদ্ধ হইয়া আছে, তৎসত্ত্বেও ইহাদের মুখের শ্রদ্ধাভক্তির কথা উপহাস ব্যতীত যে আর কি হইতে পারে জানি না।
যে ধর্ম বনিয়াদ গড়িয়াছে, আদিম জননী ইভ-এর পাপের উপর, যে ধর্ম সংসারের সমস্ত অধঃপতনের মূলে নারীকে বসাইয়া দিয়াছে, সে ধর্ম সত্য বলিয়া যে কেহ অন্তরের মধ্যে বিশ্বাস করিয়াছে, তাহার সাধ্য নয় নারীজাতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তাহার শ্রদ্ধা শুধু ততটুকুই হইতে পারে, যতটুকুতে নিজের স্বার্থ জড়িত হইয়া আছে। তাহার অধিক শ্রদ্ধাই বল, ন্যায্য অধিকারই বল, সহস্র বৎসর পূর্বেও পুরুষে দেয় নাই, সহস্র বৎসর পরেও দিবে না। মিল সাহেব তাঁহার Subjection of Women গ্রন্থে ‘isolated fact’ বলিয়া মিথ্যা দুঃখ করিয়া গিয়াছেন।
শুনিতে পাই, এক মহানির্বাণতন্ত্রের “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতি যত্নতঃ” আদেশ ছাড়া আর কোন শাস্ত্রেই নারীকে শিক্ষা দিবার হুকুম নাই। স্বর্গীয় অক্ষয় দত্ত মহাশয় তাঁহার ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থের উপক্রমণিকা-খণ্ডে ইহার বিরুদ্ধে বিস্তর আলোচনা করিয়া দেখাইয়াছেন, প্রাচীনকালে স্ত্রীলোক বেদ পর্যন্ত তৈরি করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু এ-সমস্ত তর্ক কোন কাজেই লাগে না, পুরুষ যখন শাস্ত্রের “ত্রয়ী ন শ্রুতিগোচরা” শ্লোকের সন্ধান পাইয়াছে।
প্রবন্ধ : নারীর মূল্য Chapter : 1 Page: 10
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 223