পাঁচ
কলিকাতা হইতে কিছু তরি-তরকারি ও ফলমূল মিষ্টান্ন আসিয়াছিল; বিজয় চাকরকে দিয়া ঝুড়িটা আনিয়া রান্নাঘরের সুমুখে নামাইয়া রাখিয়া বলিল, ঘরে আছেন নিশ্চয়ই—
ভিতরে হইতে মৃদুকণ্ঠে সাড়া আসিল, আছি।
বিজয় বলিল, মুশকিল হয়েছে আপনাকে ডাকার। আমাদের সমাজে হলে মিস চ্যাটার্জি কিংবা মিস অনুরাধা বলে অনায়াসে ডাকা চলত, কিন্তু এখানে তা অচল। আপনার ছেলে দুটোর কেউ উপস্থিত থাকলে ‘তোদের মাসীকে ডেকে দে’ বলে কাজ চালাতুম, কিন্তু তারাও ফেরার। কি বলে ডাকি বলুন ত?
অনুরাধা দ্বারের কাছে আসিয়া বলিল, আপনি মনিব, আমাকে রাধা বলে ডাকবেন।
বিজয় বলিল, ডাকতে আপত্তি নেই, কিন্তু মনিবানা স্বত্বের জোরে নয়। দায় ছিল গগন চাটুয্যের, কিন্তু সে দিলে গা–ঢাকা; মনিব বলে আপনি কেন মানতে যাবেন? আপনার গরজ কিসের?
ভিতর হইতে শুধু শোনা গেল, ও–কথা বলবেন না, আপনি মনিব বৈ কি।
বিজয় বলিল, সে দাবী করিনে, কিন্তু বয়েসের দাবী করি। আমি অনেক বড়, নাম ধরে ডাকলে যেন রাগ করবেন না।
না।
বিজয় এটা দেখিয়াছে যে, ঘনিষ্ঠতা করার আগ্রহ তাহার দিক দিয়া যত প্রবলই হোক, ও–পক্ষ হইতে লেশমাত্র নাই। সে কিছুতে সুমুখে আসে না এবং সংক্ষেপে ও সম্ভ্রমের সঙ্গে বরাবরই আড়াল হইতে উত্তর দেয়।
বিজয় বলিল, বাড়ি থেকে কিছু তরি–তরকারি, কিছু ফলমূল, মিষ্টি এসে পৌঁছেচে। ঝুড়িটা তুলে রাখুন, ছেলেদের দেবেন।
থাক। দরকার–মত রেখে আপনার বাইরে পাঠিয়ে দেব।
না, সে করবেন না। আমার বামুনটা রাঁধতেও জানে না, দুপুর থেকে দেখচি চাদর মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে। কি জানি আপনাদের দেশের ম্যালেরিয়া তাকে ধরলে কিনা। তা হলে ভোগাবে।
কিন্তু ম্যালেরিয়া ত আমাদের দেশে নেই। বামুন না উঠলে এ–বেলা আপনার রাঁধবে কে?
বিজয় বলিল, এ–বেলার কথা ছেড়ে দিন, ভেবে দেখব কাল সকালে। আর কুকারটা ত সঙ্গে আছেই, শেষ পর্যন্ত চাকরকে দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে পারব।
কিন্তু তাতে কষ্ট হবে ত?
না। নিজের অভ্যাস আছে, শুধু কষ্ট হতে পারত ছেলের খাবার কষ্ট চোখে দেখলে। কিন্তু সে ভার ত আপনি নিয়েছেন। কি রাঁধচেন এ–বেলা? ঝুড়িটা খুলে দেখুন না যদি কাজে লাগে।
কাজে লাগবে বৈ কি। কিন্তু এ–বেলা আমার রান্না নেই।
নেই? কেন?
গল্প : অনুরাধা Chapter : 5 Page: 16
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 182