বেণী। (নিজের ললাট স্পর্শ করিয়া) কারও দোষ নয় খুড়ো, দোষ এর। কলিকাল,—এরই নাম কাল-মাহাত্ম্য। ভালো ছাড়া কখনো কারো মন্দ করিনে, মন্দ করার কথা ভাবতে পারিনে। জগতে আমার এমন হবে না ত হবে কার? বিদ্যেসাগরের কি হয়েছিল? গল্প শুনেচো ত!
গোবিন্দ। তা আর শুনিনি!
বেণী। তবে তাই! দোষ দেবো আর কাকে? (ভৈরবকে দেখাইয়া) এঁকে রক্ষে করতে না যেতাম ত কোন কথাই হতো না! কিন্তু সে ত আর আমি প্রাণ থাকতে পারিনে!
তৃতীয় দৃশ্য
বনাকীর্ণ নির্জন গ্রাম্যপথ
[রমেশ দ্রুতপদে প্রবেশ করিল। রমা অন্তরাল হইতে ডাকিল—রমেশদা? এবং পরক্ষণেই সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল]
রমেশ। রমা! এত দূরে এই নির্জন পথে তুমি?
রমা। আমি জানি পীরপুরের ইস্কুলের কাজ সেরে এই পথে আপনি নিত্য যান।
রমেশ। তা যাই। কিন্তু তুমি কেন?
রমা। শুনেছিলাম এখানে আর আপনার শরীর ভাল থাকচে না। এখন কেমন আছেন?
রমেশ। ভালো নয়। মনে হয় রোজ রাত্রেই যেন জ্বর হয়।
রমা। তা হলে কিছুদিন বাইরে ঘুরে এলে ত ভাল হয়!
রমেশ। (হাসিয়া) ভাল ত হয় জানি, কিন্তু যাই কি কোরে?
রমা। হাসলেন যে বড়? আপনি বলবেন আপনার অনেক কাজ, কিন্তু এমন কাজ কি আছে যা নিজের শরীরের চেয়েও বড়?
রমেশ। নিজের শরীরটা যে ছোট জিনিস তা আমি বলিনে। কিন্তু এমন কাজ মানুষের আছে যা এই দেহটার চেয়েও বড়। কিন্তু সে ত তুমি বুঝবে না রমা।
রমা। আমি বুঝতেও চাইনে। কিন্তু আপনাকে আর কোথাও যেতেই হবে। সরকারমশায়কে বলে দিয়ে যান আমি তাঁর কাজকর্ম দেখবো।
রমেশ। তুমি দেখবে আমার কাজকর্ম?
রমা। কেন, পারবো না?
রমেশ। পারবে। হয়ত আমার নিজের চেয়েও ভাল পারবে, কিন্তু পেরে কাজ নেই। আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো কি করে?
রমা। রমেশদা, ইতরে বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু আপনি পারবেন। না পারলে সংসারে বিশ্বাস করার কথাটা উঠে যাবে। আমাকে এই ভারটুকু আপনি দিয়ে যান।
রমেশ। (ক্ষণকাল নীরবে তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া) আচ্ছা, ভেবে দেখি।
রমা। কিন্তু ভাববার ত সময় নেই। আজই আপনাকে আর কোথাও যেতে হবে। না গেলে
নাটক : রমা Chapter : 3 Page: 57
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 234