[ভৈরবের প্রবেশ]

ভৈরব। (সবিস্ময়ে বেণীবাবুর উদ্দেশ্যে) দেখুন বড়বাবু, আপনার পাছে কষ্ট হয়—

[অকস্মাৎ সম্মুখে রমেশকে দেখিয়া সে বজ্রাহতের ন্যায় স্তব্ধ হইয়া গেল]

রমেশ। (দ্রুতপদে অগ্রসর হইয়া তাহার একটা হাত সবলে চাপিয়া ধরিয়া) কেন এমন করলেন? আজ আমি—

ভৈরব। বড়বাবু—গোবিন্দ গাঙ্গুলীমশাই—দেখুন না একবার—

রমেশ। (ভৈরবকে সজোরে একটা ঝাঁকুনি দিয়া) বড়বাবু, গোবিন্দ—আজি আমি সবাইকে দেখাবো! বলুন কেন এ কাজ করলেন?

[বেণী প্রভৃতি সকলের দ্রুতবেগে পলায়ন]

ভৈরব। (কাঁদিয়া উঠিয়া) লক্ষ্মী রে, পুলিশে খবর দে রে! মেরে ফেললে রে—

রমেশ। চুপ! বলুন, কিসের জন্যে এ কাজ করলেন?

ভৈরব। মেরে ফেললে রে! বাবা রে!

রমেশ। মেরেই ফেলবো। আজ তোমাকে খুন করে তবে বাড়ি যাবো।

[এই বলিয়া সে পুনঃ পুনঃ ঝাঁকুনি দিতে লাগিল। লক্ষ্মী আসিয়া পড়িয়া আর্তনাদ করিতে লাগিল। ইতিমধ্যে বহু লোক সমবেত হইয়া চারিদিক হইতে উঁকিঝুঁকি মারিতে লাগিল]

[দ্রুতবেগে রমার প্রবেশ]

রমা। (রমেশের হাত চাপিয়া ধরিয়া) হয়েচে,—এবার ছেড়ে দাও।

রমেশ। কেন শুনি?

রমা। এই লোকটার গায়ে তুমি হাত দেবে?

রমেশ। একে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।

রমা। (জোর করিয়া হাত ছাড়াইয়া দিয়া) এত লোকের মাঝখানে এই লোকটার গায়ে হাত দিতে তোমার লজ্জা করচে না, কিন্তু আমি যে লজ্জায় মরে যাই রমেশদা! বাড়ি যাও।

রমেশ। মুহূর্তকাল বিহ্বল-চক্ষে তাহার প্রতি চাহিয়া থাকিয়া) আচ্ছা। বাড়িই চললাম।

[রমেশ ধীরে ধীরে প্রস্থান করিতে বেণী, গোবিন্দ প্রভৃতি সকলে ভিড় করিয়া আসিয়া পড়িল। ভৈরব বসিয়া পড়িয়া দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজিয়া কাঁদিতে লাগিল]

গোবিন্দ। বাড়ি চড়াও হয়ে যে আধমরা করে গেল, এর কি করবে এখন সেই পরামর্শ করো।

বেণী। আমিও ত তাই বলি।

রমা। কিন্তু এ পক্ষের দোষও ত কম নয় বড়দা? তা ছাড়া হয়েচেই বা কি যে এই নিয়ে হৈচৈ করতে হবে?

বেণী। বল কি রমা, এ কি সোজা ব্যাপার হোলো? আমরা সবাই না থাকলে ত সে খুন করে যেতো।

রমা। করলেও তোমরা আটকাতে পারতে না বড়দা। পালালে কেন?

বেণী। পালালাম?

গোবিন্দ। পালাবো আমরা? আমরা শুধু আড়াল থেকে দেখছিলাম ওর দৌড় কত?

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়