এ সকল আমি জানি। এবং জানি বলিয়াই ইহার জন্মের কথা তুলিয়াছি, এবং ধীরে ধীরে এই মূল্য যে আজ যথার্থ কতবড় হইয়া উঠিয়াছে তাহা মানবের আদিমযুগের ইতিহাসের দিকে চাহিয়া পরিমাণ করিতে আহ্বান করিতেছি। কি করিয়া পাশব বৃত্তি অদ্ভুত অনির্বচনীয় প্রেমে, পাতিব্রত্যে রূপান্তরিত হইয়াছে, কি করিয়া নরের প্রবৃত্তির মানদণ্ডে প্রথম পরিমিত নারীর মূল্য একদিন ভাবুকের হৃদয়ে অপরিমেয় দেবতার মূল্যে এক আসন পাতিয়াছে এবং সেই তাহার যথার্থ স্থান কি না, তাহা দেখিতে গেলে সাহসপূর্বক গোড়া হইতে দেখিবার চেষ্টা করা উচিত। চোখ বুজিয়া যাহা অভিরুচি হয় বলিব, যাহা খুশি শাস্ত্র বানাইব, যথা ইচ্ছা দাম দিব, এ শুধু বলবানের গায়ের জোরে করা যায়, সত্যের জোরে, ন্যায়ের জোরে করা যায় না। মূল্যের একটা নৈসর্গিক নিয়ম আছে, সেও যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অদ্বিতীয় ও একমাত্র নিয়মের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, কৃত্রিম উপায়ে তাহাকে বাড়াইলে কমাইলে শেষ পর্যন্ত যে সুফল ফলে না, সেন-রাজার কৃত্রিম কুলীন-করা বামুনের দাম যে ক্রমাগত বাড়িয়াই চলে নাই, পেরুর ইঙ্কার জোর-করা আভিজাত্য যে তাহাকে ধ্বংস না করিয়া ছাড়ে নাই, এই সত্য যে-কেহ লোক, যে-কোন জাতি, আলস্য অজ্ঞান বা দম্ভের জোরে অস্বীকার করিবে, সে-ই যে কক্ষভ্রষ্ট উপগ্রহের মত অনিবার্য মৃত্যুর পথেই দিন দিন ধাবিত হইবে, তাহাতে আর সংশয়মাত্র নাই।
এই সত্য সুস্পষ্ট উপলব্ধি করা যায়, জগতের আদিম মানবজাতির রীতি-নীতির দিকে চাহিয়া দেখিলে। ইতিপূর্বে আমি মুখ্যতঃ সভ্য-জাতির সম্বন্ধেই আলোচনা করিয়াছি, তাহারা নারীর মূল্য কোথায় ধার্য করিয়াছে, তাহাই নিরুপণ করিবার প্রয়াস করিয়াছি; এইবার দেখিতে চাহি, যে-মানুষ এখনও সুসভ্য হইয়া উঠিতে পারে নাই, তাহারা নারীর মূল্য কি দিয়াছে।
মূল্য কি করিয়া দেওয়া যায়? আমেরিকার অসভ্য চিপিওয়ানদের সম্বন্ধে হারবার্ট স্পেন্সর লিখিয়াছেন, “men wrestle for any woman to whom they were attached”. বেশ কথা। আবার ইহাদের সম্বন্ধে হার্ন সাহেব শত বৎসর পূর্বে উত্তর-মহাসমুদ্র-ভ্রমণকাহিনীর একস্থানে লিখিয়া গিয়াছেন, ইহারা নিজের জননীকে (বিমাতা নয়) সুন্দরী বিবেচনা করিলে বৃদ্ধ পিতার নিকট হইতে বলপূর্বক কাড়িয়া লইয়া বিবাহ করে এবং ইহাদের সম্বন্ধেই হারবার্ট স্পেন্সরের (Descriptive Sociology) সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে একস্থানে লেখা আছে : “in the Chippewayan tribes divorce consists of neither more nor less than a good drubbing and turning the woman out of doors.” অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীরা ‘fight with spears for possession of a woman.’ আমেরিকার ডগ্রিব জাতিরা ‘fight just like stags’. আমেরিকার মন্ত্র জাতিরা ‘fight like natural enemies’. অথচ ডগ্রিব জাতিরা স্ত্রীকে ‘use like beast of burden’; এবং এক একজন মন্ত্র জীবনে ৪০|৫০ বার বিবাহ করে।
প্রবন্ধ : নারীর মূল্য Chapter : 1 Page: 25
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 198