চক্ষের পলকে দেবদাসের দুই চক্ষু আগুনের মতো জ্বলিয়া উঠিল। কঠিনকণ্ঠে কহিল, পার্বতী! আমাকে কি ভুলে গেলে?
প্রথমটা পার্বতী থতমত খাইল; কিন্তু পরক্ষণেই আত্মসংবরণ করিয়া লইয়া শান্ত কঠিনস্বরে জবাব দিল, না, ভুলব কেন? ছেলেবেলা থেকে তোমাকে দেখে আসচি, জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত ভয় করে আসচি—তুমি কি তাই আমাকে ভয় দেখাতে এসেচ? কিন্তু আমাকেই কি তুমি চেন না? বলিয়া সে নির্ভীক দুই চক্ষু তুলিয়া দাঁড়াইল।
প্রথমে দেবদাসের বাক্য-নিঃসরণ হইল না; পরে কহিল, চিরকাল ভয় করেই আমাকে এসেচ,—আর কিছু না?
পার্বতী দৃঢ়স্বরে বলিল, না, আর কিছুই না।
সত্যি বলচ?
হাঁ, সত্যিই বলচি। তোমাতে কিছুমাত্র আমার আস্থা নেই। আমি যাঁর কাছে যাচ্ছি, তিনি ধনবান্ বুদ্ধিমান্—শান্ত এবং স্থির। তিনি ধার্মিক। আমার মা-বাপ আমার মঙ্গল কামনা করেন; তাই তাঁরা তোমার মতো একজন অজ্ঞান, চঞ্চলচিত্ত, দুর্দান্ত লোকের হাতে আমাকে কিছুতেই দেবেন না। তুমি পথ ছেড়ে দাও।
একবার দেবদাস একটুখানি ইতস্ততঃ করিল, একবার যেন একটু পথ ছাড়িতেও উদ্যত হইল, কিন্তু পরক্ষণেই দৃঢ়পদে মুখ তুলিয়া কহিল—এত অহঙ্কার!
পার্বতী বলিল, নয় কেন? তুমি পার, আমি পারিনে? তোমার রূপ আছে, গুণ নেই—আমার রূপ আছে, গুণও আছে। তোমরা বড়লোক, কিন্তু আমার বাবাও ভিক্ষে করে বেড়ান না। তা ছাড়া, দু’দিন পরে আমি নিজেও তোমাদের চেয়ে কোন অংশে হীন থাকব না, সে তুমি জানো?
দেবদাস অবাক হইয়া গেল।
পার্বতী পুনরায় কহিয়া উঠিল—তুমি ভাবচ যে, আমার অনেক ক্ষতি করবে। অনেক না হোক, কিছু ক্ষতি করতে পার বটে, সে আমি জানি। বেশ, তাই করো। আমাকে শুধু পথ ছেড়ে দাও।
দেবদাস হতবুদ্ধি হইয়া কহিল, ক্ষতি কেমন করে করবো?
পার্বতী তৎক্ষণাৎ বলিয়া দিল—অপবাদ দিয়ে। তাই দাও গে যাও।
কথা শুনিয়া দেবদাস বজ্রাহতের মতো চাহিয়া রহিল। তাহার মুখ দিয়া শুধু বাহির হইল—অপবাদ দেব আমি!
উপন্যাস : দেবদাস Chapter : 8 Page: 33
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 223