চন্দ্রমুখী সহসা উত্তর দিতে পারিল না। আজ তার চব্বিশ বৎসর বয়স হইয়াছে, এই নয়-দশ বৎসরের মধ্যে কত বিভিন্ন প্রকৃতির লোকের সহিত তাহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় হইয়াছে; কিন্তু এমন আশ্চর্য লোক সে একটি দিনও দেখে নাই। একটু ইতস্তত করিয়া কহিল, আপনার যখন পায়ের ধুলো পড়েচে—
দেবদাস কথাটা শেষ করিতে না দিয়াই বলিয়া উঠিল, পায়ের ধুলোর কথা নয়। টাকা নাও তো?
তা নিই বৈ কি। না হলে আমাদের চলবে কিসে?
থাক, অত শুনতে চাইনে। বলিয়া সে পকেটে হাত দিয়া একখানা নোট বাহির করিল এবং চন্দ্রমুখীর হাতে দিয়াই চলিতে উদ্যত হইল—একবার চাহিয়াও দেখিল না কত টাকা দিল।
চন্দ্রমুখী বিনীতভাবে কহিল, এরি মধ্যে যাবেন?
দেবদাস কথা কহিল না—বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইল।
চন্দ্রমুখীর একবার ইচ্ছা হইল, টাকাটা ফিরাইয়া দেয়; কিন্তু কেমন একটা তীব্র সঙ্কোচের বশে পারিল না, বোধ করি বা একটু ভয়ও তাহার হইয়াছিল। তা ছাড়া অনেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও অপমান সহ্য করা অভ্যাস তাহাদের আছে বলিয়াই নির্বাক নিস্পন্দ হইয়া চৌকাঠ ধরিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। দেবদাস সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া গেল।
সিঁড়ির পথেই চুনিলালের সহিত দেখা হইল। সে আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, কোথায় যাচ্চ দেবদাস?
বাসায় যাচ্চি।
সে কি হে?
দেবদাস আরও দুই-তিনটি সিঁড়ি নামিয়া পড়িল।
চুনিলাল কহিল, চল, আমিও যাই।
দেবদাস কাছে আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া বলিল, চল।
একটু দাঁড়াও, একবার উপর থেকে আসি।
না, আমি যাই, তুমি পরে এসো; বলিয়া দেবদাস চলিয়া গেল।
চুনিলাল উপরে আসিয়া দেখিল, চন্দ্রমুখী তখনও সেইভাবে চৌকাঠ ধরিয়া দাঁড়াইয়া আছে।
তাহাকে দেখিয়া কহিল, বন্ধু চলে গেল?
হ্যাঁ।
চন্দ্রমুখী হাতের নোট দেখাইয়া কহিল, এই দেখ। কিন্তু ভাল বোধ কর তো নিয়ে যাও; তোমার বন্ধুকে ফিরিয়ে দিয়ো।
চুনিলাল কহিল, সে ইচ্ছে করে দিয়ে গেছে, আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো কেন?
উপন্যাস : দেবদাস Chapter : 9 Page: 41
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 199