টিমোথি রাইব্যাকের হিটলারস্ প্রাইভেট লাইব্রেরিঃ দ্য বুকস্ দ্যাট শেইপড্ হিজ লাইফ বইটির এ আলোচনাটি দ্য ইকোনোমিস্ট, ৪ অক্টোবর, ২০০৮ সংখ্যা থেকে অনূদিত হলো।
বই পড়ার চেয়ে বই পোড়ানোর জন্যই তাঁর খ্যাতি ছিল বেশি। কিন্তু হিটলারের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির অক্ষত অংশটুকু বলছে, এই জার্মান একনায়ক ছিলেন একজন নেশাতুর বই-সংগ্রাহক; যে সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে ক্লাসিকস, ইতিহাস, ভ্রমণরচনা, জীবনী, জাদুবিদ্যা এবং আরও অনেক কিছু।
টিমোথি রাইব্যাকের প্রধান আবিষ্কার হিটলারের সুবিশাল পুস্তক-সংগ্রহের একটি অংশ যেগুলো এখন সংরক্ষিত হয়ে আছে লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ঝাপসা, অন্ধকার একটা কোণে। বাদবাকি বইগুলো পাওয়া গেছে আমেরিকান কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যাঁরা সেগুলোকে স্যুভেনির হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য সবচেয়ে বড় ভাগটা গিয়েছিল সোভিয়েত সেনাবাহিনীর বরাতে। বার্লিনের রাইখ চ্যান্সেলরিতে (জার্মান চ্যান্সেলরের দপ্তরের পুরোনো নাম) ১০ হাজার বইয়ের যে সংগ্রহটি ছিল সেটিকে ১৯৪৫ সালে জাহাজে করে মস্কো নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার পর থেকে বইগুলোকে জনসম্মুখে আর আনা হয়নি। নব্বইয়ের দশকে একটা পরিত্যক্ত চার্চে এগুলোকে খুঁজে পাওয়া গেলে গবেষকদের মনে আশা সঞ্চারিত হয়। কিন্তু আফসোস, হঠাৎ করেই বেমালুম গায়েব হয়ে যায় বইগুলো।
তার পরও, বাদবাকি যা আছে সেগুলো মোটেই কম না। বেশি করে নাড়াচাড়া করা বইগুলো-মেইন ক্যাম্ফ লেখার জন্য হিটলার যেগুলোর সহায়তা নিয়েছিলেন-ঘেঁটে ঘেঁটে লেখক খুব পরিচ্ছন্নভাবেই হিটলারের রাজনৈতিক জীবন এবং তাঁর বই সংগ্রহের নেশার যৌথবুনন করতে পেরেছেন। ইঙ্গিত অনুসরণ ও অনুমানের ক্ষেত্রে জার্মান সাহিত্য এবং নাৎসি রাজনীতিবিষয়ক জ্ঞান রাইব্যাকের সহায়ক হয়েছে। এই অনুমানের ভিত্তি যেমন গৃহীত বিষয়গুলোর স্থান ও কাল, তেমনি মার্জিনের পাশে লিখে রাখা হিটলারের টীকা-টিপ্পনি। হিটলার কেবল একজন উৎসুক পাঠকই ছিলেন না, বই দাগানোর ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন প্রতিনিবিষ্ট। সব থেকে হিমশীতল উদাহরণটি সম্ভবত পল দ্য ল্যাগার্ডের জার্মান এসেজ। এই বইয়ে হিটলার আন্ডারলাইন করে রেখেছেনঃ ‘প্রতিটি ক্লেশকর ইহুদিই আমাদের জার্মান পরিচয়ের মর্যাদা ও বিশুদ্ধতার প্রতি এক চরম অবমাননা’।
হিটলারস্ প্রাইভেট লাইব্রেরিঃ দ্য বুকস্ দ্যাট শেইপড্ হিজ লাইফ বইটিতে রাইব্যাক আবিষ্কার করেছেন, খুচরো আর টুকরো জিনিসের প্রতি হিটলারের আকর্ষণ ছিল বেশি। যেসব উপাদানকে তিনি প্রয়োজনীয় বলে ভাবতেন, মূলত সেগুলোর সন্ধানেই দ্রুতগতিতে বই পড়তেন; সেইসব উপাদান যেগুলো তাঁর বিভ্রান্ত ইতিহাসবোধ এবং ছদ্ম বিজ্ঞানের সঙ্গে খাপ খেত। যেগুলো খাপ খেত না সেগুলোকে বাতিল করে দিতেন। এটাই, রাইব্যাক জানাচ্ছেন, হিটলারের মূল বৈশিষ্ট্যঃ ‘শোপেনহাওয়ার কিংবা নিৎসের দর্শনের কোনো অতল কিংবা গভীর পাতন নয়, তার পরিবর্তে বরং সস্তা কিছু পেপারব্যাক আর শক্ত মলাটের গোপন পুস্তিকা থেকে প্রাপ্ত লঘু তত্ত্বের মিশেল জন্ম দিয়েছিল সূক্ষ্ম, হিসেবি, উৎপীড়ক মিথ্যাবাদিতার’।
রাইব্যাকের কাজটি ভালো হয়েছে এই অর্থে যে তিনি নিরাবেগ তদন্ত এবং নৈতিকতাজাত ঘৃণার মধ্যে একটি ভারসাম্য ধরে রাখতে পেরেছেন। তার পরও ফলাফলটি কিছুটা গা-ছমছমে। হিটলারের সংগ্রহের সম্ভবত প্রথম দিককার একটি বই-বার্লিনের একটি স্থাপত্য ইতিহাস, যা হিটলার কিনেছিলেন ১৯১৫-এর নভেম্বরে-ঘাঁটতে ঘাঁটতে ১৬০ ও ১৬১ পৃষ্ঠার ফাঁকে লেখক আবিষ্কার করেন, ‘ইঞ্চিখানেক দৈর্ঘ্যের একটি কালো চুল যাকে কারও গোঁফের অংশ বলেই মনে হয়’। হঠাৎ করেই ব্যাপারটা আর ঠিক স্বস্তিকর থাকে না।
অনুবাদঃ তানিম হুমায়ুন
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৫, ২০০৮