৫. হারানো দিন ফিরে পাওয়া
সাড়ে ছটায় বাড়িতে ফিরেই ঠিক করলাম মা আর দিব্যেন্দুকে একটা সারপ্রাইজ দেবো। সাতটার সময় ফিরে এসে মা একটা সবজি আর ভাত রান্না করে। সাতদিনের রান্না করা মাছ মাংস ফ্রিজে থাকে। ওখান থেকে দরকারমতো গরম করে নেয়া হয়। আমি ঠিক করলাম মাকে আজ রান্না করতে দেবো না।
আমাদের বাড়ি থেকে অল্প দূরে চমৎকার একটা ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবীদের রেস্তোরাঁ আছে। দিব্যেন্দু আর মা দুজনেই কাবাব আর তন্দুরি খুব পছন্দ করে। মাসে একদিন আমরা ইন্ডিয়ান কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে কাবাব তন্দুরি খাই।
আমার জমানো টাকা থেকে দশ পাউন্ডের দুটো নোট তুলে নিলাম। ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয় গিয়ে তিনজনের মতো কাবাব, তন্দুরি আর আলুমটরপনির ভাজা নিলাম। সেই সঙ্গে দইয়ের সালাদ। সব কিছু ওরা এক জায়গায় পার্সের প্যাকেট করে দিলো। চৌদ্দ পাউন্ড দাম পড়লো। সেখান থেকে বেরিয়ে দুই পাউন্ড দিয়ে পাঁচটা হালকা বেগুনি রঙের ব্লু মুন গোলাপ কিনলাম। এর গন্ধের তুলনা হয় না। বাড়িতে মা ওয়াইন রাখে না। কোনো অতিথি এলে অবশ্য কেনা হয়। দিব্যেন্দু রেড ওয়াইন পছন্দ করে। তবে পার্টি ছাড়া খায় না। ওর জন্য এক বোতল ইটালিয়ান রেড ওয়াইন কিনলাম। বললাম, প্রেজেন্ট করবো। ওয়াইন শপের লোকটা বোতলের গলায় সুন্দর রিবনের ফুল লাগিয়ে দিলো।
ঘরে ফিরে ডাইনিং টেবিলে সব কিছু সাজিয়ে রাখলাম। ন্যাপকিন, প্লেট, গ্লাস জায়গামতো রেখে মোমদানিতে দুটো মোমবাতি লাগালাম। গোলাপগুলো টেবিলের মাঝখানে ক্রিস্টালের ফুলদানিতে রাখলাম। সব কিছু তৈরি করার পর ডোরবেল বাজলো। ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটা বাজে।
আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলোম। মা আর দিব্যেন্দু ফিরেছে। মা বললো, সারাদিন কি বাড়িতে ছিলি?
বললাম, না, বেরিয়েছিলাম। দুপুরে বাইরে খেয়েছি।
দিব্যেন্দু আমাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো। ভেতর থেকে গলা তুলে বললো, অনীক, তোমার কি কোনো গেস্ট আসবে?
আমি মুখ টিপে হেসে বললাম, হ্যাঁ আসবে।
মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। জানতে চাইলো, কে আসবে?
তোমরা জলদি রেডি হয়ে এসো। দরকারি কথা আছে।
মা কথা না বাড়িয়ে ওপরে চলে গেলো। দিব্যেন্দু আগেই উঠে গেছে। মাঝে মাঝে আমার গেস্ট আসে বৈকি! কখনও আমার কোনো বন্ধুর সঙ্গে ওর বাবা মা, কিংবা স্কুলের কোনো টিচার আসে। ওরা আসার আগেই মাকে জানাই। মা দু একটা ভালো রান্না করে রাখে। দিব্যেন্দুকেও দেখেছি, আমার কোনো বয়স্ক অতিথি এলে তাকে ভালোভাবেই রিসিভ করে। টেবিলের আয়োজন দেখে ও নিশ্চয় ভেবেছে আমার কোনো ভিআইপি গেস্ট আসবে।
পনেরো মিনিট পর দিব্যেন্দু গাঢ় নীল ফর্মাল ডিনার স্যুট পরে নিচে নামলো। একটু পরে মা নামলো। পরনে-নকশি কাঁথার ডিজাইন করা খয়েরি রঙের সিল্কের শাড়ি। দিব্যেন্দু সোফায় বসে বললো, কখন আসবে তোমার গেস্ট।
মা বললো, এত সব কখন করলি? কে আসবে, কিছু তো বললি না।
বলছি। তোমরা ডাইনিং টেবিলে এসে বসো।
দিব্যেন্দু মনে হলো একটু বিরক্ত হয়েছে। উঠে এসে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে বললো, গেস্টের জন্য জায়গা রাখোনি তো অনীক! তুমি কি আমাদের সঙ্গে বসবে না?
মা আর দিব্যেন্দু ওদের চেয়ারে বসেছে, আমাদের গোল ডাইনিং টেবিলে পাঁচজন বসতে পারে। আমি তিনজনের বসার ব্যবস্থা করেছিলাম। মোমবাতি জ্বালিয়ে আমি আমার চেয়ারে বসে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললাম, আজ তোমরা আমার গেস্ট!
দিব্যেন্দু আর মা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। মা ভীষণ অবাক হয়ে বললো, আমরা তোর গেস্ট হবো কেন? তুই কি পাগল হয়েছিস?
পাগল কেন হবো! আমি হেসে বললাম, নাও শুরু করো। তোমাদের সঙ্গে আমার জরুরী কথা আছে। খেতে খেতে বলছি। দিব্যেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ওয়াইনটা তোমার জন্য দিব্যেন্দু।
এতক্ষণে দিব্যেন্দুর মুখে হাসি ফুটলো। মা আর ওর প্লেটের পাশে দুটো ওয়াইন গ্লাস রেখেছিলাম। আমি নিয়েছি অরেন্স জুস। বোতলের ছিপি খুলে গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে দিব্যেন্দু মাকে বললো, কী ব্যাপার বলো তো! আজ কি আমাদের কারও বিশেষ কোনো দিন?
মা বললো, আমি কী করে জানবো! ওকে জিজ্ঞেস করো।
ওদের গ্লাসে মদ ঢালার পর আমি আমার অরেঞ্জ জুসের গ্লাস তুলে বললাম, এসো টোস্ট করি।
দিব্যেন্দু আর মা ওদের গ্লাস তুললো। আমি বললাম, আগামী বছর আমি একটা ভাই নয়তো বোন পেতে চাই, সেই প্রত্যাশায়।
ওরা দুজন অসম্ভব অবাক হয়ে একবার আমাকে দেখলো, আরেকবার নিজেদের দেখলো। আমার কথা শুনে মা চমকে ওঠাতে হাত কেঁপে একটু মদ ছলকে প্লেটে পড়লো। আমি হাসি চেপে গ্লাসে চুমুক দিলাম। ওদেরও গ্লাসে চুমুক দিতে হলো। তারপর গ্লাস নামিয়ে রেখে মা বিব্রত গলায় বললো, তুই এসব কী বলছিস অনীক?
দিব্যেন্দু তখনও অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওকে বললাম, আমি কি অন্যায় কিছু বলেছি দিব্যেন্দু?
তোমার একথা কেন মনে হলো? প্রশ্ন করলো দিব্যেন্দু।
আমি শান্ত গলায় বললাম, ফুলদানিতে রাখা এই গোলাপগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখ। এর একটা তুমি, একটা মা, একটা আমি আর দুটো আমার ভাই আর বোন।
মার গালের রঙ লাল হলো। দিব্যেন্দু গলা খুলে হাসলো। বললো, তুমি খুব পাকা কথা শিখেছো নিক। তবে কথা হচ্ছে একটা ভাই, একটা বোন এমন প্রতিশ্রুতি আমরা কেউ দিতে পারবো না। দুটো ভাই হতে পারে, দুটো বোন হতে পারে, দুটো না হয়ে একটাও হতে পারে এটা আমাদের হাতে নয়।
যাই হোক, তাতেই আমি খুশি।
দিব্যেন্দু গ্লাস তুলে বললো, এবার আমি টোস্ট করবো।
মা লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেছে। তবু গ্লাস তুললো। আমিও তুলোম। দিব্যেন্দু বললো, আমাদের বড় ছেলে অনীকের খুশির জন্য।
আমি হেসে বললাম, চিয়ার্স।
কাল রাতে ঠিক এ সময়ে আমাদের সবার মনের ভেতরটা কালো মেঘের অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিলো। আজ দিব্যেন্দুর হাসির সঙ্গে সেই মেঘ মুহূর্তের ভেতর উধাও হয়ে গেলো। গ্লাস নামিয়ে শান্ত গলায় দিব্যেন্দু বললো, তোমাকে ছেলে হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত নিক।
আমি হেসে বললাম, বাবার মতো বাবা নয়, আমি বন্ধুর মতো বাবা চাই, যেমনটি তুমি ছিলে।
তাই হবে নিক। আমি আমার কালকের দুর্ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। অফিসে গিয়ে সারাক্ষণ বুকের ভেতর ওটা কাঁটার মতো খচখচ করেছে।
আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম দিব্যেন্দু।
আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো।
মা বললো, কিসের দুর্ব্যবহারের কথা তোমরা বলছো?
দিব্যেন্দু আমাকে চোখ টিপে বললো, ওটা আমাদের দুজনের ব্যাপার। তোমার না শুনলেও চলবে।
মোমবাতির আলোয় আমাদের এক স্মরণীয় নৈশভোজ শেষ হলো। রান্নার প্লেট বোয়ার কাজে আমিও মাকে সাহায্য করলাম। তারপর তিনজন এসে লিভিংরুমের সোফায় বসে ভিসিআর-এ কালকের না-দেখা হরর ছবিটা দেখার জন্য লাগালাম। মাকে বললাম, জানো মা, আজ এক চমৎকার মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো। আলফ্রেডের সঙ্গে পরিচয়ের কথা বললাম। মাকে আর দিব্যেন্দুকে নিয়ে ওর সঙ্গে কী কথা হয়েছে তাও বললাম। মা সব শুনে বললো, ওয়েলস-এর মানুষগুলোর মন খুব নরম হয়।
দিব্যেন্দু বললো, আমি তোমার নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হতে পারলে খুশি হবো নিক।
মা বললো, কাল উইকএন্ড আছে। ওকে বল কাল আমাদের সঙ্গে ডিনার করতে।
আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম, ও খুব খুশি হবে মা। আমি ঠিক করেছি শীলা, জেন আর ভিকিকে নিয়ে ওর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবো। ওদেরও কি কাল আসতে বলবো মা?
তোর বন্ধু আসবে। যাকে খুশি আসতে বলবি।
মার কথার সঙ্গে দিব্যেন্দু হেসে যোগ করলো, শুধু সংখ্যাটা আমাদের জানা থাকা দরকার।
আমাকে এতটা অবিবেচক ভাবা ঠিক হচ্ছে না দিব্যেন্দু। হাসি চেপে গম্ভীর হয়ে বললাম আমি।
আলফ্রেডকে আমার মনে হচ্ছিলো জাদুকর। তার জাদুর কাঠি বুলিয়ে আমাদের তিনজনের এই পরিবারে আনন্দের ফোয়ারা ছুটিয়ে দিয়েছে। মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো, দিব্যেন্দু তুমি কি আরেক কাপ কফি খাবে?
আমাদের ছবি দেখা শেষ হয়ে গেছে। দিব্যেন্দু মাকে বললো, তুমি যদি খাও আমিও খেতে পারি। তারপর গলা নামিয়ে আমাকে বললো, তোমারও এক কাপ খাওয়া উচিত। ওর গলায় ষড়যন্ত্রের আভাস।
কেন? জানতে চাইলাম আমি।
কাল রাতে তোমার ভালো ঘুম হয়নি। আমরা বেডরুমে ঢুকলেই তুমি টেলিফোন নিয়ে বসবে। শীলার সঙ্গে কখনও দুঘন্টার নিচে কথা শেষ করতে পেরেছে বলে তো মনে পড়ছে না। কফি খেলে সহজে ঘুম আসবে না।
একবারই দিব্যেন্দু দেখেছিলো মাঝরাতে আমি টেলিফোনে কথা বলছি। দিব্যেন্দুকে বললাম, তার মানে তুমি রাত জেগে আমার টেলিফোন শোন। অন্যের টেলিফোনে আড়িপাতা মোটেই ঠিক নয় দিব্যেন্দু।
রাত জাগবো কেন? নিরীহ গলায় দিব্যেন্দু বললল, মাঝরাতে কেউ যদি টেলিফোনে কাউকে–কাম ব্যাক হোয়েন ইউ গ্রো আপ গার্ল গান গেয়ে শোনায়, প্রতিবেশীদের ঘুম না ভেঙে উপায় আছে!
সর্বনাশ দিব্যেন্দুটা কি পাজি! গিটারে সুরটা তুলতে পারছিলো না বলে এক রাতে ভিকিকে আমি গানের সুর বলে দিচ্ছিলাম। ও ধরে নিয়েছে আমি শীলাকে এ গান শুনিয়েছি! বললাম, আমি কক্ষনো শীলাকে এ গান গেয়ে শোনাইনি।
আমি কি একবারও বলেছি তুমি শীলাকে এ গান শুনিয়েছে!
আমি উঠে গিয়ে দিব্যেন্দুর পিঠে দুটো কিল মারলাম তুমি ভীষণ পাজি হয়েছে।
দিব্যেন্দু আমার পিঠে কুশন দিয়ে মারলো। মা দুটো কফির কাপ হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে বললো, এসব কী দুষ্টুমি হচ্ছে!
কফি শেষ করে মা আর দিব্যেন্দু শুতে গেলো। আমি টেলিফোন নিয়ে বসলাম। শীলাকে প্রথমেই বকুনি দিলাম–সকালে কোথায় বেরিয়েছিলে?
আমার এক আন্টি এসেছে কায়রো থেকে। তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম। আমার ওপর চোটপাট কোরো না। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমাকে দশবার ফোন করেছি, কোনো সাড়া নেই।
আজ এক কান্ড হয়েছে। বলে আলফ্রেডের কথা ওকে বললাম, দিব্যেন্দু আর মার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে।
শীলা উত্তেজিত হয়ে বললো, তুমি সত্যিই ওয়েলস যাচ্ছো? আমার অনেক দিনের সখ ওয়েলস-এর পাহাড় আর হ্রদ দেখার।
ইচ্ছে হলে আমার সঙ্গে যেতে পারো।
নেমন্তন্ন করেছে তোমাকে। আমার যাওয়া কি ঠিক হবে?
আমার বন্ধুরাও আমন্ত্রিত। ভিকি আর জেনকেও বলবো।
সত্যি বলছো?
হ্যাঁ সত্যি!
কী মজাই না হবে! কদিন থাকবে?
আলফ্রেড বলেছে যতদিন খুশি। আমি ভাবছি দিন তিনেক থাকবো।
কবে যেতে চাইছো?
পরশু, রোববার। কাল সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে তোমাদের নেমন্তন্ন আছে। আলফ্রেডও আসবে।
তোমার মা বাবা জানে?
জানবে না কেন, ওরাই তো নেমন্তন্ন করেছে।
শীলা ধন্যবাদ জানিয়ে টেলিফোন নামিয়ে রাখলো। জেন আর ভিকিকেও নেমন্তন্ন করলাম। ওয়েলস যাওয়ার কথা শুনে ওদের আনন্দ আর ধরে না। আসলে আমার মতো আমার বন্ধুরাও দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে মজা পায়। অন্যসব বন্ধুদের ভেতর এদের তিনজনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বেশি। আমাদের চারজন যেমন চারটি আলাদা দেশ থেকে লন্ডন এসেছি, আমাদের চারজনের ধর্মও আলাদা। শীলা খৃষ্টান, ভিকি হিন্দু, জেন ইহুদি আর আমি মুসলমান। কেউ জানতে চাইলে এসব পরিচয় দেয়া হয় বটে, আমরা কিন্তু কখনও মনে করি না আমাদের দেশ বা ধর্ম আলাদা। নিজেদের দেশকে ভালোবাসলেও আমরা কেউ ধর্ম মানি না।
পরদিন সকালে মা আর দিব্যেন্দু বেরিয়ে যাওয়ার পর আলফ্রেডকে ফোন করলাম। রাতের নেমন্তনের কথা শুনে সে অভিভূত হয়ে গেলো। বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলোবাবা মা দুজনে জানে কিনা। জানে শুনে ও খুবই অবাক হলো। বললো, ঠিক সাতটার সময় ও আমাদের বাসায় পৌঁছে যাবে।
পরদিন ছিলো শনিবার। বিবিসির কাজে রোববারের মতো কোনো রুটিন ধরা ছুটি নেই। সপ্তায় একদিন ছুটি পাওয়া যাবে। নিজেদের মধ্যে সবাই ঠিক করে নেয় কে কোন দিন ছুটি নেবে। মার যেমন শনিবারে ছুটি, দিব্যেন্দুর রোববারে। দুজনের একই দিনে হলে ভালো হতো কিন্তু হওয়ার উপায় নেই। তবে কাজের চাপ রোজ সমান থাকে না। কাজ কম থাকলে অফিসে দেরিতে গেলেও চলে কিংবা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যায়। আবার যেদিন কাজ বেশি থাকে সেদিন একনাগাড়ে বারো ঘন্টাও কাজ করতে হয়।
সকালে দিব্যেন্দু গাড়ি নিয়ে একা বেরোলো। যাওয়ার সময় মাকে বললো, ছটার মধ্যেই ফিরছি। সালাদটা আমি এসে বানাব।
দিব্যেন্দু চমৎকার সালাদ বানাতে পারে। দেশী আর বিলেতি মিলিয়ে এমন মজার সালাদ বানায়, অনেক সময় আমাদের বাড়ির পার্টিতে মেইন ডিশের চেয়ে সালাদ বেশি খাওয়া হয়ে যায়।
মা বললো, তোর বন্ধুদের কী খাওয়াবি বল। তোমার যা ইচ্ছে করবে। মার পছন্দের উপর ব্যাপারটা ছেড়ে দিলাম।
আমাদের বাড়িতে ওরা নিশ্চয় বিলেতি খাবার আশা করবে না। মা বললো, মেইন ডিশ-এ ঝাল কম দিয়ে হাড়ছাড়া মুরগির দোপেঁয়াজি করি, একটা চাইনিজ মিক্সড ভেজিটেবল থাকুক প্রন দেয়া, সঙ্গে থাকবে আস্ত স্যামন মাছের রোস্ট। আর কিছু লাগবে?
দারুণ হবে মা! কিন্তু স্যামনের রোস্টটা খুব দামী হয়ে যাচ্ছে না?
মা মিষ্টি হেসে বললো, আলফ্রেড এ বাড়িতে প্রথম আসছে, শীলারা হলে না হয় অন্য কিছু দিতাম। তুই তরকারিগুলো কেটে ফেল। আমি মাছটা নিয়ে আসি।
মুরগি, তরকারি সব আমাদের ফ্রিজেই থাকে। স্যামন মাছ কিংবা গলদা চিংড়ির মতো দামী মাছ কদাচিৎ কেনা হয়। মা চলে যাওয়ার পর ফ্রিজ থেকে আলু, সিম, ফুলকপি, গাজর, বিট সব বের করে খোসা ছাড়ালাম। দু বছর ধরে ছুটির দিনে মাকে আমি রান্নায় সাহায্য করি। দিব্যেন্দু নিজেও খুব ভালো রান্না জানে। তবে ও যখন মাঝে মাঝে এক্সপেরিমেন্ট করে, রান্না আগে যেমন ঘোষণা করে আজ মুরগি রান্না হবে মেক্সিকান আর চাইনিজ রেসিপি মতে, তখন আমি আর মা অদ্ভুত স্বাদের কোনো বস্তু খাওয়ার অপেক্ষায় খুব টেনশনে থাকি।
সন্ধ্যায় দিব্যেন্দু ফেরার আগেই আমাদের রান্নার কাজ শেষ হয়ে গেলো। মা একটা স্ট্রবেরির পুডিংও বানিয়েছে। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারগুলো সরিয়ে ফেলেছি বুফে খাওয়া হবে বলে। কালকের গোলাপগুলো এখনও তাজা রয়েছে। টেবিলের কাছে। গেলে গোলাপের মিষ্টি আমেজ ভরা গন্ধ পাওয়া যায়।
দিব্যেন্দু এলো সাড়ে ছটায়। এসেই ঝটপট হোয়াইট সস, সেদ্ধ আলু, মটরশুটি, শসা আর বিট দিয়ে ওর নিজস্ব রেসিপির একটা সালাদ বানালো। গতকাল কেনা রেড ওয়াইন প্রায় পুরো বোতলই রয়ে গেছে। ছোটদের জন্য দিব্যেন্দু মার্টিনি এনেছে।
আলফ্রেডের আসার কথা সাতটায়। শীলা, জেন আর ভিকি সাতটা বাজার দশ মিনিট আগেই এসে পড়েছে। আমি ওদের নিয়ে লিভিংরুমে গিয়ে আড্ডা জমালাম।
ভিকির বাড়ি ইন্ডিয়ার গুজরাটে। বললো, তুই কোত্থেকে যে অদ্ভুত সব বন্ধু জোগাড় করিস দেখলে তোকে হিংসে হয়। একদিনের পরিচয়ে বুড়ো একবারে নিজের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে বসলো!
আমি শুধরে দিলাম, পুরো একদিনও নয়। কয়েক ঘন্টা বলতে পারিস।
জেন রহস্য করে বললো, বুড়ি হলে না হয় কথা ছিলো। আমাদের নিককে কেন পছন্দ করেছে বোঝা যেতো। সত্তর বছরের এক বুড়োর সঙ্গে মিতালি পাতানো খুব রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
আমি হেসে বললাম, তুমি নিশ্চিন্ত মনে ওর সঙ্গে ডেট করতে পারো, আমরা কিছু মনে করবো না।
জেন গম্ভীর হওয়ার ভান করে বললো, আমার সঙ্গে বুড়ো কোন দুঃখে ডেট করবে–শীলার মতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে।
শীলা হেসে বললো, বয়ে গেছে আমার সত্তর বছরের এক বাঁচাল বুড়োর সঙ্গে ডেট করতে।
ভিকি বললো, তুমি কি শুধু বুড়োর বয়সটা দেখবে? ওর ব্যাংক ব্যালেন্সটা দেখবে না?
কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো। সেই হাসির মাঝখানে কখন ডোরবেল বেজেছে, কখন দিব্যেন্দু গিয়ে আলফ্রেডকে ভেতরে এনেছে টেরও পাইনি। চমক ভাঙলো আলফ্রেডের গলার আওয়াজ শুনে–শুভ সন্ধ্যা, ক্ষুদে বন্ধুরা। আমি আসার আগেই পার্টি জমে গেছে দেখছি।
শুভ সন্ধ্যা বলে আমি উঠে গিয়ে ওর সঙ্গে হাত মেলালাম, এসো আলফ্রেড, আমার বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করে দিই।
আলফ্রেডের হাতে মস্ত এক ফুলের তোড়া। সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললো, তোমরা সবাই নিক-এর বন্ধু যখন, আশা করি আমাকেও তোমাদের বন্ধুত্ব থেকে বঞ্চিত করবে না।
ভিকি হেসে বললো, এতক্ষণ আমরা তোমার কথা বলছিলাম। আগামীকাল সবাই তোমার বাড়িতে হামলা করার পরিকল্পনা করেছি।
শিশুর মতো সরল হাসিতে আলফ্রেডের মুখ ভরে গেলো–তোমাদের মতো দেবদূতদের দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজেকে আমি সৌভাগ্যবান মনে করবো।
আলফ্রেডের কথা শুনে মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমি মাকে পরিচয় করিয়ে দিতে যাবো–আলফ্রেড হাত তুলে বাধা দিলো–আমাকে বলতে হবে না। পরির মতো মিষ্টি মেয়েটি যে আমাদের নিকের মা একথা যে কেউ বলতে পারে।
মা লজ্জায় লাল হয়ে আলফ্রেডের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললো, আমি খুব খুশি হয়েছি তোমাকে আমাদের মধ্যে পেয়ে।
আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হয়নি, বলে আলফ্রেড ফুলের তোড়াটা মার হাতে তুলে দিলো।
আলফ্রেডকে ধন্যবাদ জানিয়ে মা বললো, তুমি নিজের বাড়ি মনে করে আরাম করে বসো। আমি এক্ষুনি আসছি।
আলফ্রেড আমাদের বললো, তোমরা সবাই তা হলে কাল এই পাজি বুড়োটার আতিথ্য গ্রহণ করতে ওয়েলস যাচ্ছো।
আনন্দের সঙ্গে সবাই হইহই করে উঠলো। আলফ্রেডের সঙ্গে বসে ঠিক করলাম কখন কীভাবে সবাই একত্রিত হবো। ভিকি বললো, তোমার বাড়িতে যাওয়ার প্রধান আকর্ষণ যদিও তুমি নিজে, দ্বিতীয় আকর্ষণ হচ্ছে তোমাদের পাশের গ্রামের হন্টেড প্যালেস। নিক আমাদের সব বলেছে।
আলফ্রেড হেসে বললো, বাচঁলেকে একবার মাছ ধরতে বসলে তোমরা পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যাবে।
শীলা বাচ্চা মেয়ের মতো হাত তালি দিয়ে আদুরে গলায় বললো, ওফ, মাছ ধরার চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আমাদের কি ছিপ নিতে হবে আলফ্রেড?
কোনো দরকার নেই। আমার বাড়িতে প্রচুর আছে।
মা এসে বললো, ডিনার তৈরি। তোমরা যখন খাবে বলবে।
দিব্যেন্দু আমাদের চারজনকে মার্টিনির ককটেল এনে দিলো। আলফ্রেড আর মাকে দিলো ভদকা আর ব্লুবেরির ককটেল। নিজেও নিলো এক গ্লাস।
আমরা সবাই আলফ্রেডের স্বাস্থ্য, আমাদের স্থায়ী বন্ধুত্ব, আগামীকালকের সফল যাত্রার উদ্দেশ্যে পর পর টোস্ট করলাম।
খেতে বসে আলফ্রেড রান্নার প্রশংসা করতে গিয়ে অভিধানের সবচেয়ে সেরা বিশেষণগুলো ব্যবহার করলো। সেসব কথায় মা লজ্জায় আপেলের মতো লাল হয়ে গেলো।
খাওয়ার পর আবার গল্প। ফেরার সময় আলফ্রেড বললো, বহু বছর এত আনন্দভরা পার্টিতে আমি যোগ দিইনি।
আলফ্রেড ছিলো আমাদের পার্টির মধ্যমণি। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ষোল বছর যে একা দিন কাটাচ্ছে তার কাছে আমাদের বাড়ির সাধারণ পার্টিও যে অসাধারণ মনে হবে এ আর বিচিত্র কী!
.
৬. আলফ্রেডের জন্য দুঃসংবাদ
আলফ্রেডের সঙ্গে কথা ছিলো সকাল নটার ভেতর গাড়ি নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে। ভিকি একটা ট্যাক্সি নিয়ে শীলা আর জেনকে তুলে আনবে। আলফ্রেডদের বাড়ি ওয়েলস-এর সাউথ গ্ল্যামের্গোনের পেনার্থে। যেতে হবে রাজধানী কার্ডিফ হয়ে। লন্ডন থেকে কার্ডিফ যেতে গাড়িতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে। কার্ডিফ থেকে পেনার্থের দূরত্ব বারো মাইল। ঘড়ি ধরে ঠিক কাঁটায় কাঁটায় নটায় এসে পৌঁছলো আলফ্রেড। তখনও শীলারা এসে পৌঁছায়নি।
দিব্যেন্দু মার সঙ্গে বেরিয়েছে। মাকে বুশ হাউসে নামিয়ে দিয়ে ওর এক বন্ধুর বাড়িতে যাবে কী এক কাজে। যাওয়ার সময় দুঃখ প্রকাশ করেছে থাকতে পারছে না বলে। পরশু রাতের পর দিব্যেন্দু আবার আগের মতো চমৎকার ব্যবহার করছে। ঠিক আগের মতোও নয় তার চেয়ে বরং বেশিই করছে। আমার সঙ্গে সকালে যেমন পরামর্শ করলো, পুরোনো এ বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে আরও ভালো বাড়িতে উঠবে কিনা এ নিয়ে। এ বাড়িতে আমার জন্ম না হলেও চৌদ্দ বছর ধরে থাকার কারণে এটার ওপর এক ধরনের মায়া পড়ে গেছে। দিব্যেন্দুকে সেটা বলাতে ও আর কথা বাড়ায়নি।
আলফ্রেড রাস্তার ওপর গাড়ি থামিয়ে ভেতরে এলো। আমি বাইরের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম ওদের অপেক্ষায়। আলফ্রেডকে বললাম, ওরা তো এখনও এলো না। টেলিফোন করে দেখবো?
এত ব্যস্ত হওয়ার কী আছে! হেসে বললো আলফ্রেড–ওরা না আসা পর্যন্ত তোমার সঙ্গে একটু এক্সকুসিভ কথা বলবো, যদি বুড়োটাকে অসহ্য মনে না করো।
আলফ্রেড তুমি আমার বন্ধু। গম্ভীর হয়ে বললাম, একথা বলে তুমি আমার বন্ধুত্বকে অপমান করছো। তুমি কী করে ভাবতে পারলে তোমাকে অসহ্য মনে করবো?
আমার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে আলফ্রেড বললো, আমি দুঃখিত। তুমি যদি আহত বোধ করো– আমার কথা প্রত্যাহার করছি!
ধন্যবাদ, আশা করি ভবিষ্যতে এরকম কথা তুমি বলবে না।
আলফ্রেড আর আমি ড্রইংরুমে সোফায় বসেছিলাম। আমার কথা শুনে ও বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ আমাকে দেখলো। আমি বিব্রত বোধ করলাম–। এভাবে কী দেখছো আলফ্রেড?
তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো নিক?
কেন বাসবো না! তোমার মতো চমৎকার বন্ধু কজনের ভাগ্যে জুটে।
আলফ্রেডের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। আপন মনে বললো, আমি ভাবতেই পারি না, যাকে তার নিজের ছেলেরা পরিত্যাগ করেছে সে কী করে অচেনা কারও এত ভালোবাসা পায়।
আমরা কি এখনও অচেনা আলফ্রেড? তুমি আমাদের পরিবারের হারিয়ে যাওয়া আনন্দ ফিরিয়ে দিয়েছো। তোমাকে আমি এমন অনেক কথা বলেছি যা শীলা পর্যন্ত জানে না।
আলফ্রেড সামান্য হেসে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। নিক তুমি এমনভাবে কথা বলো, মনে হয় আমার কাছাকাছি বয়সের কারও সঙ্গে কথা বলছি। তুমি এত জানো, এত বোঝ!
আমি বিব্রত হয়ে শুধু বললাম, ধন্যবাদ আলফ্রেড, আমাকে ভালোবাস বলেই তুমি এতটা গুরুত্ব দিচ্ছো।
ভালো নিশ্চয়ই বাসি। আপনমনে আলফ্রেড বললো, কাল রাতে মনে হয়েছে আমার অপদার্থ দুই ছেলের চেয়েও তুমি আমার বেশি আপন। তোমাকে নিয়ে অনেক কথা ভেবেছি। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে রাতে কথাও বলেছি। আমি ঠিক করেছি।
আলফ্রেডের কথা শেষ না হতেই ডোরবেল বাজলো। ও কী ঠিক করেছে জানা হলো না। উঠে গিয়ে দরজা খুলোম। শীলা, জেন আর ভিকি একসঙ্গে কথা বলতে বলতে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো। দেরির জন্য ওরা প্রত্যেকে একে অপরকে অভিযুক্ত করছিলো। আলফ্রেডের কাছে ওরা তিনজনই ক্ষমা চাইলো।
আলফ্রেড ব্যস্ত হয়ে বললো, আরে না না। এত বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। আমরা তত বেড়াতেই যাচ্ছি, নিশ্চয় কোনো আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য যাচ্ছি না।
তুমি কী ভালো! বলে শীলা আর জেন আলফ্রেডকে জড়িয়ে ধরে ওর দুগালে চুমু খেলো।! ভিকি বললো, আমরা তো ভয়েই বাঁচি না, এক ঘন্টা দেরি না জানি কী বকুনি আছে কপালে।
আলফ্রেড হেসে বললো, আমরা কি এখন যাত্রা শুরু করতে পারি?
ভিকি ষড়যন্ত্রের গলায় বললো, যাওয়ার আগে একটু গলা ভিজিয়ে নিলে হতো না! আমাকে হিন্দিতে বললো, দোস্ত তোর বাবা কাল কী দারুণ মার্টিনি খাওয়ালো! ছিটেফোঁটা আছে নাকি রে! আমিও হিন্দিতে বললাম, কোত্থেকে থাকবে! কাল রাতে অর্ধেক বোতল তুইই তো সাবাড় করলি। ভুলে গেছিস নাকি!
আলফ্রেড রেগে যাওয়ার ভান করলো–এসব কী! আমরা কেউ এখানে ইডিশ ভাষা জানি না। তোমরা দুজন অচেনা ভাষার ষড়যন্ত্র করবে এটা হতে পারে না!
আমি বললাম, ইড্ডিশ নয়, হিন্দি। তোমাকে বলিনি ভিকিরা ইন্ডিয়ান! আমরা কোনো ষড়যন্ত্র করিনি!
একগাল হেসে আলফ্রেড বললো, ঠাট্টা করছিলাম। তুমি কি ভুলে গেছো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাঁচ বছর আমি ইন্ডিয়াতে ছিলাম?
আমি বললাম, ভিকির গলা শুকিয়ে গেছে। ঘরে অরেঞ্জ জুস আছে, ব্লুবেরি জুসও আছে। কে কোনটা নেবে বলো। আলফ্রেড ছাড়া সবাই একসঙ্গে বললো, ব্লুবেরি। অরেঞ্জ জুসের চেয়ে ব্লুবেরি জুসের দাম বেশি, খেতেও মজা। আলফ্রেড বললো, আমাকে তুমি যা দেবে তাই খাবো।
ঢালতে গিয়ে দেখি ব্লুবেরি জুস তিন গ্লাসের বেশি হচ্ছে না। ওদের ব্লুবেরি দিয়ে আমি আর আলফ্রেড অরেঞ্জ নিলাম। আলফ্রেড একগাল হেসে বললো, আমার আর নিকের ভাগ্য এক সুতোয় বাঁধা।
জেন আদুরে গলায় বললো, আগে বললে না কেন, তা হলে আমিও অরেঞ্জ জুস নিতাম।
আলফ্রেড রহস্য ভরা গলায় বললো, তুমি যদি আমার সঙ্গে তোমার ভাগ্য জুড়তে চাও তা হলে সুতোটা একটু বাড়াতে পারি।
কীভাবে?
আমার গ্লাস থেকে খানিকটা তোমার গ্লাসে ঢেলে দিতে পারি।
আমি হেসে বললাম, ওটা মোটেই উপাদেয় হবে না।
শীলা দার্শনিকের মতো বললো, ভাগ্য কখনও এভাবে বদলানো যায় না। ওটা আগে থেকে ঠিক থাকে।
ভিকি আঁতকে ওঠার ভান করলো, ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন! শীলা, এখন থেকেই আমাদের জ্ঞান দেয়া শুরু করলে?
শীলা সুযোগ পেলেই গুরুগম্ভীর সব কথা বলবে, আর ভিকিও ওকে এ নিয়ে খোঁচাবে। আলফ্রেড বললো, জ্ঞানলাভের জন্য কত মানুষ সারাজীবন সাধনা করে শেষ হয়ে যায়। আর তুমি অযাচিতভাবে পেয়েও নিচ্ছো না?
ভিকির মতো দুর্ভাগা মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। শীলা হেসে আলফ্রেডের সঙ্গে গলা মেলালো।
গলা ভেজানোর পর্ব শেষ করে আমরা সবাই আলফ্রেডের মস্ত বড় ফোর্ড গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। গাড়িটা পুরোনো মডেলের, তবে ভেতরটা খুব আরামের। বোঝাই যায় আলফ্রেড ওর গাড়ির যত্ন নেয়। ও নিজে বসেছিলো ড্রাইভিং সিটে, পাশে আমি। ভিকি, শীলা জেন পেছনে। আমাদের সবার ব্যাগগুলো ওপরের লাগেজ ক্যারিয়ারে।
রোববার লন্ডনে গাড়ির ভিড় কম থাকে বলে শহর থেকে বেরোতে বেশি সময় লাগলো না। হাইওয়েতে ওঠার পর আলফ্রেড গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো। শীলা বললো, তুমি কি সব সময় এতটা পথ গাড়িতে যাওয়া আসা করো আলফ্রেড?
না শীলা, গত এক বছর আমি ট্রেনেই যাওয়া আসা করেছি। গাড়ি চালাতে চালাতে আলফ্রেড বললো, এবার আমার অক্সফোর্ডে কিছু কাজ ছিলো, তাই গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম।
আমরা কেউ এর আগে ওয়েলস যাইনি। ভিকি জানতে চাইলো–অক্সফোর্ড কি আমাদের পথে পড়বে?
হ্যাঁ বাছা। অক্সফোর্ড, গ্লচেস্টার, নিউপোর্ট হয়ে কার্ডিফ যেতে হয় যদি একটানা গাড়িতে যেতে চাও। সময় বাঁচানোর জন্য অনেকে অবশ্য ব্রিস্টল হয়ে যায়, তবে মাঝখানে ব্রিস্টল চ্যানেল পেরোতে হয় ফেরিতে। সময় কম লাগলেও ঝামেলা বেশি, ভিড়ও বেশি। আমার তো অতো তাড়া নেই। তাই গাড়িতে এলে এ পথটাই ব্যবহার করি।
ভিকি গলা বাড়িয়ে বললো, আলফ্রেড, তুমি হিন্দি জানো?
আলফ্রেড হেসে বললো, কেন, নিকের সঙ্গে আমাকে নিয়ে হিন্দিতে মজা করতে অসুবিধে হচ্ছে!
আহ্ আলফ্রেড, আমার কথার জবাব দাও।
বলতে পারি না। কিছু শব্দ বুঝি।
ঠিক আছে, তোমাকে আমি হিন্দি শেখাবো। নিজের লোকদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা না বললে আমি ঠিক জমাতে পারি না।
শীলা বললো, জেনকে শেখাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে এখন বুঝি আলফ্রেডকে ধরতে চাইছো?
আলফ্রেড বললো, কেন, জেন কি ছাত্রী হিসেবে ভালো নয়?
জেন হৈচৈ করে উঠলো–কী বলছো তুমি! আমি গত পরীক্ষায় ছটা এ পেয়েছি।
ভিকি তবে হাল ছেড়ে দিলো কেন?
জেন হেসে বললো, যখন জানলাম ভিকি একটা জার্মান আর একটা টার্কিস মেয়েকে হিন্দি শেখানো শুরু করেছে তখনই বলেছি আমার দ্বারা হিন্দি শেখা হবে না।
আলফ্রেড মুখ টিপে হেসে বললো, তুমি কি কখনও ভিকিকে বলেছিলে তোমাকে ছাড়া আর কোনো মেয়েকে ও হিন্দি শেখাতে পারবে না?
বলতে হবে কেন? জেন রেগে যাওয়ার ভান করলোও কি সেটা বুঝতে পারে না?
শীলা হেসে বললো, সাধেই কি আমি বলি, ভিকির মতো দুর্ভাগা মানুষ পৃথিবীতে যে খুব কম আছে!
ভিকি কোণঠাসা হয়ে বললো, লন্ডনে ফিরে এসে আমি মেয়েদের জন্য হিন্দি শেখার ক্লাস খুলবো।
জেন ফোড়ন কাটলো–ওখানে কেবল মার্থাদের মতো ধুমসি মেয়েরাই ভর্তি হবে।
শীলা, ভিকি, জেনের কথা শুনতে শুনতে আলফ্রেড মিটিমিটি হাসছিলো। ওরা নিজেদের ভেতর খুনসুটি শুরু করেছে। আমি মৃদু গলায় বললাম, তুমি বিরক্ত হচ্ছে না তো আলফ্রেড?
আলফ্রেড ফিসফিস করে বললো, আমার জন্য তুমি স্বর্গের আনন্দ বয়ে এনেছে।
আমি কোনো কথা বললাম না। ভাবলাম, কত অল্পে মানুষ সন্তুষ্ট হয়। আলফ্রেডের জন্য আমার বুকের ভেতর একটা নরম কোণ তৈরি হয়ে গেলো। মনে মনে বললাম, তোমার কাছে আমার অনেক ঋণ।
ঠিক একটার সময় লিডনি নামের ছোট নিরিবিলি এক লোকালয়ে গাড়ি থামালো আলফ্রেড। একপাশে নদী, আরেক পাশে গভীর বন। হাইওয়ের পাশে এই লোকালয়টি মনে হয় গড়ে উঠেছে দূরের যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য। আলফ্রেড গাড়ি থামিয়েছিলো একটা রেস্তোরাঁর সামনে। পাশেই পেট্রল পাম্প, অল্প দূরে ছোট্ট একটা গির্জা, গোটা চারেক মুদির দোকান, আর কিছু ঘরবাড়ি। বেশির ভাগ বাড়িই কাঠের। এমনকি লিডনি রেস্টুরেন্টও। কাঠের সুইংডোর ঠেলে আমরা ভেতরে ঢুকলাম। রেস্তোরাঁর মেঝেও কাঠের। ভেতরের কোণে দুই বুড়োবুড়ি ছোট্ট টেবিলের ধারে বসে আছে মুখোমুখি। কাউন্টারে মোটাসোটা এক লোক বসে ঝিমোচ্ছিলো। আমাদের পায়ের আওয়াজ শুনে বেরিয়ে এলো। বিগলিত গলায় আলফ্রেডকে বললো, আমি ম্যানেজার। আপনারা লাঞ্চ করবেন তো? এখানটায় বসুন।
আমরা একটা বড় গোলটেবিলের চারপাশে বসলাম। ম্যানেজার বললো, আপনাদের কী দেবো বলুন।
আলফ্রেড বললো, আগে গলা ভেজাবার জন্য কিছু দাও। কী আছে তোমাদের?
একগাল হেসে ম্যানেজার বললো, সব পাবেন। পনেরো বছরের পুরোনো স্কচ হুইস্কি যদি চান তাও পাবেন। বিয়ার নিতে পারেন কিংবা যদি বলেন কোনো ককটেল–
ততক্ষণে শীলা আর জেন হেসে গড়িয়ে পড়েছে। স্কচ হুইস্কি দিয়ে ওদের গলা ভেজাতে হবে–এর চেয়ে হাসির কথা আর কী হতে পারে! ওদের হাসি দেখে আলফ্রেড ব্যস্ত হয়ে ম্যানেজারকে থামালো–ওসব চলবে না। এদের বাপ মা জানতে পারলে আমাকে আস্ত রাখবে না। তুমি বরং লেমোনেড দাও।
ভিকি আদুরে গলায় বললো, একটু মার্টিনি হলে মন্দ হতো না।
আলফ্রেড মুখ টিপে হাসলো, ঠিক আছে, লেমোনেডের সঙ্গে মার্টিনি মিশিয়ে দাও।
মার্টিনিতে সামান্য অ্যালকোহল থাকলেও এটাকে কেউ হার্ড ড্রিংকস বলে না। পার্টিতে আমাদের মার্টিনি খেতে কেউ কখনও আপত্তি করেনি। ম্যানেজার পাঁচটা গ্লাসে টলটলে লাল মার্টিনি এনে টেবিলে রাখলো–এবার বলুন খাবার কী দেবো?
কী আছে তোমাদের? জানতে চাইলো আলফ্রেড।
খিদে বেশি পেলে ল্যাম্ব স্টেক নিতে পারেন। আলু মটরশুঁটি ভাজি আছে। চিকেন। স্টু আছে।
আলফ্রেড আমাদের জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কী নেবে বলো!
শীলা বললো, ল্যাম্ব স্টেক।
ভিকি, জেন আর আমিও স্টেক চাইলাম। আলফ্রেড নিলো চিকেন স্টু। বললো, বয়স হয়েছে। ল্যাম্ব স্টেক-এ প্রচুর চর্বি থাকে, আমার জন্য চিকেন ভালো। আলফ্রেড স্টেকের সঙ্গে আলু মটরশুটি ভাজাও দিতে বললো। ম্যানেজার বললো, দশ মিনিটের ভেতর সার্ভ করছি।
চারদিকে কোনো শব্দ নেই। বাইরে শীতের বিষণ্ণ দুপুর। বনের ভেতর ন্যাড়া গাছগুলো বসন্তের অপেক্ষায় ধুকছে। ভেতরে কোণের টেবিলে দুই খুনখুনে বুড়োবুড়ি নিচু গলায় নিজেদের ভেতর কথা বলছে। শীলা বললো, ভারি সুন্দর জায়গা।
ভিকি বললো, ওয়েস্টার্ন ছবিতে এরকম কাঠের কেবিনে বসে সবাই মগভর্তি বিয়ার খায়।
জেন ওকে ফোড়ন কাটলো–ওই শুরু হলো।
ভিকি গম্ভীর হয়ে বললো, ড্রিংসের মজা মেয়েরা কি বুঝবে!
শীলা মৃদু হেসে বললো, তোমার এখনও মজা বোঝার বয়স হয়নি ভিকি!
আমি খেতে চাইনি। শুধু একটা বর্ণনা দিচ্ছিলাম।
জেন বললো, যার মনে যা সে তাই তো বলবে শীলা! ওয়েস্টান ছবিতে শুধু কি বিয়ার খায়! এরকম কেবিনে বসে কড়া কফিও খায়।
আলফ্রেড হাসিমুখে ওদের কথা শুনছিলো। বললো, তোমাদের সঙ্গে কিছুদিন কাটালে আমার বয়স অর্ধেক হয়ে যাবে।
ম্যানেজার টেবিলে খাবার দিয়ে গেলো। তখনই চুলো থেকে নামিয়ে এনেছে। স্লাইস করা পাউরুটি, মাখন, স্টেক আর আলু মটর ভাজি দিয়ে লাঞ্চ সারতে দারুণ লাগলো। খাওয়ার পর শীলা বললো, আলফ্রেড, তুমি যদি কিছু মনে না করো একটা কথা বলতে চাই।
একটা কেন, হাজারটা কথা বলো। ব্যস্ত গলায় বললো আলফ্রেড।
আমরা তো এখনও তোমার বাড়িতে যাইনি। লাঞ্চের বিলটা আমরা নিজেরা দিতে চাই।
আহত গলায় আলফ্রেড বললো, আমাকে এভাবে অপমান কোরো না শীলা। যখন থেকে আমার সঙ্গে বেরিয়েছে তখন থেকে তোমরা আমার অতিথি। ওয়েলস-এর লোকেরা এ ধরনের কথা বা আচরণকে অপমান মনে করে।
দুঃখিত আলফ্রেড। শীলা বিব্রত গলায় বললো, আমি মোটেই তোমাকে অপমান করতে চাইনি। তখন থেকে তোমাকে ট্যাক্স করছি দেখে খারাপ লাগছিলো।
আমাকে বন্ধু ভাবলে খারাপ লাগতো না। ট্যাক্সের কথা কী বলছো? আমার যা সঞ্চয় তোমরা খেয়ে কোনো দিন শেষ করতে পারবে না। আলফ্রেডের চেহারা থমথম করছিলো।
পরিবেশটা হালকা করার জন্য হাতজোড় করে ভিকি বললো, এ যাত্রা মাপ করে দাও আলফ্রেড, এমন অন্যায় কথা জীবনেও আমাদের মুখ দিয়ে বেরোবে না।
মনে থাকে যেন! আলফ্রেডের মুখে হাসি ফুটলো।
লিডনি থেকে লাঞ্চ সেরে গাড়িতে উঠতে উঠতে তিনটা বেজে গেলো। শীতের দুপুরগুলো অদ্ভুত এক আলস্যে ভরা থাকে। আমরা সব কিছুই করছিলাম ঢিলেঢালাভাবে। লাঞ্চ সেরে কফি খেতে আধঘন্টা লাগিয়ে দিলাম।
ওয়েলস-এর রাজধানী কার্ডিফে যখন পৌঁছলাম তখন সূর্য পশ্চিমের পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে গেছে। গাড়ির কাঁচ বন্ধ থাকাতে বাইরে কী রকম কনকনে ঠান্ডা বাতাস টের পাচ্ছিলাম না।
সন্ধ্যার পর যখন পেনার্থ-এ আলফ্রেডের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামলাম–পাহাড়ি নেকড়ের মতো ঠান্ডা বাতাস ঝাঁপিয়ে পড়লো আমাদের ওপর। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আলফ্রেড একচুলও বাড়িয়ে বলেনি।
সূর্য ডুবে গেলেও আকাশে তখন গোধূলির লাল রঙ ছড়িয়ে ছিলো। বিশাল জায়গা জুড়ে বার্চ আর লাইম গাছের বন। বনের মাঝখানে খোলা জায়গায় আলফ্রেডের ছবির মতো কাঠের দোতলা বাড়ি। পশ্চিমে বার্চ লেক, আরও পশ্চিমে গিয়ে মিশেছে কালো পাহাড়ের গায়ে। পথে যে কয়টা বাড়ি চোখে পড়েছে সবই বিরাট জায়গার ওপর। আলফ্রেডকে বললাম, তুমি বলেছিলে সুন্দর । এতটা সুন্দর বাড়ি আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
জেন উচ্ছ্বসিত গলায় বললো, এত সুন্দর বাড়ি আর পরিবেশ ফেলে তুমি নোরা লন্ডনে কেন পড়ে থাকো আমার মাথায় ঢুকছে না।
আলফ্রেড হাসিমুখে বললো, ঢোকার যথেষ্ট সময় আছে। এখন বাড়ির ভেতরে চলো। বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে শীতে জমে যাবে।
সবাই দৌড়ে বাড়ির বারান্দায় গিয়ে উঠলাম। আলফ্রেড তালা খুললো। ঘরে ঢুকে অনেকগুলো সুইচ টিপলো। সারা বাড়ি আলোয় ভেসে গেলো।
আমরা আলফ্রেডের বিরাট ড্রইংরুমে এসে বসলাম। আসবাবপত্র পুরোনো হলেও আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে সবখানে। দেয়ালে দুটো বড় অয়েলপেইন্টিং, একপাশে রিডিং কর্নার। সেখানে অনেকগুলো ফ্রেমে বাঁধানো পারিবারিক ছবি ঝোলানো রয়েছে। আলফ্রেড বললো, আমার একটা কেয়ার টেকার আছে হার্ভে নাম। ওকে ফোন করে দিই। রাতে হয়তো আসতে পারবে না, কাল সকালে আসবে। ভিকি আর নিক কি দয়া করে গাড়ির ওপর থেকে ব্যাগগুলো নামিয়ে আনবে? আজ রাতের জন্য কিচেনের দায়িত্ব শীলা আর জেনের।
শীলাদের অবশ্য কিচেনে তেমন কিছু করার ছিলো না। আলফ্রেড আসার পথে কার্ডিফের এক ডিপার্টমেন্ট শপ থেকে প্রচুর খাবার কিনেছে। বেশ কিছু কুড ফুডও ছিলো যা একটু গরম করে নিলেই হলো।
আলফ্রেড টেলিফোন করতে দোতলায় গেলো। আমরা আমাদের লাগেজগুলো এনে ড্রইংরুমে রাখলাম। শীলা খাবারের প্যাকেটগুলো রান্নাঘরে নিয়ে গেলো। বললো, এই শীতে কফি খেতে মন্দ লাগবে না।
কিছুক্ষণ পর দোতলা থেকে চিন্তিত মুখে নেমে এলো আলফ্রেড। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, সব কিছু ঠিক আছে তো আলফ্রেড?
শীলা জেন দুটো ট্রেতে করে কফি আর কিছু ক্র্যাকার্স নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরোলো। আলফ্রেড ওদের দিকে একবার তাকালো। তারপর বিব্রত গলায় বললো, বুঝতে পারছি না কিছু। কার্ডিগান থেকে আমার বড় বোন জরুরী টেলিগ্রাম পাঠিয়েছে। খবর পাওয়া মাত্র যেন ওর সঙ্গে দেখা করি। হার্ভে বললো, কয়েকবার নাকি টেলিফোনও করেছে। বলেছে ওর নাকি খুব বিপদ!
আমি বুঝলাম নেমন্তন্ন করে এনে আলফ্রেড আমাদের একা ফেলে যেতে চাইছে। । অথচ ওর চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে যাওয়াটা খুব জরুরী। বললাম, আলফ্রেড তুমি কাল সকালেই রওনা হয়ে যাও। বোনের বিপদের সময় তোমার পাশে থাকা উচিত।
আলফ্রেড বললো, তাই বলে তোমাদের একা ফেলে যাবো?
আমরা যথেষ্ট বড় হয়েছি। আমি বললাম, আমাদের জন্য তুমি বিন্দুমাত্র ভেবো না।
<