সকাল নটার মধ্যে রাজধানী বেইজিং থেকে একশো মাইল দূরে। চলে এসেছে রানা। জায়গাটার নাম তাইপিনবু।
তাইপিনবু পাহাড়ী এলাকা, এখান থেকে যেন কয়লা খনির। মিছিল শুরু হয়েছে।
দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলছে ছয় সারি কেবল কার। সবগুলোই সচল; তিনটেতে চড়ে ডিউটি সেরে ঘরে ফিরছে ক্লান্ত একদল খনি শ্রমিক, তাদেরই আরেকটা দলকে অপর তিনটে কার ডিউটি দিতে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি কারে বিশ-বাইশজন করে বসে আছে ওরা।
শ্রমিকদের সবার পরনে একই পরিচ্ছদ। কালো সুতি। কাপড়ের প্যান্ট আর একই রঙের পাতলা কাপড়ের হাফ-হাতা। ফতুয়া। প্রত্যেকের মাথায় ধাতব হেলমেট, পায়ে টায়ার-সোল জুতো।
কালিঝুলি মাখা ওরকম এক সেট কাপড়চোপড় পরে একদল। শ্রমিকের মাঝখানে বসে আছে রানা, সবার মত ওর সঙ্গেও কাপড়ের একটা ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। দালিয়ানের পরামর্শ মেনে নিয়ে এ-সব নানকু শহরের একটা দোকান থেকে কিনেছে ও। দোকানটায় শুধু সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসই বিক্রি হয়।
চিনাদের সবারই যে নাক চ্যাপ্টা, এ ধারণা একদম ভুল। রানার পাশেই এক তরুণকে দেখা গেল, তার নাক টিয়া পাখির ঠোঁটের সঙ্গে বদলে নেওয়া যাবে। খনিতে কাজ করানোর জন্য বিভিন্ন প্রদেশ থেকে লোক আনা হয়, কাজেই তাদের চেহারা অনেক সময় একদমই মেলে না।
রানার চেহারাও মিলল না। তারা ওকে অন্য কোন প্রদেশের নতুন শ্রমিক বলে ধরে নিল। তাদের দুএকজনকে দালিয়ার একটা ফটো দেখাল রানা, জানতে চাইল একে তারা কোথাও দেখেছে। কিনা। মাথা নাড়ল সবাই।
অল্প হলেও, কিছু নারী শ্রমিকও কাজ করে খনিগুলোয়; কেউ নার্স, খনির বাইরে হসপিটাল তাঁবুতে ডিউটি দেয়; আবার কেউ বঁধুনি বা ঝাড়দারনী।
হোটেল গ্রেটওয়াল ছেড়ে প্রথমবার রানা রাস্তায় নেমেছে রাত চারটের কিছু পরে। ট্যাক্সি নিয়ে প্রথমেই এয়ারপোর্ট রোডে, দালিয়াদের ফ্ল্যাটে চলে আসে।
নক করতে হলো না, দরজার কবাট সামান্য ফাঁক দেখে নিঃশব্দ পায়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল রানা, কোমরে গোঁজা পিস্তলটা বেরিয়ে এল হাতে। লিভিং রুমের মাঝখানে, কার্পেটের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে ইংরেজি ভাষার লেকচারার চৌচেন ঝাও, দালিয়ার স্বামী।
জানত পাবে না, তারপরও পালস দেখল রানা। দুটো গুলি করা হয়েছে চৌচেনকে, দুটোই বুকে। সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে সে।
ফ্ল্যাটটা সার্চ করে কোন ক্রু পেল না, কাজেই রানা বলতে পারবে না কে বা কারা দায়ী। ফোন লাইন ঠিক আছে দেখে পুলিশকে খবরটা জানিয়ে বেরিয়ে এল ফ্ল্যাট থেকে। তার আগে। দেরাজ হাতড়ে পাওয়া দালিয়ার একটা পাসপোর্ট সাইজ ফটো শার্টের বুক পকেটে ভরে নিয়েছে।
ওখান থেকে আবার নিজের হোটেলে ফিরে গিয়েছিল রানা। দ্বিতীয়বার সকাল ঠিক ছটায় রাস্তায় বেরুবার আগে চেহারা আরেকবার একটু পাল্টে নিয়েছে। দালিয়ানের ঠিক করে দেওয়া সময়ের চেয়ে দুঘন্টা আগে রওনা হয়েছে ও।
তিনবার কেবল্ কার বদলাতে হচ্ছে রানাকে। দোআনচি নামে একটা পরিত্যক্ত খনিতে যাবে ও। চিনা ভাষাটা ভালোই জানা আছে, কেবল কার স্টেশনের শেষ মাথায় পৌঁছে অপারেটরকে। জিজ্ঞেস করতে হবে কোন্ দিকে সেটা।
দালিয়ার ফটোটা কেবল্ কার অপারেটরদেরও দেখাচ্ছে রানা, ওদের ভাষায় জানতে চাইছে ছবির এই মেয়েটিকে তারা আগে। কখনও দেখেছে কিনা। ইতিমধ্যে দুজন অপারেটর মাথা নেড়ে। দেখেনি বলে জানিয়ে দিয়েছে।
তিন নম্বর কেবল কারের শেষ মাথায়, অর্থাৎ সর্বশেষ স্টেশনে পৌছাল রানা। গোটা এলাকা খা-খা করছে, না আছে বাড়ি-ঘর, না আছে রাস্তা-ঘাট। আরোহী বলতেও ও একা।
প্ল্যাটফর্মে নেমে অপারেটরের সামনে দাঁড়াল রানা। এই একজন ছাড়া চারদিকে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। লাল। সালাম, কমরেড। আপনার নাম ফুচু ওয়াঙ। বিয়ে করেছেন। সাতটা। নাতির সংখ্যা একশো দুই। ঠিক?
দাঁতবিহীন মাঢ়ি বের করে হেসে দিল বুড়ো। তার হাতে একটা বই দেখা যাচ্ছে, মলাটে লেখা-মহান দার্শনিক কনফুসিয়াস-এর বাণী। বুঝেছি, কোন কারণে আমার সহযোগিতা দরকার আপনার। এটা এদিককার পুরানো কৌশল। আপনি নতুন মানুষ হলে কী হবে, খোঁজ-খবর রাখেন। আমার নাম শিশু, শিশু চো। বলুন, আপনার কী উপকারে লাগতে পারি আমি?
অপারেটরের সামনে দালিয়ার ছবিটা ধরল রানা।
সেটায় একবার চোখ বুলিয়েই মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল বুড়ো শিশু, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল চার-পাঁচশো গজ দূরের একটা লেকের দিকে। হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার চেহারা। বলল, মাফ করবেন, কমরেড, আমি এ-সব বিপদের মধ্যে জড়াতে চাই না।
একটা মেয়ে কদিন হলো নিখোঁজ, লোকমুখে শুনলাম এদিকে নাকি দেখা গেছে তাকে, তাই খুঁজতে বেরিয়েছি। এর মধ্যে বিপদ দেখলেন কোথায়?
এই মাত্র আমি বোবা আর কালা হয়ে গেছি, কমরেড। যাত্রী নেই, কন্ট্রোল প্যানেলের বোতাম টিপে খালি কেবল কারটাকে ফেরত পাঠাচ্ছে সে।
প্লাটফর্মের পিছনদিকটায় বিশ ফুট লম্বা একটা ব্যারেল দেখা যাচ্ছে, ঘ্যারঘ্যার আওয়াজ তুলে ঘুরছে সেটা, তাতে পেঁচানো ইস্পাতের কেবল খুলে যাচ্ছে দ্রুত।
পকেট থেকে ওর এজেন্সির একটা কার্ড বের করে দেখাল রানা। আমি আসলে একজন প্রাইভেট পুলিশ অফিসার, বলল ও। সরকার আমাকে ক্রাইম ইনভেস্টিগেট করার অনুমতি দিয়েছে।
এক মুহূর্ত ইতস্তত করে হাত তুলে দূরের লেকটা দেখাল বুড়ো। তারপর রানার মুখের সামনে তিনটে আঙুল খাড়া করল। আগের ট্রিপে তিনজন লোক নেমেছে এখানে। ওই লেকটার মাইল দুয়েক পুবে একটা পরিত্যক্ত খনি আছে, নাম দোআনচি, ওটার খোঁজ করছিল।
মুখের ভিতরটা শুকনো লাগছে রানার। ঠিক বুঝলাম না, বলল ও। তাদের সঙ্গে এই ফটোর কী সম্পর্ক?
কঠিন চোখে রানার দিকে এক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল অপারেটর। ওদের কাছেও এরকম একটা ফটো আছে।
সর্বনাশ! রানার হাতের তালু ঘামছে। ওর আগেই পৌঁছে গেছে কসাইরা। আমার মত আরও অনেকেই হয়তো খুঁজছে মেয়েটিকে, বলল ও। সেটাকে আপনি বিপদ বলছেন কেন?
ওদেরকে চিনি তো, তাই জানি এরচেয়ে মারাত্মক বিপদ আর হতে পারে না।
ওদেরকে আপনি চেনেন? রানার তথ্য দরকার।
একটু ভালো করেই চিনি। বুড়ো-শিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
কী রকম?
বিগ ব্রাদাররা খুব কৌশলী, সাধারণত গরিব মানুষের ওপর দয়া-রহম দেখায়, তাদেরকে সব সময় সাহায্য করে-তারা যাতে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা না করে। কিন্তু বিগ ব্রাদার হুন চেননি। গরিব মেরে দুর্নাম কামিয়েছে। তার অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় আমার একমাত্র ভাইপোকে নিজের হাতে খুন করে সে।
আপনি বলতে চাইছেন, স্পষ্ট করে জানতে চাইল রানা, ওই তিনজনের মধ্যে চেননি নিজেও আছে?
নিজের চোখকে অবিশ্বাস করি কীভাবে, বলুন?
এক মুহূর্ত চিন্তা করল রানা। এই মেয়েটিকে আপনি…
মাথা নাড়ল বুড়ো কেবল কার অপারেটর। তাকে আমি চিনি না, কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
আপনি আমার অনেক উপকার করলেন। ধন্যবাদ, বলল রানা। তবে যদি আরেকটু উপকার করতেন, হুন চেননির হাত থেকে নিরীহ একটা মেয়েকে বাঁচাতে চেষ্টা করতাম আমি।
আপনাকে তো আগেই বলেছি, আমি কোন বিপদে জড়াতে চাই না?
কিন্তু যদি বদলা নেয়ার সুযোগ পান?
কীসের বদলা? বুড়োর চোখ দুটো যেন জ্বলে উঠতে চাইছে।
ভাইপো খুন হওয়ার?
এক মুহূর্ত চিন্তা করল অপারেটর চো। আগে শুনি কী করতে হবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।
আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না, যা করার আমিই করব, বলল রানা। একটা কথা জিজ্ঞেস করি। আপনার কারে চড়ে এখানে এসেছে লোকগুলো, কারণ আপনার স্টেশন থেকে পরিত্যক্ত খনি দোআনচি সবচেয়ে কাছে, কাজেই ফিরবেও তারা আপনার কারে চড়ে, ঠিক?
মাথা ঘুরিয়ে বাকি দুটো স্টেশনের দিকে তাকাল অপারেটর। পরস্পরের কাছ থেকে বেশ অনেক দূরে ওগুলো।
দেখাদেখি রানাও তাকাল। এদিকটায় লোকজনের আসাযাওয়া খুবই কম। প্রায় প্রতিটি কেবল কার খালি আসছে, ফিরছেও খালি। এর কারণ, এদিকের খনিগুলো কয়লাশূন্য হয়ে গেছে, তাই পরিত্যক্ত।
গোপনে দেখা করার জন্য ভালো জায়গাই বেছেছে দালিয়া, কিন্তু কেউ একজন বেঈমানী করেছে তার সঙ্গে। সন্দেহ নেই খুব ঘনিষ্ঠ কেউই হবে সে, যাকে সন্দেহ করার প্রশ্নই ওঠে না।
হ্যাঁ, আমার কারে চড়েই ফিরবে হুন চেননি, রানার চিন্তায় বাধা দিল বুড়ো শিশু।
তার দিকে ফিরল রানা। এবার বলছি কী করতে হবে আপনাকে। ধরুন, ঘণ্টা দুয়েক পর স্টেশনে ফিরে আসবে লোকগুলো। ওদেরকে আসতে দেখলে স্টেশন ছেড়ে আরেক দিক। দিয়ে কেটে পড়বেন আপনি।
ব্যস? আর কিছু করতে হবে না?
হবে। আমার সঙ্গে কাপড় বদলাবেন। তারপর আমাকে একটু। দেখিয়ে দেবেন কেবল্ কার কীভাবে অপারেট করতে হয়।
কাছেই আমার বাড়ি, সেখানে অতিরিক্ত এক সেট ইউনিফর্ম আছে, বলল বুড়ো।
বাড়িতে কে কে আছে?
কে থাকবে, কমরেড, আমি একা মানুষ। হঠাৎ চিন্তিত দেখাল অপারেটরকে। বোঝা যাচ্ছে, আপনি ওদের একটা ব্যবস্থা। করবেন। কিন্তু তারপর? আমার কী হবে? বদলা নেয়ার জন্যে হুন। চেননির লোকেরা এসে আপনাকে পাবে না, পাবে আমাকে।
তারা এসে দেখবে ব্যারেলের পিছনে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে আপনাকে, মুখে কাপড় গোঁজা, বলল রানা। তা ছাড়া, দুজন শিষ্যসহ হুন চেননি দুর্ঘটনায় মারা গেলে এলাকার কমিউনিস্ট নেতা আর পুলিশ খুশিই হবে, প্রয়োজনে তারাই। প্রোটেকশন দেবে আপনাকে।
বলছেন হাত-পা বাঁধা থাকবে আমার? নাকটা ভাঙা? কাপড়ে। শুকনো রক্ত?
মাথা নাড়ল রানা। এই বয়সে নাক ভাঙা ঠিক হবে না। তবে নাকে-মুখে মুরগীর রক্ত মাখা যেতে পারে।
ঝুঁকিটা মারাত্মক, তবে নিচ্ছি, সিদ্ধান্ত নিল অপারেটর। যেন মনে হচ্ছে ঈশ্বরই আপনাকে পাঠিয়েছেন। আসুন, মেকানিজমটা দেখিয়ে দিই।
.
রানা যেমন ধারণা করেছিল, আরও প্রায় এক ঘণ্টা পর বুড়ো শিশুর কেবল কারে চড়েই আসতে দেখা গেল জিজিয়ানা দালিয়ানকে। নার্স-এর ইউনিফর্ম পরে আছে সে, হাতে ঝুলছে ফার্স্ট-এইডের একটা ব্যাগ।
প্ল্যাটফর্মে, অপারেটরের পাশে, একজন খনি শ্রমিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তীক্ষ্ণ হলো দালিয়ার দৃষ্টি। হালকা ছদ্মবেশ নিয়ে আছে রানা, তা সত্ত্বেও চিনে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে যেন নার্ভাস হয়ে পড়ল সে।
কেবল কার দাঁড় করাল বুড়ো শিশু।
প্ল্যাটফর্মে পা দিয়েই ইংরেজিতে জানতে চাইল দালিয়া, মাসুদ ভাই, আপনার তো এখানে থাকার কথা নয়…
জানি, তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল রানা। কিন্তু আমার যখন দোআনচিতে পৌছানোর কথা, তার দুআড়াই ঘণ্টা আগেই ওখানে পৌঁছে গেছে দুই সঙ্গীকে নিয়ে এক বিগ ব্রাদার। খপ করে তার একটা হাত ধরে টান দিল ও। এসো, এখানে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপদ নয়। লোহার প্যাচানো সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করল ওরা।
বিগ ব্রাদার…কে? ঢোক গিলে জানতে চাইল দালিয়া।
হুন চেননি।
ঈশ্বর! শিউরে উঠল দালিয়া। ধাপের উপর দাঁড়িয়ে পড়ল সে, টলছে। খালি হাত দিয়ে রানার কাঁধ খামচে ধরে তাল সামলাল। ওই লোকটাই আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে! তারপর তার খেয়াল হলো। মাসুদ ভাই, হুন চেননি জানল কীভাবে আপনার সঙ্গে দোআনচিতে দেখা করব আমি?
রানা ভাবল, দালিয়া বোধহয় এখনও জানে না যে তার স্বামীও। বেঁচে নেই। শান্ত হও, দালিয়া। আগে চলো ফাঁকা জায়গা থেকে। সরে যাই।
এটা শুধু আমরা তিনজন জানি, মাসুদ ভাই! আমি, আপনি আর আমার দেওর পাওচেন।
এ নিয়ে পরে কথা বললে হয় না, দালিয়া?
লেকের উল্টোদিকে এক-দেড়শো গজ হাঁটল ওরা, তারপর একটা পাথুরে টিলাকে পাশ কাটাল। সামনে পড়ল টিনের একচালা, নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে। বুড়ো শিশুর ঠাঁই।
পকেট থেকে চাবি বের করে এক হাত দিয়েই তালা খুলল রানা। ছোট একটা ঘরে ঢুকল, এখনও দালিয়ার হাত ছাড়েনি।
এখানে শান্ত হয়ে বসো। ঘরটার ভিতর একটাই কাঠের চেয়ার, সেটায় দালিয়াকে বসিয়ে দিয়ে জানালা খুলে বাড়ির। সামনের দিকটায় চোখ বুলাল রানা। এদিকে কাউকে আসতে। দেখলে পিছনের ঘরে চলে যাবে তুমি, কেমন? মানে, কেউ যেন তোমাকে দেখতে না পায়। খুব বেশি দেরি হবে না আমার, এই ঘণ্টাখানেক। সদর দরজায় তালা দিয়ে যাচ্ছি…
হঠাৎ কিছু মনে পড়তে থেমে গেল রানা, তারপর দালিয়ার সামনে একটা হাত পাতল। যে জিনিস নিয়ে এত কিছু, সেটা। দেখি তো একবার।
অপ্রতিভ দেখাল দালিয়াকে। ওটা তো আমি আনিনি, মাসুদ ভাই! আমার দেওর পাওচেনের কাছে রেখে এসেছি।
হাতটা ফিরিয়ে নিল রানা। পাওচেন এখন কোথায়, দালিয়া? ওর চেহারা থমথম করছে।
তার শ্বশুরবাড়ি, নানকুতে।
সেখানে আর কে আছে?
বউ সহ বাড়ির সবাইকে সরিয়ে দিয়েছে, বাড়িতে সে একা..
হুঁ। রানাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি…
মাসুদ ভাই, ওদের সঙ্গে না লেগে কি সমস্যার সমাধান করা যায় না?
মাথা নাড়ল রানা। তারপর দালিয়ার কাঁধে একটা হাত রাখল। উত্তর দিচ্ছি, দালিয়া, তার আগে নিজেকে শক্ত করো তুমি, ভারী গলায় বলল ও। তুমি তোমার স্বামীকে হারিয়েছ। আমার ধারণা দেওরকেও। এখন যদি চেননির একটা ব্যবস্থা করা না যায়, এরপর আমরা তোমাকেও হারাব।
রানাকে দুহাতে খামচে ধরে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ল দালিয়া। চৌচেনকে…চৌচেনকে ওরা মেরে ফেলেছে? হায় ঈশ্বর, সেজন্যেই ফোনে পাইনি ওকে… রানার বুকে মাথা রেখে হু-হু করে কেঁদে উঠল মেয়েটা।
দুমিনিট পর টিনের একচালায় তালা দিয়ে কেবল কার স্টেশনে ফিরে এল রানা। ওর পরনে এখন কেবল অপারেটরের ইউনিফর্ম।
<