যতোটা ভাবা গিয়েছিলো, তার চেয়ে বেশি কাহিল হয়ে পড়লো ডজ। দুই দিন লাগলো তার শক্ত হতে। থেতলানো জায়গাগুলোতে ব্যথা। তার অবস্থা দেখে সবাই তো ভয়ই পেয়ে গেল। ওদের মনে হতে লাগলো, ঝিনুক তোলার কাজটাই বাতিল করে দিতে হবে। সেকথা বলাও হলো ডজকে।

ডজ মানতে নারাজ। তার এক কথা, এক জায়গায় বড় অকটোপাস একটাই থাকে। সেটা যখন মারা পড়েছে, নিরাপদেই এখন ডুব দেয়া যায়। তার কথা শুনতে প্রায় বাধ্য করলো সে অন্যদেরকে।

কাজেই তৃতীয় দিনে আবার চললো ফ্লাইং বোট, মুক্তো খেতের উদ্দেশে।

বেশ কয়েকবার ডুব দিলো ডজ। দুপুরের দিকে, বেজায় কাহিল হয়ে পড়লো সে। সেদিনের মতো ঝিনুক তোলা স্থগিত রেখে দ্বীপে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো ওমর।

ডজ জানালো, ঢালের অগভীর অংশটায় ঝিনুক আর বেশি নেই, তোলা হয়ে গেছে। এরপর তুলতে হলে আরও নিচের দিকে নামতে হবে। আরও বেশি পানিতে ডুবে অতো নিচে নামার ক্ষমতা তার নেই। স্বীকার করলো একথা। অবশ্য আর ঝিনুক তোলার দরকারও নেই। যা তুলেছে, তাতে যদি মুক্তো পাওয়া যায়, যথেষ্ট হবে। সেগুলো নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে যা টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়ে বড় জাহাজ ভাড়া করতে পারবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে, অভিজ্ঞ জাপানী ডুবুরি ভাড়া করে আরও গভীর থেকে ঝিনুক তোলার জন্য নিয়ে আসতে পারবে। এই এলাকার মুক্তো সব সাফ করে নিয়ে বিদেয় হবে তখন, তার আগে নয়।

দ্বীপে ফিরে চললো বিমান। কি ভাবছিলো ডজ, হঠাৎ মুখ তুনে হাসলো। এই শোনো, বিকেলটা শুধু শুধু বসে না থেকে ঝিনুকগুলো কিন্তু খুলে ফেলতে পারি। নিশ্চয়, এতোদিনে পচন ধরেছে ঝিনুকগুলোতে। দুর্গন্ধ এখন ততোটা হবে না।

কথাটা ঠিক। হুল্লোড় করে উঠলো সবাই।

ওমর বললো, ভালো কথা বলেছে।

লাঞ্চ সেরে আর একটা মুহূর্ত দেরি করলো না ওরা। সবাই উত্তেজিত হয়ে আছে ঝিনুকের ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে। চলে এলো দ্বীপের পশ্চিম ধারে, যেখানে পচার জন্যে ফেলে রাখা হয়েছে ঝিনুক।

এসেই নাকমুখ কুঁচকে ফেললো ওমর, কিশোর আর মুসা। ওদের অবস্থা দেখে হেসে ফেললো ডজ আর দুই পলিনেশিয়ান। মরা ঝিনুকগুলোর দিকে এগোতে এগোতে ডজ বললো, এখনই এই, আরও পচলে কি করতে? তা-ও তো বাতাস বইছে উল্টো দিকে, সরাসরি নাকে এসে লাগে না। নইলে দুর্গন্ধ কাকে বলে বুঝতে। হাসলো সে। তার পরেই কি মনে পড়ায় হাসি মুছে গেল। চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকালো সাগরের দিকে।

কি হলো? জিজ্ঞেস করলো ওমর।

একটা কথা, তার দিকে তাকিয়ে আনমনে মাথা ঝাঁকাল ডজ। এতোগুলো ঝিনুক একবারে পচতে দেয়া ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। ভয়াবহ গন্ধ, কল্পনা করতে পারবে না। সাগরের বিশ মাইল দূর থেকে পাওয়া যাবে। আর এই গন্ধ একবার যার নাকে লেগেছে, জীবনে ভুলবে না সে।

তুমি বলতে চাইছো কারনেসও পেয়ে যাবে?

মাথা কঁকালো ডজ। হ্যাঁ। তারপর গন্ধ শুকে ওকে এখানে এসে হাজির হওয়াটা কিছুই না তার জন্যে।

তা বোধহয় ঠিকই বলেছে।

অবশ্যই ঠিক বলেছি। তবে আর কিছু করার নেই এখন। ভবিষ্যতে আর এরকম ভুল করবো না। অল্প অল্প করে তুলে এনে পচাবো। মুক্তো বের করে নিয়ে হয় খোলাগুলো পুঁতে ফেলবো, নয়তো পানিতে ফেলে দেবো।

হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে। যদি আর এভাবে তোলার দরকার পড়ে আমাদের। জাহাজ নিয়ে এলে তো অন্য রকম ব্যবস্থা হবে।

হাতে করে একটা প্লাষ্টিকের বালতি আর একটা বিস্কুটের টিন নিয়ে এসেছে ডজ। বালতিতে পানি ভরে নিয়ে চলে এলো ঝিনুকগুলোর কাছে। গভীর আগ্রহ আর কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে অন্যেরা, বিশেষ করে কিশোর, ওমর আর মুসা।

একটা ঝিনুক তুলে বালতির ওপরে এনে ডালার ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে দিলো ডজ। শক্ত কিছু লাগে কিনা দেখলো। তারপর ঝিনুকের ভেতরের নরম অংশটা বের করে ফেললো পানিতে। ডালাটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো একপাশে। সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ঝুড়িতে রাখলো সাগরের হাসি।

একে একে চল্লিশটা ঝিনুক খুললো ডজ। যতোই খুলছে, হতাশা বাড়ছে। খোলাগুলো ছুঁড়ে ফেলছে। একটা মুক্তোও বেরোয়নি এতোক্ষণে। তবে, একচল্লিশ নম্বর ঝিনুকটা খুলে ভেতরে আঙুল ঢুকিয়েই চিৎকার করে উঠলো। বের করে আনলো ছোট নুড়ির সমান শাদা একটা জিনিস। তুলে দেখালো। রোদ লেগে ঝিক করে উঠলো যেন ওটার ভেতরের সুপ্ত আগুন।

মুক্তোটাকে চুমো খেলো সে। বললো, আমাদের সৌভাগ্য নাম্বার ওয়ান। এই শুরু হলো।

হাত থেকে হাতে ঘুরতে লাগলো মুক্তোটা।

দাম কতো হতে পারে? জিজ্ঞেস করলো মুসা। হাতের তালুতে রেখে মুক্তোটা দেখছে।

পাঁচ হাজারের কম বললে ঘুসি মারবো পাইকারের নাকে, হেসে জবাব দিলো ডজ।

যে হারে চলছে, ওমর বললো। তাতে এক বাটি ভরতেই অনেক সময় লাগবে। ঝুড়ি ভরতে অনেক দিন।

তবে ভরে ফেলবো, জোর দিয়ে বললো ডজ। অতো তাড়াহুড়ো করলে চলে না। মুক্তো বের করতে হলে ধৈর্য রাখতে হয়। একচল্লিশটা খুলে যে একটা পেয়েছি, এটা অনেক বেশিই মনে হয়েছে আমার কাছে। অনেক সময় কয়েক হাজার ঝিনুক খুলেও একটা মেলে না। আবার তার পর হয়তো পর পর ছয়-সাতটা খোলা হলো, দেখা যাবে সবগুলোতেই মুক্তো রয়েছে। এটা এক ধরনের জুয়াখেলা বলতে পারো। মরা ঝিনুকগুলোর ওপর হাত বোলালো সে। এগুলো হাজারে হাজারে খুলতে হবে বলে মনে হয় না। তবে হলে খুব হতাশ হব।

তার কথার সমর্থনেই যেন পরের ঝিনুকটাতেই পাওয়া গেল একেবারে পাঁচটা মুক্তো। তবে বেশি বড় নয়, ভালোও নয়। কমদামী জিনিস। যা-ই হোক, পাওয়া তো গেল। আশা বাড়লো ওদের। দ্রুত হাত চালালো ডজ। তার কাজ দেখেই বোঝা যায়, এই কাজে অভ্যস্ত সে।

কলরব করে উঠলো সবাই যখন অনেক বড় একটা মুক্তো বের করলো ডজ। দেখতে অনেকটা পানের মতো। রেফারেন্স বইতে লিখে রাখার মতো জিনিস এটা। কোনো একদিন হয়তো এটা শোভা পাবে কোনো রাজার মুকুটে, কিংবা রাজকুমারীর টায়রায়। আর পত্রিকায় যখন সেই ছবি দেখবে, কি একটা ধাক্কা খাবে, ভাবো? মনে করবে না, এটা তুমিই তুলেছিলে সাগরের তল থেকে! পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার ডলারে বিকোবে এটা। বিড়বিড় করে নিজেকেই যেন বললো সে।

খুব সুন্দর, কিশোর বললো।

তবে এতো সুন্দর আর লাগবে না, তিক্ত কষ্ঠে বিড়বিড় করলো ডজ। এখন যেমন লাগছে।

কাজ চলতে লাগলো। বিস্কুটের টিনে জমা হচ্ছে একের পর এক মুক্তো। একপাশে বড় হচ্ছে ফেলে দেয়া খোলার স্তূপ। শেষ ঝিনুকটাও খুলে ছুঁড়ে ফেলা হলো। কতগুলো মুক্তো পাওয়া গেল গুনতে লাগলো ডজ। পাঁচটা বড় বড় মুক্তো, অনেক দাম হবে সেগুলোর। উনিশটা পাওয়া গেছে মাঝারী আকারের। একটা ডাবল বাটন–দুটো মুক্তো জোড়া লেগে থাকলে ওগুলোকে বলে ডাবল বাটন আর দুই মুঠো সীড পার্ল-ছোট মুক্তো, কম দামী।

যাক, ভালোই পাওয়া গেল, ডজ বললো। অন্তত আফসোস করতে হবে না আর কিছু পেলাম না বলে। সব মিলিয়ে লাখ খানেকের বেশি চলে আসবে।

মুক্তো-টুক্তো তো ভালোই চেনেন, আইডিয়া আছে, মুসা বললো। কালচারড পার্লের কথা কিছু বলতে পারবেন? ওগুলোর নাম বেশ শোনা যায়। জাপানীরা নাকি ছোট ছোট খামার করে ওই মুক্তোর চাষ করে। খোলা ঝিনুকের পেটের ভেতরে হঠাৎ করে বালির কণা ফেলে দেয়, যাতে রস ছাড়তে পারে ঝিনুক। মুক্তো তৈরি হয়ে যায় ওই কণার চারপাশে রস জমে শক্ত হয়ে।

ওগুলো মুক্তো হলো নাকি? তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নাড়লো ডজ। আসল মুক্তোর সঙ্গে ওসবের কোনো তুলনাই হয় না। আর কিছুদিন পর ওগুলো স্টেশনারি দোকানেই কিনতে পাবে। গয়নায় লাগিয়ে ফেরিওয়ালারা বিক্রি করলেও অবাক হবো না।

এতোই শস্তা?

এতোই শস্তা।

কেন? ঝিনুকের পেট থেকেই তো আসে।

এলে কি হবে? রাসায়নিক কোনো গোলমাল রয়েছে হয়তো। ঝিনুকের পেট থেকে বের করার সময় চকচকেই থাকে, আসল মুক্তোর মতো। তারপর দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাড়াহুড়োয় তৈরি অনেক জিনিসের মতোই। আসল মুক্তোর মতো আভা থাকে না ওর ভেতরে। আর খোসা ছাড়ানো যায়।

খোসা! মুক্তোর? অবাক হয়েছে মুসা।

হ্যাঁ, খোসা। পেঁয়াজের খোসার মতো। একটার ওপরে আরেকটা জড়িয়ে থাকে। কথা বলছে, আর বালতির পানিতে হাতড়াচ্ছে ডজ, মুক্তো রয়েটয়ে গেল কিনা দেখছে।

ভুলেই গিয়েছিলাম, আচমকা বলে উঠলো কিশোর। আরেকটা আছে।

সবগুলো চোখ ঘুরে গেল তার দিকে। ওমর জিজ্ঞেস করলো, কী?

সেই প্রথম মুক্তোটা, সাগরের হাসি যেটা তুলে এনেছিলো। রেখে দিয়েছিলাম। একটা গাছের গোড়ায়। যাই, নিয়ে আসি। দৌড়ে গিয়ে আধখোলা একটা ঝিনুক নিয়ে ফিরে এলো কিশোর। চেহারা দেখে তো মনে হয় না এর ভেতরে কিছু আছে। ঝিনুকটা ছোট। দেখতে বিশ্রীই বলা চলে। খোলার নানা জায়গায় দাগ, নিশ্চয় কোনো রোগ হয়েছিলো। শ্যাওলা লেগে রয়েছে এখনও, শুকিয়ে গেছে। অনেক বয়েস। বালিতে বসে পচা মাংসে আঙুল ঢুকিয়ে দিলো সে। শক্ত হয়ে গেল হঠাৎ। মুখ তুলে তাকালো সবার দিকে।

হাসলো ডজ। প্রথম মুক্তোটা পেলে ওরকমই হয়।

এটা আমার প্রথম নয়, কাঁপা গলায় বললো কিশোর। বড় বলেই! দুই আঙুলে ধরে মার্বেলের মতো বড় একটা মুক্তো বের করে আনলো সে। শাদা নয় ওটা, গোলাপী। এই জিনিস আগেও দেখেছে সে। একটা নয়, অনেকগুলো, আস্ত একটা হার। তবে সেগুলোর কোনোটাই এটার মতো বড় ছিলো না। এতো জীবন্তও নয়। হ্যাঁ, ভেতরের আগুন এমনভাবে ঝলকাচ্ছে, তার কাছে জ্যান্তই লাগছে জিনিসটা।

চুপ হয়ে গেছে সবাই। ডজ যতগুলো পেয়েছে, তার কোনোটাই এটার মতো নয়। অবশেষে প্রায় ফিসফিসিয়ে বললো সে, গোলাপী মুক্তো! নামই শুনেছি শুধু এতোদিন দেখিনি। প্যারিসে নিয়ে গেলে ঈশ্বরই জানে কতো পাওয়া যাবে!

খোসাটা একপাশে ছুঁড়ে ফেলে কিছু বলতে যাবে কিশোর, এই সময় আবার চোখ পড়লো ওটার ওপর। হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। অন্যেরাও তাকালো। দেখলো ডালার ফাঁকে গোলাপী একটা জিনিস চকচক করছে। সবাই চুপ। কোনো শব্দ নেই। নীরবে গিয়ে দ্রুত ঝিনুকটা আবার কুড়িয়ে নিলো কিশোর, বের করে আনলো আরেকটা গোলাপী মুক্তো। বাঁ হাতের তালুতে দুটো মুক্তোই রেখে সবাইকে দেখালো।

কথা হারিয়ে ফেলেছে যেন ডজ। যখন বললো, গলা কাঁপতে লাগলো তার, কি সুন্দর! ব্যাঙ ঢুকেছে যেন তার গলায়, ঘড়ঘড় স্বর বেরোচ্ছে। দেখ, দেখ সবাই ভালো করে! কারণ আর কোনোদিন এমন দৃশ্য দেখতে পাবে না। লক্ষ লক্ষ বছর বাঁচলেও না। বহু বছর ধরে এদিকের সাগরে মুক্তো খুঁজে বেরিয়েছি আমি। আমারই মতো অনেকেই খুঁজে বেড়িয়েছে, এখনও খুঁজছে। ওদের কেউ কেউ জীবনের পঞ্চাশ-ষাট বছর এর পেছনে খরচ করে দিয়েছে। তা-ও এরকম কেউ দেখেনি, অন্তত আমার জানা মতে নেই কেউ। ওরকম একটা মুক্তোই ঝিনুক থেকে বের করে দেখার ভাগ্য খুব কম মানুষের হয়, একসঙ্গে দুটোর কথা তো ভাবাই যায় না! আমার যে কেমন লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না!

ভালোই হয়েছে, কিশোর বললো। এখন একটা করে রাখতে পারবো আমরা।

মানে?

একটা আমাদের, আর একটা সাগরের হাসির। ঝিনুকটা সে-ই তুলেছে। একটা তার পাওয়া উচিত।

পাগল হয়েছে! গলা চেপে দম আটকে দেয়া হয়েছে যেন ডজের। ওরকম একটা জোড়া ভাঙবে? অসম্ভব! রীতিমতো অপরাধ হয়ে যাবে সেটা। একই সঙ্গে জন্মেছে মুক্তোদুটো, একই সঙ্গে থাকা উচিত। তুমি বুঝতে পারছে না দুটো একসাথে থাকার কি মানে। ওর একটা মুক্তোর দামই হবে পঞ্চাশ-ষাট হাজার পাউন্ড। আর দুটো একসাথে থাকলে যা দাম হাঁকবে তাতেই বিক্রি হয়ে যাবে। রাজা তার রাজত্ব ছেড়ে দিতে রাজি হয়ে যাবে ওদুটো পাওয়ার জন্যে!

হ্যাঁ, ওগুলোর একসাথেই থাকা উচিত, ডজের সঙ্গে একমত হয়ে মাথা ঝাঁকালো ওমর।

ঠিক আছে, জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। তাহলে দুটোই সাগরের হাসিকে দিয়ে দিই। একসাথেই থাকুক।

আরে না না, পাগল নাকি… কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল ডজ। বোধহয় ছোট হতে চাইলো না।

ঠোঁট ওল্টালো সাগরের হাসি। সহজ কণ্ঠে বললো, আমার ওসব দরকার নেই। কি করব? তার চেয়ে পিং মিনের দোকান থেকে কিছু লাল পুঁতি যদি কিনে দাও, এদুটো তোমাদেরকে দিয়ে দিতে পারি।

নিশ্চয় দেবো! তাড়াতাড়ি বললো ডজ। যত চাও ততো দেবো!

দেবে! খুব খুশি সাগরের হাসি। চোখ জ্বলজ্বল করছে। যতো চাই, দেবে!

দেবো।

পাগল নাকি! বিড়বিড় করলো মুসা। কয়েকটা পুঁতি কিনে দিলেই ওরকম দুটো মুক্তো…

মুসার দিকে তাকালো সাগরের হাসি। ওগুলো দিয়ে কি করবো আমি? পুঁতি পেলে হার বানিয়ে গলায় পরতে পারবো। ওগুলো ফুটোও করা যাবে না, মালাও গাঁথা যাবে না।

এরকম যুক্তির পর আর কথা চলে না। চুপ হয়ে গেল মুসা।

ডজ বললো, এতো পুঁতি কিনে দেবো, যতো খুশি মালা বানাতে পারবে। রাটুনায় পিং মিনের দোকানে নিয়ে যাবো। তোমার ইচ্ছে মতো কিনে নিও। পাউডার, স্নাে, লিপস্টিক, যা খুশি।

গম্ভীর হয়ে গেছে কিশোর। তার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে ঠকানো হচ্ছে।

সেটা বুঝতে পেরে হেসে ডজ বললো, তুমি ভাবছো ঠকাচ্ছি। তা ঠকাচ্ছি বটে। তবে দিতে তো চাইলে, নিলো না তো। এর চেয়ে অনেক বেশি খুশি হবে ও পুতি পেলে। মুক্তোগুলো জোর করে দিলে হয়তো নেবে, কিন্তু একটু পরেই ফেলে দেবে। ওর কাছে এগুলোর কোনো মূল্য নেই। তার চেয়ে ও যা পছন্দ করে সেটা দিলেই কি ভালো হয় না? মুক্তোগুলোও থাকবে।

আর কিছু বললো না কিশোর।

উঠে দাঁড়ালো ডজ। হাতটাত ধুয়ে গিয়ে চা খাওয়া দরকার। বাপরে বাপ, কি পচা গন্ধ! একেবারে গলার মধ্যে ঢুকে গেছে! বিস্কুটের টিনটা তুলে নিয়ে বললো, এগুলো কোথাও লুকিয়ে রাখা দরকার। প্লেনে রাখা ঠিক হবে না এখন, অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে যেতে পারে। একবারে যাওয়ার সময় তুলে নিলেই হবে।

লেগুনের ধারে ক্যাম্পে ফিরে এলো ওরা। নারকেল গাছের গোড়ায় বালির ওপরে পড়ে রয়েছে বিশাল একটা প্রবালের চাঙড়। কি করে এলো কে জানে। হয়তো ঝড়ে নিয়ে এসে ফেলেছে। যেভাবেই আসুক, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই ডজের। টিনটা লুকানোর ভালো একটা জায়গা পেয়েই খুশি সে। চাঙড়ের তলায় বালিতে পুঁতে রাখলো টিনটা।

চা খাওয়ার পর সিগারেট ধরিয়ে নারকেল গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে আয়েস করে টানতে শুরু করলো ওমর। পাইপ ধরালো ডজ। ভালোই পেয়েছি, কি বল, বললো সে। বাকি ঝিনুকগুলো পচলে বের করে নিয়ে রওনা হতে পারি। যদি আবহাওয়া গন্ডগোল না করে।

আর যদি রেশনে টান না পড়ে, বললো ওমর। আরও তিনদিনের খাবার হবে বলে মনে হয় না। ছয়টা মুখ, কম তো নয়।

মাছ ধরতে পারি। পানিতে তো অভাব নেই। খাবারের অসুবিধে হবে না। তিনটে মাস কাটিয়ে দিয়েছি এখানে, কোনো সরঞ্জাম ছাড়া। এখন তো বড়শি সুতো সবই রয়েছে। কোন কোন মাছ খেতে ভালো, সাগরের হাসি আর ঝিনুক জানে। ওদের দিকে ফিরলো ডজ। এই, কিছু মাছ ধরে আনো না। খাওয়ার জন্য।

কথাটা মনে ধরলো। লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো দুজনে।

কিশোরের দিকে তাকিয়ে মুসা বললো, চলো, আমরাও যাই।

চলো।

পানির ধার ঘেঁষে শাদা বালির ওপর দিয়ে হেঁটে চললো চারজনে। মাছ ধরার জন্যে জায়গা বাছাই করতে শুরু করলো সাগরের হাসি। কয়েকটা জায়গায় থেমে দেখলো। শেষে ছোট একটা গুহার সামনে এসে থামলো সে। খাড়া নেমে গেছে প্রবালের দেয়াল। আয়নার মতো শান্ত নিথর হয়ে আছে পানির ওপরটা। স্বচ্ছ। নিচে অলস ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করছে নানারকম মাছ, দেখা যাচ্ছে। ছোট একটা খাড়ি। বিশ ফুট গভীর হবে। দেয়ালের গা থেকে নেমে গেছে সিড়ির মতো ধাপ। একধারে জন্মে রয়েছে কয়েকটা নারকেল গাছ, দেখে মনে হয় একটাই গোড়া, সেটা থেকে বেরিয়েছে কান্ডগুলো, বাঁশের মতো। মাথা নুইয়ে রেখেছে পানির ওপর। পানিতে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব পড়েছে ওগুলোর। মনে হয় যেন পানির নিচে গজিয়েছে মাথা উল্টো করে।

দেয়ালের গা কামড়ে রয়েছে অসংখ্য শামুক। কয়েকটা তুলে আনলো সাগরের হাসি। খোলা ভেঙে ভেতরের মাংস বের করে বড়শিতে গেথে পানিতে ফেললো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এসে টোপ গিললো মাছ।

একের পর এক মাছ তুলে বালিতে ফেলতে লাগলো সে। এতো দ্রুত, বিশ্বাসই হতে চাইছে না দুই গোয়েন্দার। মেয়েটার হাত থেকে ছিপটা নিলো কিশোর। বড়শিতে টোপ গেঁথে দিলো সাগরের হাসি। সে ছিপ ফেললো। মিনিট খানেকের মধ্যেই তিনটে মাছ ধরে ফেললো।

যেগুলো খেতে ভালো, বেছে বেছে সেগুলোকে আলাদা করলো ঝিনুক। কিশোর বললো, হয়েছে। রাতে হয়ে যাবে। আর দরকার নেই।

এতো তাড়াতাড়ি মাছ ধরা শেষ হয়ে যাওয়ায় নিরাশই হলো মুসা। কাজকর্ম না থাকলে ভালো লাগে না। অহেতুক কতো আর বসে থাকা যায়?

আমি সাঁতার কাটতে যাচ্ছি। ছিপ সরিয়ে রেখে ভোঁদড়ের মতো স্বচ্ছন্দে পানিতে নেমে গেল সাগরের হাসি। মিনিটখানেক তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মুসা। পানির নিচে এমন সহজ ভঙ্গিতে সাঁতার কাটছে মেয়েটা, দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। ডাঙার মানুষ নয় যেন, জলকুমারী। সাঁতার কাটার ইচ্ছেটা আর দমিয়ে রাখতে পারলো না মুসা। উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট খুলতে শুরু করলো। সেদিকে তাকিয়ে হাসলো কিশোর, আর পারলে না? তোমারও এখানেই জন্মানো উচিত ছিলো। হাহ হাহ।

গাছের নিচে শুকনো নারকেল পড়ে আছে। কুড়াতে কুড়াতে মুখ ফিরিয়ে তাকালো। মুসার দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকালো একবার, তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো।

জুতো খুলে রেখে পানির কিনারে গিয়ে দাঁড়ালো মুসা। সাগরের হাসিকে দেখার জন্যে নিচে তাকালো। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একেবারে তল পর্যন্ত। কিন্তু মেয়েটা নেই। কোথায় গেল? অস্বস্তি বাড়তে লাগলো। হাত নেড়ে ডাকলো ঝিনুককে। এই ঝিনুক, দেখে যাও।

কি হয়েছে? তাড়াতাড়ি উঠে এসে মুসার পাশে দাঁড়ালো কিশোর।

ঝিনুকও এলো। পানির নিচে চোখ বোলালো একবার। অবাক হয়েছে, চেহারাই বলে দিচ্ছে তার। খোলা লেগুনের দিকে খুঁজলো একবার। নেই দেখে আবার দৃষ্টি ফেরালো গুহাঁটার দিকে। অস্বস্তি ফুটেছে চোখে। সেটা দেখে ভয়ই পেয়ে গেল কিশোর আর মুসা। ওরকম গুহা মানেই এখন ওদের জন্যে আতঙ্কের জায়গা। অকটোপাস কিংবা অন্য কোনো জলদানবের বাড়ি।

পানিতে ঝাপিয়ে পড়লো ঝিনুক, ঢেউ উঠলো। সেটা না কমা পর্যন্ত নিচের দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পারলো না কিশোর আর মুসা।

ঝিনুকও গায়েব। তাকেও আর দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এক মিনিট গেল…দুই মিনিট। পরস্পরের দিকে তাকালো দুই গোয়েন্দা। দুজনে একই কথা ভাবছে। এমনকি পলিনেশিয়ানরাও পানির নিচে এতোক্ষণ দম বন্ধ করে থাকতে পারে না। কেমন অসহায় বোধ করতে লাগলো দুজনেই।

দেয়ালের ধার ধরে কিছুদূর দৌড়ে গেল মুসা। ঝিনুক কিংবা সাগরের হাসি আছে কিনা দেখার চেষ্টা করলো। কিছুই নেই। সাগরের তলটা এখানে বেশ অন্ধকার, পানি বেশি গভীর হলে যেরকম হয়।

সাগরের হাসি যে গায়েব হয়েছে, পাঁচ মিনিটের বেশি হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনো মানুষের সাধ্য নেই, পানির নিচে ডুব দিয়ে এতোক্ষণ দম আটকে রাখে। নিশ্চয় অকটোপাসে ধরেছে! বিড়বিড় করলো মুসা।

ওমর আর ডজকে ডাকার জন্যে বলতে যাবে কিশোরকে, এই সময় যেন জাদুর বলে ভুস করে একটা মাথা ভেসে উঠলো। সাগরের হাসি! ফুচ করে মুখ থেকে পানি বের করে দিয়ে খিলখিল করে হাসলো।

কোথায় গিয়েছিলে? মুসার প্রশ্ন। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে।

জবাবে আরেকবার খিলখিল হাসি। আবার বললো, সাঁতার কাটতে। পানিতে মুখ ডুবিয়ে ফু দিয়ে ভুরভুর করে বুদবুদ তুলতে লাগলো।

তুমি মানুষ না! মাছ!

ঝিনুকও ভেসে উঠলো। দুজনে মিলে সাঁতরে চললো লেগুনের মাঝখানে। কিছুদূর গিয়ে ফিরে আসতে শুরু করলো। মুসার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কিশোর। নীরবে ওদের সাঁতার কাটা দেখছে।

মুসার দিকে হাত নেড়ে ডাকলো সাগরের হাসি, এসো।

পানিতে নামার কথা ভুলেই গিয়েছিলো মুসা। ঝাঁপ দিয়ে পড়লো। সাঁতরে চলে এলো মেয়েটার কাছে।

এসো আমার সঙ্গে, মেয়েটা বললো। এসো, দেখাচ্ছি। বললো ঝিনুক।

কি দেখাবে?

সাগরের তল। খুব সুন্দর।

দেখতেই তো পাচ্ছি। আর কি দেখবো?

এসোই না।

কাছে এলো ঝিনুক। হ্যাঁ, এসো। জোরে দম নাও। ভয় লাগছে না তো?

না।

এসো তাহলে।

লম্বা শ্বাস টেনে ডুব দিলো মুসা। নামতে লাগলো নিচের দিকে। তার দুপাশে রয়েছে সাগরের হাসি আর ঝিনুক। কিছুদূর নেমে, গুহাঁটার দিকে ইঙ্গিত করলো মেয়েটা। তিনজনেই সাঁতরাতে শুরু করলো ওটার দিকে। পানির বিশ ফুট নিচে রয়েছে এখন। আরও কাছে আসার পর মুসা বুঝলো, পানির ওপর থেকে প্রথমে যে গুহা দেখেছিলো, এটা সেটা নয়। আরেকটা।

সাগরের হাসি আর ঝিনুকের সঙ্গে ঢুকে পড়লো ভেতরে। ভয় ভয় লাগছে। অকটোপাস নেই তো? না বোধহয়। তাহলে ওদের দুজনকে আগে ধরতো। ওরা যে হারিয়ে গিয়েছিলো তখন, নিশ্চয় এই গুহাতেই ঢুকেছিলো। বাতাসও আছে। নইলে কিছুতেই পাঁচ মিনিটের বেশি সময় এখানে শ্বাস নিতে পারতো না সাগরের হাসি।

ঠিকই আন্দাজ করেছে মুসা। ওপরে ভেসে উঠলো সে, ওদের দেখাদেখি। পানির নিচের বেশ বড় একটা গুহায় ঢুকেছে ওরা। একধারে তাকের মতো দেখা গেল। তার ওপর উঠে পা দুলিয়ে বসলো সাগরের হাসি আর ঝিনুক। সাঁতরে এসে মুসাও উঠে বসলো।

গুহার সৌন্দর্য দেখে থ হয়ে গেল সে। পানির বেশি ওপরে নয় ছাতটা। জোয়ারের সময় ভরে যায় কিনা কে জানে। তবে সেটা নিয়ে আপাতত ভাবছে না মুসা। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে এক অপরূপ পরীর রাজ্য! ঘন নীল পানি। আলো আসছে কোথা থেকে বুঝতে পারছে না। নানা রঙের প্রবালের ছড়াছড়ি চারপাশে। রঙিন মাছের ঝাঁক।

অনেকক্ষণ দেখার পর জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললা মুসা। বললো, চলো, যাই। বেশি দেরি করলে ওরা আবার ভাববে।

বাইরে বেরিয়ে পানিতে মাথা তুলে দেখলো; নিচের দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। উদ্বিগ্ন। মুসাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো, কোথায় গিয়েছিলে?

গুহার ভেতরে। দারুণ জায়গা। যাবে নাকি?

মাথা নাড়লো কিশোর। নাহ, আরেক দিন।

মাছ নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে এলো ওরা।

ঝিনুক মরে পচন শুরু হতে অন্তত দুটো দিন সময় লাগবে। অযথা বসে না থেকে এই দুদিন মুক্তোর খেত থেকে ঝিনুক তুলে আনতে পারলেই লাভ, যা পাওয়া যায়। সেই আশাতেই যেতে লাগলো অভিযাত্রীরা। আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়িই, সতর্ক সংকেত জানালো ঝিনুক। এগিয়ে আসছে ঝড়।

জায়গাটাতে অকটোপাসের ভয় আপাতত নেই, ডজের সঙ্গে এব্যাপারে একমত হলো সাগরের হাসি আর ঝিনুক দুজনেই। ডজের সঙ্গে সঙ্গে ওই দুজনও নামতে লাগলো। ডুবুরির গোশাকের দরকার হয় না ওদের। বড় করে দম নিয়ে ডুব দেয়, খানিক পরে ভেসে ওঠে দুই হাতে করে ঝিনুক নিয়ে। দেখে মুসারও নামার লোভ হলো। গভীর পানিতে কি করে ডুব দিতে হয়, জানা আছে তার, অভিজ্ঞতাও আছে। তবু বার বার করে তাকে শিখিয়ে দিলো সাগরের হাসি আর ঝিনুক। ওদের পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। এতে সুবিধেই হলো মূসার।

ঝিনুক তোলার চেয়ে পানিতে নেমে খেলা করার দিকেই আগ্রহ বেশি সাগরের হাসি আর ঝিনুকের। মুসাও ওদের সঙ্গে যোগ দিলো।

দ্বিতীয় দিনের কথা। পানিতে নেমে ওরকম খেলা করছে তিনজনে। সাঁতরে দুজনের কাছ থেকে কিছুটা দূরে এসেছে মুসা। হঠাৎই দেখতে পেলো ওটাকে। শরীর বাকিয়ে ঘুরছে বিশাল এক হাঙর।

নাক নিচু করে এগিয়ে আসতে শুরু করলো ওটা। লম্বায় বিশ ফুটের কম হবে না। পেটটা শাদা, বাকি শরীরও শাদাই, তবে কিছুটা ময়লা। ধড়াস করে এক লাফ মারলো মুসার হৃৎপিন্ড। সঙ্গে ছুরিও নেই, যে বাধা দেবে। জানে যদিও, এতো বড় দানবের বিরুদ্ধে সামান্য ছুরি দিয়ে কিছুই করতে পারবে না। ওপরে উঠে যে, পার পাবে তারও উপায় নেই। হাঙরটা নেমে আসছে ওপর দিক থেকেই। ফুসফুসের বাতাসও ফুরিয়ে এসেছে। এখন রওনা হলেও ওপরে উঠতে উঠতে শেষ হয়ে যাবে বাতাস। কি করবে?

দানবটা যদি তাকে আক্রমণের পরিকল্পনা করে থাকে; তাহলে কোনোমতেই রক্ষা নেই। ফুসফুসে বাতাস থাকলেও না, না থাকলেও না। তবু হাত-পা গুটিয়ে রেখে বাঁচার চেষ্টা তো অন্তত করে দেখতে হবে।

ওপরে উঠতে শুরু করলো মুসা। বোধহয় এতোক্ষণ তাকে নজরে পড়েনি হাঙরটার, কিংবা দ্বিধায় ছিলো, কোন ধরনের জীব, আক্রমণ করবে কিনা, এসব। এখন মনে হলো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কারণ, আবার মুসার দিকে মুখ ঘুরিয়েছে ওটা। দ্রুত এগিয়ে আসতে শুরু করেছে।

<

Super User