অশুভ ঝড়
এবারের কাহিনিটি জানিয়েছেন একজন ভদ্রমহিলা। তবে তাঁর নাম প্রকাশ করেননি। তবে লেখার সঙ্গে এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির চিঠি ছিল, যিনি ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
১৯০২ সালের ১৮ মে। আয়ারল্যাণ্ডের কিলারনির সবচেয়ে ঝঞা-বিক্ষুব্ধ ভোরগুলোর একটা এল। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবল গতিতে ঝড়ো হাওয়া বইছে। লাফ লিনের তীরে আছড়ে পড়ছে সাদা চূড়ার বিশাল সব ঢেউ। তারপর শুরু হলো ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি। মার্বেলের আকারের শিলাগুলো এত দ্রুত আর জোরে পড়ছে, প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছে যে কামরাটায় দাঁড়িয়ে আছি তার জানালার কাচগুলো ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে লেকের ফুসতে থাকা পানির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কখনও মুষলধারে বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসের কারণে কুয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে। যখন কুয়াশা সরে যাচ্ছে তখন দূরের দ্বীপগুলো নজরে আসছে।
এরকম একটা বিরতির সময়, সাড়ে বারোটার মত বাজে তখন, জিনিসটা নজরে পড়ল আমার। আমার পাঁচজন বন্ধুও এই কামরাটাতেই পড়ালেখা করছিল। এই তাড়াতাড়ি এসো, একটা নৌকা উল্টে গেল নাকি? আতংকিত কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলাম। আমার বন্ধুরা দৌড়ে এল জানালার কাছে। কিন্তু কিছু নজরে পড়ল না তাদের। কিন্তু আমি এখনও পরিষ্কার দেখছি ওটাকে। বললাম, ওটা কাত হয়ে আছে। তলাটা এখন আমাদের দিকে ফিরানো, তবে এ মুহূর্তে নৌকাটা খালি। কিন্তু এবারও আমার বন্ধুরা কিছু দেখতে পেল না। দৌড়ে গিয়ে একজন পরিচারককে বললাম গেটের কাছে গিয়ে লেকে কোনো নৌকা আছে কিনা দেখতে। ওখান থেকে লেকটা বেশ কাছে। শক্তিশালী একটা দূরবীন চোখে লাগিয়ে ঝড়ের মধ্যে রীতিমত যুদ্ধ করে কয়েক মিনিট থাকল সে। কিন্তু কিছুই নজরে এল না তার। সে ফিরে এলে তার বদলে আরেকজন লোককে পাঠানো হলো। কিন্তু তারও কিছু চোখে পড়ল না।
আমার অস্থিরতা দেখে বন্ধুরা সামনে-পিছনে এসে নানাভাবে জানালা দিয়ে লেকটা পরীক্ষা করতে লাগল। তারপর তাদের একজন আমি যে নৌকাটি দেখেছি তার আকৃতি জানতে চাইল। আমি নৌকাটা কত বড় তা দেখলাম। এবার তারা আমাকে এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল, এত ঝড়ের মধ্যে আমি যে বর্ণনা দিয়েছি, তেমন একটা পার্টি বোট কোনোভাবেই লেকে নামবে না। তবু তর্ক করে গেলাম, যেমন বলেছি, তেমন একটা নৌকা সত্যি দেখেছি।
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা এল। আমি বাদে ঘটনাটা মোটামুটি বাকি সবার মন থেকেই মুছে গেল। রাতটাও কাটল আমার অস্থিরতার মধ্যে। সকাল আটটার দিকে পরিচারিকাটি চা নিয়ে এল। সে প্রথম যে কথাটি বলল তা হল, আহ, মিস! কী মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলাম, কী দুর্ঘটনা, মেরি?
একটা নৌকা ডুবে গত সন্ধ্যায় তেরোজন মানুষ মারা গেছে, জবাব দিল সে। খোঁজখবর নিতেই পরিষ্কার হয়ে গেল সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে ডারবি গার্ডেনের নৌকা দুর্ঘটনার দৃশ্যটাই পাঁচ ঘণ্টা আগে, সাড়ে বারোটায় দেখে ফেলি আমি।
মে-র আঠারো তারিখ সন্ধ্যায় সাগরে হারিয়ে যাওয়া নৌকাটা ডোবার স্থান, আকার সব কিছুই আমার দেখার সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।
<