দুর্ঘটনা

স্কটল্যাণ্ডের এডিনবার্গের মি. এডওয়ার্ড ব্রাফটনের স্ত্রী এবং কর্নেল ব্লাঙ্কলির মেয়ে মিসেস এলিজাবেথ ব্রাফটন এই অভিজ্ঞতাটি জানান। ঘটনাটি ঘটে ১৮৪৪ সালে।

এক রাতে ঘুম থেকে উঠেই স্বামীকে জাগিয়ে তুললেন ভদ্রমহিলা। বললেন ফ্রান্সে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। দুঃস্বপ্ন দেখেছেন ভেবে তার স্বামী বিরক্ত না করে ঘুমাবার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু এলিজাবেথ দিব্যি দিয়ে বললেন এটা কোনো স্বপ্ন নয়। বরং হঠাৎ করেই যেন দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।

দুর্ঘটনার ঠিক পর পর একটা বিধ্বস্ত ঘোড়ার গাড়ি দেখেছেন তিনি। বেশ কিছু মানুষ উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। একটা শরীরকে তুলে কাছের বাড়িটাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরই দেখেছেন একটা বিছানায় একজন মানুষ শুয়ে আছে। তখনই লোকটাকে চিনতে পারলেন, ডিউক অভ অরলিনস। আশপাশে ডিউকের বন্ধুদের জড় হতে দেখা গেল। এদের মধ্যে রাজা, রাণীসহ ফরাসী রাজ পরিবারের কিছু সদস্যও আছেন। নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে-ফেলতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলা ডিউককে দেখছেন তাঁরা। একজন চিকিৎসককেও দেখা যাচ্ছে। তবে পিছনের অংশ দেখা যাওয়াতে তাঁকে চিনতে পারলেন না। ডিউকের ওপর ঝুঁকে পড়ে নাড়ীর স্পন্দন দেখছেন, অন্য হাতে তাঁর ঘড়ি। তারপরই সব শেষ হয়ে গেল। এলিজাবেথও আর কিছু দেখলেন না। দিনের আলো ফুটতেই যা দেখেছেন তার জার্নালে তা লিখে রাখলেন। যখনকার কথা বলা হচ্ছে তখন বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ ছিল না। এর দুই কি তিনদিন পর টাইমসে এল ডিউক অভ অরলিন্সের মৃত্যু সংবাদ। কিছুদিন পর প্যারিসে বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার জায়গাটা দেখে চিনতে পারলেন এলিজাবেথ। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে চিকিৎসক মৃত্যুপথযাত্রী ডিউকের পাশে উপস্থিত ছিলেন তিনি এলিজাবেথের এক পুরানো বন্ধু। আর যখন ডিউকের বিছানার পাশে ছিলেন তখন কেন যেন এলিজাবেথ আর তার পরিবারের কথাই ভাবছিলেন তিনি।

এডিনবার্গের একজন নারী কীভাবে প্যারিসের একটা বাড়ির ভিতরে কী ঘটছে তা পরিষ্কার দেখলেন তা এক রহস্য। যেখানে ঘটনাটা অন্য কোনোভাবে জেনে প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না, কারণ ওটা সংবাদপত্রেই আসে তার দেখার দুতিন দিন পর। কেউ বলেন প্রকৃতির একটা লুকানো ক্যামেরা আছে। ওই ক্যামেরাতেই আমাদের দৃষ্টির বাইরে ঘটা নানান কিছু ধরে হাজির করা হয় চোখের সামনে। হয়তোবা এক্ষেত্রে এলিজাবেথের জন্য চিকিৎসক বন্ধুর ভালবাসাই প্রকৃতির রহস্যময় ওই ক্যামেরার চাবিকাঠি হিসাবে কাজ করেছে।

<

Super User