রেলের ভূত
আয়ারল্যাণ্ডের স্ট্রাবান ক্রনিকলস পত্রিকায় ছাপ হয় এই কাহিনিটি। এতে স্ট্যাবান রেলওয়ের একটা এঞ্জিন কারখানায় কাজ করার সময় কয়েকজন শ্রমিকের ভীতিকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়। ১৯১৩ সালের অক্টোবরের পর পর দু-রাতে রহস্যময় ঘটনাগুলো ঘটে। পত্রিকাটির সাংবাদিক, জোসেফ ক্রিসান শ্রমিকদের একজন পিংকারটনের সাক্ষাৎকার নেন। আমরা এটা শুনব পিংকারটনের জবানীতেই।
মাইকেল মেডেন, ফ্রেড অলিফ্যান্ট আর আমি একটা ছাউনির ভিতর এঞ্জিন ধুচ্ছিলাম। রাত সাড়ে বারোটার দিকে ছাউনির সবগুলো দরজাতে কে বা কারা যেন ধাক্কাতে শুরু করল। সেই সঙ্গে শুরু হলো টানা একটা অপার্থিব চিৎকার। আমরা তিনজন একটা দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম। দিব্যি দিয়ে বলতে পারি যেটা দেখেছি সেটা মানুষের চেহারারই, তবে গায়ে গতরে অনেক বিশাল। মনে হলো মূৰ্ছা যাব। মাথার সবগুলো চুল দাড়িয়ে গেছে আমার। সাহায্যের জন্য পাগলের মত চিৎকার শুরু করলাম তিনজনে। এসময়ই প্রহরী আৱ সিগন্যাল ম্যান দ্রুত এগিয়ে এল আমাদের সাহায্য করার জন্য। হাতের ক্রোবারটা (বাঁকানো লোহার ডাণ্ডার মত জিনিস) নিয়ে ভয়ঙ্কর জিনিসটার দিকে দৌড়ে গেল সিগন্যাল ম্যান। কিন্তু আঘাতটা যেন ওটার শরীর কেটে বেরিয়ে গেল। রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাউনির চৌহদ্দিতে শূন্যে ঝুলে রইল আত্মাটা চাঁদের আলোয় ওটাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা। পরে ওটা অদৃশ্য হলে একটা এঞ্জিনের ছাদে উঠে সেখানে লুকিয়ে রইলাম তিনজন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত।
পরের রাতেও ওটা এল, এবার দেড়টার দিকে। অলিফ্যান্ট আত্মাটার দিকে এগোল। কিন্তু দুই গজের মধ্যে গিয়ে মাটিতে পড়ল ধড়াম করে। ভয়ঙ্কর শব্দে চেঁচিয়ে উঠল ওটা। কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার মুখের দিকে এভাবে তাকাল রক্ত পানি হয়ে গেল। এবার ওটাকে দেখলাম মোটমাট সাত জন। ছাউনির মধ্যে আমাদের পোশাকসহ যা কিছু ছিল সব ছুঁড়ে মারল দানবটা।
এঞ্জিনের কাজ করা অন্য শ্রমিকদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের কথার সঙ্গে পিংকারটনের কথার কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। এদের একজন বলল পানির একটা ট্যাংকের দিকে-যাওয়া মই বেয়ে ওটাকে বার-বার ওঠানামা করতে দেখেছে সে। এক পর্যায়ে ওই ট্যাঙ্কের ভিতরে অদৃশ্য হয় জিনিসটা। এদিকে সিগন্যাল ম্যান জানাল কীভাবে সে ক্রোবার দিয়ে আত্মাটাকে আঘাত করে আর মনে হয় জিনিসটা ওটার শরীরের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। শেষমেশ একটা জানালা দিয়ে চলে যায় আত্মাটা।
পুরো ঘটনাটা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এতগুলো মানুষের একসঙ্গে মতিভ্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবাই মিথ্যা বলেছে এটাও ভাবা যায় না। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বছর কয়েক আগে এই ছাউনির ধারে একটা লোক খুন হয়। এই ঘটনার সঙ্গে রাতের এই দানবটার আগমনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনওই।
<