প্রেতাত্মার প্রতিশোধ
১৭ অক্টোবর ১৯৬৩। ঘড়ির কাঁটা রাত দশটার আশপাশে ঘুরঘুর করছে। গ্রিনহা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমেরিকার আলাবামার এই পুলিশ প্রধানকে ধরা হয় সবচেয়ে তরুণ পুলিশ চীফদের একজন হিসাবে। দারুণ যুক্তিবাদী মানুষ হিসাবে সুনাম আছে তাঁর। ভূত, অতৃপ্ত আত্মা এসবে বিশ্বাস নেই এক রত্তিও। এমনকী এসব নিয়ে ভাবাটাকেও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু মনে করেন না।
ক্যামেরাটা তুলে নিয়ে সরকারি গাড়িটায় উঠলেন। তারপর ফাল্কভিলেতে তার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ঠিক আগে রাস্তার মাঝখানে অস্বাভাবিক একটা মানুষের কাঠামো চোখে পড়ল তার। অন্তত সাত ফুট লম্বা হবে ওটা। জ্বলজ্বলে কিছুতে রঞ্জিত মনে হচ্ছে দেহটা। রূপার মত ঝিকমিক করছে। এক মুহূর্তের জন্য গ্রিনহার মনে হলো লোকটার মাথায় শিং আছে।
এই অদ্ভুত জিনিসটা কী? মনে-মনে নিজেকেই প্রশ্ন করলেন গ্রিনহা। এটা কি তবে ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী? তবে চৌহদ্দিতে কোনো ধরনের উড়যান বা ফ্লাইং সসার দেখা যাচ্ছে না। কাজেই এটা ভিনগ্রহের প্রাণী এই সম্ভাবনাটা বাদ দিতে হলো।
দেরি না করে ক্যামেরাটা টেনে নিয়ে চারটা ছবি তুললেন অদ্ভুত জিনিসটার। যেই না এটা করলেন কাঠামোটা যেন তার দিকেই এগিয়ে আসতে লাগল। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, মনে হচ্ছে
যেন শূন্যে ভেসে-ভেসে কিংবা পিছলে-পিছলে আসছে।
সঙ্গে-সঙ্গে গাড়ির সাইরেন বাজানো শুরু করলেন গ্রিনহা, আর ছাদের ঘুরতে থাকা বাতিটাও জ্বেলে দিলেন। এবার জিনিসটা যেন সেই অদ্ভুতভাবে পিছলে-পিছলে দূরে সরে যেতে লাগল, তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল।
ছবিগুলো একটা পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিলেন গ্রিনহা। আশ্চর্য এই জিনিস বা প্রাণীটিকে নিয়ে বেশ আলোড়ন উঠল মানুষের মধ্যে। বিস্তর আলোচনাও হলো একে ঘিরে। কিন্তু এর পরপরই দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে বন্দি হলেন গ্রিনহা। তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। সপ্তাহ খানেক পর রহস্যজনকভাবে আগুনে পুড়ল গ্রিনহার গাড়ি।
১৯৬৩ সালের ১৫ নভেম্বর সরকারি চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হলো তাকে। অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে বলা হলো, আমরা এমন একজন পুলিশ প্রধান চাই না যে অকাট্য প্রমাণ ছাড়া উদ্ভট কোনো জিনিসে বিশ্বাস করে। শুধু তাই না মানুষের মনেও ভীতির জন্ম দিয়েছেন আপনি। তাই পুলিশ বিভাগের আপনাকে আর প্রয়োজন নেই।
এই ভুতুড়ে জিনিসটা আসলে কী সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনও। এই এলাকায় আর কখনওই দেখা যায়নি ওটাকে। কেউ-কেউ অনুমান করলেন গ্রিনহার দৃষ্টিবিভ্রম হয়েছে। অতি উৎসাহী অনেকে আবার দাবি করলেন গোটা বিষয়টাই প্রাক্তন পুলিশ প্রধানের তৈরি করা গল্প। তবে একটা বিষয় এখানে জানিয়ে রাখা উচিত, ১৯৬৩ সালের ১৭ অক্টোবর আলাবামার অনেক লোকই অদ্ভুত সব শব্দ শুনেছেন, কেউ-কেউ অপার্থিব একটা আলোও দেখেছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি লোকে যেটা বিশ্বাস করলেন তা হলো, অজানা কোনো কারণে অশরীরী কেউ একজন গ্রিনহার ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে। তবে এই আশ্চর্য প্রতিষােধের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি কেউ-এমনকী গ্রিনহা নিজেও।
<