রাত সাড়ে তিনটা

সিঙ্গাপুর যখন ব্রিটিশদের শাসনে ছিল তখনকার ঘটনা। দুই জিগির দোস্ত ছিল। শ্রমিকের কাজ করে তারা। একজন আবার নতুন বিয়ে করেছে তখন। কাজেই সবসময় তার চিন্তা থাকে কীভাবে একটু বেশি কামাই করা যায়।

একদিন তার বন্ধু তাকে জানাল ব্রিটিশরা একটা সেতু তৈরির কাজে এক শিফটের শ্রমিকদের সাধারণ মজুরির চেয়ে বেশি টাকা দিচ্ছে। তবে সমস্যাটা হলো সময়টা একেবারেই খারাপ। এই শিফটের কাজ শুরু হয় ভোর চারটায়। বিবাহিত বন্ধুটি এক বাক্যে রাজি। কাজেই তার বন্ধু নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ককে বলে দুজনের কাজ পাঁকা করে ফেলল। তারপর বিবাহিত বন্ধুটিকে জানাল রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার বাসায় আসবে সে। তারপর দুজন একসঙ্গে কাজে যাবে।

রাতে বিবাহিত পুরুষটি শুধু বিছানায় এপাশ-ওপাশ করল। তার স্ত্রীর মেজাজ চটলেও কিছু করার নেই। কারণ লোকটার ঘুম আসছে না, কাজে যাবার চিন্তায়।

এভাবে কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। এসময়ই লোকটির মনে হলো বন্ধু তার নাম ধরে ডাকছে। বউকে বলে টুকটাক জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল। এদিকে তার বন্ধুটি রাস্তার ধারের একটা ল্যাম্প পোস্টের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকায় চেহারা বোঝা যাচ্ছে না তার।

চলো, বলেই বন্ধুটি দ্রুত হাঁটা ধরল। বিবাহিত লোকটি চাইল বন্ধুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে। কিন্তু যখনই কাছাকাছি হবার চেষ্টা করে মনে হয় যেন বন্ধুটি দূরে সরে যায়।

এদিকে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্ত্রী আবার বিছানায় যায়। একটু পরেই পারিবারিক বন্ধুটির দরজা ধাক্কানোর আর তার স্বামীর নাম ধরে ডাকার শব্দ শুনতে পেল। কী হয়েছে বুঝতে না পেরেও চিন্তিত মহিলাটি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। দেখে বন্ধুটি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

কই? ঘুমকাতুরে লোকটা কোথায়? উঠে রেডি হয়েছে তো? জানতে চাইল সে।

কী বলছেন? মাত্র আধ ঘণ্টা আগে না আপনার ডাক শুনে বেরিয়ে গেল সে? চমকে উঠে বলল মেয়েটা।

আধ ঘণ্টা আগে? আমার সঙ্গে? কিন্তু আমি তো কেবলই এলাম। এখন সাড়ে তিনটা বাজে, তাই না? অবিশ্বাসভরা কণ্ঠে বলল বন্ধুটি।

এবার ঘড়িটার দিকে তাকাল মহিলাটি। দেখল ঠিকই তো ঘড়িতে তিনটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। এবার স্বামীর জন্য ভয় হতে লাগল তার। কীভাবে একজন লোক এসে তার স্বামীকে নাম ধরে ডেকেছে আর সে উঠে চলে গেল, পুরো ঘটনাটা খুলে বলল বন্ধুটিকে।

এদিকে বন্ধুটিও এখন চিন্তায় পড়ে গেছে। নিশ্চয়ই রহস্যময় কোনো ব্যাপার আছে এর মধ্যে, ভাবল। কেউ একজন তার বন্ধুকে ভুলিয়ে নিয়ে গেছে। দ্রুত সেতুর কাজ যেখানে চলছে সেদিকে রওয়ানা হলো সে। বন্ধু আসলেই সেখানে পৌঁছে থাকলে তার দেখা পেয়ে যাবে।

পথেই পেল বন্ধুকে। তবে শুধু কাটা মাথাটা, রাস্তার ধারের একটা গর্তের মধ্যে। কোনো দিনই আর ধড়টা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

<

Super User