হতাশ না হয়ে বিশদ একটা পরিকল্পনা করে কাজে নামল পেদরো জুরিতা। অর্থ খরচ করল হু-হু করে।
খাঁড়িতে জায়গায় জায়গায় জাল পাতা হলো। ফাঁদও বাদ গেল না। চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। কি কাজ হচ্ছে না। কোথায় যেন চলে গেছে সাগর-দানো। জালে শুধু মাছ ধরা পড়ছে। শঙ্খের আওয়াজও নেই আর। তবে সাগর-দানোর পোষা ডলফিনটাকে প্রতিদিন দেখা যায়। বারবার ভেসে ওঠে ওটা, ডাক ছেড়ে আবার ডুব দেয়। বোধহয় তার সঙ্গীকে খুঁজে বেড়ায়। কি সাগর-দানোর দেখা নেই। দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ডলফিনটাও হতাশ হয়ে পড়ল। একদিন খাঁড়ি ছেড়ে চলে গেল ওটা গভীর সাগরে।
ঋতুর পরিবর্তনে আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। ইদানীং পূর্ব থেকে জোর হাওয়া দিচ্ছে। হাওয়ার বাড়িতে বড় হয়ে উঠছে সাগরের ঢেউগুলো। ঢেউ তুলে আনছে সাগরতলের বালি। পানি এখন আর স্বচ্ছ নয়। নিচে বেশিদূর নজর চলে না। তীরে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু বিক্ষুব্ধ সাগরের দিকে চেয়ে থাকে পেদরো জুধিতা। সাগরে ফেরার আগে তার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে ক্ষয়িষ্ণু ঢেউগুলো। ঢেউ সঙ্গে করে নিয়ে আসে নুড়ি পাথর আর ছোট ছোট ঝিনুক। সাগরের দিকে যখন তাকায় না তখন মুখ নিচু করে উদাস হয়ে নুড়ি পাথর আর ঝিনুক দেখে জুরিতা। মাথায় তার একটাই চিন্তা: যে করে হোক সাগর দানোকে ধরতে হবে। সাগর-দানোকে ধরতে না পারলে গভীর সাগর থেকে মুক্তো আর নানা রকম রত্ন আহরণ সম্ভব নয়। ওই সাগর দানোক ধরতে পারলে গোটা আমেরিকার সবচেয়ে বড়লোক হয়ে, যাবে সে অল্পদিনের ভেতর। কিন্তু গেছে কোথায় সাগর-দানো? এত পরিকল্পনা, এত আয়োজন, এত খরচাপাতি-সবই কি তাহলে ব্যর্থ হলো?
এত সহজে হার মানার বান্দা না পেদরো জুরিতা! অন্য বুদ্ধি বের করল সে। অকুতোভয় বালথাযার তার সঙ্গী। বালথাষারকে বুয়েন্স আয়ার্সে পাঠাল সে। দুটো অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং দুপ্রস্থ ডুবুরির পপাশাক কিনে আনবে বালথাযার! সেরা জিনিসটা কিনবে, যাতে সহজে বাতাস চলাচলের টিউব কেটে দিতে না পারে সাগর-দানো। এছাড়া আরও লাগবে দুটো শক্তিশালী টর্চবাতি। সমস্ত খাঁড়ি এবার তন্নতন্ন করে খুঁজতে হবে।
সমস্ত জিনিস নিয়ে বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ফিরে এলো বালথাযার। সঙ্গে দুটো বাড়তি জিনিসও নিয়ে এসেছে। দুটো ব্রোঞ্জের তৈরি ছোরা। ওগুলো পেদরো জুরিতাকে দেখিয়ে বলল, এগুলো আরাউকানি ইন্ডিয়ানদের ছোড়া। অনেক আগে ব্যবহার হতো। এগুলো দিয়েই সাদা চামড়ার মানুষদের হত্যা করত আমাদের পূর্ব পুরুষরা। পেদরো জুরিতার মুখ গোমড়া হয়ে গেল দেখে বলল, রাগ করলেন আমার কথায়? ছোরার ইতিহাস কিন্তু সত্যি। এখন আর পাওয়া যায় না এসব ছোরা, অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি।
ছোরার ইতিহাস শুনে খুশি হতে না পারলেও ছোরা দুটো পেদরো জুরিতার বেশ পছন্দ হলো। ধারাল মজবুত জিনি সহজে ভাঙবে না। ভালই হয়েছে বালথযার এগুলো কিনে এনেছে। সাগরের তলায় নানা রকম বিপদ হতে পারে। বিপদ হলে ছোরা তখন কাজে লাগবে।
হাসল জুরিতা। প্রশংসার সুরে বলল, তুমি খুব সাবধানী লোক, বালথাযার!
জবাবে খুশি হয়ে হাসল বালথাযার।
উন্মাতাল বাতাসে সাগব্র রুদ্র মূর্তি ধারণ করেছে, পাহাড়ের মতো বিশাল ঢেউগুলো তীরে এসে মাথা খুঁড়ছে। এখন সাগরে নামা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু পেদরো জুরিতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। বালথাযারকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষুব্ধ সাগরে ডুবুরির পোশাক পরে নামল সে।
সাগরতলের সুড়ঙ্গ-মুখে জাল পাতা হয়েছিল, সেই জাল সরাতে বেশ কষ্ট হলো ওদের। সামনে অন্ধকার গুহা মুখ ব্যাদান করে আছে। জাল সরানোর পর গুহার ভেতরে ঢুকল ওরা। ভেতরে অন্ধকার যেন আরও জমাট! খানিক এগিয়ে টর্চ জ্বালল। হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠায় ভয় পেয়ে দূরে সরে গেল প্রথমে ছোট মাছের ঝাঁক। কিন্তু একটু পরই আলোয় অভ্যস্ত হয়ে গেল, নীলচে আলোর দিকে ছুটে এলো ঝাঁকে ঝাকে। তাদের রুপোলি আঁশে টর্চের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বিরক্ত হয়ে দুহাতে মাছের দলকে তাড়াতে শুরু করল পেদরো।
সুড়ঙ্গটা উচ্চতায় চার মিটার এবং প্রশস্তে, পাঁচ মিটারের কম হবে না। টর্চের আলোয় সামনের দিকটা সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সাগর দানো গুহাতে নেই। এখানে সে থাকে তেমন কোন চিহ্নও নেই। সাগ খেপে উঠলে বা বড় মাছ তাড়া করলে ছোট মাছের দল এই গুহার নিরাপদ আশ্রয়ে এসে ঠাই নেয়। সতর্কতার সঙ্গে আরও সামনে এগোল জুরিতা আর বালথাযার। আস্তে আস্তে দুপাশ পেকে চেপে আসছে সুড়ঙ্গের দেয়াল। অবাক হয়ে থমকে দাঁড়াতে হলে ওদের।
টর্চের আলোয় লোহার শিক দেয়া দরজাটা জেখা যাচ্ছে, পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে।
সাগর তলে এই জিনিস। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো পেদরো জুরিতার। শিক ধরে ঝাকি দিল সে। দরুজা খোলার চেষ্টা করল। খুলল না দরজা। শিকগুলো ওপরে-নিচে পাথরে গেঁথে দেয়া মজবুত জিনিস, উপযুক্ত যন্ত্রপাতি থাকলেও গাঁথুনি ভাঙা সহজ হতো না। দরজা শেকল পেঁচিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। শেকলে ঝুলছে একটা ভারী তালা।
এ কোন রহস্য! পেদরো আর বালথাযার বুঝতে পারল, জল দানো শুধু বুদ্ধিমান নয়, বেশ দক্ষও নানা কাজে। ডলফিনকে পোষ মানায়, আবার কামারের কাজও জানে! কামারের কাজ জানাটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। পানির তলায় কাজ করবে যে, আগুন পাবে কোথায়? তাহলে কি সাগর-দানো উভচর?
সিলিন্ডারে অক্সিজেন আছে, কিন্তু তবু মাথার ভেতরটা টাটাচ্ছে পেদরো জুরিতার। অসম্ভব উত্তেজিত বোধ করছে। সাগরে নামার পর। দশ মিনিটকে মনে হচ্ছে দশ যুগ। এখানে দেখার আর কিছু নেই। বালথাযারকে ইশারা করে ওপরে উঠতে শুরু করল জুরিতা। তার পিছু নিল বৃদ্ধ ডুবুরি।
ওদের অপেক্ষায় অস্থির হয়ে উঠেছিল আরাউকানি ইন্ডিয়ানরা। আরও একটু দেরি হলে বিপদ অগ্রাহ্য করে সাগরে নামত। দুজনকে আস্ত দেহ নিয়ে সাগর থেকে উঠতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
ডাঙায় উঠেই সরাসরি কাজের কথা পাড়ল জুরিতা। সব দেখে কি বুঝলে, বালথাযার?।
মৃদু কাঁধ ঝাকাল হতাশ বালথাযার। মনে হচ্ছে এত সহজে ওকে ধরা যাবে না। যতদূর বুঝতে পারছি ও মাছ খেয়ে বাঁচে। তাই যদি হয় তাহলে তাকে গুহা থেকে বের হতে হবে না। গুহায় মাছের অভাব নেই। মনে হচ্ছে ডিনামাইট দিয়ে দরজাটা ভাঙা ছাড়া ওকে ধরা সম্ভব না।
এমন কি হতে পারে না যে গুহার দুটো মুখ-একটা ডাঙায়, আরেকটা সাগর-তলে?
জুরিতার কথায় কিছুক্ষণ ভাবল বৃদ্ধ ডুবুরি, তারপর বলল, হতেও পারে। অসম্ভব না।
: তাহলে আমাদের পরবর্তী কাজ আশেপাশের এলাকা ভাল করে খুঁজে দেখা, বলল পেদরো জুরিতা।
সায় দিল বালথাযার। জুরিতা ঠিকই বলেছে।
খোঁজার কাজ আরম্ভ করে দিল পেদরো জুরিতা। বেশি সময় ব্যয় হলো না, পেয়ে গেল যা খুঁজছিল।
উঁচু দেয়াল ঘেরা একটা জায়গা। বৃত্তাকার। অন্তত দশ হেক্টর জমি ঘেরা হয়েছে। দেয়ালের এক জায়গায় একটা লোহার দরজা বন্ধ সেটা! গায়ে ছোট একটা ফুটো। ওটা দিয়ে ভেতর থেকে দেখা হয় কে। এলো।
দেয়ালের বাইরে দিয়ে চক্কর মারল জুরিতা, বেশ আশ্চর্য হয়েছে। এতই দুর্লঙ্ যে বাইরে থেকে দেখে জেলখানা মনে হয়। এদিকের কৃষকরা এভাবে দেয়াল দিয়ে জমি ঘেরে না। আর এত উঁচু দেয়ালই বা কেউ দিতে যাবে কেন! একটু ফুটো নেই দেয়ালে, ফাটল বা খাজ নেই যে বেয়ে উঠে দেখা যাবে ভেতরে কি আছে।
জনবিরল এই নির্জন এলাকায় এত উঁচু দেয়ালের রহস্যটা কী! পাথরের গায়ে এখানে ওখানে কিছু শেওলা জাতীয় উদ্ভিত জন্মেছে, এছাড়া সবুজের নামগন্ধ নেই। রুক্ষ, ধূসর পাহাড়। সেই পাহাড়ের গা সাগরে এসে নেমেছে। খড়ির শুরু এখান থেকে।
কাউকে কিছু না জানিয়ে কয়েকদিন সেই দেয়ালের কাছে সময় কাটাল পেদরো জুরিতা। সর্বক্ষণ নজর রাখল দরজার ওপর। এরমধ্যে–একবারও দরজা খোলেনি। বের হয়নি কেউ, ঢোকেওনি কেউ। দেয়ালের ওপাশে কি আছে খোদা মালুম। ওদিক থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া যায় না।
সন্ধে। কালো আকাশের গায়ে মিটমিট করছে অজস্র ছোটবড় নক্ষত্র।
ঠোঁটে চুরুট, অস্থির হয়ে জেলিফিশ জাহাজের ডেকে পায়চারি করছে পেদরো জুরিতা। রেলিং ধরে আঁধার সাগরের দিকে উদাস চোখ মেলে চেয়ে আছে বালথাযার। তার সামনে হঠাৎ করেই থামল ক্যাপ্টেন। জিজ্ঞেস করল, ওই যে উঁচু দেয়াল ঘেরা জায়গাটা, ওখানে কে থাকে জানো?
সাগরের দিক থেকে চোখ ফেরাল বালথাযার। জানি। রেড ইন্ডিয়ানদের জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওরা বলল ডাক্তার সালভাদর থাকেন।
কে এই ডাক্তার সালভাদর?
তাকে ঈশ্বর বলা যায়, বলল বালথাযার।
বিস্ময়ে ভ্রূ জোড়া কপালে উঠল ক্যাপ্টেনের। একটু বিরক্তও বোধ করছে। মশকরা করছ নাকি, বালথাযার?
আপনার সঙ্গে কি মশকরা করা যায়? যা শুনেছি তা বললাম। এদিকের রেড ইন্ডিয়ানরা তাকে ঈশ্বর বলেই মনে করে। তিনিই নাকি ওদের উদ্ধারকর্তা!
ঈশ্বর! উদ্ধারকর্তা! মানে বুঝলাম না। একটু খুলে বলে।
মানুষকে মরার হাত থেকেও বাঁচাতে পারেন উনি। তাকে সর্ব শক্তিমান মনে করে রেড ইন্ডিয়ানরা। তিনি ইচ্ছে করলে খোড়াকে হাত-পা জুড়ে স্বাভাবিক করে তুলতে পারেন। শুনেছি অন্ধকেও দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারেন। প্রাণের সঞ্চার করতে পারেন মৃতদেহে।
গোফে তা দিতে দিতে বালথাযারের কথা শুনল পেদরো জুরিতা। একমনে ভেবে চলেছে। বালথাযারের কথা শেষ হতে গোঁফের দুপ্রান্ত ওপরে ঠেলে দিয়ে বলল, পানিতে সাগর-দানো আর মাটিতে সর্ব শক্তিমান ডাক্তার সালভাদর। বালথাযার, এমনও তো হতে পারে দুটো ব্যাপারের মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে। পারে না? হতে পারে একটা ব্যাপার আরেকটার সঙ্গে জড়িত।
ক্যাপ্টেন কি ভেবে কি করে বসে এই ভয়টা চেপে বসেছে বাথারের বুকে। ইতস্তত করে সে বলল, আমাদের বোধহয় এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত।
কথাটা পাত্তা দিল না জুরিতা। জিজ্ঞেস করল, ডাক্তারের চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে এমন কাউকে তুমি নিজের চোখে দেখেছ, বালথাযার?
দেখেছি। পা ভাঙা এক লোককে দেখেছি। ডাক্তার চিকিৎসা করার পর এখন সে একদম সুস্থ। মারা যাবার পর আবার বাঁচিয়ে তোলা হয়েছে তেমন একজনকেও দেখেছি। রেড ইন্ডিয়ানরা বলে লোকটাকে যখন ডাক্তার সালভাদরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। মাথা ভেঙেছিল লোকটার। মগজও নাকি বের হয়ে এসেছিল। ডাক্তার তার চিকিৎসা করার পর একেবারে সুস্থ হয়ে যায় সে। কদিন আগে বিয়েও করেছে। বউটি নাকি বেশ সুন্দরী। রেড ইন্ডিয়ানরা বলে…
বাইরের মানুষের সঙ্গে ডাক্তার দেখা করে? বালথাযারকে থামিয়ে, দিয়ে প্রশ্ন করল অধৈর্য জুরিতা।
করেন, তবে রেড ইন্ডিয়ান হলে তবেই। দূর দূরাঞ্চল থেকে লোক আসে চিকিৎসার জন্যে। কেউ কেউ তো আমাজন, আটাকামা, আসুনসিওনের মতো অত দূর থেকেও আসে। এমনই ডাক্তারের সুখ্যাতি।
দুআঙুলে ডলে গোঁফ পাকাচ্ছে আর চিন্তা করে চলেছে পেদরো। জুরিতা। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, তথ্য সংগ্রহের জন্যে বুয়েন্স আয়ার্সে যাবে।
দেরি না করে বুয়েন্স আয়ার্সে টু মারল সে। খোঁজ-খবর নিয়ে। জানতে পারল ডাক্তার সালভৰ্দর আসলেই শুধু রেড ইন্ডিয়ানদের চিকিৎসা করেন। তাঁর মতো দক্ষ শল্য চিকিৎসক গোটা দুনিয়ায় খুব কমই আছে। অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষ। প্রতিভা থাকলে সচরাচর যা হয়, ডাক্তার সালভাদরও একটু পাগলাটে কিসিমের মানুষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক চিকিৎসক হিসেবে তুলনাহীন কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে বুয়েন্স আয়ার্সের প্রান্তে জমি কিনে ফেললেন, দেয়াল দিয়ে সে জমি ঘিরে নিয়ে আস্তানা গাড়লেন। বাইরে তিনি বের হন না বললেই চলে। চিকিৎসা করেন শুধুমাত্র রেড় ইন্ডিয়ানদের। রাত দিনের প্রায় পুরোটা সময় ব্যয় করেন গবেষণার কাজে।
পেদরো জুরিতা আরও জানল, ডাক্তার সালভাদরের সম্পত্তি পাহারা দেয় এক নিগ্রো। তার সঙ্গে থাকে ভয়ালদর্শন কয়েকটা প্রকাণ্ড হাউন্ড। ইদানিং নাকি আরও ঘরকুনো হয়ে গেছেন ডাক্তার। আগে তা ও অন্য ডাক্তারদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, এখন আর বাড়ি থেকে, বেরই হন না। কাউকে বাড়ি আসতে উৎসাহিতও করেন না।
ভেবে চিন্তে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার উপায় বের করল জুরিতা। হাজার হলেও ডাক্তার, কোন রুগীকে ফেরাতে পারবে না। রুগী সেজে ওই দেয়ালের ওপাশে একবার ঢুকতে পারলে তাকে ঠেকায় কে! সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল জুতাি। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
*
দড়াম দড়াম করে আওয়াজ হচ্ছে। এক নাগাড়ে লোহার দরজা পিটিয়ে চলেছে পেদরো জুরি। অনেকক্ষণ হলো সে দরজা নিয়ে পড়েছে, এত আওয়াজ অথচ আসছে না কেউ দেখতে। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। শেষমেষ চূড়ান্ত বিরক্ত হয়ে একটা পাথর যোগাড় করল সে, ওটা দিয়ে দরজায় আঘাত করতে শুরু করল। প্রচণ্ড আওয়াজে কানের পর্দা ফেটে যাবার মতো অবস্থা।
এতক্ষণে খবর হয়েছে! দরজার ওপার থেকে ভাঙা ভাঙা স্প্যানিশ ভাষায় কে যেন জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার! কি দরকার?
আমি রুগী, যতটা সম্ভব গলা করুণ করে বলল জুরিতা, দরজা খুলুন।
ভেতরের লোকটা সহজে বিশ্বাস করার বান্দা নয়। বলল, রুগী অত জোর কোথায় পাবে যে এভাবে দরজা পেটাবে? তুমি রুগী নও। দরজার ফুটোয় তার চোখ দেখা গেল। একটু বিরতি নিয়ে সে বলল, ডাক্তার সাহেব এখন কারও সঙ্গে দেখা করবেন না।
খেপে গেল পেদরো জুরিতা। তপ্ত স্বরে লোকটার ওপর ঝাল, ঝাড়ার ইচ্ছে ছিল তার, কিন্তু কথা শেষ হতে না হতে দরজার ফুটোর ঢাকনি বন্ধ হয়ে গেছে।
আর এখানে থেকে কোন লাভ নেই। গলাগাল করতে করতে পা বাড়াল জুরিতা। জাহাজে ফিরে চলেছে একবার ভাবল বুয়েন্স আয়ার্সে গিয়ে ডাক্তার সালভাদরের নামে অভিযোগ করবে। কিন্তু তাতে সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কোন কাজ হবে কিনা তাতে গভীর সন্দেহ আছে। শেষে সিদ্ধান্ত বদলাল। আপাতত ডাক্তারের বিরুদ্ধে কিছু করার দরকার নেই।
জাহাজে ফিরে নোঙর তোলার আদেশ দিল সে। একটু পর রওনা হলো জাহাজ। বুয়েন্স আয়ার্সের দিকে যাচ্ছে।
<