থমকে দাঁড়িয়েছে জেমস মরগান। সিঁড়ির ধাপে একটা পা তুলে দিয়েছিল, ধীরে ধীরে নামিয়ে আনল। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি বোঝার প্রয়াস পেল। ওপরে। কোন সাড়া নেই, সম্ভবত ওর উপস্থিতি টের পেয়ে গেছে লোকগুলো। অপেক্ষায় আছে কখন ওপরে উঠে যাবে মরগান। হয়তো আরও কয়েক মিনিট অপেক্ষা করবে, তারপর অধৈর্য হয়ে নেমে আসবে। বাইরের লোকগুলো বোধহয় ব্যাক আপ টীমের সদস্য, মরগান আস্তাবল ছেড়ে বেরিয়ে গেলে হামলা করবে।

দ্রুত পেছনের কামরায় চলে এল ও। আলাদা আলাদা স্টলে তিনটে ঘোড়া বিশ্রাম নিচ্ছে। ওর সাড়া পেয়ে নড়েচড়ে, সশব্দে নিঃশ্বাস ছাড়ল সোরেলটা। একপাশে দেয়ালের সাথে ঝোলানো স্যাডল নামিয়ে সাজ পরাল মরগান। তারপর স্যাডলে চেপে মৃদু স্পার দাবাল। বোধহয় পরিস্থিতির গুরুত্ব আর ওর প্রয়োজন আঁচ করতে পেরেছে ঘোড়াটা, প্রায় নিঃশব্দে সামনের কামরায় এসে দাঁড়াল।

নিজের শ্রবণশক্তির ওপর মরগানের আস্থা যোলো-আনা। মিনিট তিনেকের মধ্যে বাইরের লোকগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেল। অধৈর্য হয়ে পড়েছে ওরা, নড়াচড়া করছে খুব। মরগান দোতলায় উঠে গেলে অনেক আগেই গোলাগুলি শুরু হয়ে যাওয়ার কথা, আর এ ফাঁকে নিজেরা ভেতরে ঢুকে পড়বে-পরিকল্পনামাফিক সবকিছু এগোচ্ছে না বলে হয়তো কিছুটা চিন্তিত। ওদের ধাত ভাল করেই জানে মরগান। ঝুঁকি নিয়ে সামনাসামনি বা একা কিছু করার ইচ্ছে নেই, তাই দল ভারী করে ওকে ধরাশায়ী করতে এসেছে। একজনের বিপক্ষে ছয়জন-সহজ সমীকরণ। তবে ওরা জানে না খেপে গেলে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে জেমস মরগান। জানে না সে অসাধারণ এক মানুষ, অন্তত যতক্ষণ ওর পিস্তলে বুলেট থাকবে।

মরগান ভেবেছিল স্যাড়লে চেপে আস্তাবল থেকে বেরুনোর চেষ্টা করবে, কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব ভেবে চিন্তাটা বাতিল করে দিল। একটা পরিকল্পনা এসেছে মাথায়। স্যাডল ছেড়ে ঘোড়ার সামনে চলে এল ও। সোরেলের ঘাড়ে হাত বুলানোর সময় ফিসফিস করে কথা বলল। আলতো করে মুখ দিয়ে ওর পেটে তো মারল সোরেলটা, মরগান টের পেল শক্ত হয়ে গেছে ওটার শরীর। তারপর সহসাই শিথিল হলো, ঠিক ছোটার আগে, আর মরগান সামনে থেকে সরে যাওয়ার পরপরই। বাইরের লোকগুলোকে হতচকিত করে দিয়ে নিমেষে বেরিয়ে গেল অন্ধকার রাস্তায়।

সোরেলের পেছনে খোলা পিস্তল হাতে বেরিয়ে এল ও। দরজা পেরিয়ে যখন দুই কদম এগিয়েছে, এসময় ভুল বুঝতে পারল লোকগুলো। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। সবচেয়ে কাছের লোকটা পাঁচ হাত দূরে ছিল, হাতে সিক্সশ্যটার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকে বুলেট নিয়ে আছড়ে পড়ল সঙ্গীর ওপর। তাকেও গুলি করেছিল মরগান; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। উঠতে সময় লাগবে লোকটার-সামলে। নিয়ে, শুয়ে থেকেও যদি গুলি করে, কিছুটা সময় লাগবে-ভেবে অন্য দিকে নজর দিল মরগান। সহসা কানের পাশ দিয়ে সুর তুলে চলে গেল একটা বুলেট। তারপর আরও একটা। শিউরে উঠল ও। আধপাক ঘুরে নিশানা ছাড়াই বাম হাতের পিস্তল থেকে গুলি করল, ইচ্ছে লোকটাকে ব্যস্ত রাখা। পাশে সরে গেল এক পা। বিশ হাত দূরে দেখতে পেল বিশালদেহীকে, সমানে কমলা আগুন ওগরাচ্ছে তার পিস্তল। নিশানা করার কোন বালাই নেই, ওকে মুখোমুখি হতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে দুটো পিস্তল থেকে গুলি করল মরগান। পাশাপাশি দুটো গর্ত সৃষ্টি হলো কপালে, ধূলিময় রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ল। লোকটা।

এবার ডান দিকে নজর দিল ও। নিথর পড়ে আছে দু’জনেই। দ্বিতীয় লোকটা আহত হয়েছে, বুক চেপে ধরে ককাচ্ছে। খোলা পিস্তল হাতে রাস্তা ধরে ছুটল মরগান, দু’পাশে তীক্ষ্ণ নজর চালাল। একেবারে ফাঁকা রাস্তা। গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়র কাছে চলে এল ও। রেলের লাগাম ধরে হেঁটে সরে এল জায়গাটা থেকে। ঘুটঘুঁটে অন্ধকারের মধ্যে মিশে গেল। বিশ্রামের ফাঁকে পিস্তল রিলোড করল, তারপর হোলস্টারে ফেরত পাঠাল বাম হাতের কোল্ট।

কয়েকটা বাড়ির জানালা খোলার শব্দ পেল মরগান, আলোর ক্ষীণ ধারা এসে পড়ল ধূলিধূসর রাস্তায়। ডান দিকে দোতলার জানালায় কৌতূহলী একটা মুখ দেখা গেল। রাস্তায় চোখ বুলাল মাঝবয়েসী লোকটা, কিছু বুঝতে না পেরে শেষে জানালা আটকে দিল। একটু পর লণ্ঠন হাতে আস্তাবলের দরজায় এসে দাঁড়াল বুড়ো হসল্যার, লাশগুলো দেখল। বিড়বিড় করে অদৃশ্য কাউকে গাল দেয়ার পর ভেতরে চলে গেল। মরগানের মনে পড়ল বুড়োর পাওনা মেটানো হয়নি। ঘোড়াটা দেখে হসল্যার হয়তো ভাববে পালিয়েছে ও। কয়েকটা গালও জুটতে পারে কপালে, সেইসাথে বিতৃষ্ণা। তবে, সুযোগ পেলে সকালে ফিরে এসে দেনা শোধ করবে, ভাবল ও।

ওপরের লোকগুলো নামছে না, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে। সঙ্গীদের সাড়া না। পাওয়ায় ধরে নিয়েছে কাজ হয়নি। শিকার ধরতে এসে নিজেরাই আটকা পড়েছে এখন। ইচ্ছে করলে ওদেরকে আরও কিছুক্ষণ আটকে রাখতে পারে মরগান, অন্তত মিনিট বিশের আগে উকিও মারবে না কেউ। আস্তাবলের পেছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করবে ওরা, সেটাই স্বাভাবিক। ওখানে গিয়ে লোকগুলোর ওপর চড়াও হতে পারে, কিন্তু বাদ দিয়ে দিল সে-চিন্তা। অযথা ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই।

স্যাডলে চেপে গলি ধরে উল্টোদিকের বাড়িগুলোর পেছনের রাস্তায় চলে এল ও। ধীর গতিতে এগোল, অফুরন্ত সময় হাতে। ত্রিশ গজের মত এসে পাশের গলি ধরে মূল রাস্তার কাছে ফিরে এল। কোণের একটা বাড়ির অন্ধকার দেয়াল ঘেঁষে দাড়াল, সময় নিয়ে সিগারেট রোল করল। ধূমপানের ফাঁকে ইতিকর্তব্য স্থির করে। নিল। আস্তাবলের সামনের দিকটা চোখে পড়ছে, আগের মতই ফাঁকা।

গলি থেকে মূল রাস্তায় চলে এল ও। পেছনে ফাঁকা রাস্তা জরিপ করে নিশ্চিত হলো পিছু নিচ্ছে না কেউ। রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে পড়ল উল্টোদিকের গলিতে। ঘোড়াটাকে হটিয়ে নিয়ে দক্ষিণে এগোল। আস্তাবলের পেছন দিকটা ওর গন্তব্য। পথে পড়ে থাকা আবর্জনা মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে, পরোয়া করছে না মরগান। তাড়ার মধ্যে আছে।

আস্তাবলের পেছনে, বিশ গজ দূরে পতিত জমি, জুনিপার আর উইলোর ছড়াছড়ি। তারই একটার আড়ালে অবস্থান নিল ও। ঘোড়াকে ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষায় থাকল। ভাবছে দেরি করে ফেলেছে কি-না। স্বস্তির সাথে লক্ষ্য করল আগের মতই দেয়ালের কিনারায় ঝুলছে স্যাডল ব্যাগটা।

মরগান নিশ্চিত জানে পেছন দরজা দিয়ে বেরুবে লোকগুলো। এদিক দিয়ে আক্রমণের আশঙ্কা করবে না।

ঠিক দশ মিনিটের মাথায় দেখা গেল ওদের। দু’জন অন্য লোকটির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে। চুপিসারে, নিঃশব্দে সরে পড়ার ইচ্ছে। ধরে নিয়েছে এদিক দিয়ে কোন বাধা পাবে না। কৌতুক বোধ করল মরগান। সেইসাথে রাগও হলো, এরা খুব বেশি বিরক্ত করছে ওকে। ক্যাসল টাউনে থাকার ইচ্ছে ছিল না, অথচ ওকে বাধ্য করেছে। দুটো রাত আর একটা দিন আটকে রেখেছে। এ খেলাটা একেবারেই পছন্দ হচ্ছে না ওর। কোণঠাসা হয়ে লড়তে অভ্যস্ত নয় জেমস মরগান

তবে এখন আর অবস্থা নাজুক নয়। প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকজন মারা পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পিঠটান দেবে লোকগুলো, টাকার চেয়ে জীবনের মায়াকে বড় করে দেখা শুরু করবে। তাই চাইছে মরগান। শুধু পেছনের লোকটাকে হাতের নাগালে পেতে চায় ও। ওর কাছে প্রচুর টাকা আছে, কেউই জানত না। বোঝা যাচ্ছে পেছনের নোকটা তা জানে এবং মূলোর লোভ দেখিয়েছে ওর পেছনে লেলিয়ে দেয়া লোকগুলোকে। কিংবা তথ্যটা এদের কাছে পাচার করেছে, আর ডলারের লোভে ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে লোকগুলো। মরগান জানে কে করেছে এ কাজ।

আলফ্রেড টেনিসনের প্রতি রাজ্যের ঘৃণা অনুভব করছে ও।

একে একে তিনজনই বেরিয়ে এল। বলা যায় মরগানই বেরুতে দিল। দশ কদম এগোনোর পর বুলেট বৃষ্টি শুরু হলো লোকগুলোর ওপর। আচমকা আক্রমণ পিলে চমকে দিল ওদের, হতচকিত অবস্থা সামলে নিয়ে পাল্টা হামলা করার সুযোগ পেল না কেউ। কাটা কলাগাছের মত পড়ে গেল একেকজন

মিনিট দুই অপেক্ষা করার পর আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল মরগান। ঝোঁপের সেয়ানে সেয়ানে পেছনে এসে অপেক্ষায় থাকল। জানে এবারও বেরিয়ে আসবে হসল্যার, বিরক্ত হয়ে লাশগুলো দেখবে, তারপর দুনিয়ার বিরক্তি নিয়ে যথারীতি শুয়ে পড়বে।

অশ্রাব্য খিস্তি করতে করতে বেরিয়ে এল হসল্যার। আলো উঁচিয়ে ধরে বাইরে উঁকি দিল, চারপাশে খুঁজল কি যেন। শ্রাগ করল এরপর। দয়া করে ঘুমাতে দাও, বাপু! কণ্ঠে তিরস্কার। তুমিও চলে এসো। বোধহয় আজ রাতে তোমাকে আর ঘটাবে না ওরা। হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে কার সাথে লাগতে এসেছিল। আর হ্যাঁ, আমার পাওনা দিয়ে যেয়ো। কখন কি হয়!

নিঃশব্দ হাসিতে ভরে গেল মরগানের মুখ। বুড়ো জানে এখানে আছে ও, যদিও দেখতে পায়নি। ঝোঁপ ছেড়ে বেরিয়ে এসে সোরেলটাকে হটিয়ে নিয়ে এগোল ও।

কেমন লোক তুমি, ঠিক বুঝতে পারছি না, চিন্তিত সুরে বলল সে, যদিও মুখটা নির্বিকার দেখাচ্ছে। হিসেব গরমিল করে দিতে ওস্তাদ। সাধারণ গানফাইটার ভাবতে পারছি না তোমাকে।

মাঝরাতের হিসাবে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক, হালকা সুরে বলল ও।

ওদের মত?

ভুলে যাও।

নৃশংস! কোন সুযোগই পায়নি ওরা।

তীক্ষ দৃষ্টিতে লোকটাকে দেখল্প মরগান। একজনের বিরুদ্ধে ছয়জন, তা-ও সামনে-পেছনে দুটো দলে এসেছিল ওরা। এটা কি ফেয়ার?

ভুল বুঝেছ। ওরা কিছু করার সুযোগ পায়নি, তাই বোঝাতে চেয়েছি।

খেলাটা ওরাই শুরু করেছিল এবং অনেকগুলো ভুল করেছে।

এবং উচিত সাজা পেয়েছে।

ওরা কারা, চেনো নাকি?

থমকে গেল বুড়ো, চোখ ছোট করে দেখল ওকে। নিশ্চই ভাবছ ওরা টেনিসনের লোক? না হে, স্রেফ ধান্ধাবাজ এরা। ক্যাকটাস হিলের ওপাশের হাইড-আউটের বাসিন্দা, এবং সম্ভবত গরুচোর।

শুনেছি এখানকার গরুচুরির ব্যাপারে টেনিসনের সম্পর্ক খোঁজে কেউ কেউ।

হতে পারে, নিস্পৃহ সুরে মন্তব্য করল বুড়ো। আবার ম্যাকলয়ারীরাও জড়িত থাকতে পারে। টেনিসনের চেয়ে ওদের স্টক অনেক ছোট। তাতে কিছুই প্রমাণিত হয় না।

দেখো, মরগান, আমি কিন্তু কোন জুরী নই। কে কি করল তাতে কিছুই আসে-যায় না আমার। কারও কৃতকর্মের বৈধতা বিচার করার দায়িত্বও আমার নয়।

আমার একটা কাজ করে দাও, সহাস্যে প্রস্তাব দিল মরগান। পকেট হাতড়ে দশ ডলারের একটা নোট বের করে এগিয়ে দিল। কয়েকদিনের খাবার কিনে রাখতে পারবে? সকালে এসে নিয়ে যাব। এখানে, দরজার পাশে রেখো।

আমাকে বিশ্বাস করছ কেন? বেঈমানি করতে পারি আমি। তোমার জন্যে অভ্যর্থনা-পাটির ব্যবস্থা করতে পারি।

হাসল মরগান, বুড়োর রসিকতায় কৌতুক বোধ করছে। ইচ্ছে হলে করতে পারো, তৈরি থাকব আমি।

টাকাটা নিয়ে পকেটে ঢোকাল সে। আমার পাওনা দুই ডলার, আর খাবার কিনতে পাঁচ। হুঁ, মুফতে কামাই করতে ভালই লাগে, কি বলে?

যদি হজম করতে পারো।

ম্লান হলো না হসল্যারের হাসি। তোমার সমস্যা কি জানো, সবকিছুর মধ্যে শুধু সন্দেহ করো। কাউকে বিশ্বাস করো?

করি। একমাত্র নিজেকে।

ঠিক আছে, পেয়ে যাবে তোমার জিনিস। তবে এরচেয়ে বেশি কিছু চেয়ো। এমনিতে ঝামেলার অন্ত নেই আমার। নড় করে ভেতরে ঢুকে পড়ল সে।

সিগারেট রোল করতে শুরু করল মরগান। ভাবছে রাতটা বাইরে কাটিয়ে দেবে। আস্তাবলের চেয়ে ভোলা প্রেয়ারি অনেক নিরাপদ। পরেরবার ওর ভাগ্য এতটা সুপ্রসন্ন না-ও হতে পারে। অবশ্য আরেকটি উদ্দেশ্য আছে, শত্রুপক্ষের ওপর নজর রাখতে চায়, এবং সুযোগ পেলে জাল ছিড়ে বেরিয়ে যাবে।

সময় নিয়ে সিগারেট শেষ করল ও, তারপর পেছন দরজা দিয়ে আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এল। খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ওর ঘোড়া, ওটাকে হটিয়ে নিয়ে কিছু দূরে উঁচু ঢিবির মত একটা জায়গায় চলে এল। বেশ কিছু ঝোঁপ রয়েছে, সেখানে এসে ফিল্ডগ্লাস বের করে খুঁটিয়ে দেখল পুরো এলাকা। এখনও পশ্চিমের ট্রেইলে রয়েছে দু’জন। বাজি ধরে বলতে পারবে উল্টোদিকেও কয়েকজন আছে। কোন্ দিকটা দুর্বল, মনে মনে ভাবল ও, কিন্তু সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারল না

আপাতত কিছুই করার নেই। ঘোড়াটাকে ছেড়ে দিয়ে ঘাসের গালিচার ওপর বেডরোল বিছাল মরগান, এমন জায়গায় যাতে সহজে কারও চোখে না পড়ে। শুয়ে তারাজ্বলা আকাশের দিকে তাকাল ও। একটু পর মুখের ওপর হ্যাট চাপিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

মরগানের ঘুম ভাঙল ভোরে, সূর্য ওঠার আগে। বেডরোল গুটিয়ে স্যাডলে চাপল ও। চারপাশে নজর বুলাল, আগের জায়গায় আছে প্রতিপক্ষ। সম্ভবত লোক বদল হয়েছে। খানিক পর ঘুরে শহরের ভেতর চলে এল ও বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ। তবে পাইপ্যালেস খোলা পেয়ে খুশি হলো।

আরে, মি. মরগান যে! এত সকালে? রান্নাঘরের দরজায় দেখা গেল মিসেস উইলিয়ামসকে।

রাক্ষুসে খিদে ঘুম ভাঙিয়ে দিল, হেসে বলল ও

পাল্টা হাসল মহিলা। একটু অপেক্ষা করতে হবে। এখনও তৈরি হয়নি।

নড করে একটা টেবিলে বসল ও। মহিলা ভেতরে চলে যেতে বাইরে তাকাল, উল্টোদিকের জেনারেল স্টোরের ঝপ তুলছে দোকানি। ফাঁকা রাস্তা। দূরে স-মিলের সামনে দুটো মুরগীকে দেখে দাবড়ানি দিল ঘুমকাতুরে একটা নেড়ি কুকুর। পাশের বাড়ির ছায়ায় দাঁড়িয়ে শরীর টানটান করল ওটা, তারপর পাঁজরে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। টেরই পেল না ফিরে এসেছে মুরগী দুটো, মিলের সামনে রাখা কাঠের গুঁড়োর মধ্যে খাবার খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

আধ-ঘণ্টা পর আস্তাবলে এল মরগান। কথামত দরজার একপাশে খাবারের পোটলা রেখেছে হসল্যার। ওটা নিয়ে এসে ফের স্যাডলে চাপল ও। শহর থেকে বেরিয়ে পুব দিকে ঘোড়া ছোটাল। ট্রেইলের ধারে-কাছেও গেল না, বিরান প্রান্তর দিয়ে এগিয়ে চলল। উঁচু-নিচু পথ, মাঝে মধ্যে শুকনো ডু-র আকারে নিচু হয়ে গেছে। দূরের অনুসন্ধানী চোখ এড়িয়ে যেতে নিচু জমি ধরে এগোল ও। মুখের ওপর সূর্যের আলো এসে পড়েছে, ক্রমশ তেতে উঠছে রোদ

মাইল খানেক পরে ক্ষীণ ধারার একটা ক্ৰীকের কাছে পৌঁছল ও। ওটা পেরিয়ে মাইল দশ রুক্ষ জমি পাড়ি দেয়ার পর ফ্ল্যাগ-বির সীমানা শুরু হলো। উঁচু ঘাস ঠেলে এগোচ্ছে ঘোড়াটা। দুপুর পর্যন্ত এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে কাটাল মরগান। খেয়াল করল বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাথানটা। তবে তুলনায় স্টকটা ছোট। আরও কয়েক হাজার গরু নির্বিঘ্নে চরতে পারবে এখানকার তৃণভূমিতে।

একটা ঝর্নার কাছে লাঞ্চ সেরে ফ্ল্যাগ-বি র‍্যাঞ্চ-হাউসের দিকে ঘোড়া ছোটাল মরগান। নিজের মধ্যে উত্তেজনা অনুভব করে অবাক হলো। এর কারণ কি মেলিসা বডম্যান? নিজেকে তিরস্কার করল ও। এ মেয়ে তার ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দূর থেকে খালি মনে হলেও মরগান যখন কাছে এল, দেখল বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে মেলিসা বডম্যান। নীল চোখে বিস্ময়। আরে, তুমি দেখছি এখনও যাওনি!

কফি খেতে এলাম, হেসে বলল মরগান।

এসো।

স্যাডল ছেড়ে গায়ের ধুলো ঝাড়ল ও! আনমনে দাড়িতে হাত বুলাল। ক্ষৌরি করেনি বলে আফসোস হচ্ছে। হিচিং রেইলে ঘোড়া বেঁধে ভেতরে ঢুকে পড়ল।

লাঞ্চ করেছ?

মাথা ঝাঁকিয়ে একটা চেয়ার দখল করল ও।

কিচেনে গিয়ে চুলোয় কফির পানি চড়িয়ে ফিরে এল মেলিসা। ক্যাসল টাউনেই আছ?

ঘুরছি। ইচ্ছে করছে এখানে থেকে যাই। কিন্তু আমার ঘোড়াটা পছন্দ করছে না।

ঘোড়ার পছন্দের দাম দেয় ক’জন! পাল্টা হালকা সুরে বলল মেলিসা। বরং ওরাই মালিকের ইচ্ছে মত চলে।

আমি স্বাধীন লোক। ঘুরে বেড়াতে আনন্দ পাই, আমার সাথে সাথে ঘোড়াটাও বাউণ্ডুলে হয়ে গেছে।

মি. মরগান, আমার কাছে অবাকই লাগছে, তোমার মত লোক কাজ ছাড়া এভাবে ঘোরাঘুরি করার কথা নয়। ফের কিচেনে চলে গেল মেয়েটা, আলাপে ছেদ পড়ল। দুটো মগে কফি নিয়ে ফিরে এল একটু পর।

আমার স্যাডল ব্যাগে কিছু টাকা আছে, কিছু লোক সেগুলো ছিনিয়ে নিতে চাইছে। চারপাশ থেকে আমার বেরুনোর পথ আটকে রেখেছে ওরা, এ জন্যেই যেতে পারছি না।

নিজের টাকার কথা সবাইকে বলে বেড়াও নাকি?

বললেও কেউ কেউ ঠিকই জেনে যায়। বিস্মিত দেখাল মেলিসাকে, আড়ষ্ট হয়ে গেছে কাঁধ দুটো। মরগানের মুখে স্থির হলো দৃষ্টি, কি যেন বোঝার চেষ্টা করল। মরগানের মনের ভাবনা ঠিকই পড়তে পারল মেলিসা, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারল না ও। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সামলে নিল, গম্ভীর হয়ে গেল মুখ। নিশ্চিত জানো তোমার টাকা ছিনিয়ে নিতে চাইছে টেনিসন?

দুঃখিত, ম্যাম। ঠিক তা বোঝাতে চাইনি আমি। না, টাকার ব্যাপারে আগ্রহ নেই ওর, কিন্তু আমার চামড়ার পেছনে লেগেছে ঠিকই। লোকের গোপন খবর পেতে সে ওস্তাদ।

ও তো কাল সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ম্যাককার্থিদের বাথানে ছিল। তারপর নিজের বাথানে গেছে, এসময়…’

নিজে কিছু করছে না টেনিসন। ওর ভাড়া করা লোক হন্যে হয়ে খুঁজছে আমাকে।

ঝামেলাটা বোধহয় আমার কারণেই হলো, বিষণ্ণ দেখাল মেলিসাকে। আমি দুঃখিত, মি, মরগান। নিজের নয় এমন একটা ঝামেলায় জড়িয়ে গেছ তুমি

উঁহু, আমি নিজেই জড়িয়েছি। অযথাই নিজেকে দোষী ভাবছ তুমি, ম্যাম।

কফিতে চুমুক দিল মেলিসা। ঠিক কি ঘটেছে বলবে?

জানাল মরগান।

কিন্তু ওটা তো আমার এলাকা! ফ্রি রেঞ্জ বলে সবাই ব্যবহার করতে পারে। অথচ জায়গাটাকে সার্কেল-এমের বলে দাবি করেছে লোকগুলো। এর মানে কি? ওরা ম্যাকলয়ারীদের লোক?

কাউকেই পাঞ্চারের মত মনে হয়নি আমার। খুব সম্ভব আউট-ল।

কিন্তু তোমার ওপর এভাবে হামলা করবে কেন? তোমাকে কিছু একটা বলে বুঝ দিতে হবে এ জন্যে নিজেদেরকে সার্কেল-এমের ক্রু বলে দাবি করবে, এটা মানতে পারছি না আমি। বোধহয় পরিকল্পনামাফিক করেছে কাজটা।

হতে পারে, হেসে সিগারেট ধরাল মরগান, নিরীখ করছে মেলিসাকে। চিন্তিত দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। টেনিসন সম্পর্কে আমাকে জানাবে, ম্যাম? বোধহয় তুমিই ওর সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানো।

মুহূর্তের জন্যে থমকে গেল মেলিসা। তেমন কিছু নয়, ক্ষীণ হেসে শেষে বলল, টেনেসিতে নিজের বাথান বেচে দিয়ে এখানে এসেছে।

এতবড় স্টক নিয়ে এল, এমন এক জমিতে বাথান করল যেখানে ঘাস বলতে কিছু নেই। একটু অস্বাভাবিক না?

বোধহয় না। ফ্রি রেঞ্জের সুবিধা পাবে জেনেই এসেছে সে। কাঁটাতারের বেড়ার প্রচলন হলে বিপদে পড়বে ও। বিকল্প একটা ব্যবস্থা করতে হবে, নয়তো…’

বিকল্প ব্যবস্থা কি সার্কেল-এম দখল?

শ্রাগ করল মেলিসা। হতে পারে। তবে টেনিসনই ভাল জানে সেটা।

তোমার সাথে ওর ঝামেলা বাধল কি নিয়ে?

লজপোল পাইনের ওই অংশটুকু চায় সে, অবশ্য ন্যায্য দামেই কিনতে চেয়েছে। আমি ওকে বলেছি শিগগিরই আমার সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া দেব। অন্যরাও যদি একই কাজ করে তো বিপদে পড়তে হবে ওকে। ফ্রি রেঞ্জের সুবিধা থাকায় নিজস্ব তৃণভূমির দরকার হবে ওর, কিন্তু পর্যাপ্ত ঘাস নেই বক্স-টির জমিতে। সেজন্যেই লজপোল পাইনের ওই জমিটা চাইছে টেনিসন, তাছাড়া ঝর্নার গতিপথ আটকে ম্যাকলয়ারীদের জমিতে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিতে হলেও জায়গাটা দরকার ওর

তুমি ওর কাছে জায়গাটা বিক্রি করছ?

না। ফ্ল্যাগ-বির স্টক দিনদিন বাড়ছে। বাড়তি গরুর জন্য জায়গাটা আমার নিজেরই দরকার হবে।

এখানে তো আইন বলতে কিছু নেই। টেনিসন যদি জোর করে?

পারবে না।

এত নিশ্চিত হচ্ছ কি করে?

যদ্দূর জানি এরকম কিছু করবে না সে। ওকে গরুচোর হিসেবে সন্দেহ করে ম্যাকলয়ারীরা, আবার এটাও ঠিক তারা নিজেরাও এ সন্দেহের বাইরে নয়। বরং ওদের আউটফিটেই আজেবাজে লোক বেশি।

এমন হতে পারে ওরা দুজনেই কাজটা করছে?

আমি জানি না। অসহায় দেখাল মেলিসাকে, আনমনে একটা কাঁধ উঁচাল। গম্ভীর মুখ দেখে বোঝা গেল এ নিয়ে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছুক নয়। মি. মরগান, তুমি আমাকে অবাক করেছ।

এসব জানতে চেয়ে?

নড করল মেয়েটা। তোমাকে নিজের চরকায় তেল দেয়ার মত লোক মনে হয়েছে আমার। প্রথম দিন এখানকার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাওনি তুমি

স্মিত হাসল মরগান, যদিও দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ দেখাল ওর চোয়াল। ঝামেলা পছন্দ করি না আমি, কিন্তু ঝামেলা এলে পিছিয়েও যাই না। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে ওরা। ওদের কাউকেই ছাড়ব না আমি।

টেনিসনকে অভিযুক্ত করতে হলে প্রমাণ করতে হবে।

সেসবের ধার ধারি না আমি! ও যদি কোন ঝামেলা করে সোজা ওর কপালে বুলেট ঢোকাব।

ওর অনেক লোক।

উঁহু, আমি ওকে আটকাব সুবিধামত, যাতে আমার সাথে একা লড়তে হয়।

মি. মরগান, কিছু মনে কোরো না। যদ্দর মনে হচ্ছে টেনিসন নিজে তোমার ওপর হামলা করেনি, এমনকি ওর কোন পাঞ্চারও নয়। অথচ ওকে শত্রু ভাবছ তুমি।

ছাইয়ের নিচে আগুন থাকে, পানি থাকে না, ম্যাম।

নীরবতা নেমে এল। আনমনে মগ নাড়াচাড়া করছে মেলিসা।

উঠে দাঁড়াল মরগান। দুঃখিত, ম্যাম। আমি বোধহয় তোমার অনেক সময় নষ্ট করলাম।

তোমাকে এখন ভিন্ন রকম মনে হচ্ছে, চিন্তিত সুরে বলল বডম্যান-কন্যা।

কি রকম?

টেনিসনের মতই একজন-সাহসী, জেদী এবং একরোখা। 

কফির জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বারান্দায় চলে এল মরগান। রেইল থেকে লাগাম খুলে রোয়ানে চড়ে বসল।

আবার কি দেখা হবে আমাদের?

হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে, হ্যাটের কিনারায় আঙুল তুলে নড় করল ও। হলে অবশ্য মন্দ হরে না। তোমার মত মহিলার দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

আভা ছড়াল মেলিসার মুখে। তুমি এলে খুশি হব, মি. মরগান।

শুধু কৃতজ্ঞতা?

বিচলিত দেখাল মেলিসাকে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

নিজেকে গাল দিল মরগান, এভাবে মেয়েটিকে বিব্ৰত করার জন্যে আফসোস হচ্ছে। আসলে সে এরকমই। ভদ্রমহিলাদের সাথে কি করে সদাচরণ করতে হয়, জানা নেই ওর। বিনীতভাবে ক্ষমা চাইল ও, তারপর ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে এগোল। মেলিসা বডম্যানকে বিব্ৰত করা একেবারে অনুচিত হয়েছে, রুক্ষ ট্রেইল ধরে এগোনোর সময় ভাবল ও, আর দশটা সাধারণ মেয়ের মত আচরণ করেছে মেয়েটির সাথে। অথচ সে মোটেই তা নয়।

ক্যাসল টাউনের ট্রেইল ধরে এগোল মরগান। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে। ওর বদ্ধমূল ধারণা এখানে আটকে থাকতে হবে আরও কয়েকদিন, নিদেনপক্ষে আগামীকাল পর্যন্ত। এ কদিনের উদ্বেগ আর ব্যস্ততায় গন্তব্যে পৌঁছার তাড়া প্রায় ভুলতে বসেছে। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় কেবল দুটো-মিসৌরির ট্রেইল ধরে যেতে পারে কিন্তু তাহলে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে, অথবা পশ্চিমের ট্রেইল ধরে মরুভূমি হয়ে ঘুরপথে রেডরকে যেতে পারে, কিন্তু চরম বোকামি হবে কাজটা। একে তো ট্রেইল চেনা নেই তারওপর পানির উৎসগুলো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই ওর। মরুভূমির সাথে লড়াই করার চেয়ে সশস্ত্র লোকের সাথে লড়ে জয়ের সম্ভাবনা বেশি ওর। তাছাড়া, সবচেয়ে বড় কথা, এসবের শেষ দেখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও।

ঘণ্টাখানেক পর লজপোল পাইনের বনের কাছে পৌঁছে গেল মরগান। জায়গাটা আসলেই চমৎকার, ভাবল ও, ঠিক তিনদিন আগে যেমন ভেবেছিল। সোরেলটাকে ট্রেইল থেকে সরিয়ে তৃণভূমিতে নেমে এল ও। হাঁটুসমান ঘাস ঠেলে লজপোল পাইনের বনের দিকে এগোল ঘোড়াটা। আপাতত এ তল্লাটে ওর জন্যে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বোধহয় একমুখী ওই উপত্যকাটা। নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে পারবে, চাই কি ভাগ্য ভাল হলে ক্যানিয়ন আর পর্বতশ্রেণী ডিঙিয়ে চলে যেতে পারবে ওপাশে।

বিশ মিনিটের মধ্যে উপত্যকায় পৌঁছে গেল মরগান। ঝর্নায় নেমে প্রথমে গোসল সেরে নিল, উরুর ক্ষত ভাল করে ধুয়ে পুনরায় পট্টি লাগাল। শুকিয়ে এসেছে ওটা। কয়েকদিন পর কেবল একটা দাগ থাকবে। ঘোড়ার যত্ন নিয়ে বিছানা করল ও, এমন জায়গায় যাতে কেউ এলে আগেভাগে জানতে পারে।

সিগারেট ধরিয়ে গত কয়েকদিনের ঘটনা ভাবতে শুরু করল মরগান। ছুটতে হচ্ছে না, তাই ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে পারছে এখন। এতগুলো লোক ওকে নিকেশ করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অথচ এদের কাউকে চেনে না। সবচেয়ে বড় কথা, ওর কাছে টাকা আছে তা কারও জানার কথা নয়। কেউ জানিয়েছে এদেরকে, লোকটা কে?

ওকে বিভ্রান্ত করে তুলেছে আলফ্রেড টেনিসন। সরাসরি হামলা করেনি লোকটা, অথচ মরগানের অভিজ্ঞতা আর অবচেতন মন সবকিছুর পেছনে ঠিকই তার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। জানে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক, ওর পেছনে লাগার মত যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই টেনিসনের। বরং ম্যাকলয়ারী আর মেলিসা বডম্যানকে নিয়েই ব্যস্ত সে।

স্যাডল ব্যাগের টাকাগুলো একটা কারণ হতে পারে।

টেনিসনের ব্যাপারে মেলিসার ধারণা কি জানে না মরগান, তবে মেয়েটা যে লোকটাকে ভয় পায় তা চোখে পড়েছে ওর। কারণ কি? মেলিসা বডম্যান কি আজ টেনিসনের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেনি? আগে থেকে পরিচিত দু’জন, লোকটা সম্পর্কে জানার কারণে হয়তো টেনিসন সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে মেয়েটি, যেটা মরগান নিজে সহজেই পারছে। তবে এটা ঠিক টেনিসনের বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। কেউ দেখাতে পারবে না সবকিছুর পেছনে সে-ই আছে।

ও কি অতি মাত্রায় সন্দেহপ্রবণ? রডনি অ্যাশ অনুসরণ করছিল ওকে, টাকার ব্যাপারটা জানত। হতে পারে রডনিই জানিয়েছে লোকগুলোকে? সম্ভাবনাটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সবচেয়ে অস্বাভাবিক ব্যাপার, প্রতিপক্ষ ওকে ঘায়েল করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে, আর সেজন্যেই সন্দেহ হচ্ছে পেছনে কারও উপস্থিতি রয়েছে বোধহয়। কেউ পরিচালিত করছে ওদেরকে, নইলে অনেক আগেই রণেভঙ্গ দিত লোকগুলো।

ড্যানি ওকে মিথ্যে বলেনি, অন্তত হকিন্সের ব্যাপারে। হয়তো হকিন্স নামে সত্যিই আছে কেউ। তাকে চেনে টেনিসন। এটাই চিন্তার ব্যাপার। অবস্থা এমন যে মরগান নিজে এ লোককে চিনতে পারছে না। পশ্চিমে হকিন্স নামে লোকের। অভাব নেই, কিন্তু টেনিসন চেপে যাবে এমন লোকের কথা ও শোনেনি, অথচ ড্যানি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে নামটা উচ্চারণ করেছে। একটা নামের শুধুই শেষের অংশ, শুরুটা যদি জানত! নিজের ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট মরগান, বিরক্তও। হকিন্স নামটার একটা তাৎপর্য আছে, ওর অবচেতন মন বলছে, অথচ তা ধরতে পারছে না। হয়তো এটাই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।

বেডরোল ছেড়ে কফির আয়োজন করল মরগান। মগভর্তি কফি নিয়ে আয়েশ করে বসল বিছানায়। সিদ্ধান্ত নিল আজ রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেবে। হন্যে হয়ে ওকে খুঁজতে শুরু করবে প্রতিপক্ষ, ছড়িয়ে পড়বে ওরা, আর তাতে ভাগ হয়ে পড়বে দলটা। অধৈর্য হলে তো কথাই নেই। ঠিক এটাই চাইছে মরগান। এ সুযোগে আসল কাজ সারবে, এবং ঝামেলাটা শেষ করে তবেই এখান থেকে যাবে, মিসৌরি যাওয়ার চেয়ে এটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।

এবং আলফ্রেড টেনিসনের সাথে আরেকবার মোলাকাত করবে।

<

Super User