বিছানায় শুয়ে-বসে দিন কাটানো সীমাহীন বিরক্তিকর ঠেকছে জেমস অ্যালেনের কাছে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উঠে পড়ার জো নেই। রোজালিনা বার্থেজের মতের ওপর নির্ভর করছে সেটা। জেমস বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে গত তিনদিন ধরে ওর ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে মেয়েটা। অবাধ্য হলে খেপে উঠছে।

রোজালিনা যখন নাস্তার ট্রে নিয়ে ঢুকল জেমস তখন জানালার কাছে দাড়িয়ে দিগন্ত জুড়ে থাকা ফ্লো মাউন্টেন দেখছে। বারবার অ্যাবিলিনের ছোট্ট একটা বাথানে চলে যাচ্ছিল ওর হৃদয়। সমৃদ্ধ একটা বাথান, কিন্তু শূন্যতায় ভরা।

একটা সুখবর আছে, টেবিলে ট্রে নামিয়ে রাখার সময় উৎফুল্ল স্বরে বলল রোজালিনা। গতকাল ভোরে প্রাইসের করালে ফিরে এসেছে তোমার সোরেলটা।

কিছু বলল না জেমস, জানে এমন হতেই পারে। শুকাতে শুরু করা কাঁধের ক্ষ তটা দেখল, সপ্তাহখানেক পর কেবল একটা দাগ থাকবে। ওকে ভোগাচ্ছে ঊরুর জখমটা। একটু বেশি নড়াচড়া করলেই টান পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে আরও কয়েকদিন লাগবে। সেই দিনগুলো এখানে কাটাতে হবে ভাবতেই রাগ হচ্ছে ওর, এভাবে বসে থাকার কোন মানে নেই। প্রতি মুহূর্তে এ পরিবারটির বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে।

রোজালিনা তাড়া দিতে কোন বাক্যব্যয় ছাড়াই নাস্তা সারল। ওর নীরবতা গম্ভীর করে তুলেছে মেয়েটাকে। কফি শেষ করে সিগারেট ধরাল জেমস। চোখ তুলে দেখল দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি, বুকের কাছে। দুহাত বাঁধা। শান্ত, চাহনিতে একরাশ কৌতূহল। নিজেকে ঝামেলা মনে হচ্ছে, তাই না? হেসে জানতে চাইল মেক্সিকান গোলাপ।

এভাবে বসে থাকতে ভাল লাগছে না।

কিন্তু এখনও পুরো সুস্থ হওনি তুমি। দুদিন পরেও লেন-দেনটা চুকাতে পারবে। লপার বা নেবর কেউই তো পালিয়ে যাচ্ছে না।

খানিকটা বিস্মিত হলো জেমস। তুমি জানলে কি করে?

ধারণা করেছি।

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ও।

রোববার গির্জা থেকে ফেরার পথে আমাকে শাসাল কেভিন লপার, ব্যাখ্যা করল রোজালিনা। ওর কথায় সন্দেহ হলো। তাছাড়া জ্বরের মধ্যে প্রচুর প্রলাপ বকেছ তুমি।

কি বলেছি?

মোনা নামের একটা মেয়েকে ডাকছিলে খুব।

সিগারেটে টান মেরে চলল জেমস, রোজালিনার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে জানালাপথে ফ্লো মাউন্টেনের দিকে তাকাল। ঘরে অখণ্ড নীরবতা। ধোয়ার ওপাশ থেকে দেখল মেয়েটাকে। শান্ত কিন্তু ভাবলেশহীন নয়, উদ্বেগ নেই কিন্তু কৌতূহল আছে।

মোনা আমার স্ত্রী, নীরবতা ছাপিয়ে উঠল জেমসের দ্বিধাহীন কণ্ঠ। মোনার বাবা, ফ্রেড জিপসন, আমাকে কোলে-পিঠে করে বড় করেছিল। বুড়ো মানুষটাকেও রেহাই দেয়নি ওরা। …মোনাকে রেপ করার পর যখন খুন করে ওরা, দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল ও। তিনজন মানুষ আর একটা পরিবার হারালাম আমি। আমার বেঁচে থাকার আনন্দটাই মাটি করে দিয়েছে ওরা।

গত তিনটে বছর ধরে ওদেরকে খুঁজছি আমি। একটা রাতও ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি। ওরা কেবল মোনাকেই মারেনি, আমার বাচ্চাটাকেও খুন করেছে। বাচ্চাটা এতদিনে…প্রায় তিন বছর হয়ে যেত ওর বয়েস। হাঁটত তো অবশ্যই, দৌড়াতেও পারত, তাই না?

থমকে গেছে রোজালিনা, কঠিন লোকটার ভেতরকার কষ্ট পীড়া দিচ্ছে ওকে। তিনটে বছর সীমাহীন যন্ত্রণা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে, অপরিসীম মনের জোর না থাকলে সেটা সম্ভব হত না। আর তীব্র ঘৃণা… ওর চোখ তাই বলে দিচ্ছে ক্ষমার সাথে এ লোকের পরিচয় নেই। মোনা মেয়েটি ভাগ্যবতী, ভাবছে রোজালিনা, এ মানুষটির গভীর ভালবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য ওর হয়েছে। স্ত্রী-হত্যার প্রতিশোধ নিতে এভাবে বছরের পর বছর ঘুরে বেড়ায় খুব কম মানুষ, আর এতে এটাও পরিষ্কার নিজের স্ত্রী-কে কি পরিমাণ ভালবাসত মানুষটা।

এগিয়ে গিয়ে জেমসের পাশে দাড়াল রোজালিনা, কাধে হাত রাখল। সহানুভূতি তার প্রয়োজন নেই, কিন্তু একটুখানি মমতা আর নির্ভরতা তার সঙ্কল্পকে আরও দৃঢ় করবে, জানে ও। ওরা কারা?

রিক স্যাভেজ, রেনে নেবর আর কেভিন লপার, ক্ষীণ হাসল জেমস, সামলে নিয়েছে নিজেকে। এখানে এসে নতুন নাম নিয়েছে। কিন্তু মরার আগে ওদের কথা আমাকে বলেছে ফ্রেড। শরীরে পাঁচটা বুলেট নিয়ে দুদিন বেঁচে ছিল সে। কি অমানুষিক কষ্ট পেয়েছে মানুষটা অবাক হয়ে খেয়াল করল এতদিনের বুনো আক্রোশ বা তিক্ততা নেই ওর মধ্যে। সুস্থির লাগছে নিজেকে, সেটা কি সত্যটি প্রকাশ করায়? নাকি মেয়েটির মমতা আর আন্তরিক সহানুভূতি ওকে স্পর্শ করেছে, প্রশম করেছে ওর অস্থিরতাকে? জানে না জেমস।

কিন্তু তুমি তো প্রমাণ করতে পারবে না।

প্রমাণের অপেক্ষায় বসে আছে কে, ম্যাম? ওসর্বের ধার আমি ধারি না! পকেট থেকে একটা সিগার কেস বের করল ও। ঠিক এরকম একটা জিনিস লপারের আছে, তাই না?

সায় জানাল রোজালিনা।

এটার ওপর সি-আই অক্ষরদুটো খোদাই করা। লপারের কাছে যেটা আছে তাতে কে-এল। দশ মিনিটের মধ্যে আমি এটাকে লপারের বলে চালিয়ে দিতে পারব। কেবল দুটো আঁকের ব্যাপার। এঁকে দেখাল জেমস, বিস্ময়ের সাথে তা দেখল রোজালিনা। লোকটার সৌখিনতাই ওকে ডুবিয়েছে। সিগার কেসটা ফেলে আসার পরও সে পাত্তা দেয়নি, কেন জানো? ও নিশ্চিত ছিল ওকে খুঁজে পাবে না কেউ। পেলেও সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ ওর নাম ক্যাল ইনগ্রস।

দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা হলো রোজালিনার, আতঙ্কিত হয়ে উঠল। চোখজোড়া বিস্ফারিত। ইনগ্রস! হায় খোদা, ও তো অ্যারিজোনার সবচেয়ে কুখ্যাত বন্দুকবাজ!

কিন্তু তিন বছর আগে নিজের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে এসেছে ও।

ওর সাথে টিকতেই পারবে না তুমি!

হয়তো, ম্যাম। কিন্তু তার পরোয়াও করি না। হয় আমি, নয়তো ও বেঁচে থাকবে।

শিউরে উঠল রোজালিনা। তীব্র আতঙ্ক আর আশঙ্কা অস্থির করে তুলল ওকে। তারপর সহসাই বিয়োগের সুর বাজল বুকে। হাহাকার করে উঠল ওর ভেতরটা। তোমার দুঃসাহস দেখে অবাক হচ্ছি, মি. অ্যালেন! নীরব, উষ্ণ কামরায় ওর ছন্দহীন গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শোনা গেল। বোকার মত লপারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইছ। ওকে পেতে হলে আগে নেবরকে টপকে যেতে হবে, অথচ সেটাই আমার কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছে।

ধরো লিয়ন সিটিতে একটা ইতিহাসের জন্ম দেব আমি। হাসছে জেমস, আত্মবিশ্বাস উপচে পড়ছে ওর চোখে-মুখে।

তুমি!?

ফের হাসল সে। মাথা ঝাঁকাল।

রোজালিনার কাছে অচেনা মনে হচ্ছে জেমসকে। এতটা আত্মবিশ্বাসী সে হয় কি করে? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! অসম্ভব কিছু না ভেবে বরং আইনের সাহায্য নিতে পারো তুমি। কাউন্টি শেরিফের কাছে সব খুলে বললে সে-ই ব্যবস্থা নেবে। তাছাড়া ইনগ্রসের নামে কোন পোস্টার নিশ্চই আছে। এমনিতেও সে দাগী আসামী।

ওগুলোয় কোন চেহারা নেই। পশ্চিমের একেক জায়গায় ওর একেক ধরনের বর্ণনা পাবে যার একটার সাথে আরেকটার কোন মিল নেই। সিগার কেসের প্রতি দুর্বলতাই ওর কাল হবে। এটা না পেলে আমি নিশ্চিত হতে পারতাম না। তবে স্যাভেজ আর নেবরকে ট্রেস করা কোন সমস্যাই নয়।

চুপ করে থাকল রোজালিনা। মনে-প্রাণে লোকটাকে নিরুৎসাহিত করতে চাইছে। কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। শেষে নিবৃত্ত করে নিল নিজেকে, বেরিয়ে নিচে চলে এল। কফি তৈরি করে ওপরে উঠে এল একটু পর।

তোমার আক্ষেপ বা কষ্ট যতটা না মোনার জন্যে তারচেয়ে বেশি বাচ্চাটার জন্যে, তাই না?

প্রশ্নটা বুঝতে পারল না জেমস, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে।

বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সবাই অন্তত তাই জানত। আসল ব্যাপারটা মা কখনোই কাউকে জানায়নি। বাবা ভবঘুরে মানুষ, ঘোরার নেশাটা তার রক্তের মধ্যে, তারপরও মা বিশ্বাস করত বাবা ফিরে আসবে, আমার জন্যে। আসলেও তো তাই হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগসূত্রটা তৈরি করে সন্তানরা। ঠিক এ জন্যেই বললাম তোমার কষ্টের কারণ অনাগত সন্তান।

গম্ভীর, চিন্তিত দেখাল জেমসকে। তুমি সংসার করোনি, ম্যাম। অথচ ভাবছ একজন বয়স্কা মহিলার মত।

মা-র চিন্তা-ভাবনাগুলো আমাকে পেয়ে বসেছে, অকপটে বলল রোজালিনা, ক্ষীণ হাসল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, পছন্দগুলোও। আমার ধারণা কি জানো, হয়তো বাবার মতই চালচুলোহীন কাউকে শেষপর্যন্ত পছন্দ করে ফেলব।

এ জন্যেই ক্রুশার বা লপারকে তোমার পছন্দ নয়, তাই না? অথচ অন্য কোন মেয়ে ওদেরকে পেলে নিজেকে ধন্য মনে করত।

হয়তো…সঠিক কারণটা আমি নিজেও জানি না। কিন্তু নিজেকে ধন্য মনে করব আমার পছন্দমত লোক পেলে।

উঠে দাঁড়াল জেমস, এগোল দরজার দিকে।

উঁহু, শুয়ে থাকো, চড়া গলায়, কঠিন সুরে বাধা দিল রোজালিনা। আমার সাথে তর্ক করে সুবিধে করতে পারবে না। এরপরও যদি জেদ ধরো তাহলে আমাকে টপকে যেতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই একজন মহিলার সাথে জোর করবে না? হাসল ও, জেমসকে বিছানায় শুয়ে পড়তে দেখে নিশ্চিন্ত হলো। অ্যাবিলিনে তোমার কে আছে?

চোখ বুজে ছিল জেমস, হাঁটাহাঁটি করায় দুর্বল বোধ করছে। ভাবছিল স্বাভাবিকভাবে আবার কবে হাঁটতে পারবে। বোঝা যাচ্ছে ঊরুর ক্ষতটা আরও কয়েকদিন ভোগাবে। রোজালিনার প্রশ্নে চোখ তুলে তাকাল, কালো গভীর চোখজোড়া দেখল। কিন্তু ওর চোখে ভেসে উঠল ছোট্ট একটা বাথান…সুনসান নীরব এক উপত্যকা, পাইনের সুবাস মাখা পাহাড় বাতাস যেখানে তৃণভূমির ঘাসের ওপর দামাল ছেলের মত ছুটে বেড়ায়…পাহাড়ের কোলে ছোট্ট কেবিন, তার পাশে সজি বেডের কাছে দুটো কবর। কেউ নেই, ম্যাম। কেবল দুটো কবর আর কিছু স্মৃতি। বুকের গভীর থেকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল, আটকাতে পারল না জেমস।

তুমি ওদেরকে ভুলতে পারছ না!

সেটা সম্ভব, ম্যাম?

ক্ষমা চাইছি। ওভাবে বলা ঠিক হয়নি। মাথা নাড়ল রোজালিনা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, জেমস কিছু না বলায় উঠে দাঁড়াল। স্কুলে যাচ্ছি আমি। খবরদার, উঠবে না!

এখানে থাকা ঠিক হচ্ছে না, রোজালিনা বেরিয়ে যাওয়ার পর ভাবল জেমস। সারা শহরের নোক মেয়েটা সম্পর্কে কি ভাববে? এমনিতেই মেক্সিকান, একটা ইয়াঙ্কি মেয়ের চেয়ে ওর দিকেই বাঁকা চোখে তাকায় সবাই। মেয়েটার জীবন নরকগুলজার করে ছাড়বে ওরা। তার আগেই কেউ জেনে যাওয়ার আগেই ওর সরে পড়া উচিত। নইলে ভুগবে নিশ্চাপ মেয়েটা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার শপার বা নেবর ওদের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পারে।

ব্যাপারটা হঠাৎ করে মাথায় এল ওর, লিয়ন সিটি থেকে বেরিয়ে কি করবে? তিনটে বছরে অপরিসীম ঘৃণা আর আক্রোশ ছিল নিত্যসঙ্গী, শীতল ক্রোধ ব্যপ্ত ছিল ওর সারা দেহ জুড়ে। যদি শোধ নিতে পারে, ফিরে যেতে হবে নিজের বাথানে। ওখানে ওর জন্যে কেবল একাকীত্ব আর বিয়োগের কষ্টই অপেক্ষা করছে। অ্যাবিলিনের শূন্য বাথান আর কেবিন ওর যন্ত্রণা কমাতে পারবে না, মোনা আর ফ্রেডের অভাবটুকু ঠিকই বুকে বাজবে।

 

দুদিনের মধ্যে অনেকগুলো সংবাদ পেল জেমস অ্যালেন। লেসলি উইলিয়ামস পালিয়েছে, তাকে তাড়া করতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি রেনে নেবর। একাই স্যাডলে চেপে বসেছে। সাথে একটা ওয়ারেন্ট, জোচ্চুরি আর প্রতারণার।

ক্রুশারের রাইডারেরা এখনও হাল ছাড়েনি। মেলবি পর্বতমালার কাছে ঘোড়াটাকে খুঁজে পেয়েছে। বোঝা যাচ্ছে দলটার সাথে নেবর ছিল না, নইলে সহজেই ফাঁকিটা ধরে ফেলত। একটা সওয়ারবিহীন ঘোড়ার ছাপ ভিন্ন রকমের, তাছাড়া ব্যাপারটা ওরাও ধরতে পারত যদি মাঝপথে কোথাও সরে পড়ত জেমস। কারসনদের করালের কাছে খড়ের গাদায় পড়ে যাওয়ার পর, প্রায় শুরু থেকেই সওয়ারহীন ঘোড়ার ছাপ অনুসরণ করেছে ক্রুরা। ফাঁকিটা তাই ধরতে পারেনি।

অথবা ওর গন্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না।

প্রাইসের বাড়ির কাছে দুজনকে পাহারায় বসিয়েছে ক্রুশার। সে নিজে বেশিরভাগ সময় ক্যাফেতে থাকছে। বার্থেজরা বিরক্ত হলেও সুবিধে করতে পারছে না ব্যাংকারের সাথে। আপত্তি করেও লাভ হয়নি।

পরদিন বিছানা থেকে উঠে উরুতে হোলস্টার বাঁধল জেমস। রোজালিনার কিনে আনা কাপড় পরেছে। ঝুঁকে বুট পরার সময় টান পড়ল উরুর পেশীতে, না চাইলেও ব্যথায় কুঁচকে উঠল মুখ। চকিতে তাকাল দরজার কাছে দাঁড়ানো রোজালিনার দিকে। নির্বিকার মুখে ওকে দেখছে মেক্সিকান গোলাপ, কিন্তু চোখ বলে দিচ্ছে রেগে আছে।

আরও দুটো দিন বিশ্রাম নিলে এমন কি হত? উত্তেজনা চেপে রাখতে ব্যর্থ হলো মেয়েটা। অধৈর্য হয়ে এক পা থেকে অন্য পায়ে শরীরের ভর চাপাল।

সোজা হয়ে দাড়াল জেমস। অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ উঁচাল। এমন কিছু হত। কিন্তু আমার ভাল লাগছে না।

কি করবে তুমি?

ঠিক করিনি এখনও।

চেয়ে থাকল রোজালিনা, বোঝার চেষ্টা করছে ওকে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল, তারপর চেষ্টাকৃত কোমল কণ্ঠে বলল: তোমার মত লোক আর দেখিনি, মি. অ্যালেন। নিজের জেদটাই বড় হয়ে গেল! অন্যরা কি ভাবল কখনও বোঝার চেষ্টা করেছ?

হতে পারে।

মোনা যদি তোমাকে এমন অনুরোধ করত, কি করতে?

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল জেমস, তারপর ক্ষীণ হাসল। হয়তো ওর কথা শুনতাম।

পার্থক্যটা তাহলে এখানেই, তিক্ত সুরে বলল মেয়েটা, ঠোঁটগুলো চেপে বসল পরস্পরের ওপর। আমি মোনা হলে ঠিকই আমার কথা শুনতে!

অবাক হয়ে রোজালিনাকে দেখছে জেমস। তুমি নিজেকে ওর জায়গায় ভাবছ কেন?

এগিয়ে কাছে এসে দাঁড়াল রোজালিনা। চোখ তুলে দেখল জেমসকে। কঠিন মানুষটার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই, সে তার মৃত স্ত্রীকে নিয়েই আছে। ঘোরটা কখনোই কাটবে না; ভাবল ও। হঠাৎ করে নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। একটা মেয়ে হয়ে যথেষ্ট এগিয়েছে ও। মানুষটা বুঝতে পারছে না, কিংবা না বোঝার ভান করছে। বুকে অপরিসীম কষ্ট অনুভব করল ও, কিছু বলতে গিয়েও মুখ ফুটে বেরোল না একটা শব্দও। আশাহতের যন্ত্রণায় কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেছে। ঝটিতি ঘুরল ও, তারপর বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।

বোকার মত দূরজার দিকে তাকিয়ে থাকল জেমস। তারপর মাথা ঝাঁকাল। ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে, শিহরিত হলো শরীর। আরেকটা মোনার সন্ধান পেয়ে গেছে ও! যেভাবেই হোক মেয়েটাকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে সে, অথচ বুঝতেই পারেনি এতদিন!

দরজার দিকে এগোল ও, কি মনে করে ফিরে এল আবার। পুরানো কাপড়গুলো রয়ে গেছে আলনাতে। প্যান্টের পকেট হাতড়ে দেখল কিছু নেই। অথচ ওর স্পষ্ট মনে আছে দুটো পোস্টার আর কিছু কাগজ ছিল।

বিছানার ওপর বসে পড়ল জেমস। রোজালিনার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকল কিছুক্ষণ, তারপর নিচে চলে এল।

হেনরী ক্রুশারকে খাবার পরিবেশন করছে রেমন্ড বার্থেজ। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ তুলে তাকাল ব্যাংকার। বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল চোখজোড়া। কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছিল, কিন্তু হাঁ হয়ে থাকল।

মি. ক্রুশার, হাসি চেপে বলল বার্থেজ। তোমার নাস্তা দেয়া হয়েছে।

মাথা ঝাঁকাল সে, বার কয়েক মাথা নাড়ল। জেমসের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে টেবিলে রাখা খাবারের দিকে তাকাল। খাওয়া শুরু করার আগেই তার টেবিলের কাছে চলে গেল জেমস। অনুমতির তোয়াক্কা করল না, একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। অস্বস্তি বোধ করছে ক্রুশার, নড়েচড়ে বসল নিজের চেয়ারে।

ভাঙা নাকটা দেখল জেমস, ডাক্তার শুলজ কারিগরি ফলিয়ে বেশ ভাল চেহারা দিয়েছে। দুপাশে সরু দুটো কাটা দাগ ছাড়া আর কিছু নেই।

তাহলে এই ব্যাপার! স্বমূর্তিতে ফিরল ক্রুশার, তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠ। সারা তল্লাট চষে ফেলছি আমরা, অথচ দিব্যি আরামে এখানে দিন কাটাচ্ছে এ লোকটা। লপারকে আমি বলেছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস করেনি ও।

তো? হাসছে ক্যাফে মালিক।

তোমাদের কপালে খারাবি আছে, মি. বার্থেজ, জেমসের দিকে ফিরেও তাকাল না সে, দৃষ্টি রেমন্ড বার্থেজের ওপর। তোমরা যদি স্বেচ্ছায় ওকে জায়গা দিয়ে থাকো তবে নেবরকে ঠেকাতে পারবে না কেউ। আর যদি, হারামিটা জোর করে থাকে তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

তোমার এত আগ্রহ কেন?

তো কার থাকবে? সুযোগ পেয়ে সবার সামনে আমাকে পেটাল শয়তানের বাচ্চাটা। ওকে ছেড়ে দেব নাকি? ওর হাড় গুঁড়ো করে লিয়ন সিটির রাস্তায় ছড়িয়ে দেব।

আমি তোমার সামনেই বসে আছি, বলল জেমস।

সময় হলেই টের পাবে।

ক্ষীণ হাসল জেমস, চোখে কৌতুক। রেমন্ড বার্থেজ ওর সামনে কফির মগ রেখে যেতে তুলে চুমুক দিল। তোমার স্বার্থটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়, ক্রুশার। সম্ভবত কেভিন লপারই আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে তোমাকে। অথচ আমাদের মধ্যে এমন কিছু হয়নি। ভুল একজন লোককে পার্টনার হিসেবে পেয়েছ, ওর বুদ্ধিতে তোমার ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। একটু থেমে ব্যাংকারের মুখ নিরীখ করল, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কথাগুলো তাকে স্পর্শ করেছে কি-না। একটা সুযোগ দিচ্ছি, আমার পথ থেকে তোমার লোকদের সরিয়ে নাও, সব ভুলে যাব আমি।

অন্তত ছয়জনকে খুন করেছ তুমি!

সেটা সত্যি, প্রয়োজনে আরও খুন করব। শেষে দেখবে সব কজনকে টপকে তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। তখন কথা বলার চেয়ে ট্রিগার টিপতেই ভাল লাগবে আমার।

তুমি একা। বারবার উৎরে যাবে এরকম ভাবছ কেন?

শ্রাগ করল জেমস। যা ইচ্ছে ভাবতে পারো, ক্রুশার। কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস করলে ভাল করবে।

কফিতে চুমুক দিল হেনরী ক্রুশার, আড়চোখে তাকাল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রেমন্ড বার্থেজের দিকে। তারপর ফিরল জেমসের পানে, চেহারায় জেদ ফুটে উঠল। তোমার কাপাল খারাপ, অ্যালেন। আমাকে দেখা দিয়ে দারুণ ভুল করেছ। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া আর হবে না তোমার। উঠে দাড়াল সে, কাউন্টারের কাছে গিয়ে বিল মেটাল। কাচের দরজা গলে তাকাল বাইরে দাঁড়ানো লোক দুজনের দিকে, ওপাশের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছে। দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল সে, আত্মবিশ্বাসের সাথে হাসল। বিদায়, অ্যালেন, এটাই আমাদের শেষ দেখা।

ব্যাংকার বেরিয়ে যেতে রান্নাঘরের দিকে এগোল জেমস। চুলোর কাছে কি যেন করছিল মারিয়া বার্থেজ, অবাক হয়েছে ওকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে দেখে। দরজা গলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার উদ্দেশে নড করল ও।

পেছনের জায়গাটা ফাকা থাকবে আশা করেনি। কোন বুলেট ছুটে এল না দেখে হাঁপ ছাড়ল। কেভিন লপারের স্টোরের দিকে ছুটতে শুরু করল এবার। কুশারের ক্রুদের মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সোজা পথটাই বেছে নিয়েছে। হেনরী ক্রুশার খবর দেয়ার পর ক্যাফেতে হামলে পড়বে রাইডাররা। এ সুযোগটাই নিতে চায় জেমস।

স্টোরের কাছে এসে লোকজনের সাড়া, পেল ও, সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করল। দেয়ালের পাশে দাড়িয়ে শোনার চেষ্টা করল-লপারের গলা, রাইডারদের নির্দেশ দিচ্ছে। একটু পর হেনরী কুশারের গলা শোনা গেল, কি যেন বলল সে, তাচ্ছিল্য আর অহঙ্কারে ভরা কণ্ঠ।

জায়গাটা থেকে সরে এল জেমস। পঞ্চাশ গজের মত এগোনোর পর বেরিয়ে এল মূল রাস্তায়। ব্যাংকের পোর্চে এসে দাঁড়াল, দূর থেকে ক্যাফের ওপর নজর বুলাল। সকালের দুজন বসে আছে এখনও, নতুন কেউ যোগ দেয়নি তাদের সাথে। অন্যরা এখন লপারের স্টোরের ভেতর। হিচিং রেইলে বাঁধা ঘোড়াগুলো গুনল ও-সাতটা। লপার আর কুশারের ঘোড়া এরমধ্যে না থাকলে সাতজনই রাইডার।

প্রাইসের বাড়ির কাছে আরও দুজন আছে। এছাড়া অন্তত তিনজন ছড়িয়েছিটিয়ে থাকবে। সংখ্যাটা বিশাল ভাবছে জেমস, ফাঁকি দেয়া কঠিন হবে। ভাগ্যের সহায়তা পেলেও এতগুলো লোকের বিরুদ্ধে জেতার উপায় কেবল একটাই, যদি ও ভাল অবস্থানে থাকতে পারে।

তামাক আর কাগজ বের করে সিগারেট রোল করল জেমস। ধরিয়ে ধীরে টান দিল। ঝরঝরে লাগছে শরীর, উরুতে খানিক অস্বস্তি ছাড়া আর কোন অসুবিধে নেই। নিজেকে মুক্তপুরুষ মনে হচ্ছে, কোন পিছুটান নেই, বন্ধন নেই…এক ধরনের শীল, সর্বগ্রাসী ক্রোধ ক্রমে আচ্ছন্ন করে ফেলছে ওকে। হিংস্র কুগারের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে সে। হয় আজ তার জীবনের শেষ দিন নয়তো শয়তানগুলোর!

বড় করে শ্বাস টানল ও, সিগারেটের শেষাংশ বুটের তলায় পিষে চারপাশে তাকাল। খুঁটিয়ে দেখল সবকিছু, তারপর এগোল। উল্টোদিকের সাইডওঅকে এসে দাঁড়াল ক্ষণিকের জন্যে, দেখল কেভিন লপারের স্টোর থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকগুলো। লাগাম খুলে ঘোড়ায় চেপে বসল একে একে, তারপর ক্যাফের দিকে এগোল। কোনদিকে চোখ ফেলার ফুরসৎ নেই, নিশ্চিত জানে ক্যাফেতে আছে ওদের শিকার।

একটু অপেক্ষা করল জেমস, লপার বা ক্রুশার কেউই বেরিয়ে এল না। এবার গলি ধরে সরে এল জায়গাটা থেকে, স্কুলের কাছে এসে দক্ষিণে এগোল। কারসনদের বাড়ির কাছে নেই কেউ। নিঃশব্দে আঙিনা পেরিয়ে এল ও, পেছন ফিরে দেখে নিল ফেলে আসা পথ। করালের কাছে এসে দাঁড়াল। নিকোলাস প্রাইসের বাড়ির ওপর চোখ বুলাল। অনায়াসে খুঁজে পেল দুজনকে। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে পড়েছে বোধহয়, স্বভাবতই অসতর্ক। ট্রেইলের পাশে একটা জুনিপার ঝোপের আড়ালে লুকিয়েছে।

নিঃশব্দে ওদের দশগজ পেছনে এসে দাঁড়াল জেমস অ্যালেন, টেরই পেল না কেউ। রাইফেল বাম হাতে চেপে ধরে ডান হাতে একটা সিক্সটার ক করল, নিমেষে স্থির হয়ে গেল ওদের শরীর। ঠায় বসে থাকল কয়েক সেকেন্ড, তারপর ধীরে উঠে দাঁড়াল।

কোন চালাকি কোরো না, মৃদু স্বরে নির্দেশ দিল জেমস। দুই আঙুলে পিস্তল তুলে দূরে ফেলবে, একজন একজন করে। প্রথমে তুমি, ডান দিকের জন।

ধীরে কোমরের কাছে চলে গেল লোকটার হাত, কিন্তু সহসাই বিদ্যুৎ গতিতে ছোবল হানল হোলস্টারে। এরকম কিছু হতে পারে আশা করেছিল জেমস। নির্দ্বিধায় গুলি করল। ঘুরতে শুরু করেছিল লোকটা, জেমসের গুলি ওর পাঁজর বিদীর্ণ করে ভেতরে ঢুকে পড়ল। পরের গুলিতে ভূপতিত হলো সে।

শেষ মুহূর্তে ভুলটা বুঝতে পারল অন্যজন, একই সাথে গুলি করল ওরা। তাড়াহুড়োয় ফস্কে গেল লোকটার গুলি, ওই একটা বুলেটে নির্ধারিত হয়ে গেল সবকিছু।

পিস্তল রিলোড করল জেমস, চারপাশে তাকাল একবার। ক্যাফেতে হানা দেয়া লোকগুলো এখন জেনে যাবে ওর অবস্থান। এক হিসেবে ভালই হয়েছে, আপাতত বাজেদের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে ওরা। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মেক্সদের বিপদের আশঙ্কা কমল।

প্রাইসের কেবিনের দিকে এগোল ও, আঙিনায় ঢুকতে দেখল পোর্চে এসে দাঁড়িয়েছে লরা প্রাইস। হ্যাটের কিনারা ছুঁয়ে তাকে সম্মান জানাল জেমস, করালে ঢুকে পড়ল। ওকে দেখে শব্দ করে খুশি প্রকাশ করল সোরেলটা, পা ছুঁড়তে শুরু করেছে। কাছে এসে ওটার কাঁধে চাপড় মারল ও, স্যাডল চাপিয়ে বেরিয়ে এল।

শহরের দিক থেকে কয়েকটা খুরের শব্দ শোনা গেল।

মার্ক কোথায়, ম্যাম? স্যাডলে চেপে জানতে চাইল জেমস।

স্কুলে।

ভেতরে যাও। ওরা এসে পড়েছে। আমি চেষ্টা করব যাতে এখানে কিছু না ঘটে।

নির্বিকার মুখে ওকে দেখল মহিলা, ঘুরে ভেতরে ঢুকে পড়ল এরপর। ট্রেইলে এসে দাঁড়াল জেমস, অপেক্ষায় থাকল।

সেকেন্ড কয়েক পর দেখা গেল লোকগুলোকে—চারজন। উত্তেজনায় টগবগ, করে ফুটছে। ওকে দেখে থমকে গেল, ঘোড়াগুলোকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। শক্ত হাতে লাগাম টানায় সশব্দে ডেকে উঠে প্রতিবাদ জানাল একটা ঘোড়া, সামনের দুপা তুলে দিয়েছে। কোনরকমে স্যাডল হর্ন আঁকড়ে ধরে সামলে নিল সওয়ারী, তীব্র গাল বল ঘোড়ার উদ্দেশে। নির্দয়ভাবে স্পর দাবাল। আর্ত চিৎকার করে উঠল অবলা প্রাণীটি, দুই পা এগিয়ে শান্ত হয়ে গেল।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লোকগুলোকে দেখল জেমস। সব কজন বেপরোয়া, চাহনিতেই পরিষ্কার ওদের উদ্দেশ্য—দল বেঁধে খুন করতে এসেছে।

তোমরা বোধহয় আমাকেই খুঁজছ? মৃদু কণ্ঠে জানতে চাইল ও। মুখে হাসি, আচরণে ঢিলে ভাব থাকলেও সতর্ক। জানে আগাম কোন সঙ্কেত বা কথা-বার্তা ছাড়াই এদের যে কেউ পিস্তল বা রাইফেল তুলে নিতে পারে।

ঠিকই ধরেছ, চাঁছাছোলা স্বরে জবাব দিল সামনের লোকটা, মাটিতে থুথু ছিটাল। ভেবো না তোমাকে দেখে ভয়ে পেচ্ছাব করে দিয়েছি আমরা। নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠল সে।

আরও কয়েকটা লাশ পড়বে কেবল। আমি ভাবছি আন্ডারটেকার লোকটা শেষে আবার কবর খুঁড়তে খুঁড়তে বিরক্ত হয়ে যায় কি-না।

হাসি থেমে গেল ওদের, সতর্ক দৃষ্টিতে মাপছে ওকে।

হেনরী ক্রুশারের জন্যে তোমাদের এত দরদ! আমি ভাবছি সেটা কার বেশি, তাকেই আগে গুলি করব। তুমি একা, অ্যালেন।

সত্যি, কিন্তু তোমাদের বন্ধুরাও এমনই বলেছিল। ওরা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। হেনরী ক্রুশারের টাকা ওদের কোন কাজে আসছে না এখন।

কি বলতে চাও? জানতে চাইল প্রথম লোকটা, সুর বদলে গেছে, গলায় সন্দেহ।

নিজের অফিসে আরামে বসে আছে সে, কয়েকটা ডলারের জন্যে অযথাই জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছ তোমরা। বাস্তবে আমাদের মধ্যে কোন শত্রুতা নেই। এমন এক লোকের লড়াই তোমরা করছ নিজে লড়ার সাহস যার নেই। শুরুতে কজন ছিলে তোমরা?

ও ভাঁওতা দিচ্ছে, হবস, পেছন থেকে বলল একজন। কেটে পড়ার ফায়দা খুঁজছে।

বোঝা যাচ্ছে ক্রুশারের প্রতি তোমারই দরদ বেশি। ঠিক আছে তোমাকে দিয়েই শুরু করা যাক।

জেমসের শীতল স্বর শিহরিত করল লোকটাকে। ভয় পেল সে, টের পেল গোলাগুলি আরম্ভ হলে সবার আগে সে-ই মারা যাবে। জেমস অ্যালেনকে সহজে কুপোকাত করা যাবে না, এটা গত কয়েকদিনে খুব ভালভাবে বোঝা গেছে। শক্তপাল্লা সে। এমন হতে পারে নিজে মরার আগে সবাইকে শেষ করে ফেলবে।

সন্দেহটা ঢুকিয়ে দেয়া গেছে ওদের মনে, আতঙ্কও, সন্তুষ্টির সাথে ভাবল জেমস। এবার শান্তিপূর্ণভাবে শেষরক্ষা করা যাক। আমি বলি কি, তোমরা বরং যার যার কাজে ফিরে যাও, ক্রুশার বা লপারের কাছ থেকে পাওনা বুঝে নাও। কারণ আজকের পর আর তোমাদেরকে বেতন দেয়ার জন্যে ওরা কেউই বেঁচে থাকবে না।

হেসে উঠল সামনের লোকটা। শুনেছ, কি বলছে ও? লপার আর ক্রুশারকে নাকি খুন করবে! আগে তো আমাদেরকে টপকে যেতে হবে।

আলতোভাবে স্পার দাবাল জেমস, সোরেলটা আগে বাড়তে শুরু করল। হবসের চোখে তাকিয়ে আছে। পরে বলতে পারবে না কোন সুযোগ দেইনি। অন্যরা যা পায়নি, তা পাচ্ছ তোমরা। ইচ্ছে হলে সরে গিয়ে আমাকে চলে যেতে দেবে, নয়তো অস্ত্র ধরবে। কোনটা করবে সে তোমাদের মর্জি। কিন্তু কাউকেই দয়া করব না আমি।

দশহাত দূরে এসে দাঁড়াতে ভড়কে গেল লোকগুলো। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল পেছনের লোকটা। প্রতিপক্ষ নির্দ্বিধায় চলে আসছে, ভয়-ডর কিছু নেই তার মধ্যে। এটাই অস্থির করে তুলল পাঞ্চারকে। কোমরে হাত বাড়াল সে, তুলে আনল পিস্তল। নিশানা করতে গিয়ে দেখল জেমস অ্যালেনের পিস্তল তাকিয়ে আছে ওর দিকে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল লোকটা, আতঙ্কে স্কুলে পড়ল কাঁধ। তার কাছে মনে হলো পিস্তলটা জেমসের হাতে প্রথম থেকেই ছিল।

পিস্তলটা ফেরত পাঠাও, মিস্টার! শীতল সুরে নির্দেশ দিলজেমস, কেঁপে উঠল লোকটার দেহ। আর যদি মরতে চাও তো আরেকটু তুলে আনো!

বোকার মত চেয়ে থাকল সে, পরে বুঝতে পারল ইচ্ছে করলে ওর্কে মেরে ফেলতে পারত অ্যালেন। দ্রুত নির্দেশ পালন করল পাঞ্চার, সঙ্গীদের দিকে তাকাল একবার, ওরাও থমকে গেছে। অ্যালেন এত দ্রুত পিস্তল বের করে আনবে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি।

শেষবারের মত বলছি, জেমসের পিস্তল অনড়। তোমাদের সাথে শত্রুতা নেই আমার। ইচ্ছে করলে আমার পথ থেকে সরে যেতে পারো।

আমাদেরকে চলে যেতে দিচ্ছ? অবিশ্বাসে ঝুলে পড়ল হবসের কাঁধ।

সে তোমাদের ইচ্ছে। কিন্তু অস্ত্রগুলো এখানেই ফেলে যাবে।

দুই মিনিটের মধ্যে ঝটপট চারজোড়া পিস্তল আর রাইফেল পড়ল ঝোপের ভেতর। ট্রেইলের একপাশে সরে দাঁড়াল ওরা।

দয়া করে ভুলেও অন্যকিছু মাথায় এনো না। সবচেয়ে ভাল হয় যদি এখুনি শহর ছাড়ো। পরে কোন এক সময়ে এসে অস্ত্রগুলো নিয়ে যেয়ো।

উল্টোদিকে রওনা দিল লোকগুলো।

এবার নিশ্চিন্তে শহরে ঢুকল জেমস। মূল রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুপাশে নজর বুলাল। ক্যাফের সামনে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অস্বাভাবিক ব্যাপার। অন্তত দুজনের থাকার কথা। ওরা এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে বিশ্বাস করতে পারছে না।

রবার্ট হার্ডিংয়ের সেলুনের দিকে এগোল জেমস। সামনে এসে স্যাডল ছেড়ে রেইলের সাথে সোরেলের লাগাম বাধল। ভেতরে ঢুকল। সেলুনটা ফাকা। ন্যাকড়া দিয়ে বোতল মুছছিল বব, ব্যাটউইং দরজা খুলে যেতে ফিরে তাকাল। ওকে দেখে অবাক হলো, তারপর সরে এল বারের কাছে। উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।

হুইস্কি, ফরমাশ দিল জেমস।

নেবর ফিরেছে, গ্লাস এগিয়ে দেয়ার সময় জানাল সে। দলবল নিয়ে ক্যাফের কাছে গেছে।

লেসলি?

ধরে নিয়ে এসেছে। পিটিয়ে আধমরা করে ফেলেছে বেচারাকে। ওপরের রূমে ওকে রেখে গেছে নেবর, বাইরে তালা ছাড়াও দুজন পাহারায় আছে।

লপার কোথায়, জানো?

দেখিনি ওকে।

সময় নিয়ে হুইস্কি শেষ করল জেমস, ভাবছে। রেনে নেবরকে ক্যাফের সামনে দেখতে পায়নি, অথচ ববের মতে ওখানেই আছে মার্শাল। তরল পানীয় গলায় জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে, রক্ত উস্কে দিতে চাইছে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল জেমস, তাড়াহুড়ো করলে আসল কাজটাই সারা যাবে না। শেষ মুহূর্তে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাক, এটা সে চায় না। লেসলি উইলিয়ামস ওর কোন কাজে আসবেনা এখন, তার ব্যবস্থা পরেও করা যাবে।

বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এল ও। পোর্চে দাঁড়িয়ে দেখল শহরটা। ক্যাফের সামনে কাউকে দেখা গেল না এবারও। কিন্তু আশপাশেই আছে ওরা, বাজি ধরে বলতে পারবে জেমস। রেইল থেকে বাধন খুলে স্যাডলে চাপল। ধীরে এগোতে দিল সোরেলটাকে। পুরোমাত্রায় সতর্ক ও। আশপাশের বাড়ির জানালা, ছাদ আর গলির মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। জানে যে কেউ লুকিয়ে থাকতে পারে। ঘোড়ার লাগাম আলতোভাবে বাম হাতে ধরা, ডান হাত শিথিলভাবে পড়ে আছে কোমরের পাশে, যাতে প্রয়োজনে হোলস্টার থেকে পিস্তল বা স্যাডল হর্নের সাথে আড়াআড়িভাবে ঝুলিয়ে রাখা রাইফেলের যে কোনটা তুলে নিতে পারে।

ক্যাফের সামনে পৌঁছে গেল ও। কাচ গলে ভেতরের দিকে তাকাল, কিছুই চোখে পড়ছে না। স্যাডল ছাড়তে যাবে ঠিক এসময়ে খুলে গেল দরজা, পোর্চে এসে দাঁড়াল রেনে নেবর। পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে, লিকলিকে হাতজোড়া কোমরের পাশে স্থির হয়ে আছে। হলদেটে চোখে দেখল ওকে, তারপর ক্ষীণ হাসল। বেঁকে গেছে ঠোঁটের কোণ।

পেছনে অন্তত তিনজন এসে দাঁড়িয়েছে, সহসা টের পেল জেমস। এতক্ষণ আড়ালে থেকে অপেক্ষা করছিল। মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল। সংখ্যাটা আন্দাজ করার চেষ্টা করল—ঠিক পেছনে, ফিড স্ট্যাবলের কাছে দুই জন, আরেকজন একটু ডানে, গলির মুখে। বামে, মাইক টিরেলের জেনারেল স্টোরের দরজার কাছে চতুর্থ লোকটি…

স্মার্ট লোক তুমি, অ্যালেন, পকেট হাতড়ে একটা দুমড়ানো সিগার বের করে ধরাল নেবর, মুহূর্তের জন্যেও তার চোখ সরছে না জেমসের ওপর থেকে। যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে ফেলছ সবকিছু। এতগুলো লোক, অথচ ওরা তোমার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। হয়তো এ জন্যেই যে শেষতক আমার হাতেই মারা পড়তে হবে তোমাকে।

স্যাডল ছাড়ল জেমস, চাপড় মারল সোরেলের পিঠে। এগিয়ে একপাশে সরে গেল ঘোড়াটা। ঠায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকল ও। সতর্ক, প্রস্তুত। লপার কোথায়, নেবর? হালকা সুরে জানতে চাইল।

তোমার হয়ে ওকালতি করবে ভেবেছ নাকি? হেসে উঠল মার্শাল, কর্কশ শোনাল গলা। বরং তোমার ওপর খেপে আছে ও। প্রাইস আর বার্থেজরাও খুব জ্বালাচ্ছে, এবার সবকটাকে টাইট দিতে হবে।

অ্যাশলে গাইলশ, তোমার আশা পূরণ হবে না।

থমকে গিয়ে তাকিয়ে থাকল নেবর, হাসি মুছে গেছে। চোখে পলক পড়ছে, বোঝার চেষ্টা করছে ওকে।

অ্যাবিলিনের ছোট্ট একটা বাথান, গাইশ, ভুলে গেছ?

তুমি কে, অ্যালেন? নিচু গলায় জানতে চাইল সে, গলায় সন্দেহের সুর। ২৪৬

আমি ওই মেয়েটার স্বামী।

আচ্ছা, এ জন্যেই তোমাকে দেখে চেনা চেনা মনে হয়েছিল! তোমার বাথানের বেডরূমে ছবি দেখেছিলাম। ঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে দেখিনি, এমনিতেই চোখে পড়েছিল। ভালই হলো। একেবারে চুকে যারে ব্যাপারটা। তোমার মরিয়া হয়ে ওঠার কারণ এবার বোঝা যাচ্ছে। তিন বছর বেশ লম্বা সময়, তাই না? অন্য কেউ হলে হাল ছেড়ে দিয়ে ভুলেই যেত। দেখা যাচ্ছে ভুলতে পারোনি তুমি। না পারারই কথা, মেয়েটা খাসা ছিল।

মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছে, টের পেল জেমস, হলুদ শয়তানটার টুটি চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিল ও, বুঝতে পারছে নির্মম তামাশা করে ওকে বেসামাল করতে চাইছে নেবর। ঘৃণাভরে তাকে দেখল জেমস, মাটিতে একদলা থুথু ফেলল। তারাটা খুলে ফেলো, গাইলশ, শীতল সুরে বলল ও। ওটা তোমার মত বেজন্মাকে মানায় না। বিষাক্ত একটা হলুদ শেয়াল তুমি, গাইলশ!

ধক্ করে জ্বলে উঠল মার্শালের চোখজোড়া। সিঁড়ি ভেঙে দুধাপ নেমে এল সে। হোলস্টারের কাছে নেমে গেছে হাত। আড়চোখে জেমসের পেছনে দাঁড়ানো সঙ্গীদের দেখল, তারপর ঠোঁটের সাথে চেপে থাকা সিগারে উঠে এল বাম হাত। দুই আঙুলে চেপে ধরে মুখ থেকে সরিয়ে নিল ওটা, তারপর ছুঁড়ে দিল জেমসের দিকে। নিমেষে হাত বাড়াল, ছোবল মেরে হোলস্টার থেকে তুলে আনল জোড়া পিস্তল। নিশানা করার সময় টের পেল বুকে হাতুড়ির ঘা পড়েছে। টলে উঠল রেনে নেবরের হালকা শরীর। ট্রিগারে টান পড়ায় একটা বুলেট বেরিয়ে গিয়ে জেমসের সামনের মাটিতে ধুলো উড়াল। ফের নিশানা করার আগেই পেটে আঘাত করল দ্বিতীয় বুলেট। অ্যাশলে গাইলশ চরম বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করল হাতে বা পায়ে জোর পাচ্ছে না সে, অবশ হয়ে আসছে সব। দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে। হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল সে, চরম ক্লান্তি গ্রাস করতে চাইছে সারা দেহ। অজান্তেই শিথিল হয়ে গেল পিস্তলধরা মুঠি। হাহাকার উঠল তার বুকে-কোন এক অখ্যাত জেমস অ্যালেনের কাছে হেরে গেছে সে!

ওদিকে পেছনের লোকগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত জেমস। নিশানা ছাড়াই কোমরের কাছ থেকে একের পর এক গুলি করে চলেছে। শেষ লোকটা ধরাশায়ী হতে চারপাশে তীক্ষ্ণ নজর বুলাল। নেই কেউ। ঘুরে ক্যাফের দোতলায় জানালার দিকে তাকাল ও। হাস্যোজ্জ্বল রেমন্ড বার্থেজ হাত নাড়ল ওর উদ্দেশে, আরেক হাতে রাইফেল। পেছনের লোকগুলো কোন পাত্তাই পায়নি তার জন্যে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই খুন হয়ে গেছে দুজন।

মৃদু নড করল জেমস, তারপর এগিয়ে গিয়ে নেবরের কাছে এসে দাঁড়াল। বুটের আগা দিয়ে ঠেলে চিৎ করল উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শরীরটা। জোর করে চোখ মেলল দো-আঁশলা, বিকৃত হয়ে গেছে মুখ।

বুড়ো লোকটাকে মনে পড়ে, গাইশ? ঘৃণাভরে বলল জেমস। তোমার গুলি ওর পেট ফুটো করে দিয়েছিল, তাই নিয়ে দুটো দিন বেঁচে ছিল সে। কি অমানুষিক কষ্ট পেয়েছিল বুঝতে পারছ? দ্রুত মৃত্যুর জন্যে প্রার্থনা করো! একটু আগেও তুমি বাঁচতে চেয়েছিলে, কিন্তু আমার ধারণা এখন আর সেরকম ইচ্ছে হবে না তোমার।

পিস্তল ধরার জন্যে হাত বাড়াল সে, কোনরকমে শ্লথ গতিতে তুলে নিল। নির্দয়ভাবে গুলি করল জেমস, নেবরের হাত থেকে ছিটকে পড়ল পিস্তল। কবজি গুড়িয়ে গেছে।

তুমি কে, অ্যালেন? আমার বিশ্বাস সাধারণ কেউ নও।

কি হবে জেনে? ধীরে পিস্তলে টোটা ভরল জেমস। তিন বছর আগেও যদি জানতে তুমি ভয় পেতে, পিছিয়ে যেতে? শোনো, ওই বুড়ো মানুষটা আমাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছিল। তুমি মরেছ ওর জন্যে। ফের পিস্তল তুলে গুলি করুল ও, নেবরের দুই হাঁটুতে। তারপর তাকাল মার্শালের চোখে, আতঙ্ক ফুটে উঠেছে সেখানে।

দয়া করে আমার মাথায় একটা গুলি করো, অ্যালেন… আর্তনাদ করল নেবর, ফিসফিসানির মত শোনাল সেটা।

এখানে পড়ে থেকে বুড়োর কাছে মাফ চাও, গাইলশ, মাথা নেড়ে বলল জেমস। ও হয়তো তোমাকে ক্ষমা করতে পারে। কিন্তু আমি পারলাম না।

চোখ বুজে পড়ে থাকল রেনে নেবর। ঘন হয়ে এসেছে নিঃশ্বাস, মুখ বিকৃত। রক্তের একটা পুকুরের মাঝখানে পড়ে আছে।

ঝুঁকে পিস্তলদুটো তুলে নিল জেমস। সিলিন্ডার খুলে বুলেট বের করে দূরে। ছুঁড়ে ফেলল, তারপর অস্ত্রগুলো ফেলে রাখল নেবরের ভূপতিত দেহের পাশে। ঘুরে চারপাশে তাকাল ও, বেশ কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে-তামাশা দেখছে। ওদের মধ্যে নিকোলাস প্রাইসকে দেখে অবাক হলো। চোখাচোখি হতে হাত নাড়ল সে, এগিয়ে এল।

একটা ঝামেলা হয়ে গেছে, জেমস, কাছে আসতে নিচু স্বরে বলল সে, উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।

চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল ও।

তোমার কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সাথে বসতে চেয়েছিল রোজ। দশটার সময় ওর অফিসে বসার কথা ছিল। ও স্কুলে যাওয়ার পরপরই সেখানে উপস্থিত হয় লপার আর ক্রুশার। কাগজপত্রসহ রোজকে ধরে নিয়ে গেছে ওরা।

<

Super User