রান্নাঘর থেকে ডিম ভাজার শব্দ ভেসে আসছে। হার্টকে খুঁটিয়ে দেখছে রনি। খোঁচাখোঁচা দাড়ির আড়ালে ওর চেহারাটা সুশ্রী। জামা-কাপড় ব্যবহারে কিছুট জীর্ণ হলেও পরিষ্কার। জুটিটা ভালই মিলবে।

হ্যাঁ, তোমার আইডিয়ার কথা কি যেন বলছিলে? জানতে চাইল ফিনলে।

নিজের ধারণার কথা ওকে জানাল রনি। আমার ধারণা ভুল হতে পারে, আবার সে ওখানে থাকতেও পারে। ওখানে গিয়ে আমি নিজের চোখে দেখে নিশ্চিত হতে চাই। কিন্তু শহরে হয়তো ওর কিছু বন্ধু-বান্ধব থাকতে পারে, তাই আমাদের একসাথে রওনা না হওয়াই ভাল।

রকিঙ কের পথ ধরল রনি। শহর ছেড়ে তিন মাইল দূরে ট্রেইল পানির যোতে কাটা একটা শুকনো নালায় নেমেছে। এখানে নিচে নেমে দিক পরিবর্তন করে লাভার দিকে এগোল সে।

মিউল ক্যানিয়নের মুখে রনির জন্যে অপেক্ষা করছিল হার্ট। দাঁত বের করে হেসে উঠে দাঁড়াল সে। ঠিক মতই এসে পৌঁছেছ দেখছি। মাথা আঁকিয়ে পিছনে লাভার দিকে ইঙ্গিত করল ফিনলে। বিচ্ছিরি

একটা জায়গা। তবে মনে হচ্ছে এখানেই ওকে পাওয়া যাবে।

যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। হার্টের তৈরি ছোট্ট আগুনটার পাশে বসল রনি। শুকনো গ্রীজউড কাঠের আগুন থেকে কোন ধোয়া উঠছে না। রাতে এগিয়ে লাভার কিনারে কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে।

হ্যাঁ। দিনের বেলা ওরা নজর রাখবে। প্রসঙ্গ পাল্টাল হার্ট। মলি সত্যিই একটা দারুণ মেয়ে, তাই না?

শব্দ করে হেসে উঠল রনি। অন্তত এই এলাকার সবথেকে ভাল কফি সে তৈরি করে। যাক, আমার মতে ওকে তাড়াতাড়ি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়াই তোমার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মুখ বিকৃত করল হার্ট। আমি শুনেছি শর্টির সাথে ওর খুব ভাব।

মানুষ অনেক কথাই শোনে! কালো লাভার দিকে মুখ ফেরাল রনি। সব কথায় কান দিতে নেই।

দিন গড়িয়ে চলল, সূর্যটা ধীরে ধীরে নিচে নেমে লাভা স্রোতের মাথায় একটা লাল গোলকের মত জ্বলছে। একটা নাইটহওক পোকা ধরার জন্যে ছোঁ মেরে ওদের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। রনি উঠে টপারের পিঠে জিন চাপাল।

আরও বিশ মিনিট সময় দাও, সে বলল, পিছনে এই পাহাড়গুলো থাকায় ওরা আমাদের দেখতে পাবে না।

শেষে ওরা বেরিয়ে পড়ল। দু’জনের কেউই কথা বলার মুডে নেই। অকাশে একটা-দুটো করে তারা উঠতে শুরু করেছে। এক মাইল এগোবার পর দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে রওনা হলো রনি। ওদের যদি কেউ দেখেও থাকে, তবে দিক বদল করায় ফাঁদ পেতে রাখা অসম্ভব হবে।

রাত দশটার কয়েক মিনিট আগে ঝর্না থেকে ঘোড়া দুটোকে পানি খাওয়াল ওরা। তারপর লাভার একটা খাজে সরে গেল। ওখানে আংশিক আড়াল রয়েছে। লাভার ওপর চড়ে তাকিয়ে রইল ফিনলে। বুনো আর নির্জন দৃশ্য, অসম্ভব রকম সুন্দর। যেন চাঁদের দেশের কোন এলাকা। মনে হচ্ছে যেন একটা সমুদ্র হঠাৎ জমাট বেঁধে পাথর হয়ে গেছে। গাছ নেই, ঝোঁপ নেই, ঘাসও নেই, কেবল ঢেউ খেলানো অনুজ্জ্বল কালো পাথর দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পাথরের কোনা আর পিঠগুলো ভাঙা কাঁচের মতই ধারাল।

বিষণ্ণ মনে দূরের দিকে তাকাল হার্ট। জেমসের কথা ওর মনে পড়ছে। বুনো এলাকা জেমসের কাছে ছিল সব থেকে প্রিয়। কিন্তু ওর জীবন শুরু হওয়ার আগেই ওকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। হার্টের পাশে এসে দাড়াল রনি। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। কঠিন গানফাইটারের নীরব সান্ত্বনা, ওর উপস্থিতি থেকেই অনুভব করছে হার্ট।

ওরা এখানেই আছে, মন্তব্য করল রনি। ওদিকে কোথাও আস্তানা করেছে। আমরা জানি, জেরি আসলে ভাসকো গ্ৰেহাম। ড্যাকোটা জ্যাকের সাথে সে এই এলাকা চষে বেড়িয়েছে। ড্যাকোটা এই এলাকা পাইউট ইণ্ডিয়ানদের থেকেও ভাল চিনত।

মাথা ঝাঁকাল ফিনলে হার্ট। হ্যাঁ, কিন্তু ওদের ঘাটি কোথায়? দূরে চেয়ে আছে সে।

সামনের পাহাড়টা দেখাল রনি। আমরা ওখানে খুঁজে দেখব। ওখান থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে পানি নিচে নামবে। হয়তো কিছু পানি ওখানে জমেছে।

হঠাৎ হাত তুলল হার্ট। শোনো!

কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে কান পেতে শুনল রনি। পিছন থেকে স্তব্ধতা চিরে একটা কয়োটির ডাক শোনা গেল। তারপর অস্পষ্ট, এবং বহুদূরে, কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ!

হ্যাঁ, শব্দটা ভিতর থেকেই আসছে। হয়তো ওখানে ওয়াটার-হোল আর কিছু গাছ আছে।

হ্যাঁ।

হার্ট তার সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। রনি, নিচু স্বরে বলল সে, মানুষ কেউ জানে না আগামীতে কি ঘটবে। হয়তো এবার আমার মরণ হবে। ওই লোকগুলো কঠিন। আমার যদি কিছু হয়, তুমি আমার হয়ে সমার্সকে শেষ কোরো, করবে তো?

কাউকে সেটা করতেই হবে, বলল রনি। ও একটা লাগাম ছাড়া বুনো ঘোড়া।

আর মলিকে বোলো ফিনলের গলার স্বর আরও নিচু হয়ে থেমে গেল। কাঁধ উঁচাল সে। জাহান্নামে যাক ওই চিন্তা! আমি ওকে নিজেই বলব!

ড্যাশার হাসল। নিশ্চয়। আমি সেটা জানতাম।

হার্ট কৌতূহলী চোখে গানফাইটার সঙ্গীকে দেখল। রনি, তোমার মৃত্যু নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়? দেখে তো মনে হয় না।

কাঁধ উঁচাল ড্যাশার। না, দুশ্চিন্তা নেই। ওটা যখন আসার তখন আসবেই। আমি নিজের মত চলি। প্রয়োজন নেই, এমন কোন ঝুঁকি নিই –যা হবার তা হবে।

ভোরের সূর্যটা লাভা স্রোতের ওপর ফেকাসে চাঁদের মত অর্ধেকটা বেরিয়েছে। এরই মধ্যে হার্ট, ছোট একটা আগুন জ্বেলে কফি চাপিয়ে দিয়েছে। রনি মরুভূমিতে শুকনো গ্রীজউড আর জুনিপার খুঁজতে গেছে।

আগুনের গন্ধটা ভাল, কিন্তু কফির গন্ধ আরও ভাল। ভিতরে ঢোকার নিশ্চয় কোন রাস্তা আছে, মন্তব্য করল হার্ট। আমাদের সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

হ্যাঁ। কিন্তু সেটা যে কোনপাশে হবে তা বলা মুশকিল। মনে হচ্ছে ওই পাহাড়টা লাভা স্রোতকে দুই ভাগে ভাগ করায় মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়ে গেছে। লাভা ভয়ানক বিপজ্জনক এলাকা। ভিতরে অনেক বুদ্বুদ আছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে, যার উপরটা ডিমের খোসার মতই পাতলা। ওর ওপর পা ফেললে তোমাকে সোজা নিচে পড়তে হবে। কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না। তাই লাভার ওপর দিয়ে চলতে হলে, সাথে একটা লাঠি রাখতে হবে। পা ফেলার আগে লাঠি ঠুকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ভিতরটা ফাপা কিনা।

ওরা নিশ্চয় পায়ে হেঁটে লাভা পার হয়নি।

হয়তো না, কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের তাই করতে হতে পারে।

ঘোড়া দুটোর পিঠে জিন চাপাল হার্ট। আগুন নিভিয়ে, লাথি দিয়ে ওটার সব চিহ্ন রনি মুছে দিল। তুমি উত্তরে যাও, বলল সে, আমি দক্ষিণে যাচ্ছি। যদি কোন পথ খুঁজে পাও, মরুভূমিতে কিছুদূর ঢুকে পাথরের একটা স্থূপতৈরি কোরো আমিও তাই করব।

দুজনে একসাথেই ঘোড়ার পিঠে উঠল। ফিনলে ঘুরে হাত তুলে বলল, ও. কে.। গুডলাক। তারপর ফোলা লাভার কিনার ঘেঁষে এগিয়ে গেল।

দক্ষিণের পথ ধরল রনি। এদিকে লাভা একটা দেয়ালের মত। নিচে কিছু ভাঙা চাই পড়ে আছে। তারপর দেয়ালটা ধীরে ধীরে একটা জমাট বাধা কালো ঢেউয়ের আকার নিল। একঘণ্টার উপর হলো কোন পরিবর্তন নেই। হতাশ হয়ে উত্তরের পথ ধরার কথা ভাবছে, এই সময়ে একটা বিশাল থাবার চিহ্ন দেখতে পেল সে। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে ছাপটা পরীক্ষা করে দেখল। আরও ছাপ র ছ ওখানে। ওটা পাহাড়ী সিংহের ট্র্যাক, এবং সোজা আবার লাভার দিকেই ফিরে গেছে ওটা!

পায়ে হেঁটে এগোল রনি। সিংহের পায়ের ছাপ অনুসরণ করছে। একটা সরু খাজে ঢুকেছে ট্রাক। মনে হচ্ছে ওটা জুনিপারের কতগুলো ঝোঁপের কাছে এসে শেষ হয়েছে। ঠেলে ঝোঁপ পার হয়ে দেখল, দুটো লাভা স্রোতের মাঝখানে কিছুটা ফাঁক রয়েছে-ওটা অনেক গভীরে ঢুকেছে বলে মনে হচ্ছে। বেরিয়ে পাথরের স্তূপ তৈরি করে, সে আবার ভিতরে ঢুকল। টপারকে জুনিপারের ঝোঁপ পার করিয়ে আগে বাড়ল। সিংহটার থাবার ছাপ ওই সরু পথ ধরেই এগিয়ে গেছে। বুঝতে পারছে সিংহটা তার গুহায় ফিরেছে। এই পথে আর কোন প্রাণীর যাতায়াতের চিহ্ন ওখানে নেই।

আধঘণ্টা ট্রেইল ধরে চলার পর হঠাৎ ওটা বেশ ঢালু হয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করল। নিচে সবুজ পাইনের মাথাগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘোড়াটাকে একটা লাভার ছোট একটা গর্তে ঢুকিয়ে বেঁধে রেখে, লাভার ওপর দিয়ে বুকে হেঁটে গাছগুলোর দিকে এগোল রনি।

ওর সামনে বাটির মত একটা গর্ত। এলাকাটা তিন বিঘার বেশি হবে। কিনার ঘেঁষে পাইনের সারি। মাঝখানেও কয়েকটা জন্মেছে। দূরের দেয়ালটার গায়ে একটা আধ-ভাঙা পাথরের বাড়ি। পাথরের একটা ফাইল থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। কাছেই পাচটা ঘোড়া চরতে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ রনির চোখের সামনে, পাথরের বাড়ির ভিতর থেকে একটা লোক বেরিয়ে প্যান থেকে কিছুটা পানি বাইরে ফেলল। লোকটা ডাক।

কিছুদূর ফিরে সাবধানে আরেকটা পথ বেছে নিয়ে আরও নিচে নামল সে। পথটা একটা ভাঙা পাথরের স্থূপ, ম্যানজেনিটা ঝোঁপ আর পাইন গাছের ভিতর শেষ হয়েছে। একপা আগে বাড়তেই একটা চাপা গর্গর শব্দ ওকে সাবধান করল। মাথা ফিরিয়ে পাহাড়ী সিংহটাকে সে দেখতে পেল। বাম দিকে, কিছুটা উপরে, একটা পাথরের ওপর ওত পেতে বসে আছে ওটা। সিংহটা বিশাল। রনি কেবল ওর মাথা আর কাঁধ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু তাতেই বুঝছে, জীবনে যতগুলো বড় বড় সিংহ সে দেখেছে, এটা তার প্রথম সারিতে পড়ে। কান দুটো মাথার সাথে সাঁটিয়ে, সবুজ বিদ্বেষ ভরা চোখে একদৃষ্টে রনির দিকে চেয়ে আছে জন্তুটা। তারপর দাঁত বের করে ভেঙচি কাটল।

স্থির দাঁড়িয়ে সিংহের দিকে চেয়ে আছে সে। পাহাড়ী সিংহ সচরাচর মানুষকে আক্রমণ করে না। কিন্তু যদি নিজেকে কোণঠাসা বলে মনে করে, সে লড়বে। গুলির শব্দ জেরিকে সাবধান করে দেবে। তখন নিজের জীবন রক্ষার জন্যে তাকে তিনজন আউটল আর সিংহের বিরুদ্ধে

একসাথে লড়তে হবে। পিস্তল হাতে অপেক্ষা করছে রনি। আবার ভেঙচি কাটল জন্তুটা, কি করবে মনস্থির করতে পারছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল রনি।

কয়েক সেকেণ্ড পর ওত পাতা ছেড়ে নিজের গুহায় অদৃশ্য হলো। স্বস্তিতে বড় একটা শ্বাস ছাড়ল রনি।

গাছের ভিতর দিয়ে এগিয়ে বাড়িটার আরও কাছে চলে এল সে। নিজের পিস্তলের পাল্লা তার জানা আছে। ওখান থেকে ওই তিন একর এলাকার প্রতিটা কোনা সে কাভার করতে পারবে। কিন্তু আরও কাছে যেতে চায় ও।

ডাক বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা ওর দিকেই এগিয়ে এল। তারপর শুকনো কাঠ সংগ্রহ করার জন্যে ঝুঁকল। কোন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিশ্চয় ওকে সাবধান করেছে, কারণ সে মুখ তুলে চাইল।

চিৎকার করলে তোমাকে হেঁদা করে দেব, ডাক! নিচু স্বরে কেবল ওকে শুনিয়ে কথাটা বলল রনি।

ডাকের হাঁসের মত ঠোঁটগুলো বাঁকা হলো। কে-কে তুমি?

আমি ড্যাশার–তোমার কাছে রেড রিভার রেগান। আমি যা বলি তা করলে চোট পাবে না।

কয়েক সেকেণ্ড রনির দিকে চেয়ে রইল সে। তারপর ওর পিছনে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। কেউ চেঁচিয়ে ডাকল, ডাক! তোমার কি হলো?

রনির ডান পাশে গর্তের কিনার থেকে জোরাল কণ্ঠে কেউ চিৎকার করে বলল, হাত তুলে বেরিয়ে এসো, ডাকি স্মিথ! অমি জেরিকে চাই!

ডাক বাম দিকে ঝাপিয়ে পড়ল। পিস্তলটা উঠে এসেছে ওর ডান হাতে। মুহূর্তে এলাকাটা প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে ভরে উঠল। টলতে টলতে একটু পিছিয়ে গেল রনি। কোত্থেকে একটা গুলি এসে ওর পাশে গাছে বিধল। বাকল ছিটকে চোখে মুখে লাগল। বাঁচার জন্যে পিস্তল খাপে ভরে মাটির ওপর আছড়ে পড়ল সে। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে গড়িয়ে ঝোঁপের তলায় সরে গেল রনি। একটা গুলি ওর মুখে বালু ছিটাল। আরেকটা গাছে বাড়ি খেয়ে অন্যদিকে চলে গেল। এতক্ষণে চোখ খুলতে পেরে গড়িয়ে একটা উপড়ে পড়া গাছের গুঁড়ির আড়ালে সরে গেল। হঠাৎ সব শব্দ থেমে গেল। তারপর ডাকের চিৎকারে নীরবতা ভঙ্গ হলো। ড্যাশার শেষ! আমি রনিকে মেরেছি!

চুপ করো! স্বরটা ঠাণ্ডা। গুলিটা আমি করেছি দরজার আড়াল থেকে!

আগ্রহের সাথে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ড্যাশারের দেহে। ওটা জেরি সমার্সের স্বর! ধীরে উঠে দাঁড়াল সে। তারপর গাছের আড়ালে আড়ালে খোলা জায়গাটার দিকে এগোল।

ওরা কতজন ছিল? সুরটা বেইলির।

আমার ধারণা, দু’জন। তবে ড্যাশার মরার পর ওকে শেষ করা মোটেও কঠিন হবে না। এসো, কাজটা সেরে ফেলি। ডাকির স্বরে উৎসাহ।

দাঁড়াও। জেরির স্বরটা অস্বাভাবিক শোনাল। হয়তো আরও লোক থাকতে পারে।

মাত্র দুটো শট, স্মিথ বলল। তুমি শিওর ড্যাশার মরেছে?

জেরির বদলে ডাক জবাব দিল। আমি ওকে পড়তে দেখেছি। জোরে আছড়ে পড়েছে।

ড্যাশার বুঝতে পারছে, সম্ভবত হার্টও কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে। রনি মরে গেছে বিশ্বাস করে তিনজন আউটলর বিরুদ্ধে সে একাই মোকাবিলা করার প্ল্যান করবে। জেরি সমার্সকে মারার একটা চেষ্টা না করে সে যে কিছুতেই ফিরবে না, এটা রনি জানে। এলাকাটা ছোট, তাই সে কিছু করলে, হার্ট সেটা শুনতে পাবে।

অন্য লোকটা পালিয়েছে, হঠাৎ বলল ডাকি স্মিথ। আমি দেখছি।

যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়ে খোলা এলাকা পেরিয়ে পাইন গাছগুলোর দিকে এগোল সে। ডাক অস্বস্তিভরে ওর দিকে চেয়ে আছে লক্ষ করল রনি। জেরি সমার্স দ্রুত ঘুরে জঙ্গলের দিকে এগোল। তারপর গাছের আড়ালে অদৃশ্য হলো।

অপেক্ষা করছে ড্যাশার! হার্ট কোথায় আছে স্থির করার চেষ্টা করছে-বুঝতে চায় ও কি প্ল্যান করেছে। খোলা এলাকায় কোন শব্দ নেই। হঠাৎ কাছেই একটা সরু ডাল ভাঙার শব্দ হলো!

নীরবতা। এবং পরে পদক্ষেপের শব্দ। লোকটা সাবধানে এগোচ্ছে। নিশ্চিন্ত সহজ ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে–যেন বেড়াতে বেরিয়েছে।

উৎকণ্ঠা নিয়ে অপো করছে রনি। গাছের মাঝে ফাঁকটার দিকে সে নজর রেখেছে। ওই পায়ের শব্দে কেমন যেন একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ঠিক স্বাভাবিক নয়।

ড্যাশার! শব্দটা ওর পিছন থেকে এল!

তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রনি। দেহ ঘোরার সাথে কোল্টটা ওর হাতে উঠে এল। জেরি সমার্স, ছুরির পাতের মত চিকন, ওর সুদর্শন চেহারাটা এখন কঠিন আর হিংস্র। বনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে। ওর ড্র এত দ্রুত যে হাতটা ঝাঁপসা হতে দেখা গেল।

ড্যাশারের চেহারা শক্ত। কোমরের কাছ থেকেই গুলি করল সে। আবার ওদিক থেকেও গুলি আসছে। একটা কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। গরম বাতাস অনুভব করল রনি। ওর হাতে কোল্টটা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে–এগিয়ে যাচ্ছে সে। পিছিয়ে গেল জেরি। ওর শার্টের সামনের দিকটায় লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ছে।

তবু ওর পিস্তল দুটো আবার উঠল। এবার দ্বিতীয় কোল্ট বের করে একসাথে দু’হাতে গুলি ছুঁড়ল রনি। বুকের ওপর ভারি বুলেটের আঘাতে টলতে টলতে পিছিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেলো খুনী জেরি সমার্স। মাথায় একটা বুলেটের ক্ষত থেকে রক্ত ওর মুখ প্রায় ঢেকে ফেলেছে। পড়ে গেল সে। এক হাতের ওপর গড়িয়ে মাথা তুলল, অন্য হাতে রয়েছে একটা পিস্তল।

আর গুলি না করে রনি অপেক্ষা করছে। জেরির আঙুল ফসকে পিস্তলটা পড়ে গেল। নাক দিয়ে পাইনের কাটা ঘষে মাথাটাও মাটি ছুঁলো। ছুটে এগিয়ে গেল রনি।

ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে, মরণাপন্ন লোকটাকে চিত করল। চোখের পাতা কয়েকবার কাঁপার পর ওর চোখ খুলল। ধোকা তোমাকে ধোকা দিয়েছি! ফেঁসফেঁসে গলায় সে বলল। অদ্ভুত-একৌ (echo)। জেরির চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল। কোল্টে গুলি ভরতে ভরতে ধীরে উঠে দাঁড়াল রনি।

ফিনলে হার্ট ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। হাত উঁচু করে তুলে হার্টের আগে আগে চলছে ডাক। কিন্তু পায়ের শব্দটা রনির পিছন থেকে আসছে বলে মনে হচ্ছে।

ব্যাপারটা কি? কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করল ফিনলে।

পিছনের ক্লিফটার জন্যে এমন হচ্ছে, ব্যাখ্যা করল ডাক। পুরো বেসিনে এমন আরও কয়েকটা জায়গা আছে। মনে হয় শব্দ উল্টো দিক থেকে আসছে।

ডাকি স্মিথ কোথায়?

আমার পিছু নিয়ে বনে ঢুকেছিল ও, রনির প্রশ্নের জবাব দিল হার্ট। প্রথম গুলি সে মিস করেছিল। জেরি সমার্সের লাশটার দিকে তাকাল ফিনলে। ভাল, তুমি শেষ করেছ ওকে। হয়তো এখন জেমসের আত্মা শান্তি পাবে।

রকিঙ কের দু’মাইলের মধ্যে আসতেই শর্টি ওদের দেখতে পেল। টেরি আর হ্যারিকে নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে ফোরম্যানকে অভ্যর্থনা জানাতে

এগিয়ে গেল। ডাকের দিকে চাইল শর্টি।

দেখছি একটা বড় হাঁস ধরে এনেছ তোমরা, বলল সে। অন্যদের কি খবর?

ওরা আর কাউকে জ্বালাতে আসবে না, জবাব দিল ফিনলে। তারপর বন্দীকে নিয়ে শহরের দিকে এগোল। ফিনলে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে সবাইকে শুনিয়ে শর্টি বলল, ওই যে লোকটা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ও বিয়ে করবে! তোমরা দেখে নিও!

ফিনলে? অবাক হলো হ্যারি। পাত্রীটাকে?

মলি।

মলি? বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হলো টেরি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ওকে ভালবাসো। সারাক্ষণ তো ওখানেই পড়ে থাকতে।

নিশ্চয় ভালবাসি। হাসল শর্টি। ওর রোদে পোড়া চেহারা কৌতৃকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মলি আমার বোন!

তোমার বোন? চেহারায় কপট আতঙ্কের ভাব ফুটিয়ে তুলে হ্যারি বলল, কে ভাবতে পারবে তোমার মত কদাকার একটা লোক, আর মলির মত একটা সুন্দর মেয়ে একই ঝুড়ি থেকে এসেছ!

হ্যাঁহ! তুমি আর বোলো না! পাল্টা আক্রমণ করল শর্টি। আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেছ কখনও?

শব্দ তুলে হাসল রনি। এবার তার যাবার সময় এসেছে। এদিককার সব এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। হিউবার্ট আপস করেছে; কর্ন প্যাচের রাসলাররা, যারা বেঁচে ছিল, তারা পালিয়েছে, স্টেজ ডাকাতি যারা করত, তাদের মধ্যে ডাক ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই। ভয়ে সোনা কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে, সেটাও বলে দিয়েছে ডাক-অ্যাডামের কথাও। টাকা, আর অ্যাডামের দোষ প্রমাণ করা চিঠিও সে হার্টের কাছে দিয়ে দিয়েছে। বাকি সব ব্যবস্থা শেরিফ রবার্ট আর হ্যারিংটনকে নিয়ে ফিনলে হার্টই করবে। এখানকার কাজ তার পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এখন আর বেন কেসির ফাইটিঙ সেগুন্দোর প্রয়োজন হবে না।

রাঞ্চে বেন কেসি ওকে থাকার জন্যে অনেক করে বলল। কিন্তু যুক্তি দেখাল রনি। বলল, আমি উত্তরে থ্রী টি এল-এর মরিসনের সাথে দেখা করার জন্যে রওনা হয়েছিলাম। ওখানে আমার দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ডেড শট ওয়াইলস্ আর ডাগ মারফিও থাকবে বলে খবর পেয়েছি। এটা চমৎকার জায়গা, কিন্তু আমি ভবঘুরে মানুষ। আর শান্ত পরিবেশে আমি অশান্ত হয়ে উঠি।

রনি ব্ল্যাক স্যাণ্ড মরুভূমির কির পৌঁছলে পূব আকাশে সূর্য উঠল। পিস্তল দুটো আলগা করে, হ্যাটটা একটু নামিয়ে, সামনের চৌরাস্তার দিন ঘোড়া ছুটাল সে। দুপুর নাগাদ থ্রী টি এল রেঞ্জে পৌঁছল সে। দূর থেকে র‍্যাঞ্চহাউসটা দেখা যাচ্ছে। তিনজন লোক র‍্যাঞ্চহাউস থেকে বেরিয়ে উঠানে দাঁড়াল। ওরা তার বন্ধু। অনেকদিন হলো ওদের সাথে রনির দেখা হয়নি।

<

Super User