রাতে শহরের রাস্তা দিয়ে না গিয়ে মাঠের ভিতর দিয়ে ঘোরা পথে লোলাদের বাড়ির পিছনে পৌঁছল–জুলিয়াস। আস্তাবলে ঘোড়া রেখে এসে বাড়ির সদর। দরজায় টোকা দিল ও।

আইডা বেইলি নিজেই দরজা খুলল। ভিতরে এসো, জুলিয়াস। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। নড়ি খবর পাঠিয়েছে আগামীকাল সকালে সে দেখা করবে তোমার সাথে।

ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক চাইল জুলিয়াস। লোলাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করল, কই, লোলাকে দেখছি না?

অ্যালেন কারভারের স্ত্রী অসুস্থ, ব্যাখ্যা করল আইডা। অ্যালেন বাড়ি না। ফেরা পর্যন্ত তার বউ-এর দেখাশোনা করতে গেছে লোলা। ওর ফিরতে রাত হবে। চলো, তোমাকে তোমার কামরা দেখিয়ে দিই।

অনেক আশা নিয়ে এসেছিল জুলিয়াস, হতাশ হলো। উপায় নেই। ধন্যবাদ জানিয়ে আইডাকে অনুসরণ করল সে।

লোলার ঘরটাই তাকে দেয়া হয়েছে। লোলার মা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই খুঁটিয়ে চারদিক লক্ষ করল সে। সবটাই সুন্দর পরিপাটি করে গুছানো।

বাতি নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে লোলার পদ শব্দের প্রতীক্ষায় রইল জুলিয়াস। বিছানার চাদর বদলানো হলেও লোলার উপস্থিতির একটা মৃদু গন্ধ এখনও হালকাভাবে লেগে আছে ঘরটাতে। তার মনে হলো সারারাত বুঝি একটুও ঘুমোতে পারবে না ও। কিন্তু লোলা ফেরার অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়ল। ক্লান্ত জুলিয়াস।

সকালে দরজায় টোকা দিয়ে কফির কাপ হাতে ঘরে ঢুকল লোলা।

না, না, বিছানা ছেড়ে ওঠার দরকার নেই, হাসতে হাসতে বলল লোলা। কফি খেয়ে নাও। সকালে বিছানা ছাড়ার আগে এককাপ কফি না হলে তো তোমাদের পুরুষ জাতের মেজাজের চোটে মেয়েদের টেকাই দায় হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশের একটা প্রচলিত প্রবাদ, স্বামীর পায়ের তলাতেই মেয়েদের বেহেস্ত। সুতরাং চোখ কান বুজে পুরুষ জাতের সেবা করে যাও-স্বর্গ মিলবে! হাসি মুখে জবাব দিল জুলিয়াস।

কফির কাপটা সাইড টেবিলে নামিয়ে দিয়ে দু’হাত কোমরে রেখে কপট রোষে জুলিয়াসের দিকে চাইল লোলা। রাতে ভাল করে বিশ্রাম নেয়ার সময় না পেলেও লোলার চেহারায় ক্লান্তির কোন ছাপই নেই।

কাছে এসো, ডাকল জুলিয়াস।

উঁহু, এখন না। রাতে ঘুম হলো?

তোমার বিছানার মাঝখানটা বেকায়দা রকম উঁচু।

তাতে তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে বলে তো মনে হলো না। রাতে উঁকি দিয়ে দেখলাম ছোট বাচ্চার মত অঘোরে ঘুমোচ্ছ তুমি!

বিছানার ওপর উঠে বসল জুলিয়াস। কালরাতে তুমি এসেছিলে এই ঘরে? কখন?

অনেক রাত হয়েছিল-মায়ের কাছে দেরি করে ফেরার জন্যে বকুনিও শুনেছি। তবে তোমার নাক ডাকছে না দেখে আশ্বস্ত হলাম।

সোজা হয়ে বসল জুলিয়াস। কাছে এসো, লোলা।

হাসতে হাসতেই সে মাথা নেড়ে বলল, না।

কেন আসবে না?

লৌলার মুখের ভাব ধীরে ধীরে বদলে গম্ভীর হয়ে গেল। আজ সকালে তোমার কাজ রয়েছে, কাজটা কি তা না জানলেও বুঝতে পারছি সেটা বিপজ্জনক। তোমার মন এখন বিক্ষিপ্ত না হওয়াই ভাল।

জুলিয়াস উপলব্ধি করল ভুল বলেনি মেয়েটা। জোর করে একটু হাসল সে। আজ দুপুরে শেরিফের সাথে দেখা করব আমি। মেডক, পেপি, আর এড সহ অনেকেই থাকবে ওখানে। আশা করি আজই ব্যাপারটা মিটে যাবে। তারপর কি করব আমি?

সে তোমার খুশি। আমি তো আর চলে যাচ্ছি না।-এখানেই থাকব।

ঠিক আছে, তবে কাজ সেরেই আমি আসব।

ত্রস্ত পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার পথে দরজার কাছ থেকে ফিরে তাকিয়ে সে বলল, অনেক কথাই বলার ছিল আমার, কিন্তু এখন বলব না। আজ সকালে খুব নার্ভাস থাকব। কাজ করতে কত কাপ আর প্লেট যে আমার হাতে আজ ভাঙবে তার ঠিক নেই। দয়া করে তাড়াতাড়ি ফিরে রেহাই দিয়ে আমাকে।

সারা সকাল আর লোলার দেখা পেল না জুলিয়াস। বিছানা ছেড়ে কাপড়-জামা পরে তৈরি হবার আগেই জুলিয়াসকে একা রেখে মায়ের সাথে কাজে চলে গেল লোলা।

ধীর গতিতে কাটল সকাল। অস্থিরভাবে পায়চারি করেই কেটেছে সময়টা। আজ শেরিফের অফিসে কি ঘটবে জানে না জুলিয়াস। গুছিয়ে কত শক্তভাবে পেপি কথাগুলো বলে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এডের ওপরও খানিকটা নির্ভর করবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা মেডক কিভাবে কথাটা নেয়। শহরে আজ একটা বিরাট গোলমাল বেধে যেতে পারে। কি হবে তা আগে থেকে কিছুই বলা যায় না-তবে এটা ঠিক যে মেডক তার এতদিনের প্ল্যান ভণ্ডুল হয়ে যাওয়াটা কিছুতেই মুখ বুজে সহ্য করবে না।

দুপুরের কিছু আগে জনিকে সাথে করে উপস্থিত হলো নডি।

আমাদের প্রস্তুতি শেষ, বলল সে। রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের বারোজন লোক। ঘটনা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ওদের। ওরা নিজের থেকে কিছু করবে না, কিন্তু গোলাগুলির জন্যে তৈরি থাকবে। শেরিফের অফিসে আমাদের লোকজন হাজির হয়ে গেছে শেরিফের ধারণা তোমার দেখা পাওয়া যাবে না আজ।

মেডকের কি খবর?

আধঘণ্টা আগেই এসেছে সে। ওর সাথে রয়েছে হিউ, হোয়েল, ফক্সি আর হোরেস।

এড আর পেপি? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল জুলিয়াস।

ওদের দেখিনি আমি। হয়তো এতক্ষণে এসে গেছে।

হয়তো দিয়ে কাজ হবে না, নিশ্চিত হতে হবে আমাদের। আজকে ওদের দু’জনের উপস্থিতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসতে হবে।

আমি চট করে দেখে আসছি, বলেই জবাবের অপেক্ষা না করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল নডি।

দুপুর বারোটা বেজে গেছে। জানালার ধারে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে। জুলিয়াস। নডি এসে খবর দিল পেপি আর এডের কোন দেখা নেই। কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওর। পৌঁছতে এত দেরি করছে কেন ওরা?

আরও অপেক্ষা করতে হবে আমাদের, চিন্তিত মুখে মন্তব্য করল জুলিয়াস। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষাও করা যাবে না।

আবার পায়চারি আরম্ভ করল জুলিয়াস। বারোটা পঁয়ত্রিশে ধৈর্যচ্যুতি ঘটল তার।

আর অপেক্ষা করা যায় না, বলে উঠল জুলিয়াস। এড আর পেপি হয়তো দেরিতে এসে হাজির হতে পারে, তবে ওদের ওপর আর ভরসা করা চলে না।

ইচ্ছা করেই ওরা ডুবিয়েছে তোমাকে, তিক্তভাবে বলল নডি।

মাথা নাড়ল জুলিয়াস। ও ভাল করেই জানে এড বা পেপি তা করতেই পারে না-নিশ্চয়ই ওদের কোন বিপদ ঘটেছে। মেডক লোকটা বড় বেশি ধুরন্ধর। তার ভয় হচ্ছে মেডকই ব্যাপারটা আঁচ করে রকিং এইচে ওদের বন্দী করে রেখেছে।

এখন শেরিফের ওখানে গিয়ে কি করবে তুমি? প্রশ্ন করল নডি।

জানি না এখন কি ঘটবে। তবে কথা মত আমাকে হাজির হতেই হবে। মেডক থাকবে ওখানে-সবার সামনে আমাকেই মুখ খুলতে হবে আজ।

আমরা তোমার সাথে আছি জুলিয়াস, উৎসাহ জোগাল নডি।

হ্যাঁ, আজই একটা হেস্তনেস্ত করে ফেললো, আমরা শেষ পর্যন্ত তোমার পাশে লড়ব, জনিও সাহস দিল।

ওদের দুজনের আশ্বাসে জুলিয়াসের বুকের বল অনেক বেড়ে গেছে। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল ওরা। সূর্যটা ঠিক মাথার ওপর। একটুও হাওয়া নেই। কিন্তু এসব কিছুই খেয়াল করল না জুলিয়াস। পেপি আর এডকে ছাড়াও অন্তত অর্ধেক কাজ তার নিজেরই করতে হবে।

মোড় ঘুরতেই শেরিফের অফিসের সামনে জটলাটা চোখে পড়ল। মেডককে দেখা যাচ্ছে, ওর দু’পাশে রয়েছে হিউ আর হোয়েল। ককসি, বোকো, কলিন আর সেলুনের মালিক অ্যালেন কারভারকেও ওখানে দেখতে পেল জুলিয়াস।

এগিয়ে যেতে যেতে নিচু গলায় জনি বলল, খেয়াল করেছ মেডক তার লোকজনকে কেমন জায়গা মত দাঁড় করিয়েছে? দু’জন ওর সাথে, দু’জন জটলার বাইরে। কিছু ঘটালেই মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে।

জুলিয়াসও ব্যাপারটা খেয়াল করেছে। কাঁধ ঝাঁকাল সে-সব সময়ে প্ল্যানমাফিক কাজ হয় না।

শেরিফই কথা শুরু করল। ওরা জটলার কাছাকাছি পৌঁছতেই ডিগবি দুই কদম এগিয়ে এসে তীক্ষ্ণ গলায় বলল, জুলিয়াস, তোমাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে-লক্ষ্মী ছেলের মত পিস্তলটা দিয়ে দাও।

এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? জবাব দিল জুলিয়াস। আমাকে কি অপরাধে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলবে তো?

তোমার বিরুদ্ধে দুটো চার্জ আছে, খুন আর কিডন্যাপিং। কিংবা জোড়া খুনও হতে পারে-জারভিস কি বেচে আছে?

আমার সাথে শেষ যখন ওর দেখা হয় তখন সে বেঁচেই ছিল।

প্রমাণ কি?

প্রমাণ করা আমার দায়িত্ব না। জারভিসকে যে কিডন্যাপ করা হয়েছে। একথা কে বলল? হতে পারে সে নিজের খুশিমত কোথাও বেড়াতে গেছে?

মেডক আর চুপ করে থাতে পারল না। ভিড় ঠেলে শেরিফের পাশে পৌঁছে রাগের সাথে বলল, সময় নষ্ট করে লাভ নেই-সবাই জানে জুলিয়াসই কিডন্যাপ করেছে ওর ভাইকে।

সোজাসুজি মেডকের চোখে চোখ রাখল জুলিয়াস। ঘটনাটা তুমি নিজের চোখে দেখেছ? শোনা কথায় কাজ হবে না, প্রমাণ চাই আমি।

সামনাসামনি আক্রমণে মুহূর্তের জন্যে হতবাক হয়ে গেল মেডক। এদিক ওদিক চেয়ে হঠাৎ হোরেসকে দেখতে পেয়ে সে বলে উঠল, হোরেস, তুমিই তো শুনে এসেছিলে জারভিসকে কিডন্যাপ করা হয়েছে-কার কাছে শুনেছ?

বারে অ্যালেন কারভারের কাছে, জবাব দিল হোরেস।

তুমি কার কাছে জেনেছ? অ্যালেনকে প্রশ্ন করল মেডক।

রকির কাছে।

তোমাকে কে বলেছে, রকি?

দাঁত বের করে হাসল নাপিত রকি। কেন, হোরেসই তো আমার সেলুনে দাড়ি শেভ করার সময়ে ওকথা বলল।

ঘুরে ফিরে আবার সেইখানে। কয়েকজন মজা দেখে শব্দ করে হেসে উঠল। কিন্তু মেডকের চেহারা রাগে কুৎসিত হয়ে উঠেছে। সে বলল, মিছে সময় নষ্ট করা হচেছ। আমি জানি জারভিসকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। নইলে সে এমন হঠাৎ করে উধাও হবে কেন?

সে যে কেন নিরুদ্দেশ হয়েছে তা আমি জানি, চড়া গলায় বলল জুলিয়াস।

কথা আরম্ভ করে একটু থেমে রাস্তার দিকে চোখ ফেরাল সে। এখনও পেপি বা এডের কোন পাত্তা নেই। ওরা যে আসবে না তা বুঝে নিয়েছে জুলিয়াস।

বলো জারভিস কোথায়-সবাই আমরা শোনার অপেক্ষায় আছি, তাড়া দিল শেরিফ।

আসল কথা হচ্ছে, ধীরে ধীরে আরম্ভ করল জুলিয়াস। ও যা বলতে যাচ্ছে তাতে সাময়িকভাবে কথাটা পেপি আর এডের বিপক্ষে যাবে। রোববার আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল জারভিস। বোনের সদ্য বিয়েতে মানসিকভাবে খুবই বিব্রত ছিল সে। তাছাড়া এড আবার মেডকের লোক-সে…

চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাল মেডক। বিয়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই এর। তুমি…

চুপ করো, ধমকে উঠল জুলিয়াস। কখনও না!

মেডকের হাত তার পিস্তলের বাঁটের খুব কাছে নেমে এসেছে। সে বুঝে নিয়েছে জুলিয়াস এরপরে কি বলবে। মারপিট করে হলেও তাকে থামাবেই মেডক।

কিন্তু শেরিফ বাধ সেধে ওদের দুজনের মাঝে এসে দাঁড়াল। পদমর্যাদার উপুক্ত গাম্ভীর্য নিয়ে সে দৃঢ় গলায় বলল, বাড়াবাড়ি কোরো না, মেডক। জুলিয়াস কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না-ওর কি বলার আছে শুনতে চাই আমি।

সবার মুখের দিকে একবার চাইল জুলিয়াস। সবক’টা চোখ ওর দিকেই চেয়ে আছে। জুলিয়াস যা বলবে তা সে প্রমাণ করতে পারবে না বটে, কিন্তু তার বক্তব্যটা ভুলে যাবে না কেউ। এতেই ওর অর্ধেক উদ্দেশ্য সিদ্ধি হবে।

খুব সহজ কথা, এতে কারও না বোঝার কিছুই নেই, আবার আরম্ভ করল জুলিয়াস। বাবা মারা যাবার পর রকিং এইচ দুই ভাগে ভাগ হয়ে এক অংশ পেপি আর অন্য অংশ জারভিস পাবে। মেডকের লোকের সাথে পেপির বিয়ের ফলে মেডক এখন সহজেই পেপির অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। আর জারভিস যদি কোন দুর্ঘটনায় মারা যায় তবে পুরোটাই মেডকের আয়ত্তে এসে যাবে। এই কারণেই জারভিস ভয়ে পালিয়ে গেছে।

জুলিয়াসের কথা শেষ হবার আগেই মেঙ্ক চিৎকার শুরু করল তার নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। তারপর হঠাৎ শেরিফকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পিস্তল বের করার জন্যে হাত বাড়াল সে। কিন্তু পিস্তল বের করার আগেই ওর দু’পাশ থেকে দু’জন লোক মেকের হাত চেপে ধরল। হিউ আর হোয়েলকেও পাশে থেকে একইভাবে ধরে রাখল নডি আর জুলিয়াসের বন্ধুরা। একটু দূরে ফক্সি আর হোরেস আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওদের দুজনেরই পিঠে ছুঁয়ে রয়েছে দুটো পিস্তলের নল। অত্যন্ত তৎপরতার সাথে কাজ সেরেছে ওদের বন্ধু-বান্ধব।

মুহূর্তেই ব্যাপারটা বুঝে নিয়েছে ডিগবি নোব। কোন গোলাগুলি চলবে এখানে, কঠিন স্বরে ঘোষণা করল সে। যে-ই প্রথম পিস্তল ছোঁবে তাকেই গুলি করব আমি।

নির্জলা মিথ্যে কথা বলছে ও, চিৎকার করল মেডক।

সত্যি মিথ্যের প্রমাণ অবশ্যই নেব আমি, উত্তর দিল ডিগবি।

সেটা কি করে সম্ভব?

জারভিসকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে।

দু’দিন পরেই আমি এখানে হাজির করব ওকে, শেরিফকে জানাল জুলিয়াস। কিন্তু ওর নিরাপত্তার দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।

ইচ্ছা করেই মেডকের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসল জুলিয়াস। মেডক তার হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়েছে বটে কিন্তু কিছু করতে গেলেই ওকে আবার ধরে ফেলবে জেনেই সে আর নতুন কোন চাল খাটাতে গেল না। ক্রেস্টলাইনে যে জুলিয়াসের পক্ষের অনেক লোক আছে তা ভাল করেই টের পেয়ে গেছে সে। শেরিফের দিকে চেয়ে সে জুলিয়াসের অভিযোগেরই প্রতিবাদ করল আবার। বলল, এখানে সবাই জানে জারভিসের সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভাল। সে এলে ওর মুখ থেকেই সবাই জানতে পারবে আসল কথা। জুলিয়াসের দিকে একবার রোষের সাথে চেয়ে সে আবার বলল, তবে আমার মনে হয় না তাকে জীবিত দেখতে পাবে কেউ-আমার ধারণা জুলিয়াসই তাকে শেষ করে রকিং এইচে একটা ভাগ বসাবার মতলবে আছে।আর এডমন্ড সম্বন্ধে আমার এইটুকুই বলার। আছে যে লোকটাকে চেনা দূরের কথা, পার্কে আসার আগে ওকে আমি দেখিইনি কোনদিন। সে আমার লোক কখনোই ছিল না।

কথা শেষ করেই রাস্তা পার হয়ে বারের দিকে রওনা হলো মেডক। ওর পিছু পিছু চলল হিউ আর হোয়েল। ওদের পিছনে ফক্সি আর হোরেস।

জুলিয়াস, দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ডিগবি; জারভিস কোথায় আছে?

সেটা বলব না এখন, তবে দু’দিনের মধ্যেই এখানে ওকে হাজির করব আমি।

ঠিক তো?

ঠিক।

আমাকে বলতে তোমার কি অসুবিধা? যাক গে, তুমি মেডক সম্পর্কে আজ একটা অবিশ্বাস্য আর কঠিন অভিযোগ এনেছ। তোমার কথাই যদি সত্যি হয় তবে ওর জেলে থাকা উচিত।

বিশ্বাস করো শেরিফ, ওটাই ওর জন্যে যোগ্য স্থান।

হঠাৎ দূরে রাস্তার ওপর একজন ঘোড়সওয়ারকে দেখতে পেল জুলিয়াস। লোকটা রাশ টেনে ঘোড়া থামিয়েছে। মনে হয় সে কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নিজের ভাইকে চিনতে দেরি হলো না জুলিয়াসের। আর কেউ এখনও চিনতে পারেনি ওকে।

দ্রুত চিন্তা করছে জুলিয়াস। এক মিনিটের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যাবে জারভিসের উপস্থিতি! ওর সাথে সামান্য কথা বলার সুযোগ পেলেই ডিগবি তাকে জেলে ভরবে।

চট করে নড়ি আর জনিকে এক পাশে টেনে সরিয়ে নিয়ে উৎকণ্ঠিত স্বরে জুলিয়াস বলল, আমাদের লোকজনকে বিপদ এড়িয়ে থাকতে বলো-ওই ঘোড়াটা কার?

ওটা বোকোর কর্মচারীর-কেন?

ওকে জানিয়ে দিয়ে আমি ওর ঘোড়াটা ধার নিচ্ছি।

কোথায় যাচ্ছ তুমি?

এখন বলার সময় নেই। শেরিফের দিকে ফিরে সে আবার বলল, ডিগবি, আমি এখনই জারভিসকে আনতে যাচ্ছি।

সময় নষ্ট কোরো না, জলদি যাও, জবাব দিল শেরিফ।

ঘোড়া ছুটিয়ে মুহূর্তে দূরে চলে গেল জুলিয়াস। একেবারে দৃষ্টির আড়ালে যাবার আগে জুলিয়াস পিছন ফিরে দেখল শেরিফের অফিসের সামনে আবার লোকজনের জটলা বাড়ছে।

<

Super User