শুক্রবারে জুলিয়াসের খোঁজে নডির র্যাঞ্চে এসে হাজির হলো শেরিফ ডিগবি। একাই এসেছে সে। মারিয়াকে জিজ্ঞেস করে কোন এলাকায় ওরা কাজ করছে জেনে নিয়ে সেখানে হাজির হলো ডিগবি। খড় কাটছে ওরা-দু’জনেই পরিশ্রমে নেয়ে উঠেছে ঘামে।
ভাল সময়েই এসেছ শেরিফ, একটা ফর্ক তুলে নিয়ে কাজে লেগে যাও, মুচকি হেসে বলে উঠল নডি।
হাতে সময় নেই এখন, জবাব দিল ডিগবি। তারপর একটু ভেবে বলল, ভাগ্যিস সময় নেই, তোমাদের সাথে এই রোদে একঘণ্টা কাজ করতে হলে নির্ঘাত মারা পড়তাম। আমি এসেছি জুলিয়াসের সাথে কিছু আলাপ করতে।
ঝটপট বলে ফেলো কি বলবে, তাড়া দিল জুলিয়াস। সেদিন নকারের মৃত্যুর তদন্ত হলো, তোমার থাকা উচিত ছিল সেখানে। সে যাক, জুরি একচেটিয়াভাবে রায় দিয়েছে তোমার দোষ নেই, আত্মরক্ষার জন্যেই ওটা ঘটেছে। অন্য কোন রায় হলেই বরং অবাক হত জুলিয়াস। ডিগবিকে পছন্দ করে না বটে জুলিয়াস তবে এটা ঠিক যে লোকটা নিরপেক্ষ-কোন পঁাচ নেই ওর মনে। সে বলল, ধন্যবাদ, ডিগবি। ঘটনায় আমি নিজেও দুঃখিত। এড়িয়ে যেতে পারলে…
অন্য একটা ব্যাপারে এসেছি আমি-এই রোববারে তোমার বোনের বিয়ে হচ্ছে ক্রেস্টলাইন চার্চে সানডে সার্ভিসের পর।
এই রকমই একটা কথা কানে এসেছে আমার।
তোমাকে কে বলল?
এসব কথা বাতাসে ছড়ায়।
কার সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে তা-ও শুনেছ?
হ্যাঁ, এডমন্ড ফিনলের সাথে।
চোখ ছোট করে জুলিয়াসের দিকে চাইল শেরিফ। আমার ধারণা ছিল এ বিয়েতে আপত্তি থাকবে তোমার।
কাঁধ ঝাঁকাল জুলিয়াস। আপত্তি থাকলেও আমার করার কিছুই নেই, নিজের পছন্দ মতে বিয়ে করছে পেপি। মিয়া-বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজী? ও সুখী হলেই আমিও খুশি।
তাহলে বিয়েতে যাচ্ছ না তুমি?
যাব না কেন? বোনের বিয়েতে নিশ্চয়ই যাব।
তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই এটা গ্রহণ করেছ তুমি, কিন্তু মনে রেখো, বিয়েতে তুমি যদি কোন গোলমাল পাকাবার চেষ্টা করো তবে আমি নিজে তোমাকে শায়েস্তা করার ব্যবস্থা করব। মেডককেও আমি এই কথাই বলেছি।
মেডক কি মনে করে বিয়েতে গোলমাল বাধাব আমি?
বলা কি যায়?
চেষ্টা করে একটু হাসল জুলিয়াস। না, পেপির বিয়েতে কোন ঝামেলা করব না আমি। তুমি দেখে নিয়ো, ভিড়ের মধ্যে আমিও যে আছি টেরই পাবে তুমি।
আরও দু’একটা কথার পরে বিদায় নিল ডিগবি।
রোববার সকালে অন্ধকার থাকতেই রওনা হয়ে গেল ওরা। দেখা গেল বিয়েতে মারিয়ারই উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। এডমন্ড ফিনলে সম্পর্কে প্রশংসা শুনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও জুলিয়াসের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন সে। তবে বিয়ে সবসময়ই মারিয়ার কাছে একটা বিশেষ আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। নডি ওর অবস্থা দেখে হেসে ওকে একটা বাড়তি রুমাল সাথে নিতে বলল।
না, কাদব না আমি, বলল মারিয়া, হয়তো একটু ভেজাভেজা হয়ে উঠবে চোখ–কিন্তু সেটা তোমারই দোষ। মেয়েরা বিয়েতে একটু কাঁদে কারণ নিজের বিয়ের স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
অনুশোচনা হয় বলে কাদে?
না, নিজের বিয়ের দিনটাই কল্পনায় আবার নতুন করে উপভোগ করে। দোয়া করি যেন পেপি বিয়ে করে আমার মত সুখী হয়। তুমি কবে বিয়ে করছ জুলিয়াস?
হেসে উঠল সে, মেয়েটা রাজি আছে কিনা জিজ্ঞেস করে দেখা হয়নি।
কাকে-
লোলাকে?
চমকে উঠল জুলিয়াস। তার মনের কথা মারিয়া টের পেল কি করে? সে ভাবতেও পারেন তার আর লোলার ব্যাপারটা কেউ আঁচ করতে পারে।
নডিও অবাক হয়েছে। লোলা! ডুবে ডুবে পানি খাওয়া হচ্ছে! আমি কিন্তু মোটেও টের পাইনি।
সন্তুষ্টি ফুটে উঠল মারিয়ার মুখে। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারতে, বলল সে। লোলার প্রসঙ্গ উঠলেই ওর চেহারা কেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, গলার স্বর নরম হয়ে যায়, এসব লক্ষ করোনি? মেয়েটাকে কিন্তু আমার খুব ভাল লাগে। জুলিয়াসের সাথে চমকার মানাবে ওকে।
আপাতত এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না আমি। বলে উঠল জুলিয়াস। মারিয়ার মন্তব্যে মনে মনে খুশি হয়েছে সে।
দশটার দিকে ক্রেস্টলাইনে পৌঁছে গেল ওরা। চার্চে ভিড় হয়েছে অনেক। কয়েকটা রিজার্ভ করা আসন ছাড়া সব ভর্তি হয়ে গেছে। যারা পরে এসেছে তারা দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। সার্কিট প্রচারের সার্ভিসে এমনিতেই বেশি লোক হয়, তার ওপর আজ সার্ভিসের পরেই বিয়ে আছে। ক্রেস্টলাইনের সব লোক তো এসেছেই, পুরো পার্কের লোকই আজ এখানে এসে হাজির হয়েছে।
পিছনের দিকে রকিং এইচের পাচজন লোক দেখা যাচ্ছে-হিউ, হোয়েল, ফক্সি, চাক আর হোরেস একসাথেই বসেছে। মাডি ওদের সাথে নেই, সম্ভবত ওকে রকিং এইচের পাহারায় রেখে আসা হয়েছে।
জিনাও এসেছে তার বাপ-মার সাথে। জুলিয়াসকে দেখেও ইচ্ছে করেই মুখ ঘুরিয়ে রইল সে অন্যধারে লোলাকে দেখতে পেল-ওকে দেখে সামান্য মাথা দুলিয়ে হাসল সে।
সার্ভিস শুরু হবার অল্প আগেই পেপি আর এড় ঢুকল। ওদের পিছন পিছন এল জারভিস আর মেডক। মৃদু গুঞ্জন উঠল চার্চের ভিতর। গুঞ্জনের কারণ বুঝে নিতে কারও অসুবিধা হলো না-অপূর্ব সুন্দরী দেখাচ্ছে পেপিকে। ওর সুন্দর মিষ্টি হাসি থেকে যেন একটা স্বর্গীয় আভা ফুটে বেরুচ্ছে। সাদা শার্ট আর ব্রাউন রঙের একটা নতুন সুট পরেছে এড। নির্ভীক, আত্মবিশ্বাসী, আর পেপিকে পাশে পেয়েই যেন একটু গর্বিতও দেখাচ্ছে ওকে।
ওরা চারজন সামনের রিজার্ভ করা সীটে গিয়ে বসল। অনেকক্ষণ ধরে চলল সার্ভিস। এত শ্রোতা পেয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েই সার্কিট প্রচার লম্বা বক্তৃতা দিলেন! সার্ভিসের শেষেই বিয়ের অনুষ্ঠান একপাশে জারভিস আর অন্যপাশে মেডকের মাঝে প্রচারের সামনে দাঁড়িয়ে এড় আর পেপির বিয়ে হলো। দুজনেই স্পষ্ট গলায় জানাল বিয়েতে তারা রাজি। অনুষ্ঠানের শেষে চার্চের অর্ধেক লোকই ঘেঁকে ধরল ওদের। বাইরে রাস্তায় কেউ একজন আনন্দে চিৎকার করে পিস্তল ছুড়ল।
নব-দম্পতিকে অভিনন্দন জানাচ্ছে সবাই-দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে জুলিয়াস। রকিং এইচের ইে পাঁচজন এখন পিছনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। কোন উত্তেজনা নেই চার্চে সবারই হাসি হাসি মুখ, কথাবার্তার গুঞ্জন ছাপিয়ে বারবার হাসির শব্দ ভেসে আসছে, এর মধ্যে থেকে লোলা যে কখন চার্চ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে খেয়াল করেনি জুলিয়াস-নিশ্চয়ই মাকে সাহায্য করতে রেস্টুরেন্টে ফিরে গেছে কলিন আর হিলডার সাথে জিনাও চলে গেছে।
লোকজন চারপাশ থেকে ভিড় করে থাকলেও তারই ফাঁকে জুলিয়ানা ঠিকই লক্ষ করেছে পেপি হাতের ইশারায় ওকে কাছে ডাকল সে লোকজনের ভিতর দিয়ে এগিয়ে ওদের কাছে গিয়ে এডের সাথে হাত মেলাল সে। তারপর পেপির গালে চুমু খেলো। ভাইকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল রেখে আদর নেয়ার সময়ে সে খুব আস্তে ফিসফিসিয়ে বলল, যাওয়ার আগে, লোলার সাথে দেখা কোরো। কথাটা যে আর কারও কানে যায়নি এ সম্বন্ধে জুলিয়াস নিশ্চিত।
চিরাচরিত অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই চার্চ ছেড়ে বেরিয়ে গেল নব-দম্পতি। রাস্তার দুই ধারে ঘোড়ায় চড়া এসকর্টের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গেল ওরা দু’জন। ঘনঘন লোকজনের উৎফুল্ল চিৎকার আর পিস্তল ফুটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। পেপি আর এড শহর ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত এইরকমই চলল।
চমৎকারর বিদায় অনুষ্ঠান, বলল নডি। তবে উৎসব মোটে শুরু।
ঠিকই বলেছে নডি। বারের সামনে একটা মারপিট ঠেকাল শেরিফ। বিয়েটা লোকজনের বেশি মদ খাওয়ার একটা উছিলা মাত্র। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই আরও অনেক মারপিট হবে আজ। পাইকারী হারে মদ খাওয়ার এটা অবশ্যম্ভাবী ফল।
গ্রোসার ককসির বাসার বৈঠকখানায় লাঞ্চ সেরে বসে গল্প করছে ওরা তিনজন। ককসি, নড়ি আর জুলিয়াস। ককসির কথায় মনে হয় সে মেডক সম্বন্ধে সন্দিহান। এড সম্পর্কে জুলিয়াসের সামনে কোন মন্তব্য না করলেও বোঝা যায় সে উদ্বিগ্ন।
বৌয়ের ডাকে ককসি একটু ভিতরে যেতেই জুলিয়াস নডিকে বলল, এবার লোলার সাথে দেখা করতে রেস্টুরেন্টে যাওয়া দরকার-পেপি ওর কাছে কিছু খবর দিয়েছে।
তাহলে আমি যাচ্ছি, খবরটা নিয়ে আসি, বলে উঠল নডি। না, আপত্তি কোরো না, আমার দিকে কেউ খেয়াল করবে না, কিন্তু তুমি রাস্তায় নামলেই এখন হোয়েলের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। মগজ খাটাও, সাবধানে চললে সারা জীবন লোলার সাথে দেখা করার অনেক সুযোগ পাবে।
কথাটা সত্যি। হোয়েল যদি জুলিয়াসের পিছনে লেগে থাকে তবে তার পক্ষে রাস্তায় বেরুনো এখন মোটেও ঠিক হবে না।
জনি এসে হাজির হলো। একটা ছুতো দেখিয়ে জনির সাথে বেরিয়ে পড়ল নডি। আধঘণ্টা পরে ফিরে এসে জুলিয়াসকে আড়ালে ডেকে সে বলল, রাস্তায় হোয়েলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ছায়ায় দাঁড়িয়ে সবাইকে লক্ষ করছে। সবাই কম বেশি মদ খেয়েছে আজ, কিন্তু হোয়েল এখনও একফোঁটা মদ ছোয়নি।
জারভিস এখনও শহরে আছে?
হ্যাঁ, বারে বসে পোকার খেলছে। জনি ওর পেছনে একজন লোক লাগিয়েছে, জারভিস বার থেকে একপা নড়লেই আমরা খবর পাব।
আজ রাতেই যে করে হোক জারভিসকে ধরে নিয়ে যাবে জুলিয়াস। তাই এখনও শহর ছেড়ে যায়নি ওরা।
লোলা কি বলল? জিজ্ঞেস করল সে।
চার্চের আগে পেপি, এড, মেডক আর জারভিস কফি খেতে রেস্টুরেন্টে গেছিল। পেপি ওখানে তার পোশাকের কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে এমন ভাব দেখালে লোলা সেটা ঠিক করে দেয়ার জন্যে ওকে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আড়ালে একটু কথা বলার সুযোগ পেয়েছে ওরা। পেপি জানিয়েছে এক সপ্তাহের জন্যে হানিমুন করতে ওরা দুজন তোমার বাবার শিকারের কেবিনে কাটাবে। তুমি আর জারভিস ছাড়া রকিং এইচের কেউই জায়গাটা চেনে না। লোলা আরও একটা কথা বলেছে, অবশ্য সেটা তোমার খবরের অংশ নয়।
কি কথা?
বলেছে এই এক সপ্তাহের ভিতর তুমি ওদের বিরক্ত করতে গেলে সে তোমার মাথা ভেঙে দেবে।
বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলল জুলিয়াস। আর কিছু বলল সে?
হ্যাঁ, বলেছে তার কাছে জ্যান্ত সাধারণ মানুষও মরা হিরোর চেয়ে অনেক ভাল।
সন্ধ্যার পরে নডিকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল জুলিয়াস। মারিয়া শঙ্কিত দৃষ্টিতে চাইল ডির দিকে, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। শহরের উত্তর-পশ্চিমে নদীর ধারে জনির সাথে মিলিত হলো ওরা। দুটো ঘোড়া সাথে এনেছে জনি। সে-ই খবর দিল, জারভিস এখনও বারেই আছে-খেলায় অনেক হেরেছে। এখনও চলছে খেলা। জারভিসের অভ্যাস ভাল করেই জানে জুলিয়াস। অত্যন্ত। সহজ একটা প্ল্যান এঁটেছে সে। তাস খেলার সময়ে বিয়ার খায় জারভিস, তাই প্রতি আধঘণ্টায় তাকে একবার করে বারের পিছনে নিজেকে খালাস করতে যেতে হয়। ওখান থেকেই ওকে অপহরণ করা হবে।
চলো, আর দেরি না করে হাতের কাজটা শেষ করে ফেলা যাক, প্রস্তাব দিল নড়ি।
বারের পিছন দিকে কিছুটা অংশ বেড়া দিয়ে ঘেরা। এর শেষ মাস, টয়লেট। পিছনের উঠানে নানান আকারের কাঠ স্তূপ করে রাখা আছে। জুলিয়াসদের লুকিয়ে থাকার জন্য চমৎকার জায়গা।
গত আধঘণ্টায় বারের পিছন দিককার দরজা দশ-বারোবার খুলেছে। বিভিন্ন লোক তাদের কাজ সেরে আবার ফিরে গেছে। এরপরে জুলিয়াসের প্রত্যাশাই ঠিক প্রমাণ করে জারভিস বেরিয়ে এল। কিন্তু একা নয় সে। ওর সাথে চাকও বেরিয়ে এসেছে-সম্ভবত ওকে সামাল দিতেই।
কাঠের গাদার পাশ দিয়ে টয়লেটের দিকে যেতে যেতে চাককে ওরা বলতে শুনল, জলদি করো, জারভিস, তোমার কপাল মোটে ঘুরতে আরম্ভ করেছিল-আগামী ঘণ্টাটা মনে হয় ভালই যাবে তোমার।
বাজে তাস পাচ্ছিলাম, তিক্ত স্বরে বলে উঠল সে, কিন্তু তুমি দেখে নিয়ে, যা হেরেছি সব সুদে আসলে তুলে নেব আমি।
অন্ধকারের ভিতর থেকে নিচু অথচ তীক্ষ্ণ গলায় আদেশ করল জুলিয়াস, যেখানে আছ সেখানেই চুপ করে দাঁড়াও। পিস্তল বের করার চেষ্টা কোরো না কেউ!
আড়াল থেকে বেরিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল জুলিয়াস। নডিও ওর সাথে সাথেই আছে। জনি পিস্তল হাতে কাভার করছে ওদের দুজনকে।
চাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে একেবারে স্থির দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত দুটো। সামান্য, উঁচুতে মাঝ পথেই থেমে রয়েছে। জারভিস দাড়িয়ে নেশার ঘোরে দুলছে। হঠাৎ হেঁড়ে গলায় সে চিৎকার করে উঠল, কি চাও তোমরা? আমি কি করেছি? আমি…
ঘুরে দাঁড়াও, কঠিন গলায় নির্দেশ দিল জুলিয়াস।
নির্দেশ মানল না জারভিস, ধীরে ধীরে কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে। কিন্তু চাক পিস্তলের মুখে লক্ষ্মী ছেলের মত ঘুরে দাঁড়াল। জনি এগিয়ে এসে ওর কানের পিছনে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সে।
ঘুরেই বারের দিকে হাঁটা ধরেছিল জারভিস! লাফিয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেলল জুলিয়াস। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর হাল ছেড়ে দিয়ে রাগে ফুঁসতে থাকল জারভিস।
চলো, এখান থেকে জলদি কেটে পড়ি, পরামর্শ দিল নডি, এখনই হয়তো কেউ এসে পড়তে পারে। চাকের কি খবর?
জুলিয়াস আড়চোখে মাটিতে শোয়া চাকের দিকে চাইল। ওরা ভেবেছিল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে চাক-হয়তো কিছুক্ষণের জন্যে জ্ঞান হারিয়েও ছিল সে; কিন্তু এখন পিস্তল তুলে তাক ঠিক করছে ও।
অন্যদের সাবধান করার আর সময় নেই এখন। জারভিকে ছেড়ে দিয়ে পিস্তল বের করেই গুলি করল জুলিয়াস। গুলিটা ওর কাঁধ ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। ব্যথায় চিৎকার করে উঠে আবার পিস্তল ওঠাল চাক। জুলিয়াসের দ্বিতীয় গুলিটা ওর হৃদপিণ্ড ছেদা করে দিল। পিস্তলটা ছেড়ে দিয়ে গড়িয়ে পড়ল সে।
মারা গেছে চাক। এক মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে থেকে পিস্তল খাপে ভরল জুলিয়াস।
জারভিসকে আবার ধরে ফেলল জনি। জুলিয়াস, শিগগির চলো, এখনই সবাই এসে পড়বে, উত্তেজিত কণ্ঠে বলল সে।
ছুটতে ছুটতে পাশের বাড়িটার আড়ালে চলে যাবার আগে একবার পিছন ফিরে দেখল জুলিয়াস। এখনও বারের পিছনের দরজা খুলে কেউ বেরিয়ে আসেনি। দু’জনে দু’পাশ থেকে জারভিসের হাত ধরে দ্রুত এগিয়ে গেল নদীর দিকে।
নদীর ধারে পৌঁছে জারভিসের নেশা কিছুটা পাতলা হয়ে এল। ছাড়া পেলে এই তিনজনের যে কি দুরবস্থা করবে তা সবিস্তারে গালাগাল সহ বর্ণনা করল সে।
কথার কোন জবাব না দিয়ে ওকে ঘোড়ায় তুলে পায়ে রেকাব পরিয়ে ঘোড়ার সাথে ভাল করে বেঁধে দিল ওরা। বারের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে লক্ষ করল পিছনের উঠানে এখন লোক জড়ো হয়েছে। কেউ পিছু নেয়নি দেখেই বোঝা যাচ্ছে পালাবার পথে ওদের দেখেনি কেউ। উঠানে চাকের মৃতদেহ দেখে সবাই মনে করবে জারভিসই ওকে খুন করে পালিয়েছে।
তোমার কি মনে হয় শেরিফ জারভিসকেই খুনী সাব্যস্ত করে লোকজন নিয়ে ওকে খুঁজতে বেরুবে? প্রশ্ন করল নডি।
সেটাই স্বাভাবিক জবাব দিল জুলিয়াস। আকাশের দিকে একবার চেয়ে সে আবার বলল, মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে, বৃষ্টির পরে ওরা আর ঘোড়ার পায়ের। ছাপ দেখে আমাদের খুঁজে বের করতে পারবে না-সব চিহ্ন ধুয়ে মুছে যাবে বৃষ্টিতে।
জনি বলে উঠল, আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়? আগামীকাল আমরা যদি শেরিফকে জানাই আমার একজন কর্মচারী জারভিসকে উধ্বশ্বাসে ঘোড়া ছুটিয়ে গিরিপথের দিকে যেতে দেখেছে, তাহলে নিশ্চয়ই এদিকে খোজা বৃথা মনে করে খোজাখুজি বাদ দেবে ওরা-কি বলো?
বুদ্ধিটা ভালই করেছ, সমর্থন করল জুলিয়াস। জারভিসকে এখন এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন কেউ ওকে খুঁজে না পায়। ওর নিরাপত্তাই এখন আমাদের কাছে সবচাইতে বড়। আমরা সবাইকে সত্যি কথা জানাব বিপদ পার। হবার পর। তবে লোলাকে তুমি সব কথা খুলে বলতে পারো, নডি!
ঠিক আছে, সায় দিল সে।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জারভিসকে সাথে করে লোলাদের র্যাঞ্চের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল জুলিয়াস।
বারের পিছনের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা অল্পক্ষণের জন্যে মিস করল মেডক। মাত্র পনেরো মিনিট আগেই সে রকিং এইচের দিকে রওনা হয়ে গেছে। ওখানে একটা কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে তার।
দিনটা ভালই কেটেছে আজ। এখন মাত্র দুটো ব্যাপারে সে একটু বিব্রত। প্রথমটা অবশ্যই জুলিয়াস, কিন্তু সেটাও আর দু’একদিনের ব্যাপার। নকার কাজটা শেষ করতে পারেনি বটে, কিন্তু হোয়েলকে লাগানো হয়েছে এবার। লোকটা হিউ হাপারের মতই দক্ষ। ওরা একবার সামনাসামনি হলেও জুলিয়াসের আয়ু শেষ।
ওর মাথা ব্যথার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এডমন্ড ফিনলে। ওর ব্যাপারেও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে মেডক। লোকটা কাজ করছে বটে; কিন্তু ওর নিজস্ব একটা মতলবও আছে। বোকাটা অভিনয় করতে গিয়ে সত্যি সত্যিই পেপির প্রেমে পড়ে গেছে। পারলে সে নিজেই এখন রকিং এইচ ভোগ করবে।
বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করল। পাতলা বর্ষাতিটা বার করে নিল মেডক। মাথা থেকে সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলল সে। জুলিয়াস মারা পড়বেই-কেবল সময়ের। অপেক্ষা { এডও মরবে, কিন্তু তার আগে কগপত্র হাত করে নেবে মেডক। পিস্তলের মুখে কাগজ সই করে দেয়া ছাড়া কেন এয়ই থাকবে না ওর। এক সপ্তাহ পরে সেই ব্যবস্থাই করবে সে। আপন মনেই হেসে উঠল মেডক-প্ল্যান করেই সে এক সপ্তাহের জন্যে ওদের হানিমুনে যেতে দিয়েছে।
র্যাঞ্চে পৌঁছে আস্তাবলে ঘোড়া রেখে নিজের কেবিনে ঢুকে পোশাক বদলে নিল মেডক। তারপর গ্লাসে খানিকটা হুইস্কি ঢেলে এক চুমুকে শেষ করে বড় বাড়িতে গেল সে। মাডি দরজা খুলে দিল-ওর চোখমুখ এখনও ফোলা।
বিয়ে কেমন হলো? প্রশ্ন করল সে।
অন্যান্য বিয়ের মতই, জবাব দিল মেডক। এবার নিজের ঘরে ফিরে যাও তুমি, বুড়োর সাথে কিছু কথা আছে আমার।
সেবাস্টিন দত্তের ঘরে ঢুকে আলো জ্বেলে বিছানার দিকে চাইল মেডক। প্রতিবারই সে আশা করে ঘরে ঢুকে দেখবে সেবাস্টিন দত্ত তার বিছানায় মরে পড়ে আছেন। এগিয়ে গেল মেডক।
বুড়া কি এখনও বেঁচে আছ? ডাকল সে।
কোন সাড়া সেই-চোখও বন্ধ।
কি হলো, জবাব দাও না কেন, জেগে আছ? অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল মেডক।
জেগেই আছি, বলো, জবাব এল এবার।
তৃপ্তির সাথে হাসল মেডক। আজ শেষ কথা বলবে সে।
এইমাত্র বিয়েটা দেখে ফিরলাম। আমার লোককেই বিয়ে করল তোমার মেয়ে পেপি, বলল মেডক। দাঁত বের করে হাসছে সে। হানিমুনে গেছে ওরা, ফুর্তিতে আছে। দুঃখের বিষয় ওরা ফিরে এসে দেখবে তুমি পটল তুলেছ।
মুখ তুলে চাইলেন সেবাস্টিন দত্ত-কিন্তু কোন কথা বললেন না।
হ্যাঁ, আজ রাতেই মৃত্যু হবে তোমার। দু’দিন পরে তোমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কবর দেয়া শেষ হলে উকিল তোমার উইলটা খুলে সবার সামনে পড়বে। অর্ধেক পাবে পেপি, বাকি অর্ধেক জারভিস। হঠাৎ দুর্ঘটনায় জারভিস মারা যাওয়ার পর সবই পাবে পেপি-মানে এড। চুক্তি অনুযায়ী সব আমার হাতে তুলে দিয়ে তার পাওনা টাকা চাইবে এড। তার সব পাওনাই মিটিয়ে দিয়ে চিরদিনের জন্যে বিদায় করব আমি। কি বলো, সুন্দর সহজ সরল প্ল্যান করেছি না?
তোমাকে খুন করব আমি, দাঁতে দাঁত চেপে বললেন সেবাস্টিন?
সে সুযোগ আর তোমার হবে না বুড়া মিয়া, মরার আগে যীশুর নাম জপে নাও।
বালিশ থেকে একটু মাথা উঁচু করে কান খাড়া করলেন সেবাস্টিন। উঠানে কয়েকটা ঘোড়া এসে থামার আওয়াজ শোনা গেল। শহর থেকে ফিরেছে ওরা।
তোমাকে মারার জন্যে তোমার বালিশটাই ব্যবহার করব আমি, বলে চলেছে মেডক। এর আগে কোনদিন মানুষ মারতে বালিশ ব্যবহার করিনি, তবে মনে হয় ওতে কাজ হবে। আগামীকাল তোমাকে দেখে সবাই মনে করবে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তোমার। বিদায়, কাঞ্জুস বুড়া, গুড-বাই! বালিশটা নেয়ার জন্যে ঝুঁকল মেডক। বাড়িতে ঢুকেছে কেউ-তার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। আবার কি হলো? তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরুতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল সে। হোয়েল বারান্দা দিয়ে এগিয়ে আসছে।
ষাঁড়ের মত চ্যাঁচাচ্ছ কেন, কি হয়েছে? বিরক্ত স্বরে ধমকে উঠল মেডক।
চাক মারা পড়েছে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল হোয়েল। জারভিস নিরুদ্দেশ। মনে হচ্ছে সে-ই চাককে গুলি করে পালিয়েছে।
অবিশ্বাস্য! কথাটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না মেডক। প্রকৃতিস্থ অবস্থাতেই জারভিস সোজা গুলি চালাতে পারে না-সেই মানুষ মাতাল অবস্থায় চাকের মত লোককে মারে কি করে?
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিল হোয়েল। খেলায় চাকই একচেটিয়া ভাবে জিতছিল। টয়লেটে যাবার সময়ে জারভিস বেসামাল ভাবে টলছে দেখে জলদি আবার খেলা চালু করার উদ্দেশে চাক নিজেই, ওর সাথে সেলুনের পিছনে গেছিল। অল্প পরে গুলির আওয়াজে সবাই ছুটে পিছনের উঠানে গিয়ে দেখে চাক মরে পড়ে আছে আর জারভিস উধাও হয়েছে।
পার্কের কেউ আসল ঘটনা আঁচ করতে না পারলেও মেডক ঠিকই সন্দেহ করল এটা জুলিয়াসেরই কাজ। জারভিসকে কিডন্যাপ করেছে সে। বাধ্য হয়ে সেবাস্টিন দত্তকে এখন আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখতে হবে তার নিজের স্বার্থেই।
একটু পরে আমার কামরায় এসো, তোমার সাথে কথা আছে, অনিশ্চিত স্বরে বলল মেউক।
হোয়েল চলে যেতেই আবার বিছানার পাশে ফিরে এল সে। সেবাস্টিন দত্তের দিকে একনজর চেয়ে বাতি নিভিয়ে নিজের ঘরে ফেরার জন্যে পা বাড়াল মেডক।
পিছন থেকে সেবাস্টিন দত্তের গলার স্বর শুনে থমকে দাঁড়াল সে। আবার দেখা হবে, মেডক-বিছানা ছেড়ে ওঠার শক্তি যেদিন হবে সেদিন তোমাকে খুন করব আমি।
চুপ করো! ধমক দিল মেডক। যা কোনদিন পারবে না তা নিয়ে মিছে বড়াই কোরো না।
<