কাজের সময়ে জনি হিউবার্ট ঠাণ্ডা মাথায় অত্যন্ত সাবধানে প্ল্যান করে। কাজের লোকগুলো রেঞ্জে গেলে রকিঙ কে র‍্যাঞ্চ আক্রমণ করে দখল করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু মাত্র দু’জন ওখানে থাকলেই এমন আক্রমণকে খুব ক্ষতিকর করে তুলতে পারে। তাছাড়া লিসা আর শেলী ওখানে থাকে কোন ভদ্রমহিলার জীবন বিপন্ন হয়, এমন কিছু শুধু পশ্চিমেই নয়, সেভেন পাইনসের লোকজনও সহ্য করবে না।

ওর যুদ্ধ-কৌশল হবে, কাউহ্যাণ্ডরা রেঞ্জে কাজে বেরোলে, ওদের একজন-দু’জন করে শেষ করা। তার পরিকল্পনায় কোন ফাঁক নেই। একদল কঠিন রাইডার তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। সে জানে কোথায়-কোথায় রকিঙ কে-র রাইডাররা থাকবে। কিছু তাজা-ঘোড়া সে বিশেষ বিশেষ এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। তাতে তার কঠিন আরোহীরা দ্রুত রাইড় করে ওদের সবাইকে শেষ করতে পারবে। এতে একদিনেই লড়াই শেষ হবে। কিন্তু সে যে আর একজনের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করছে, এটা সে বুঝল না।

রজারের সাথে রাইড করছিল হেনরি। স্মোক সিগন্যাল দেখতে পেল ওরা। বিশাল লোকটা জানে ওই সঙ্কেতের প্রকৃত অর্থ। ওকে ওখানে যেতে বলা হচ্ছে। কর্ন প্যাচে এই মুহূর্তে যাওয়ার কোন বাসনা নেই ওর। কি করবে বুঝে পাচ্ছে না সে। শেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল, আমি ওখানে যাচ্ছি, রজার। ওরা যা চায় তা আমাকে করতে হবে, কিন্তু রনিকে সাহায্য করবে এমন কিছু তথ্য হয়তো আমি সংগ্রহ করতে পারব।

ওদের থেকে তোমার দূরে থাকাই ভাল, রজার ওকে সাবধান করল। ওই বিল ওয়াটসন লোকটা যে শয়তানের হাড্ডি তা তুমি ভাল করেই জানো।

আমি যে দল বদল করেছি এটা সে আঁচই করতে পারবে না, জোর দিয়ে বলল হেনরি। এই সবকিছুর পিছনে আর কেউ আছে। লোকটা কে জানতে পারলে ভাল হত। ওয়াটসন তারই নির্দেশে কাজ করে। আমার বিশ্বাস স্টেজ ডাকাতির পিছনেও ওই একই লোকের হাত আছে।

সিগারেট মুড়ানোর পর জিভ দিয়ে কাগজের আঠাটা ভিজিয়ে পুরো রেঞ্জার ওপর রজার একবার ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিল। হতে পারে, বলল সে। কিন্তু আমি বলব ওই সাপের গর্ত থেকে তোমার দূরে থাকাই ভাল।

হেনরি ঘোড়ার পিঠে কর্ন প্যাচের সেলুনে পৌঁছল। এলাকাটা নীরব। সেলুনটাও খালি। বারের দিকে এগিয়ে গেল সে। ওর দিকে চেয়ে নড করল বিল।

চারদিক একেবারে চুপচাপ দেখাচ্ছে? প্রশ্ন করল হেনরি। লোকজন সব কোথায়?

সব থ্রী এইচে, জবাব দিল বিল। এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই আমরা ছিলাম। রকিঙ কে আর থ্রী এইচের লড়াইয়ে রকিঙ কে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে-তখন আমরা সহজেই ওদের গরুগুলো সব লুটে নিতে পারব।

থ্রী এইচ হয়তো নাও জিততে পারে।

পাগল হয়েছ? হিউবার্টদের নিজের লোক তো আছেই, সাথে আছে। জেরি সমার্স, ডাকি, ড্রিনান, হ্যানকিন্স, ট্রয়, আর আরও ছয়জন লোক। ওরা একদিনেই সব শেষ করে ফেলবে। ফিরে লড়ার মত একজনকেও জ্যান্ত রাখা হবে না।

এর ভিতর আমার কাজটা কি হবে?

দরজা ঠেলে জনি হিউবার্ট ভিতরে ঢুকল। একটু আড়ষ্ট হলো হেনরি। বুঝতে পারছে এই সবই আগে থেকে প্ল্যান করা।

তুমি ড্যাশারকে আমাদের কাছে পোকার গ্যাপে নিয়ে আসবে। কথাটা জনি হিউবার্ট বলল।

হেনরি জনির দিকে তাকাল। এই–প্রথমবারের মত ওদের গোলামিতে তার মন বিষিয়ে উঠেছে। সব কিছুরই একটা সীমা আছে। কিছু রাসলি করেছে সে, কিছু লোককে হাইজ্যাক করে টাকাও লুট করেছে। কিন্তু সে কখনও একটা সৎ আর নির্ভীক লোককে মৃত্যুর ফাঁদে টেনে নিয়ে যায়নি। হঠাৎ একটা অদ্ভুত অনুভূতি ওকে গ্রাস করল। মনে হচ্ছে দিন ফুরিয়েছে এটাই তার জীবঘ্নে শেষ দিন। অবান্তর হলেও অনুভূতিটাকে সে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে আর একটা রোল করল। ড্যাশার, বলল সে, লোকটা নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী চলে। ওকে আমি বা আর কেউ লীড করতে পারবে না।

চেষ্টা করো, দৃঢ়স্বরে বলল ওয়াটসন। ওকে কেবল একবার পোকার গ্যাপে নিয়ে এসো, বাকিটা আমরা সামলাব।

কোন সম্ভাবনা নেই! ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়াল হেনরি। ওর ভারি মোটাসোটা আঙুলের হাত দুটো বারের ওপর। শক্ত লোকটার চেহারা এখন আরও কঠিন হয়েছে। ও এত বোকা নয়। ওর চোখ এবার য়াটসনের দিকে ঘুরল। লোকটা পোকার খেলায় তোমাকে হারিয়েছে–যেটা কেউ কোন দিন পারেনি। দু’বার সে হিউবার্টদের মোকাবিলায় ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, অথচ দু’বারই ওরা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বাস করো সে এবারও তাই করবে। চাইলেও আমি ওকে ফাঁদে ফেলতে পারব না। এবং আমি সেটা চাইও না!

ওদের মুখের ওপর কথাগুলো বলে দিতে পেরে ওর মন তৃপ্তি আর প্রশান্তিতে ভরে উঠল। দেখল হিউবার্টের চেহারা রাগে লাল হয়ে উঠেছে। ওরাটসনের মুখটা মনে হচ্ছে পাথরে খোদাই করা। বোকামি কছ তোমরা! হেনরির স্বরটা এখন কর্কশ। তোমাদের জেতার কোন সম্ভাবনাই নেই! তোমরা যার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছ, সে বুড়ো কেসির থেকেও অনেক কঠিন, আর স্মার্ট!

ওর কথার শেষে কামরায় নীরবতা বিরাজ করছে। বাইরে একটা সিকাডা পাখি গ্রীজউড বনে ডাকছে। একটা রুবল মাছি ভিতরে ঢোকার জন্যে ময়লা জানালাটার কাঁচে বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সিগারটা দাঁতের ফাঁকে কামড়ে ধরে জনি বলল, তুমি বলেছিলে এই লোকটাকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু মনে হচ্ছে ও ড্যাশারের দলেই যোগ দিয়েছে।

কথায় তাই মনে হচ্ছে, স্বীকার করল বিল। বলো, হেনরি, এখন তুমি কোন দলে?

জীবনে অনেক লোকের অনেক আদেশই হেনরিকে পালন করতে হয়েছে। কিছু ভাল, কিছু খারাপ। হঠাৎ সে উপলব্ধি করল, নিকৃষ্ট হয়েই তার সারাটা জীবন কেটেছে। তৃতীয় শ্রেণীর। জানে, কথা বলে সে এর থেকে বেরোতে পারবে। মাফ চেয়ে, ওদের প্ল্যানে সম্মতি জানিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে খবরটা সে রনির কাছে পৌঁছে দিতে পারবে। কিংবা ওদের দু’জনের মোকাবিলা এখনই এখানে করতে পারে।

এই দুটো লোক যদি মরে, হয়তো লড়াইয়ের এখানেই ইতি ঘটবে। যদি শেষ নাও হয়, তবে চাপ কিছুটা যে কমবে তাতে সন্দেহ নেই। ক্ষতি কি?

মুখ তুলে চাইল সে। হেনরি প্রায় ওয়াটসনের মতই বিশাল। শেভ করেনি। পোশাকও অগোছাল। তবু ওই মুহূর্তে সে ভাল বোধ করছে। এত ভাল সে আগে কখনও বোধ করেনি।

আমি ফাইটে ড্যাশারের পাশেই দাঁড়াব। হেনরির স্বরটা শান্ত। আমি রকিঙ কে-এর লোক।

কোনদিন এমন একটা লোকের সাথে রাইড করার সুযোগ আমি পাইনি। এখন দেখছি এটা আমারস্তাবই লাগছে। খুব ভাল। তুমি সব সময়েই কি-র্যাট ছিলে, বিল, আর এই জনি হচ্ছে দুই পয়সার মানুষ, যে তার নিজের লড়াইয়ের জন্যে তোক ভাড়া করে। আমার মনে হয় না তোমাদের কারও মধ্যে একটুও মনুষ্যত্ব আছে।

হেনরি ধারণা করেছিল এই কথার পর ওরা পিস্তল ড্র করবে। কিন্তু ওরা কিছুই করল না। একটু রাগ তাও না। পুরো এক মিনিট ওরা চুপচাপ বসে রইল। তারপর হিউবার্ট উঠে দাঁড়াল। বোঝা যাচ্ছে আমাদের প্রশ্নের একটা জবাব পাওয়া গেল, বলল সে। তুমি কিভাবে এর নিষ্পত্তি করো সেটা আমাকে জানিও। দরজার দিকে এগোল সে। হেনরি মনে করেছিল লোকটা চলেই যাচ্ছে। ওর চোখ জনিকে অনুসরণ করছে। হঠাৎ কি বে বিলের দিকে ফিরল সে। দেখল ওর ডবল-ব্যারেল শটগানটা খেচে আভা বেরোল। আঘাতটা হেনরির পেটের মাঝখানে লাগল। পড়ে যাচ্ছে সে।

পড়ার মধ্যেই পিস্তল বের করে পরপর তিনটে গুলি করল। কিন্তু ওগুলো লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি নয়। অবশ্য তা হতেও পারে না। প্রথমটা ওয়াটসনের পিছনে একটা বোতল ভাঙল। দ্বিতীয়টা বারের কোনায় লাগল, তৃতীয়টা ওর গলায় বিঁধে মেরুদণ্ডের কিছুটা উড়িয়ে নিয়ে গেল।

জনির কপালে চিকন ঘাম দেখা দিয়েছে। ঠোঁট দুটো পরস্পারের চাপে সাদা হয়ে গেছে। ওয়াটসন বারের পিছনে লম্বা হয়ে পড়েছে। সে যে মারা গেছে তাতে সন্দেহ নেই। কাঠের গুঁড়ো ছড়ানো মেঝেতে চিত হয়ে পড়ে আছে হেনরি। দেহটা রক্তে লাল।

বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল জনি। লোকটা সাহসী বটে–কিন্তু চোখের সামনে দু’দুটো লোককে মুহূর্তে মরতে দেখে ওর পেটটা গুলাচ্ছে। নিজের ঘোড়ার পিঠে চেপে ট্রেইল ধরে রওনা হলো সে।

হেনরি মরেনি, কিন্তু মারা যাচ্ছে। ধীরে, অনেক ব্যথা সহ্য করে নিজেকে একটু-একটু করে টেনে বারের পিছনে রাইফেলের র্যাকটার সামনে নিয়ে এল হেনরি। কঁকি দিয়ে শার্পস .৫০ রাইফেলটা তুলে দিল।

জনিকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তিনশো গজ দূরে ঘোড়াটাকে হটিয়ে নিয়ে চলেছে।

রাইফেলটা ওর দিকে তাক করল হেনরি। কেমন যেন এলোমেলো লাগছে। ঠিক লক্ষ্য করতে পারছে না। লক্ষ্যটা দুলছে, নাচছে, তারপর স্থির হলো। ট্রিগার টিপল সে।

বাফেলো গানটা ওর হাতে লাফিয়ে উঠল। কাঁধে প্রচণ্ড ধাক্কা দিল। তিনশো গজ দূরে জনি অনুভব করল তার ঘোড়াটা আড়ষ্ট হলো। তারপর পড়ে গেল। লাফিয়ে নেমে ছুটে পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিল হিউবার্ট।

সেলুনের ভিতর রাইফেলটা ওর হাত থেকে খসে পড়ে গেল। আর অনুভব করার শক্তি আর নেই–মেঝের ওপর লুটিয়ে পড়ল সে।

রকিঙ কে-তে ঘোড়ায় জিন চাপাচ্ছে রনি। অপেক্ষা করছে লিসা। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সারারাত মেয়েটা ঘুমায়নি। হঠাৎ সে প্রশ্ন করল, রনি, এখন কি ঘটবে?

গভীর ভাবেই ওর দিকে তাকাল ড্যাশার। আমি ঠিক বলতে পারছি, লিসা। তবে মনে হচ্ছে যুদ্ধ আসন্ন। হিউবার্টরা এখন আর থামবে না। কিডকে ওদের হাতে তুলে দিলেও হয়তো ওরা থামবে না।

ঠিকই বলেছ। রক্ত ক্ষয় ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই।

হঠাৎ এগিয়ে এসে ওর হাত চেপে ধরল লিসা। তুমি-তুমি কেন জেরি সমার্সকে কাজে নিচ্ছ না?

সে আগেই বিপক্ষ দলে যোগ দিয়েছে।

বিশ্বাস করি না।

বিশ্বাস করো আর না করো, কথাটা সত্যি! সে জনির পক্ষ নিয়ে। কাজ করেছে। আমাদের বলার কিছুই নেই।

সে-সেকি সত্যিই ওদের দলে যোগ দিয়েছে?

হ্যাঁ, কথাটা তোমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও সত্যি।

ওর ঠোঁট জোড়া শক্ত হলো। ভিতরটা একেবারে খালি বোধ হচ্ছে। তবু সে মনে মনে জানত, হয়তো এমনই ঘটবে। আগে কখনও স্বীকার করেনি। নাচের সঙ্গী হিসেবে সে সবার থেকে ভাল। এটা স্বীকার না করে উপায় নেই।

রনি, বলল লিসা, ওর গলার স্বরটা সিরিয়াস। জেরি সমার্স যদি হিউবার্টদের সাথে যোগ দিয়ে থাকে, তবে সে আর আমার বন্ধু নয়। আমি-আমি এখন বুঝতে পারছি, লোকটা যে বিশ্বাসযোগ্য নয় এটা আমি আগে থেকেই জানন।

নীরবে একটা সিগারেট রোল করছে রনি। অনেক সমস্যার সমাধানই সে পেয়েছে, কিন্তু প্রমাণ নেই। নিশ্চিত ভাবেই সে জানে জেমস হার্টকে কে মেরেছে। সে জানে ডাকাতিগুলো কে করাচ্ছে। ওরা দু’জনেই ঠাণ্ডা মাথার মানুষ-ওদের কাছে মানুষের জীবনের কোন দাম নেই। জেরিকে লিসা ভাল করে চেনে, হয়তো লোকটা এমন কিছু মন্তব্য করেছে যেটা জানতে পারলে অনেক সুবিধা হত।

কিছুক্ষণ ইতস্তত করে লিসা বলল, এই এলাকাটা সে ভাল করে চেনে–খুব ভাল। আমি যখন ওকে প্রথম দেখি তখনই সে চিনত। অথচ মাত্র শহরে এসেছে সে।

ডাকি একবার বলেছিল জেরি প্রভাবশালী লোক ছিল। ও যখন কথা বলত সবাই সন্ত্রস্ত থাকত। কর্ন প্যাচের লোক-এমনকি শহরের গণ্যমান্য লোকেরাও।

আগের মন্তব্যে ফিরে গেল রনি। তোমার ধারণা সে এখানে আগেও এসেছে?

লিসার চোখ অলস ভাবে টেরি, কিড লেকার, আর মিলিগানের ওপর ঘুরে আসল। বাঙ্ক-হাউসের আশেপাশেই ঘঘারাফেরা করছে ওরা। শর্টি মাইক রিজের মাথায় শুয়ে দূরবীন দিয়ে রেঞ্জের ওপর কড়া নজর রেখেছে।

লিসা, বলল রনি, একজন, বা বড় জোর দুজন, এইসব ঘটনার পিছনে রয়েছে। আমার ধারণা অ্যাডাম ওদের একজন। হয়তো বিল ওয়াটসন আর একজন। কিন্তু আমার বিশ্বাস ওই লোকটা চুনোপুঁটি। কর্ন প্যাঁচটাকেই সবাই বড় করে দেখছে, কিন্তু আমার বিশ্বাস ওটা একটা ভাঁওতা। জেরি সমার্স হয়তো জানে এর মূলে কে আছে। তোমার যদি এমন কিছু মনে পড়ে যেটা আমাদের সাহায্য করতে পারে, তবে জানিও। জেরি কোন কাজ করে না, অথচ ওর টাকার অভাব নেই–কিভাবে? আমি জানতে চাই কার সাথে ওর যোগাযোগ আছে।

মুখ বাঁকাল সে। একটা লোক আছে–সে বলেছিল ওর নাম লারামি। মাঝেমধ্যে ওরা কথা বলত, কিন্তু আড়ালে।

লারামি!

ওই মুহূর্তে রজার ঘোড়া ছুটিয়ে রনির কাছে এসে থামল। ওরা আসছে! বলল সে। আরোহীরা থ্রী এইচ ছেড়ে এগিয়ে দক্ষিণ দিকে আর একটা দলের সাথে যোগ দিয়েছে। ওরা আমাদের লাইন কেবিন উইলো স্প্রিংসের দিকে যাচ্ছে।

হেনরি কোথায়?

রজারকে একটু উদ্বিগ্ন মনে হলো। কর্ন প্যাঁচ থেকে একটা ধোয়ার সঙ্কেত পেয়ে সে ওখানেই গেছে। কিন্তু সেটাও অনেকক্ষণ আগে।

কর্ন প্যাচের থেকে কোন সাড়া দেখা যাচ্ছে?

না, কিন্তু ওদের সাথে হ্যানকিনসের রোন ঘোড়াটাকে আমি চিনতে পেরেছি।

ঠিক আছে, রজার; তুমি এখানে বেন কেসি আর চায়নার সাথে থাকো। আমরা থ্রী এইচআর কর্ন প্যাঁচ হয়ে আসছি। ওদিকে কিছু ঘটলে সেটা আমাদের জানা দরকার। এদিকে যদি আক্রমণ আসে, তবে রিজের ওপর ধোয়ার সঙ্কেত দিও আমরা দেখতে পাব।

বেসিন ধরে এগোল রনি। ওর সাথে আরও চারজন রাইডার। রেঞ্জ ওয়ার পছন্দ করে না রনি। কিন্তু এটা ওকে লড়ে জিততেই হবে। আসলে, বহু দক্ষিণে কর্ন প্যাচের বিরুদ্ধে একটা বিরাট আঘাত আগেই হানা হয়েছে।

হেনরি মরেছে। কিন্তু ওর মৃত্যু বৃথা যায়নি। নিজের সাথে ওয়াটসনকেও সে নিয়ে গেছে। শেষ শক্তি দিয়ে রাইফেলটা কাঁধে তুলে গুলি করেছিল সে। কাউকে মারার জন্যে নয়-কেবল একটা ওয়ারনিং শট। কিন্তু সেটাই থ্রী এইচকে ঠেকাল।

জনি হিউবার্ট ওদের বস্। সিলভারও ওকে কখনও রাগাতে সাহস পায়নি। জনি ওদের লীডার, কিন্তু সে ওখানে উপস্থিত নেই। দ্রুত আক্রমণকারী দলটা ওর আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সে কর্ন প্যাঁচ থেকে ফেরেনি। হেনরির গুলিতে সে আহত হয়নি, তবে ওর ঘোড়াটা মারা পড়েছে। হেনরি যে বাফেলো গানটার পাশে মরে পড়ে আছে, এটা সে বুঝতে পারেনি। জনি সাবধানী লোক। নিজের ঘোড়াটা মারা পড়ার তিন ঘণ্টা পরে সে হেনরির ঘোড়াটা নিয়েই ফেরার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু বিগত রাসলারের মাসট্যাঙটা বুনো। জনিকে গুঁড়ি মেরে ওর দিকে এগোতে দেখে ভয় পেয়ে সে পালিয়ে গেল। ওকে ধরার জন্যে ওর পিছনে ছুটল জনি।

সতর্কতার সাথে তৈরি করা আক্রমণের প্ল্যানটা ওর অপেক্ষায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুপুরের পর লাইন কেবিনের লোক দু’জনকে মারার উদ্দেশ্যে ওরা রওনা হলো। কিন্তু ওরা যে ভোর বেলাতেই র‍্যাঞ্চে ফিরে গেছে এটা ওদের জানা ছিল না। সিলভাবের নেতৃত্বে ওরা রাইড করছে। এখন।

একটা সরু ড্র ধরে রনির পিছুপিছু মরুভূমিতে বেরিয়ে এল ওরা। কিছু ট্র্যাক দেখতে পেয়ে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল ড্যাশার। দু’জন লোক কিছু ঘোড়াকে লীড করে উত্তর দিকে নিয়ে গেছে। এর মানে কি হতে পারে?

ঘোড়াগুলোকে লীড করে নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে তুমি কি নিশ্চিত? প্রশ্ন করল হ্যারি। সম্ভবত ওরা উইলো স্প্রিংসের দিকে গেছে।

দু’জন আরোহী ওই ঘোড়াগুলোকে হটিয়ে নিয়ে গেছে, অনেক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলল রনি।

ওরা পুব দিকে এগোল। আবার থামল সে। আরেকটা দল, একজন রাইডার। ওর চোখের পাতা পড়ল। কপালের ঘাম বেয়ে চোখে পড়েছে। হ্যাটটা ঠেলে একটু পিছনে সরিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে রেঞ্জটা পুরো খুঁটিয়ে দেখল। নীল হৃদটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ওটা মরীচিকা হতে পারে–কিন্তু ট্রাকগুলো তা নয়।

ডোনাটের সাথে ডলার বাজি রেখে বলতে পারি ওরা, ফ্রেশ ঘোড়া নিয়ে গেছে। ওরা আমাদের শেষ করে দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছে।

মনে হচ্ছে এটা হিউবার্টের প্ল্যান, মন্তব্য করল টেরি।

রনি ড্যাশার পুব দিকে ফিরল। থ্রী এইচ মরুভূমির মধ্যে। করালের গেট খুলে সবগুলো ঘোড়াকে তাড়িয়ে দিল সে। টেরি, তুমি খেয়াল রেখো। কেউ আসলে আমাদের সাবধান করবে।

টেরি তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশে খেয়াল রেখেছে। ওর চোখ এড়িয়ে কারও আসার উপায় নেই।

হ্যারি আর শর্টি মাইক, তোমরা আমার সাথে এসো। আমরা ওদের সব খাবার এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখব যে ওরা কেউ তা খুঁজে পাবে না। গোলাগুলিও। আমরা এদের এমন অসহায় অবস্থায় ফেলব যে ওরা বুঝতেই পারবে না আঘাতটা কে হেনেছে।

খিলখিল করে হাসতে হাসতে হ্যারি আর শর্টি ওদের খাবার রাখার তাক আর স্টোররূম রেইড করল। টিনের খাবার সহ সব খাবার আর কার্তুজ ওরা পাহাড়ের একটা গর্তে লুকিয়ে রাখল। তারপর ঘোড়ার পিঠে উঠে আবার উত্তর দিকে রওনা হলো ওরা।

এক খসড়া প্ল্যান করে ফেলেছে রনি। ঘোড়াগুলোকে উত্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সম্ভবত ম্যাণ্ডালি স্প্রিংসের দিকে।

দিন শেষ হয়ে আসছে। বাতাসে এখন আর তাপ নেই। ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। উঁচু জায়গায় বাতাসটা পাতলা। আকাশে মেঘ নেই। খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে আসতে পারে।

রাইড করতে-করতে চিন্তা করছে রনি। ঘোড়াগুলোকে তাড়িয়ে দেয়ায় থ্রী এইচের লোকজনকে এখন পায়ে হেঁটেই চলতে হবে। একটা দুটো ঘোড়া যদি ওরা ধরতেও পারে, কঠিন রাইডিঙের জন্যে ওরা উপযুক্ত থাকবে না।

জনি হিউবার্ট যে কি প্ল্যান করেছে তার একটা আঁচ করতে পারছে রনি। বিকেলের আগেই ঘোড়ার আরও দুটো দল দেখতে পেয়ে ওদের পাহাড়ের দিকে তাড়িয়ে দিল।

ধোয়া! হঠাৎ বলে উঠল রজার। ওটা কি আমাদের র‍্যাঞ্চের দিক থেকে উঠছে?

তীক্ষ্ণ নজরে কিছুক্ষণ চেয়ে দেখে রনি বলল, মনে হচ্ছে ওরা আমাদের লাইন কেবিনটা জ্বালিয়ে দিয়েছে।

ইশ! গেল, বলল কিড। আমার নতুন শার্টটা ওখানে ছিল।

বাজে কথা, হ্যারি বলল। তোমার বাড়তি শার্ট কোনদিনই ছিল

না।

কী, প্রতিবাদ জানাল কিড। নিশ্চয় ছিল! তুমি কি জানবে? তুমি তো জীবনে কোনদিন বুটের সাথে মোজাই পরোনি।

ওটাই বুট পরার সবথেকে ভাল উপায়, উৎফুল্ল স্বরে বলল হ্যারি।

অনেক ঠাণ্ডা।

হ্যাঁ, তোমার মত কর্নওয়ালা মানুষের জন্যে তাই।

ওদের কথা শুনে সশব্দে হাসল রনি। এটা ওকে পুরানো বার ২০-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। রেড কনরস, জনি নেলসন, আর বাকি সবাই।

দিন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাতাসটাতে এখন আর তাপ নেই। ঠাণ্ডা। উঁচু এলাকায় বাতাসও পাতলা। দিনের শেষে খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। আকাশে মেঘও নেই।

রাইড করতে করতে রনি ভাবছে ঘোড়াগুলোকে তাড়িয়ে দেয়ায় একটা দুটো ঘোড়া ধরতে পারলেও বেশিরভাগ লোককেই এখন পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।

বিশ্রাম পেলে ওদের ঘোড়াগুলো একটু তাজা হবে বটে, কিন্তু কঠিন রাইডিঙ করতে পারবে না। ওরা জানে না রনি কি প্ল্যান করেছে।

জনি কি করতে চাইছে সে সম্পর্কে রনির একটা আন্দাজ আছে।

রনি যে বার ২০-র দু’জন রাইডারকে আসতে বলেছে এটা ওরা জানে না। ওদের দ্রুত শেষ করে ফেলতে চায় জনি। একএক করে, দু’তিনজন করে। ওদের শেষ করে ফেলবে।

দিনটা প্রায় কেটে গেছে। বাতাসে আর অপ নেই। ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। মরুভূমি এলাকায় এত উঁচুতে খুব দ্রুত সব ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

সবদিক চিন্তা করে রনি মোটামুটি আঁচ করতে পারছে জনির মতলবটা কি। কিন্তু সে জানে না সব কর্মচারীকে সে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে। লাইন কেবিনে কেউ নেই। সম্পষ্টতই কিছু গলদ হয়েছে। ওর আঁচ যদি ঠিক হয় তবে ওরা উইলো স্ট্রিংস থেকে হয় উত্তরে ম্যাণ্ডালে কিংবা দক্ষিণে পোকার গ্যাপে গেছে। ওরা যদি ম্যাণ্ডালেতে যায় ওখানে ওরা কোন তাজা ঘোড়া পাবে না। র্যাবিষ্ট হোলেও কোন ঘোড়া নেই।

ঠিক আঁচ করতে পেরেছে কিনা তা রনি নিজেও জানে না। এটাও সে জানে না ওদের প্ল্যান মত হেনরির সাথে ওর গ্যাপে যাওয়ার কথা। এটাই যে জনি হিউবার্টের প্ল্যান, এটা সে তার রাইডারদের সাথে আগেই আলাপ করেছে। জনি পুনরায় দেখা না দিলে যে বিপর্যয় ঘটতে পারে এটা সে নিজেই জানে না।

থ্রী এইচ রাইডাররা বিকেলের দিকে ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে পোকার গ্যাপে পৌঁছল। ঘোড়াগুলোকে একটা কানা ক্যানিয়নে রেখে আগুন জ্বেলে সাপার তৈরি করল। পাহাড়ের মাথা থেকে হ্যানকিনস রনি ড্যাশারের অপেক্ষায় ট্রেইলের ওপর নজর রেখেছে। পোকার গ্যাপের দিকে রনির দেখা দেয়ার সময় হয়ে এসেছে। একজন একাকী রাইডারকে আসতে দেখল হ্যানকিনস।

লোকটাকে চিনতে পারল না সে। কারণ এখনও অনেক দূরে রয়েছে সে। ওর পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। তাই পাহাড় থেকে নেমে সিলভার হিউবার্ট আর জেরি সমার্সকে সে কথাটা জানাল। আঁচ করছে ওই লোকটা হয়তো ভ্যাশার হতে পারে।

মনে হয় লোকটা ঝর্নার ধারে ক্যাম্প করবে। মন্তব্য করল সিলভার। এই অন্ধকারে সে এদিকে আসবে নাএলে মারা পড়বে।

ওর সাথে হেনরির থাকার কথা ছিল না? প্রতিবাদ করল ট্রয়।

হয়তো এমন কিছু ঘটেছে যাতে প্ল্যানটা বদলেছে। কিন্তু যাই হোক, সে আসছে, এটাই বড় কথা। চুপচাপ থাকো, ওকে ক্যাম্প করার সুযোগ দাও। ঝর্নাটা এখান থেকে কত দূরে?

আধ মাইল মত হবে, বলডি বলল। এর বেশি হবে না।

উইলোতে যাদের থাকার কথা ছিল তাদের কি হলো? জানতে চাইল ডাকি। আমরা দেরিতে রওনা হয়েছি, মনে হচ্ছে ড্যাশারের কোন বিশেষ মতলব আছে।

পিছনে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল জেরি। চুপ করো, ডাকি, তুমি বেশি চিন্তা করো। আমরা সবাই এখানে আছি না? একা ও কি করতে পারবে?

জনি এখানে নেই, বলল বলডি। এটা আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।

ওহ, এতক্ষণে সে হয়তো বাড়িতে, বলল সিলভার। সে জানবে। আমরা ট্রেইলে আছি। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।

জনি হিউবার্ট তখন কর্ন প্যাচে আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত। গরমে ক্লান্ত আর ধুলোময় অবস্থায়, ফোস্কা পায়ে সে পাহাড় থেকে কর্ন প্যাচে ফিরেছে। ঘোড়াটাকে ধরতে পারেনি।

সেলুনে দু’জন মরে পড়ে আছে। ওদের এড়িয়ে তাড়াতাড়ি নিজের জন্যে কিছু খাবার তৈরির দিকে মন দিল সে।

এর মধ্যে ফিনলে হার্টও বিশেষ একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৌঁছল পোকার গ্যাপে। জনি যা বুঝেছে, সেও সেই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। ওই দিনই সে শুনেছে স্টার সিটির কাছে নাকি জেরি সমার্স একটা মাইনে অনেক সোনা পেয়েছে। চোরাই সোনা পাচার করতে হলে আরেকটা সোনার খনি আবিষ্কার করার চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।

সোনা গলিয়ে নতুন বার তৈরি করলে সেটা চেনার কোন উপায় থাকবে না। এই উপায়ে সহজেই নতুন খনির সোনা বলে সোনা পাচার করা যাবে। খনির কথাটা বিল ওয়াটসনই বেশি প্রচার করেছে। সে বুঝেছে সারাদিন আলস্য করে শহরে কাটিয়ে এখন হিউবার্টদের সাথে যোগ দিয়ে সোনা খুঁজে পাওয়ার সময় সে পায়নি? ওর জানা মতে, জেরি স্টার সিটির ধারে কাছেও কখনও যায়নি।

রনির মত সেও বুঝেছে এটা সোনা পাচার করারই একটা ফন্দি। সোনার বার এত সহজে সরানো অসম্ভব। শহরে গুজবটা প্রধানত অ্যাডামই ছড়িয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে যদিও মনে হয় অ্যাডাম আর জেরি সমার্সের সাথে কোন রকম সম্পর্কই নেই, কিন্তু ওদের মধ্যে যে জোরাল একটা গোপন আঁতাত রয়েছে, এবিষয়ে হার্ট নিশ্চিত। এবং খ্রী এইচ আউটফিটটা ওদের হাতের পুতুল। জনি হিউবার্ট একজন ভীষণ বদরাগী মানুষ। ভাবে মনে হয় জেরি সমার্সের তোয়াক্কা সে করে না। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না সহজ হাসি আর সুদর্শন চেহারার আড়ালে অত্যন্ত চতুর একটা মগজ কাজ করছে।

কর্ন প্যাচের ফাইটের পর রাতে জেরি শহরে এসেছিল। অল্প সময়ের জন্যে সে পিছনের গলির দরজা দিয়ে অ্যাডামের অফিসে ঢুকেছিল। ওই দরজাটার ওপর নজর রেখেছিল হার্ট। মুহূর্তে সে বুঝে নিল অ্যাডাম একজন পলিটিশিয়ান এবং প্রথম শ্রেণীর একজন জোচ্চোর। সমার্স শহর ছেড়ে রওনা হলে হার্ট ওকে অনুসরণ করেছিল। ট্রেইলটা পোকার গ্যাপের।

অন্ধকারে এলাকাটা শত্রুর আভাসে যেন জীবন্ত। জনি হিউবার্ট কর্ন প্যাচের রান্নাঘরে খাবার খাচ্ছে। একই সময়ে পোকার গ্যাপ ঝর্নার ধারে ক্যাম্প করল হার্ট। ওকে দেখেই থ্রী এইচের লোকজন ওকে ড্যাশার মনে করেছিল। রনি চারজন রাইডার সহ উত্তরপশ্চিম দিক থেকে এগোচ্ছে। থ্রী এইচের লোকজন যখন অপেক্ষা করছে, জেরি সমার্স ডাকিকে বিড়বিড় করে কিছু বলে ঘোড়া নিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমে এগোল।

জেরি সমার্সের পশুর মতই আবহাওয়ার পরিবর্তন টের পাওয়ার শক্তি আছে। পারিপার্শ্বিক মানুষের মনোভাবও তাই জানতে পারে। সে বুঝতে পারছে রনি মারা গেলেও এই এলাকাটা অনেকদিন বিপজ্জনক থাকবে।

ডাকিকে সে পছন্দ করে ওর সাহসিকতার জন্যে। নিজে সে কোন নীতি বা বিবেকহীন মানুষ। একটা জিনিসই এখন চায় সে-প্রথমে সে রকিঙ কে-ও চেয়েছিল কিন্তু এখন সে সোনা ছাড়া আর কিছুই চায় না। এবং সবটা সে একাই নিতে চায়। এটাই স্বাভাবিক যে রনির চেয়ে অ্যাডামকে সামলানো ওর পক্ষে কঠিন হবে, এটা সে বুঝতে পারছে।

একবার থেমে সে পিছন দিকে চাইল। ওকে কেউ অনুসরণ করছে। হিউবার্টরা রনিকে শেষ করতে চাইছে। হয়তো পারবে। কিন্তু ওর কাছে এর বিশেষ কোন দাম নেই। সোনা পাচার করার প্ল্যান ওকে আপাতত বাদ দিতে হবে। ওকে এখন হাইডআউটে গিয়ে দামী যা কিছু আছে তা নিয়ে আসতে হবে। তারপর স্টার সিটিতে গিয়ে সোনা উদ্ধার করতে হবে। কি যে করবে এটা এখনও স্থির করে উঠতে পারছে না সে। আবার নিজের পথ ধরল সে। হিউবার্ট যে রনিকে শেষ করে ফেলতে চাচ্ছে, এতে আসলে তার কিছু আসে যায় না। এই যুদ্ধে যদি হিউবার্টরা জেতে তবে হয়তো সে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু সে কোনরকম অযৌক্তিক হত্যায় অংশ নিতে চায় না। বিশেষ করে রনির মত লোকের। কারণ এতে বার ২০-র সব নোক ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে-বার ২০-র লোকজন সম্পর্কে সে যা শুনেছে, তাতে ওর বাঁচার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। কঠিন লোক ওরা।

থ্রী এইচ থেকে তাজা ঘোড়া ধার নিয়ে রনি ড্যাশার তার লোকজনকে নিয়ে এগিয়ে চলল। উপরে এক ফালি আকাশে কিছু তারা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওদের সামনে আর পিছনে সবই অন্ধকার। ঘোড়ার খুরের শব্দ, জিনের চামড়া ককানো, আর মাঝে মাঝে ঘোড়ার নাক ঝাড়া ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।

রেঞ্জ যুদ্ধে অভিজ্ঞ রনি এত বোকা নয় যে সরাসরি পোকার গ্যাপে ঢুকবে। ঘুরে রকি ক্যানিয়ন পার হয়ে সে গ্যাপে ঢোকার প্ল্যান নিয়েছে। এদিক দিয়ে এলে কেউ ওদের অবস্থান টেরই পাবে না। গ্যাপের কোন প্রহরী ওদিকে খেয়াল করবে না। ঘণ্টাখানেক পরে সে তার নিজস্ব ক্যাম্প করল।

টেরি এগিয়ে গিয়ে এলাকাটা ঘুরে দেখে এল। ফিরে সে রিপোর্ট করল, কাছাকাছি আরও দুটো ক্যাম্প রয়েছে। আমরা উপর থেকে ওদের দিকে নজর রাতে পারি। একটা ক্যাম্প গ্যাপ স্প্রিংসের পাশে, কিন্তু ওই লোকটা আরও একটা আগুন জ্বেলেছে ওর থেকে প্রায় তিরিশ ফুট দূরে।

রনি নিজেই ওটা চেক করে দেখতে গেল। টেরি যা রিপোর্ট করেছে, ঠিক তাই। লোকটা খাবার তৈরির জন্যে কিছুটা দূরে আরও একটা ছোট আশুন জ্বেলেছে। প্রথমটা বড়। কিন্তু ক্যাম্পফায়ারের আগুনে সে নিজেকে দেখা দিতে চায় না। একই সময়ে সে বড় আগুনটার ওপরও নজর রাখতে পারবে।

ওহ, অবাক কাণ্ড, বলল টেরি। সাবধান লোক। কিন্তু লোকটা কে?

অন্য ক্যাম্পটা একটু পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

আগুনটা একটু ছোট। আগুনের আলোয় কয়েকজনের ছায়া দেখা যাচ্ছে। ওই যে, ওরা সবাই রয়েছে! ফিসফিস করে বলল হ্যারি। ওখানে নয় থেকে দশজন লোক আছে!

পরিস্থিতিটা বিচার করে দেখল রনি। লোকগুলো সতর্কতার সাথে ক্যাম্প-সাইট বেছে নিয়েছে। সম্ভবত একাকী লোকটা ওদের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। ওই লোকগুলোও জানে না আশপাশে আর কারও ক্যাম্প রয়েছে। এই অন্ধকারে কোন ফাইটিং শুরু করলে, সেটা মিত্র আর শত্রু, দুই পক্ষেরই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রনি এটা চায় না।

রিজের থেকে একটু নেমে পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে একটা সিগারেট ধরাল ড্যাশার। নিচে ওখানে রয়েছে একগাদা ঝামেলা, বলল সে। এখন কথা হচ্ছে, নিজেরা গুলি না খেয়ে পরিস্থিতিটা কিভাবে সামলানো যায়।

শর্টি মাইক বলল, দু’হাতে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ওদের আক্রমণ করি। ওরা এমন হকচকিয়ে যাবে যে একটা গুলিও ছোড়ার সুযোগ পাবে না।

হয়তো, স্বীকার করল রনি, কিন্তু আমার মাথায় আরেকটা প্ল্যান এসেছে। যদিও সেটা তেমন কিছু নয়, তবু এতে হয়তো কাজ হবে।

নিচু স্বরে প্ল্যানটার ব্যাখ্যা দিল সে। শুনতে শুনতে লোকগুলো খিকখিক করে হাসতে শুরু করল। ওদের চারজনই ফাইট-প্রিয় লোক। রকিঙ K-এর জন্যে শেষ বিন্দু রক্ত দিতেও ওরা কেউ দ্বিধা করবে না। তবে প্রত্যেক কাউহ্যাণ্ডেরই প্র্যাকটিক্যাল জোকের একটা রুক্ষ সেন্স অব হিউমার থাকে। একে ঠিক হাস্যরসের পর্যায়ে ফেলা না গেলেও এটা যে তাদের শত্রুর ওপর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা ঠিক।

প্রথমে, প্রশ্ন করল রনি, তোমাদের মধ্যে সবথেকে ভাল ইণ্ডিয়ান। কে? আসলে দুজন দরকার।

আমি, লেকার চট করে জবাব দিল। ইউটের সাথে বড় হয়েছি আমি। একটা লঙহর্ন চামড়া আমি চুরি করে আনতে পারি, গরুটা টেরও পাবে না আমি কাছে আছি।

অও! বাধা দিল হ্যারি। ওর কথা বিশ্বাস কোরো না, রনি। দিনের বেলাতেও সে একটা গুদাম খুঁজে পাবে না। গুদামের সাথে দড়ি বাধা থাকলেও না। তাছাড়া ও বেশি ছোট। কিড বেশি বড়াই করছে।

হ্যাহ্! বড়াই আমি মোটেও করছি না, প্রতিবাদ জানাল লেকার।

ঠিক আছে, তোমরা দুজনেই যেতে পারো। ক্লান্ত ঘোড়াগুলোকে নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই। গা যদি ভেজা নাও থাকে ওদের লোম শুকিয়ে শক্ত হয়ে থাকবে। চেনা কঠিন হবে না।

ঘোড়ার লাথি খেয়ে মাথা খুইয়ে এসো না যেন, উপদেশ দিল শটি। অবশ্য তোমাদের দু’জনের মাথায় কি প্রয়োজন সেটাই আমি বুঝি না।

বিড়বিড় করে শর্টির মুণ্ডুপাত করে, ওরা অন্ধকারে অদৃশ্য হলো। টেরি ওদের দিকে নড় করে বলল, আসলে কিড অত্যন্ত পটু ছেলে। হ্যারিও ভাল, তবে লেকারের তুলনায় সে কিছুই না।

রনিকে উঠে দাঁড়াতে দেখে শর্টি প্রশ্ন করল, তুমি আবার কোথায় চললে?

ঘুরে দেখে আসি ওখানে ওই লোকটা কে। তোমরা দুজন এখানেই থাকো। প্রয়োজন হলে কিড আর হ্যারিকে কাভার দেয়ার জন্যে তৈরি থেকো। আমি ফিরে এলে আমরা বাকি ব্যবস্থা নেব।

রনির সামনের ঢালু ঢালটা পাথরে ভরা, ঝোঁপ ঘাসও জন্মেছে। মাঝে মাঝে গ্রীজউড গাছ আর জুনিপার। এগুলো নিচে নামার পথে ওকে কিছুটা আড়াল দিল। অন্ধকারে নিচে নামাটা খুব কঠিন কাজ।

দ্বিতীয় আগুনটা এখন প্রায় নিতে এসেছে। কিন্তু প্রথমটায় আবার কাঠ চাপানো হয়েছে। চক্রাকারে ঘুরে সতর্ক ভাবে আগুনের দিকে এগোল রনি। বারো গজ দূরে থাকতে একটা হালকা খসখস শব্দ ওর কানে এল। আড়ষ্ট হয়ে কান পেতে অপেক্ষা করছে সে। শব্দটা আবার শুনতে পেল! ঘাস কিংবা ঝোঁপের সাথে খসখসে কাপড় ঘষার শব্দ। বাম দিকে আরও একটা শব্দ হলো। বুঝল ওর পাশাপাশি আরও কয়েকজন লোক বুকে হেঁটে আগুনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু ওরা কি ছোট আগুনটা দেখেছে? মনে হয় না। ওটা কেবল উপর থেকেই দেখা যায়। একটু একটু করে বুকে হাঁটা লোকটার কাছে সরে এল রনি। মুহূর্তের জন্যে তারার আলোয় ওর মাথাটা দেখতে পেয়ে পিস্তল দিয়ে কষে বাড়ি মারল। ঘোৎ করে একটা শব্দ করে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে থাকল লোকটা।

নীরবতা।

হঠাৎ বুনো একটা চিৎকারে সঙ্কেত পেয়ে লোকগুলো একসাথে ধাওয়া করে আগুনের দিকে ছুটে এগোল। তারপর সবাই থমকে দাঁড়াল। যেটাকে ঘুমন্ত মানুষ মনে করেছিল সেটা দুই সারি পাথরের ওপর একটা কম্বল ছাড়া আর কিছুই নয়। বোকার মত মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে ওরা।

চলে গেছে। একটা গালি দিল হ্যানকিনস। পাজি ড্যাশার আমাদের ফাঁকি দিয়েছে!

অন্ধকারে মনে মনে হাসল রনি। আগুনের আলোয় কয়েকজনকে চিনতে পারল সে। জনি হিউবার্ট, ডাকি, ড্রেনান, হ্যানকিনস, আর রেড!

আরে। ট্রয় কোথায়? চিৎকার করল হ্যানকিনস। ওর কি হলো?

সে কিছুক্ষণ আগেও আমাদের সাথে ছিল। ও করছে কি? লুকিয়েছে?

রনি অন্ধকারে মিশে দ্রুত ঢালের উদ্দেশে রওনা হলো। লোকটা যে কে তা আর জানা হলো না। সে কাছেই কোথাও আছে। পালায়নি। নইলে রনি ওকে দেখতে পেত বা তার আওয়াজ শুনতে পেত। পাহাড়ের মাথায় উঠে হ্যারি আর কিডকে ফিরতে দেখে অবাক হলো।

দু’জনেই হাসি চাপার চেষ্টা করছে।

আমরা ওদের সব ঘোড়াই নিয়ে এসেছি, জানাল হ্যারি। এখন পায়ে হেঁটে ফেরা ছাড়া ওদের উপায় নেই।

জানো, হঠাৎ বলল রনি, আমি জেরিকে দেখলাম না, কিন্তু ওর সাগরেদ ডাকি স্মিথ ওখানে ছিল।

তাহলে ওটা নিশ্চয় জেরিই ঘোড়া ছিল! সামনে ঝুঁকে এল লেকার। একটা ঘোড়া ওখানে কম দেখলাম। ঘোড়া বাঁধার দড়িটা মাটিতে পড়ে আছে।

ও কোথায় যেতে পারে? প্রশ্ন করল টেরি।

রনি ভাবছে লোকটা হয়তো অ্যাডামের সাথে দেখা করতে যেতে পারে। হঠাৎ আর একটা চিন্তা ওর মাথায় এল। সে হাইডআউটে যায়নি

তো? হয়তো সেই ওদের লীডার!

যে লোক সায়মনকে মেরেছে, পিস্তলে তার হাত খুব দ্রুত চলে। জেরির হাতও তাই। মুহূর্তে রনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল তার কি করতে হবে।

হঠাৎ রনি বলল, থ্রী এইচ এখান থেকে তিরিশ মাইলের উপরে। পায়ে হেঁটে ওরা আগামীকাল রাতের আগে র‍্যাঞ্চে পৌঁছতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তোমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভাল।

আর তুমি? প্রশ্ন করল টেরি।

আমার একটা ছোট্ট কাজ রয়েছে। তোমরা ফিরে যাও। কাল বা পরশু আমি র‍্যাঞ্চে ফিরব। হাই তুলল সে। আমাদের সবারই এখন ঘুমানো দরকার। কাল সকালে রওনা হলেই চলবে।

ভোর হতেই ওরা রওনা হয়ে গেল। রনি একা পুব দিকে এগোল। সতর্ক ভাবে এগোচ্ছে সে। কারণ সামনে কোথাও একজন গানম্যান আছে, যার পিস্তলে দক্ষতা ড্যাশারের সমান, কিংবা বেশিও হতে পারে।

কিছুদূর এগিয়ে রনি আউটল লোকটার ট্র্যাক দেখতে পেল। নিশ্চিত লোকটা কোথায় যাচ্ছে তা সে জানে।

আরও এগিয়ে আরেকটা ঘোড়ার ট্রাক ওর চোখে পড়ল। ঘোড়ার খুরে নাল নেই। কিন্তু আরোহী কোন ইণ্ডিয়ান নয়।

তাহলে লোকটা কে? ক্যানিয়নের সেই রহস্যময় ক্যাম্পার? একজন বন্ধু, নাকি শত্রু?

<

Super User