বিল ওয়াটসন কর্ন প্যাচের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ওর আগের জীবন সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। তবে মনে হয় আর সবকিছুর সাথে, নিষ্ঠুর খুন, দাঙ্গা, আর বিভিন্ন রকম ডাকাতিতে একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীও সে করেছে।

খালি পায়ে সে ছয় ফুট চার ইঞ্চি উঁচু। ওজন, দু’শো ষাট পাউণ্ড। একটা পিস্তল সে কোমরে ঝুলায় বটে, কিন্তু ওর প্রধান অস্ত্র হচ্ছে নল কেটে ছোট করা একটা শটগান। বাটটা বদলে ওটাকে পিস্তল গ্রিপ করে নেয়া হয়েছে। ওর এই অস্ত্রটাই আশপাশের সবাইকে সন্ত্রস্ত করে রাখে। পিস্তলের গুলিতে দেহে একটা ফুটো হবে। জায়গা-মত না লাগলে প্রাণের আশঙ্কা নেই। কিন্তু কাছে থেকে শটগানের গুলিতে দেহ দু’টুকরো হয়ে যেতে পারে।

বছর পঞ্চাশেক আগে এক ভবঘুরে মাইনার এখানে এসে, একসারি কর্ন দেখতে পায় ওয়াটার হোলের চারপাশে। বোঝা যায় কেউ এই শস্য বুনে কিছুদিন ভোগও করেছে–কিন্তু তারপর হয়তো নিজের কাজে কোথাও চলে গেছে, অথবা কোন বিজন এলাকায় মারা পড়েছে। সুযোগ পেলে কর্ন (ভুট্টা) খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। কিন্তু কাটা না হলে দানাগুলো মাটিতে ছড়ায় এবং আরও কর্ন জন্মায়।

কর্নে আকৃষ্ট হয়ে মাইনার একটা ছাপরা তৈরি করে ওখানেই থেকে গেল। ঝর্নায় কিছু সোনাও পেল। কপাল-গুণে ওয়্যাগন ট্রেইন থেকে হারানো দুটো গরুও মিলল। অল্পদিনের মধ্যেই বেশ একটা সচ্ছল জীবন যাপন করা সম্ভব হলো। আরও মাইনার এল, কিছুদিন থাকল, তারপর তাদের ছাপরা ছেড়ে অন্যদিকে কোথাও চলে গেল। পরে হঠাৎ করেই কিছুদিনের জন্যে এলাকাটা জমজমাট হলো। একটা সেলুন আর চলনসই একটা হোটেলও তৈরি হলো। ছাপরার মলিকানা প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতিমাসে বদলাচ্ছে। কোন লেখা-পড়া নেই–যে থাকছে সেই মালিক, এই রকম ব্যবস্থা। তারপর বিল ওয়াটসন এল, এবং থাকল।

আদি মাইনার বাসিন্দা অদৃশ্য হলো। দুটো গরু এখন বেড়ে বারোটা হয়েছে। ওগুলোর মালিকানা বিলের নামে লিখে দেয়া হয়েছে। শটগানের হুমকি দেখিয়ে কর্ন প্যাচের পুরো মালিকানাই সে নিয়ে নিল। কেউ কোন বিবাদ বা প্রতিবাদ করলে বুটহিলে তাদের জন্যে স্থায়ী ব্যবস্থা হয়।

এর কিছুটা রনি জানে। কিন্তু আরও অনেককিছুই সে আগামীতে জানবে।

বিল যেখানে বসে সেখান থেকে প্রত্যেকটা ছাপরার ওপরই সে নজর রাখতে পারে। সে নিজেই নিজের সিকিউরিটি এজেন্ট। কোথায় কি চলছে সবই সে জানে। ওকে ফাঁকি দিয়ে কারও কিছু করার উপায় নেই।

লোকজন দুই রকম ধারায় কয়েকবার চেষ্টা করে দেখেছে। প্রথমটা চারবার চেষ্টা করা হয়েছে–ফলে চারটা কবর ওদের জন্যে খোড়া হয়েছে বুট হিলে। পরে আরও আরও দু’বার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল ভাল হয়নি। সাতটা বাড়তি কবর খুঁড়তে হয়েছে ওদের জন্যে। আরও চারজনকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে, যারা বিল ওয়াটসনের ক্ষমতায় সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। প্রত্যেকেই একক ভাবে বুঝতে গিয়েছিল–কিন্তু সবার একই পরিণতি ঘটেছে। বিল ওয়াটসন সীসা দিয়ে সবার সন্দেহের অবসান ঘটায়।

সেলুনে জনাবারো লোক অলসভাবে খুবই অল্প পয়সায় পোকার খেলছে। বিল ওয়াটসন ঝিমাচ্ছে বারে। মাঝেমাঝে জাগছে। একবার জেগে সে খেয়াল করল একজন আরোহী সাদা স্ট্যালিয়নে চড়ে এগিয়ে আসছে। আরোহীর মাথায় একটা কালো হ্যাট, কালো প্যান্ট উঁচু বুটের ভিতরে গোজা। পরনে কালো গেঞ্জি। দু’পাশে দুটো পিস্তল, ফিতে দিয়ে ঊরুর সাথে বাধা।

রাইফেলের খাপে উইনচেষ্টার দেখে বিভ্রান্ত হলো বিল ওয়াটসন। ওখানে যদি ৫০ শাপর্স থাকত, তাহলে ওকে রনি ড্যাশার বলেই সন্দেহ করত সে।

বিল ওয়াটসন মানুষকে জিনিসের সাথে বিচার করে চিনতে অভ্যস্ত। ড্যাশার যে শার্পস ভালবাসে সেটা প্রতি কাউক্যাম্প আর ক্যাটল ড্রাইভের সবারই জানা আছে। হাড়ের হাতলওয়ালা কোল্ট দেখেই বিল বুঝল লোকটা ওগুলোর ব্যবহার জানে। এই লোকটা কর্ন প্যাচে এসেছে, যে জায়গা আউটলদের জন্যে নিরাপদ, আর আইনের অফিসারদের জন্যে নিশ্চিত মৃত্যু। সুতরাং এই লোকটা নিশ্চয় আউটল। তবু, বিল ওয়াটসন সতর্ক রইল।

দরজা ঠেলে রনি লম্বা কামরাটায় ঢুকল। লোকগুলো মুখ তুলে তাকাল, তারপর যে যা করছিল সেদিকে মন দিল। ওয়াটসনই সব সামলাবে। সবসময়েই সে তা করেছে। ওদের মাথা ঘামিয়ে কোন লাভ নেই।

পানি, প্রস্তাব রাখল রনি। হাত বাড়িয়ে বারের পিছন থেকে একটা গ্লাস নিয়ে পানি ভরে ড্যাশারের দিকে ঠেলে দিল বিল। পানিটা চেখে দেখে পুরোটা শেষ করে ফেলল। ভাল, বলল সে।

ঝর্নার পানি, গর্বের সাথে বলল বিল। কোন ক্ষার নেই।

যারা কম কথার মানুষ, বিল ওয়াটসন তাদের পছন্দ করে। ঠাণ্ডা নীল চোখ ওকে যাচাই করে দেখছে। অস্বস্তি বোধ করছে ওয়াটসন। এটা ওকে কিছুটা বিচলিত করে তুলল, কারণ নিজের ওপর তার এতটা আস্থা আছে, যে কোন কিছুতেই অস্বস্তি বোধ করে না।

পোকার খেলোয়াড়দের দিকে তাকাল ড্যাশার। ড্র পোকার খেলোয়াড় কেউ আছে?

বিলের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কয়েকজন। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে খেলি।

খেলাটা আমার পছন্দ, স্বীকার করল রনি। তবে একটু ফাস্ট গেমই আমি ভালবাসি।

টুলটা একটু এগিয়ে আনল বিল। আমি একটা নতুন প্যাকেট খুলব। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। ঘোড়াটাকে ওখান থেকে সরিয়ে নেয়া ভাল। বাইরে খুব গরম।

ঘুরে, সেলুন থেকে বেরিয়ে গেল ড্যাশার। ওয়াটসন চেয়ে আছে। ওর মনে হচ্ছে ওই লোকটাকে তার চেনা উচিত। দারুণ বিরক্তিতে মাথা নাড়ল সে। পরে মনে পড়বে। ঘোড়াটাকে হটিয়ে না নিয়ে, রনিকে ওর পিঠে চেপে বসতে দেখে হাসল। রাইডার, সন্দেহ নেই।

আস্তাবলটা লম্বা, প্রশস্ত, আর ভিতরটা বেশ ঠাণ্ডা। ঘোড়াটাকে একটা স্টলে নিয়ে, পিঠ থেকে জিন নামিয়ে খড় দিয়ে ওর গা ডলে দিল। তারপর ওকে কিছু চানা খেতে দিয়ে, দ্রুতপায়ে এগিয়ে আস্তাবলের সবগুলো ঘোড়া চেক করে দেখল। স্টেজ ডাকাতিতে দেখা ঘোড়াটা এখানে নেই। হয়তো কর্ন প্যাচে আরও আস্তাবল আছে, অথবা পাহাড়ে কোন গুপ্ত জায়গা আছে যেখানে ঘোড়া রাখা সম্ভব। ফিরে চলল সে। রোদে-পোড়া রাস্তা পার হয়ে সেলুনে গিয়ে ঢুকল।

বিল মুখ তুলে তাকাল। তুমি না খেলতে চেয়েছিলে? খেলবে?

নিশ্চয়। প্রথম রাউণ্ড ব্লাই?

আমিও তাই খেলি। টুল থেকে উঠে বার ঘুরে একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসল সে। চেয়ারটা বিশাল, বোঝাই যায়, ওর নিজের আরামের জন্যে বিশেষ ভাবে তৈরি। একটু ঘুরে অন্যান্য লোকজনের দিকে ফিরল। তোমাদের কেউ যোগ দিতে চাও?

কঠিন চোখ আর কালো চুলওয়ালা একটা লোক মুখ তুলে চাইল। তোমার সাথে খেলায় আমি নেই! তুমি যেমন ফাস্ট খেলো তাতে আমার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে আসে!

শব্দ করে হাসল ওয়াটসন। ওই লোক খুব সাবধানী খেলোয়াড়।

সরু চেহারার একটা লোক, অস্থির, বিরক্তিভরা মুখ, এগিয়ে এল। নামটা ট্রয়। আমি খেলব।

আরও দুজন, একজন মোটাসোটা কাউবয়, হ্যানকি, হাতের নখগুলো ময়লা আর ভাঙা, কঠিন সতর্ক চোখ, এবং লম্বা, পাকা চুলওয়ালা লোক, কালো চোখ আর মসৃণ হাত। রাইণ্ড ওপনার? পাকা চুলের লোকটা হাসল। ওটা ক্ষতিকর হতে পারে। রক্তরাঙা ট্রেইল

বিল বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে লোকটাকে দেখাল। নাম ড্রেনান, তোমার?

রেড রিভার রেগান। হাসল ড্যাশার।

সবাই কেটে হাই কার্ড বাটবে? সবার দিকে তাকাল সে। কিন্তু সম্মতির জন্যে নয়, কে কোথায় বসেছে মনে গেঁথে নেয়াই উদ্দেশ্য। রেড রিভার রেগানের কাছে নোটের একটা মোটা বাণ্ডিল দেখা যাচ্ছে। বিল আজ ওকেই টার্গেট করবে। হাবা লোক আজকাল কমই পাওয়া যায়।

রনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেলুনকীপারের পটু হাতে তাস শাফল করা সে লক্ষই করছে না। তাসের প্যাকেটটা রনির দিকে বাড়িয়ে দিল বিল। কেটে আট তুলল সে। ড্রেনান ছয় তুলল। হ্যানকিনস আর ট্রয় দুজনেই দশ তুলল, আর বিল তুলল সাহেব।

আর একবার তাস ফেঁটে ট্রয়ের সামনে রাখল। কাটা হলে বিল বাটল। দ্রুত এগিয়ে চলল খেলা। কয়েকটা ছোট পট (বা কিটি) জিতল রনি। ড্রেনান আর বিল জিতছে। ট্রয় আর হ্যানকিনস দু’জনেই হারছে। ট্রয় ভাল তাস পাচ্ছে না বলে গজর-গজর করছে। রনির পোকারের দক্ষতা, টেক্স ইউয়াল্টের ট্রেইনিঙের ফল। অসাধারণ পোকার খেলোয়াড় র্টেক্স। সে যা জানে না তা কেউ জানে না। বিল ভালই, তবে টেক্সের তুলনায় কিছুই না। রনি সাবধানে খেলে চলল, একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ সুযোগটা এল।

ড্রেনান আর হ্যানকিনস দুজনেই বসে গেছে। ট্রয়, বিল, আর রনি খেলায় রয়েছে। বিল রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে নিজের তাস দেখল। ওয়াটসন অলস ভাবে চোখ তুলে ট্রয়ের দিকে তাকাল। একই সাথে ওর মুঠো করা বাম হাতের বুড়ো আঙুল উপরে উঠল।

রনির চোখের কোনে ইশারাটা ধরা পড়ল। মনে মনে হাসল সে।

তাহলে এই ব্যাপার? ওরা রেইজ করতেই থাকবে? ঠিক আছে, ওদের সাথে সেও থাকবে এবার। নিজের ফুল হাউসের দিকে আর একবার তাকাল সে-তিনটে কুইন আর দুটো ছয়। তিনটে নীল চিপ মাঝখানে রেখে বিল বলল, তিরিশ রেইজ করলাম।

হ্যানকিনস ট্রয়ের দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে রনির দিকে তাকাল। ঠোঁট চাটল ট্রয়। তোমার তিরিশ এবং আরও দশ।

একবার মাঝখানে চিপসের স্তৃপটা দেখল রনি, তারপর চারটে নীল চাকতি কিটিতে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, আছি।

বিলের কাছ থেকে ট্রয়কে দেয়া গোপন সঙ্কেত রনির তীক্ষ্ণ চোখকে ফাঁকি দিতে পারল না। চারটে রাজা, শান্ত স্বরে বলল বিল। তারপর তাসগুলোকে একত্র করে টেবিলের ওপর চিত করে রাখল–কেবল উপরের তাসটা দেখা যাচ্ছে।

ট্রয় তাসগুলো ছড়াবার জন্যে দ্রুত ডান হাত বাড়াল, কিন্তু রনির বাম হাত তার আগেই বিলের তাসের ওপর পৌঁছে গেছে। চট করে তাসগুলো ছড়াল সে। মাত্র চারটে তাস দেখা যাচ্ছে এবং কেবল তিনটে কিঙ।

ট্রয়ের মুখটা কুৎসিত হয়ে উঠল, এবং বিলের চোখ কঠিন হলো। রনি কেবল হাসল। তোমার একটা তাস নিশ্চয় হাত ফসকে নিচে পড়ে গেছে, বিল। এখানে আমি কেবল তিনটে সাহেব দেখতে পাচ্ছি।

গলা লম্বা করে টেবিলের তলাটা দেখল ওয়াটসন, তারপর নিচু হয়ে একটা তাস তুলে আনল। ওটা একটা তিন। ওর মুখ লাল হলো। ভুল, বলল সে, আমি নিশ্চিত ভেবেছিলাম আমার চারটে কিঙ আছে।

কাঁধ উঁচাল রনি। ভুলে যাও-ওকিছু না। ভুল আমাদের সবারই হয়। দেখা যাচ্ছে নিরীহ স্বরে সে বলল, আমার ফুল হাউসই পট জিতেছে।

ট্রয় তার হাত সরিয়ে নিয়েছে। চিপসগুলো টেবিলের মাঝখান থেকে শান্তভাবে নিজের দিকে টেনে নিল ড্যাশার। চতুর্থ সাহেবটা ট্রয়ের হাতে ছিল। ছড়াবার সময়ে ওটাও সে বাকিগুলোর সাথে মিশিয়ে দিত। একটা পুরানো চালাকি।

এবার রেড রিভার রেগানের ডীল। অপটু হাতে তাস জড়ো করে নিজের দিকে নিয়ে এল সে। ডিসকার্ড করা তাসের ভিতর দুটো টেক্কা ছিল। কৌশলে ওগুলোকে নিচে নিয়ে এল। ফেঁটার সময়ে আরও একটা টেক্কা ওর চোখে পড়ল। দুই শাফলের পরে ওটাও নিচে চলে গেল। টেক্কা তিনুটে হাতের তালুতে লুকিয়ে রেখে বিলকে বাকি তাস কাটতে দিল। কাটার পর টেক্কাগুলো আবার নিচেই স্থান পেল। শান্ত ভাবে পাঁচ হাত বাটল। বটম ডীল করে নিচে থেকে দুটো টেক্কা সে নিজে রাখল।

ড্রেনান নিজের তাস দেখে ওগুলো ছুঁড়ে একপাশে ফেলে দিল। হ্যানকিনস পাঁচ ডলার বাজি ধরল। ট্রয় ওটাকে বাড়িয়ে দশ করল। এবার দেখব এটা তোমার কেমন পছন্দ হয়, রেড! ওই দশের সাথে আরও চল্লিশ।

রনি নিজের তাসের দিকে চেয়ে একটু ইতস্তত করে পঞ্চাশের ওপর আরও বিশ বাড়াল। হ্যানকিনস নিজের তাস ভঁজ করে রেখে দিল। ট্রয় আরও বাড়াল, বিল বাড়াল আবার। আরও এক রাউণ্ড স্টেক বাড়ানো চলল।

ড্র এর সময় বিল নিল দুই তাস এবং ট্রয় আর রনি দু’জনেই তিনটে করে তাস নিল। নিজে যে তিনটে নিল তার মধ্যে নিচের বাকি টেক্কাটাও ছিল।

ট্রয় দুটো নীল কাউন্টার দিয়ে শুরু করল। বিল দুটোর সাথে আরও তিনটে যোগ করল। রনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ওদের দিকে চেয়ে হাসছে। ওর কঠিন নীল চোখ দুটোও চোখের গভীরের বরফ ভেদ করে হাসছে। ড্রেনান হঠাৎ পা সরিয়ে বিলের দিকে তাকাল। কিন্তু বিশাল লোকটা রেডের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। হ্যানকিনস চুপ করে চেয়ারের হাতলে হাত রেখে বসে আছে। রনিকে দেরি করতে দেখে নার্ভাস ভাবে দেহ মোচড়াচ্ছে ট্রয়, আর সেইসঙ্গে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে রেড রিভারের দিকে চেয়ে আছে।

হ্যানকিনসের গানগুলো চেয়ারের হাতলের নিচে, ঝট করে বের করা অসম্ভব খেয়াল করেছে ড্যাশার। ড্রেনানের কাছে দৃশ্যত কোন গান দেখা যাচ্ছে না। ঝামেলা এলে সে পক্ষ নেবে কি না সেটা বিবেচনার বিষয়। লড়াই বাধলে ট্রয়ই সবথেকে প্রথম অ্যাকশনে যাবে। আর, বিল হচ্ছে সবথেকে শক্ত লোক।

এসো আমরা পট লিমিটে খেলি। হাসিমুখে বলল রেড। উত্তেজনা থাকলে খেলায় মজা আসে না!

তিক্তভাবে গাল দিল ট্রয়-মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল ওয়াটসন। নিজের হাতটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চেয়ারটাকে একটু পিছিয়ে নিল। প্রয়োজন হলে রেডকে সে কাভার করতে পারবে।

কৌতূহলী চোখে ওপাশে বসা লোকটাকে বিল ওয়াটসন খুঁটিয়ে দেখছে। হতে পারে গত হাতের খেলায় ওদের চালাকিটা রেড রিভার আঁচ করেছে। তাই যদি হয় তবে তাসে চুরির ব্যাপারে কিছুটা জ্ঞান অন্তত তার আছে। তাস বিছানোয় ট্রয়কে হারানো, হয়তো একটা ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সে নিঃসন্দেহ নয়, আর অনিশ্চয়তা তার পছন্দ নয়। অন্যের মধ্যেও না, আর নিজের মধ্যে হলে তো আরও খারাপ।

পট লিমিট, মন্তব্য করল সে, অনেক টাকার ব্যাপার হয়ে দাড়াতে পারে। তোমার কাছে তা আছে?

জবাবে পকেট থেকে নোটের একটা মোটা বাণ্ডিল বের করে সামনে রাখল। তুমি যতই বাজি ধরো আমি তা কাভার করতে পারব, বিল, বেপরোয়া ভাবে বলল সে। তুমি যত খুশি উঁচুতে উঠতে পারো।

একটা কাউহ্যাণ্ডের রোজগারের তুলনায় অনেক টাকা, মন্তব্য করল বিল।

আমি ভালই কামাই। বিশদ ভাবে হাসল রনি।

এই রেড রিভার রেগানই তাস বেঁটেছে। কিন্তু যেভাবে সে তাস গুছিয়ে শাফল করেছে তাতে মনে হয় খেলাটা সে নতুন শিখেছে। আর লোকটা যদি গ্যাম্বলার হয়–জীবনে অনেক পেশাদার জুয়াড়ি সে দেখেছে-রেডকে তেমন মনে হয় না।

না, বিল বলল, পট লিমিটের প্রয়োজন নেই। পটে যা আছে তার ওপর আমি আরও পাঁচশো ডলার বাজি ধরছি। তোমার চেয়ে বড় তাস আমার আছে।

‘শশা, বলল রনি, এখনও হাসছে। নিজের তাসগুলো উল্টে টেবিলের ওপর ছড়িয়ে দিল–চারটে টেক্কা। তিনটে নিচের থেকে আর একটা কপাল গুণে।

বিস্ফারিত হলো বিলের চোখ। চেয়ার ছেড়ে অর্ধেকটা উঠেছে, গলার শিরাগুলো ফুলে গেছে। পাজি শয়তান!

পিস্তল বের করার জন্যে হাত বাড়াল ট্রয়। লাফিয়ে পিছিয়ে গেল রনি। ওর চেয়ারটা উল্টে পড়ল। কোল্ট দুটো উঠে এসেছে ওর হাতে।

পিস্তলের বাটের ওপরই ট্রয়ের হাত জমে গেল। ওয়াটসন জায়গাতেই আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ড্যাশার হাসল। ঘটনাটা কি? তোমরাও কি চারটে টেক্কা নাকি? পিস্তল দিয়ে ইশারা করল রনি। পিছিয়ে যাও!

বাম হাতের পিস্তলটা খাপে ভরে বিলের তাসগুলো উল্টে দিল। তারপর হাসল। তোমার টেক্কাগুলো নতুন ডেক থেকে এসেছে। সমান সমান ডেক ব্যবহার করা উচিত ছিল তোমার। খেলা তাস আর নতুন তাসের তফাত সহজেই ধরা যায়। শান্তভাবে টাকাগুলো পকেটে ভরতে শুরু করল সে। সরি, খেলাটা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল, কিন্তু তোমরা রা খুলতে শুরু করলে। আমিও জবাব দিলাম। নড় করে নিজের তাসগুলোর দিকে ইঙ্গিত করল সে। চারটে বুলেট। এর বেশি ব্যবহার করতে আমাকে বাধ্য কোরো না।

রাগে ফুঁসছে ট্রয়, বিল ওয়াটসন নিজেকে সম্পূর্ণ সংযত রেখেছে, কেবল ওর চোখে রাগের আভাস। হ্যানকিনস পিস্তল ড্র করতে গিয়ে, ওই অবস্থান থেকে সেটা মারাত্মক হবে বুঝে জায়গাতেই বসে আছে। কেবল ড্রিনানের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, ব্যাপারটাকে যেন উপভোগই করছে সে।

খেলাটা উপভোগ করলাম, নিচু স্বরে বলল রনি। তোমরা চুচাপ বসে একটু বিশ্রাম নাও, আমি বিদায় নিচ্ছি।

এক মিনিট! বিল নিজের চেয়ারে আয়েশ করে বসেছে। যাবে কেন? আমার ধারণা তুমি নিজেরটা নিজেই সামলাবার ক্ষমতা রাখো, তাছাড়া তোমার অভিজ্ঞতাও প্রচুর। পিস্তলের ড্র দেখেই বুঝেছি ওগুলোর ব্যবহারও তুমি ভালই জানো। পিস্তল এত ফাস্ট ড্র করতে আমি আর কাউকে দেখিনি–একজন ছাড়া। কাজ করবে?

রনি পকেটের টাকার দিকে ইঙ্গিত করল। এত থাকার পরেও? তোমার মাথা খারাপ হয়েছে?

ওটা চিকেন ফীড। এখানে আশপাশে প্রচুর আছে।

বস-ট্রয় প্রতিবাদ জানাল। শাট আপ! বিরক্ত হয় ধমক দিল বিল। তোমার মত একজন শক্ত মানুষকে আমি অনেক কাজে লাগাতে পারব।

রেড রিভার রেগান কাঁধ উঁচাল। বিজনেসের আলাপে আমি সব সময়েই আগ্রহী।

তাহলে ওখানে একটা বাঙ্ক বেছে নাও। নো হার্ড ফিলিঙস। সকাল পর্যন্ত থাকো। সকালে কথা হবে।

নিশ্চয়। ঠাণ্ডা মাথায় পিস্তলটা খাপে ভরল ড্যাশার। ট্রয়ের চোখ দুটো জ্বলছে। তোমাকে আমি হত্যা করব! বলল সে। তুমি আমার সামনে দাঁড়াতেই পারবে না! রক্তরাঙা ট্রেইল

শান্ত স্বরে রনি বলল, মরতে চাইলে যেকোন সময়ে ড্র করতে পারো।

ট্রয়ের হাতের আঙুল পিস্তলের ব্যাটের কাছে কঁপছে। এক ঝটকায় পিস্তল বের করার পূর্বাভাস। এমন লোক আগেও দেখেছে রনি। এরা খুনের নেশায় এমনই বিভোর যে আর কিছুই তাদের এই ভাবটা মুছে দিতে পারে না।

ট্রয়! গালি দিয়ে ধমক দিল ওয়াটসন। বোকার মত কাজ কোরো! এসব বন্ধ করো!

রোষের সাথে থুতু ফেলে কামরা ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে। ওর যাওয়া চেয়ে দেখল উ্যাশার, তারপর কাঁধ উঁচাল। কিন্তু ওর মুখ চিন্তামগ্ন।

রনি বুঝতে পারছে, সে বা তার টাকা এখানে সকাল পর্যন্ত কিছুতেই নিরাপদ থাকতে পারে না। কিন্তু ঝামেলা ছাড়াই এখান থেকে সে বেরিয়ে পড়তে চায়। বিল ওয়াটসনের দিকে ফিরল সে। বলল, ঠিক আছে, কাল সকালে দেখা হবে। আমার ঘোড়াটা কেমন আছে খবর নিয়ে আমি ঘুমোতে যাব।

বেরিয়ে এল সে। ছায়ায় দাঁড়িয়েছে। তাকিয়ে দেখল লিভারি আস্তাবলের দরজার সামনে কিছু নড়ল। কিন্তু ও ট্রয় নয়। রাস্তা পার হলো রনি। একজন বিশাল লোক ওকে পেরিয়ে গেল। লোকটাকে খুব পরিচিত মনে হলো ওর। লোকটা যে ওর দিকে ফিরে তাকিয়েছে এটা খেয়াল করল না সে। দ্রুত আস্তাবলে গিয়ে টপারের ওপর জিন চাপিয়ে, মাথার সাজ পরিয়ে ওকে তৈরি করল।

ঘোড়াটাকে হটিয়ে নিয়ে আস্তাবলের দরজায় এসে দাঁড়াল রনি। বিশাল লোকটা সেলুনে ঢোকার আগে সিঁড়ির ওপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করল। বুঝতে পারছে না ওর পরিচয় ফাঁস হয়েছে কি না। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে।

হাওডি, বিল বলল সে। হ্যাটটা পিছন দিকে ঠেলে দিল। ও এখানে কি করছিল? বিল ওয়াটসনকে প্রশ্ন করল সে।

কেন, তুমি ওকে চেনো? হেনরির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওয়াটসন।

চিনি? ফেটে পড়ল হেনরি। অবশ্যই চিনি! ও রকিঙ কে-এর নতুন ফোরম্যান। রনি ড্যাশার।

কি! প্রথমে ওয়াটসনের মুখটা বিবর্ণ হলো, তারপর প্রচণ্ড রাগে লাল হলো। কি বললে? রনি ড্যাশার?

একটা গালি দিয়ে নিজের অস্ত্র তুলে নিল বিল। ওর পিছনে আরও দু’জন লোক বেরিয়ে এল। ওরা বাঙ্ক হাউসের দিকে ছুটল। কিন্তু ওখানে কেবল তার নিজের লোকজনই রয়েছে। দ্রুত আস্তাবলে পৌঁছল ওরা, সাদা ঘোড়াটা ওখানে নেই!

ওয়াটসন খেপার মত চিৎকার করছে, কিন্তু হেনরি তার সিগারেট ধরাল। উত্তেজিত হয়ে কোন লাভ নেই, বলল সে। সে চলে গেছে। আর ওকে যদি চেনো, তাহলে জানবে, এখন সারারাত ঘুরলেও ওকে খুঁজে পাবে না তুমি!

যখন হেনরি ওখানে ওয়াটসনের সাথে কথা বলছিল ততক্ষণে ঘোড়াটাকে ক্যানিয়ন ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ল রনি। কিন্তু সে রকিঙ কে-এর পথ না ধরে, দক্ষিণে স্টেজ কোচ পথের দিকে এগোল। স্টেজ হোল্ড আপের জায়গাটা আরেকটু ভাল করে দেখার এটাই ভাল সময়। কর্ন প্যাচে যাওয়ায়, জুয়ায় জেতা ছাড়াও ওর আরও কিছু লাভ হয়েছে। সে জেনেছে ওখানকার কে কেমন।

বিল ওয়াটসন চতুর, সক্ষম, এবং ভয়ানক রকম বিপজ্জনক। ট্রয় সাইড ওয়াইণ্ডার সাপের মতই বিষাক্ত। ওকে কোন মতেই বিশ্বাস করা যায় না। হ্যানকিনস হচ্ছে ওয়াটসনের পর সবথেকে শক্ত লোক। আর ড্রেনান-ড্রেনান অনিশ্চিত মানুষ।

হিউবার্টরা চায় রকিঙ কে, কর্ন প্যাচের ওরা চায় গরু, আর স্টেজ ডাকাতরা নিয়েছে সোনা। এই তিনটের মধ্যে কোন যোগাযোগ আছে। বলে মনে হচ্ছে না।

অন্ধকার হয়ে এল, কিন্তু আকাশের একটা-দুটো তারা দেখে দিক চিনতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না ওর। দক্ষিণে এগোলে একসময়ে স্টেজ ট্রেইলে সে নিশ্চয় পৌঁছবে। পোকার গ্যাপের কাছে একটা ছোট্ট গর্তে রাত কাটাবার জন্যে ক্যাম্প করল। আগুন জ্বেলে কিছু খাবার আর কফি তৈরি করে, খেয়ে, আগুন নিভিয়ে শুয়ে পড়ল সে।

সম্পূর্ণ নীরবতা হঠাৎ রনিকে জাগিয়ে দিল। এমনকি ঝিঝি পোকাগুলোও স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাতাস বইছে না। ঝোঁপের ভিতর কোন জীবজন্তুর নড়াচড়ার আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে পুরো এলাকাটাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ডান হাতে পিস্তলের হাতলটা ধরে টপারের দিকে তাকাল সে। আবছা দেখা যাচ্ছে ওকে। ঘোড়াটা কান খাড়া করে দূরে কোন কিছুর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আকাশের দিকে চেয়ে সে বুঝল রাত তিনটে হবে।

পিস্তল বের করে, হাতলটাকে আঁকড়ে ধরে গড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে এল। কিছুই নড়ছে না, রাত স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন কোন ভয়ানক ঘটনার আশঙ্কায়। কোল্টটাকে খাপে ভরে বুট পরার কথা ভাবছে, এই সময়ে দূর থেকে একটা গুড়গুড় আওয়াজ এল। কেউ যেন মাইনে ডাইনামাইট ফাটাচ্ছে। শব্দটা কাছে, আরও কাছে আসছে।

রনির পায়ের তলায় মাটি কাঁপছে। তারপর ধাক্কা দিল। টপার নাক ঝাড়া দিয়ে একটু পিছিয়ে গেল। ওর ডান দিকে শব্দ তুলে একটা পাথর গড়িয়ে পড়ল। তারপর সব চুপ। অস্থির হয়ে উঠেছে টপার। কাছে গিয়ে ঘোড়াটাকে শান্ত করল রনি। আদর করে কাধ চাপড়ে বলল, ওটা একটা ভূমিকম্প, বাছা, ভয়ের কিছু নেই, ওটা শেষ হয়েছে। এখন দেখি আমরা আরও দু’ঘণ্টা ঘুমাতে পারি কি না।

দিনের আলো ফোঁটার আগেই উঠল রনি। চারপাশ ভাল করে একবার দেখে একটা ছোট্ট আগুন জ্বেলে নিল। জানে সে এখন প্রতিপক্ষের এলাকায় রয়েছে। স্টেজ ডাকাতের গোপন আস্তানা এখানে যেকোন জায়গায় হতে পারে। এখন থেকে ওকে খুব সাবধানে এগোতে হবে। জিনে চেপে রওনা হলো। যতদূর সম্ভব ওয়াশ বা নিচু জমি দিয়ে চলছে। রিজ বা পাহাড়ের চূড়া এড়িয়ে চলছে।

হঠাৎ থেমে দাঁড়াল সে। মাটিতে টাটকা ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা করে বুঝল, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগের ছাপ। ওর মধ্যে হেঁটে সরু করা খুরের ঘোড়াটাও রয়েছে। ওটা স্টেজ ডাকাতির সময়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। একেই বলে কপাল! ওটার সাথে বাকি তিনটে ট্রাকও সে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল। কারণ ভবিষ্যতে হয়তো ওই বিশেষ ঘোড়াটা নাও থাকতে পারে।

হ্যাটের তলা দিয়ে পুরো এলাকাটা খুঁটিয়ে দেখল রনি। ওর অভ্যস্ত নীল চোখ দুটো মরুভূমি বা রেঞ্জে কোথায় কি দেখতে হবে জানে। এবং যেকোন অস্বাভাবিক কিছু সে মুহূর্তেই চিনতে পারে। দেখা শেষ হলে আবার ঘোড়ার পিঠে উঠল। কিন্তু সরাসরি ট্যাক অনুসরণ না করে মোটামুটি ওই দিকেই এগোল। পথে আরও একবার ওই ট্রেইল পার হলো সে।

ট্রেইলটা পাহাড়ের একটা সরু খাজে ঢুকেছে। ওই পথে না এগিয়ে রিজের ধার ধরে বাইরে দিয়ে আধ মাইল গিয়ে সে থামল। জুনিপার গাছের সাথে ঘোড়াটাকে বেঁধে রিজের ওপর উঠল। উপরে উঠে মাথা থেকে হ্যাটটা খুলে ওপাশে উঁকি দিল।

সরু পাথুরে তলায় একটা ক্ষীণ ট্রেইল দেখতে পেল। ওটা এঁকেবেঁকে এগিয়ে একটা সরু উপত্যকায় পৌঁছেচে। ওখানে পাথর, মাটি, আর কাঠ দিয়ে তৈরি কয়েকটা অস্থায়ী কেবিন দেখা যাচ্ছে। পোল দিয়ে আটকানো একটা করালে তিনটে ঘোড়া রয়েছে। ওর চোখের সামনেই একটা কেবিন থেকে একজন লোক বেরিয়ে, বালতি থেকে পানি ফেলে খালি বালতি নিয়ে পিছন দিকে পাথরের আড়ালে অদৃশ্য হলো। কিছুক্ষণ পরেই ওকে পানি ভরা বালতি নিয়ে কেবিনে ঢুকতে দেখা গেল। ট্রেইলটা কেবিন ছাড়িয়ে এঁকেবেঁকে আরও এগিয়ে গেছে।

ঘোড়ার পিঠে চড়ে পশ্চিমে এগোল রনি। কিছুদূর এগিয়ে যেখানে কেবিনগুলো দেখেছে সেটা ছাড়িয়ে আরও দূরে একটা জায়গায় এসে থামল।

রিজ পার হয়ে ট্রেইলে নামল সে। পিছন দিকে কয়েকটা ছাপরা ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু সামনে পাইন আর ফার গাছের ফাঁকে পাহাড়ের গায়ে একটা পাথরের তৈরি কেবিন দেখা যাচ্ছে। ওটা নিশ্চয় পুরানো ইণ্ডিয়ানদের তৈরি-সংস্কার করা হয়েছে। কাছেই একটা করাল, পঁচটা চমৎকার ঘোড়া রয়েছে ওখানে। ঝর্না বয়ে যাওয়ার শব্দ আসছে ওর কানে। আরও একটু এগিয়েই থমকে দাঁড়াল সে। করালে, যেটার নাকের পাশটা সাদা, সেই ঘোড়াটাও আছে-ওটাকে সে স্টেজ হোল্ড আপের সময়ে দেখেছে।

<

Super User