বড় একটা ম্যাপ টেবিলের ওপর বিছিয়ে দিল ব্র্যান্ডন। এক জায়গায় আঙুল ঠুকে বলল, এই যে এখানে দেখুন।
রেলওয়ের ম্যাপ ওটা; দেখাচ্ছে দক্ষিণ-পুব দিক থেকে ঢুকেছে লাইন, টেইলহল্ট পেরিয়ে চলে গেছে উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ের দিকে।
উত্তর-পশ্চিমে এই জায়গাতে আছে অনেকগুলো ক্যানিয়ন, বলে চলল ব্র্যান্ডন। আপাতত এখানে লাইন বসাচ্ছি আমরা। এর পরে আসবে হ্যাটারের র্যাঞ্চ; তারপরে উইটিগো আর পরফাইরি। হ্যাটার মন্ট্যানা সেন্ট্রালের কাছে জমি বেচবে না বলে হুমকি দিচ্ছে, তবে এটা আমাদের বড় সমস্যা নয়; মিস্টার হুলাহান কথা দিয়েছেন তিনি হ্যাটারকে রাজি করাবেনন। আমাদের আসল সমস্যা ক্যানিয়ন পেরনোয়। ওখানে হামলা করছে ডায়নোসর।
হ্যাটারের র্যাঞ্চের ধার ঘেঁষে এই গোল চিহ্নটা কিসের? ম্যাপে চোখ বুলিয়ে নিয়ে জানতে চাইল বেনন।
ওটা একটা টিলা। চিহ্নের ওপর আঙুল রাখল ব্র্যান্ডন। ওই টিলাই হচ্ছে উইটিগো যাবার পথে শেষ বড় বাধা। আমাদের এঞ্জিনিয়াররা অবশ্য মাসখানেক আগেই ঠিক করে ফেলেছে কি করবে। টিলার মাঝ দিয়ে টানেল খুঁড়ে লাইন এগিয়ে নিয়ে যাব আমরা।
অসম্মতির সঙ্গে মাথা নেড়ে হ্যারি হুলাহান বলল, আমার মনে। হয় না কাজটা উচিত হবে। এঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আমার ধারণা নেই; তবে হ্যাটারকে আমি চিনি; যতই বোঝাই না কেন ঝামেলা করবে লোকটা। সবচেয়ে ভাল হয় যদি হ্যাটারের র্যাঞ্চ আর ওই টিলাটা এড়িয়ে যাওয়া যায়।
তাতে আমাদের খরচ অনেক বেশি পড়বে, আপত্তির সুরে বলল ভাউবয়েস সি ভাউবয়েস নোয়ক,
তারপরও আমি বলব সেটাই ভাল হবে।
আচ্ছা, প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল বেনন, এই ডায়নোসরগুলো কি ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে?
ওগুলোর ভয়ে কাজ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে আমাদের চাইনিজ শ্রমিকরা, থমথমে চেহারায় বলল ব্র্যান্ডন। নিরক্ষর কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকগুলোর ধারণা এলাকাটা অশুভ, ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যাবে ওদের যদি ড্রাগন দেবতার রোষে পড়ে। দেবতা চাইছেন না ওখানে ওরা কাজ করুক, তাই বারবার এমন করে দেখা দিচ্ছেন; ঝড়ের রাতে এসে বুঝিয়ে দিচ্ছেন প্রলয়ঙ্করী কাণ্ড ঘটবে ওরা তাঁর নির্দেশের অবাধ্য হলে। প্রথমে আমি পাত্তা দিইনি গুজব মনে করে, কিন্তু আমার কন্সট্রাকশন বস মার্ক ল্যান্সেলো যখন বলল সে-ও দানবগুলোকে দেখেছে তখন গুরুত্ব দিতেই হলো। মার্ক শিক্ষিত সাহসী লোক, তারওপর মারাত্মক গোয়ার, চট করে তাকে প্রভাবিত করা সম্ভব নয়।…একটা স্কেচ এঁকে দিয়েছে সে আমাকে। স্কেচটা দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে আমার। একটা টাইরানোসরাস এঁকেছে লোকটা! কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গেও আলাপ করেছি; ওদের বর্ণনা শুনে মনে হলো ওরা দেখেছে ব্রনটোসরাস।
মাথা থেকে ডারবি হ্যাট নামিয়ে ভ্রূ কুঁচকে তাকাল ব্যাগলে। এই মাত্র বলছিলে ডায়নোসরের কথা, এখন আবার বলছ অন্য কি সব ব্রনটো টাইরানো আরও কি কি যেন; ব্যাপারটা কি, বোকা মনে করেছ আমাদের? মনে করেছ একটা কিছু বুঝিয়ে দিলেই চলবে?
মেসোযোয়িক যুগের অতিকায় সরীসৃপদের বলে ডায়নোসর, বিরক্তির সঙ্গে বলল পিচ্চি ফ্র্যাঙ্ক নোয়াক। শব্দটা এসেছে গ্রীক ভাষা থেকে; মানে হচ্ছে ভয়াবহ গিরগিটি। ডায়নোসর অনেক ধরনের আছে; যেমন, কারনিভোরাস বাইপেডসদের মধ্যে টাইরানোসরাস, হারবিভোরাস কোয়াড্রপেডসদের মধ্যে ব্রনটোসরাস, তারপর ইগুয়াডন, আঁশওয়ালা স্টেগোসরাস, ডাইমেট্রোডন আরও কত রকমের সরীসৃপ যে আছে বলে শেষ করা যাবে না।
সর্বনাশ! ফিসফিস করে বেননকে বলল ব্যাগলে, শুনেছ। অতটুকু একটা বাচ্চার মুখ থেকে কি ভয়ানক কঠিন সব শব্দ বের হচ্ছে!
ফ্র্যাঙ্ক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। খুকখুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করল তার বাবা। পুত্রের গুণে গর্বিত যেমন মনে হচ্ছে, তেমনিই খানিকটা বিপর্যস্ত বলেও মনে হলো ভাউবয়েসকে। মাত্র সাত বছর বয়সে ডায়নোসরের ওপর আঠারো পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ লিখেছিল ফ্র্যাঙ্ক।
ও, ওইটা, অবহেলা ভরে বাতাসে হাতের ঝাঁপটা মারল ছেলেটা। ওটা খুব কাঁচা হাতের কাজ ছিল। তার বছর খানেক আগে টোঙ্গাল্যান্ডের জঙ্গল আর বাইবেলের ইডেন বাগান নিয়ে যেটা লিখেছিলাম সেটা বরং মানোত্তীর্ণ হয়েছে বলে আমার ধারণা।
রেলওয়ের সব মজুরই কি চাইনিজ? কাজের কথায় এলো বেনন।
না, বলল ব্র্যান্ডন। বেশির ভাগই চাইনিজ; তবে আইরিশও আছে কিছু। আইরিশদের নিয়ে চিন্তা করি না; ডায়নোসর দেখলে মদের নেশা ছুটে যায় ওদের, আতঙ্ক ভুলতে যত দ্রুত পারে আবার বোতল খালি করে ফেলে। মজুরদের মধ্যে চাইনিজদের সংখ্যাই বেশি; যত চিন্তা ওদের নিয়ে। চাইনিজদের কিংবদন্তী ড্রাগনে ভরা, ডায়নোসর দেখে ড্রাগন মনে করে দল বেঁধে পালাচ্ছে ওরা।
সব মহাদেশেই ডায়নোসর ছিল, তথ্য যোগাল ফ্র্যাঙ্ক। আদিকাল থেকে লোকে শুনে আসছে ওদের গল্প। ভয় পাওয়া স্বাভাবিক, ওগুলোর কোন কোনটা চার-পাঁচ তলা বাড়ির সমান উঁচু ছিল।
তাই বলে কাজে বাগড়া দেবে তা হতে পারে না, ওগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে কোন একটা করালে আটকে রাখা উচিত, মন্তব্য করল গম্ভীর ব্যাগলে।
হাই তুলল ফ্র্যাঙ্ক নোয়াক। দু আঙুলে তুড়ি বাজাল মুখের সামনে হাত এনে। তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে ব্যাগলেকে দেখে বলল, আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডায়নোসর। কেন ওরা টিকতে পারল না তার ব্যাখ্যা অনেকে অনেক ভাবে দিয়েছে, কেউ বলেছে হিমযুগ এসে শেষ করে দিয়েছে ওদের, কেউ বলেছে প্রকাণ্ড উল্কাপাতের ফলে মরে গেছে ওরা। আমার ধারণা ওরা মরেছে ক্রিটেশিয়াস কালে হঠাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশ বদলে যাওয়ায়। ওই পরিবর্তনের পরপরই শেষ হয়ে যায় মেসোযোয়িক যুগ।
বয়স যদিও কম ছিল…তবু ওই সময়ের কথা কিছু কিছু মনে আছে আমার, অজ্ঞতা ঢাকতে গিয়ে বলল ব্যাগলে মাথা দুলিয়ে।
দু’চোখ আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠল ফ্র্যাঙ্ক নোয়কের। জানতে চাইল, আপনার মাথাটা জাদুঘরে দান করার ব্যাপারে কখনও কিছু ভেবেছেন, মিস্টার ব্যাগলে?
কেন? ঘোর সন্দেহ নিয়ে জানতে চাইল ব্যাগলে।
আপনার মগজ পরীক্ষার সুযোগ পেলে সুযোগটা লুফে নেবে ওরা। এত আগের মগজ! বানরের সঙ্গে আপনার মগজের তুলনা থেকে বোঝা যাবে আসলেই আমরা বাঁদরের উত্তরপুরুষ কিনা!
কড়া চোখে ছোঁকরাকে দেখল ব্যাগলে, রাগের চোটে কথা বলতে পারল না।
ভাবনায় ডুবে আছে বেনন। উইটিগোতে আসার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শুনতে হলো ডায়নোসরের কথা। প্রথমবার শুনেছিল স্টেজ কোচে, ডক্টর ওয়াঙের কাছে। রেল কোম্পানির ঝামেলা আর ডক্টর ওয়ার্ডের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই তো?
আচ্ছা ডায়নোসর ছাড়া আরও যে সব ঝামেলা হচ্ছে; যেমন বেতন ডাকাতি, গোলাগুলি, হুমকি, এগুলো যারা করছে তাদের ব্যাপারে কিছু জানেন? খানিক পরে জানতে চাইল বেনন।
মাথা নাড়ল ব্র্যান্ডন। না। জানলে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করতাম? এখন এন্ড অভ স্টীলে কাজ চলছে, ওখানে গেলেই মার্ক ল্যান্সেলোর কাছ থেকে সব জানতে পারবেন। ঝামেলা লেগেই আছে, কেউ একজন চাইছে আমাদের কাজ থেমে যাক। প্রতিদিন মজুরদের ওপর গুলি ছোঁড়া হচ্ছে আড়াল থেকে। এরকম চলতে থাকলে বেশি বেতন দিয়েও কাউকে রাখা যাবে না।
আপনাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে লাভটা কার হবে। আর কোন রেল কোম্পানি পরফাইরিতে লাইন বসাতে চাইছে?
না। এদিকে অন্যদের মেইন লাইন নেই, লাইন বসিয়ে পরফাইরিতে যাওয়া লাভজনক হবে না যে ওরা উৎসাহী হবে। হতাশ ভঙ্গিতে বলল ব্র্যান্ডন। বিপদ বাধাবে আমাদের নিজেদের কোম্পানি; কাজ না এগোলে সবকিছু গুটিয়ে ফেলতে হবে হেড অফিসের নির্দেশে, ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হবে আমাকে। তার মানে দাঁড়াবে আমার পদোন্নতি…
অ্যান্টি রূমে চেঁচামেচি শুনে কথা শেষ না করেই থেমে গেল ব্র্যান্ডন। তারস্বরে কাকে যেন বোঝাবার চেষ্টা করছে ক্লার্ক; কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না, তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বরের তলায় বারবার চাপা পড়ে যাচ্ছে তার ফাঁসফেঁসে গলার আওয়াজ। তারপর দড়াম করে খুলে গেল কনফারেন্স রূমের দরজা। ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করল, মিস হ্যাটার আর তার ভাতিজী। স্টীল রিমের চশমার পেছনে রাগে জ্বলছে টীচারের দু’চোখ, ফুলে ফুলে উঠছে নাকের পাটা। মুখটা করমচার মত লাল। ভাতিজি রত্নটিকে তার চেয়ে কম বিপজ্জনক মনে করার কোন কারণ দেখল না ব্যাগলে। ডেইজি হ্যাটারের হাতে এখনও আছে সেই মোষের চামড়ার বিপজ্জনক চাবুক। ফুটন্ত তেলের মত মেজাজটা ঠাণ্ডা হয়েছে বলেও মনে হলো না।
মিস হ্যাটার! দাড়িয়ে পড়ল বিস্মিত ব্যান্ডন: কথা বলছে অ্যানা হ্যাটারের সঙ্গে, কিন্তু দৃষ্টি সেঁটে থাকল তন্বী ডেইজির ওপর। হঠাৎ এভাবে… কি ব্যাপার, মিস হ্যাটার?
কি ব্যাপার জানেন না আপনারা? উপস্থিত সবার দিকে হাড্ডিসার তর্জনী নাচালেন মহিলা। ভেবেছেন কী, কোম্পানির একজন মালিকের সঙ্গে যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করে পার পাওয়া যাবে? নালিশ জানাব আমি শিকাগো অফিসে! আমি অ্যানা হ্যাটার আসতে চাইছি আর বাধা দিচ্ছে একটা দু’পয়সা দামের ক্লার্ক! আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না সেই অফিসে যেই অফিসের আসবাবপত্র সম্ভবত এই আমার পয়সাতেই কেনা হয়েছে!
উঠে দাঁড়াল হ্যারি হুলাহান। ঠোঁটে ঝুলছে ব্যাঙ্কারের মাপা বিগলিত হাসি। বুঝে গেছে বাস্তব বুদ্ধির অভাব আছে মহিলার, নাহলে এভাবে মীটিঙের মাঝে জোর করে এসে উপস্থিত হত না। আমাদের কি সৌভাগ্য, মিস হ্যাটার, যে ডেকে না পাঠিয়ে আপনি নিজেই চলে এসেছেন। টেবিলের তলা থেকে পাশের চেয়ারটা টেনে বের করল সে। বসুন, মিস হ্যাটার, দয়া করে আমাদের সম্মানিত করুন। তুমিও বসো, ডেইজি। সুস্থির হয়ে বলো দেখি সমস্যাটা কি।
আমার স্পার, দাড়িয়েই রইলেন টীচার। কড়া চোখে বেনন আর ব্যাগলেকে একবার দেখে নিয়ে বললেন, ওরাই আমার স্পারটা চুরি করেছে। হ্যাঁ এই দু’জন ছাড়া কাজটা আর কারও নয়! ওই স্পার ছাড়া ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার মুখ নেই আমার। চিঠিতে হাজার বার করে ওটা নিয়ে আসতে বলেছে ও। আমি এই মুহূর্তে তদন্ত দাবি করছি; ওদের তল্লাসী করে বের করে দেয়া, হোক আমার স্পার।
বিশ্বাস করুন, মিস হ্যাটার, স্পারটা নেই আমাদের কাছে, বলল বেনন। ওটা নিইনি আমরা।
আপনারা দয়া করে বসুন, বলল ভাউবয়েস। পরিস্থিতিটা আমাকে একটু ব্যাখ্যা করতে দিন।
একটু না, বাবা; তুমি বলতে চাইছ পরিস্থিতির পুরো ব্যাখ্যা দেবে। ভুলটা ধরিয়ে দিল ফ্র্যাঙ্ক নোয়াক।
চুপ! গলা ফাটিয়ে এক ধমক লাগাল ভাইবয়েস ছেলেকে। তারপর মহিলাদের দিকে তাকিয়ে ক্ষমা প্রার্থনার হাসি হাসল। হ্যাঁ, কি বলতে চান বলুন এবার আপনারা। আপনাদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর দেখব কি করা যায়।
স্টেজ কোচ যাত্রা থেকে শুরু করে ডক্টর ওয়াঙের দুর্ভাগ্যজনক পথ পরিক্রমা, ডাকাতের হামলা, বেনন আর ব্যাগলের দুঃসাহসিকতায় পরিত্রাণ-নিজেকে সামলে নিয়ে সবই একে একে বললেন অ্যানা হ্যাটার। শেষে যোগ করলেন স্পারের কথা। তিনি নিজে ছাড়া শুধু স্টার্ন ভাইরাই জানত, সুতরাং কাজটা তাদের না হয়ে যায় না।
ডেইজিকে বলতেই ও-ও আমার সঙ্গে একমত হয়েছে। কাল রাতে স্পারটা চাইতে হোটেলে গিয়েছিল ডেইজি, কিন্তু কেন জানি কিসের লোভে কিছুতেই এরা ওটা ফেরত দিতে রাজি নয়। কথা শেষে আরেক বার আঙুল তাক করে হতভাগ্য গোয়েন্দাদের দেখালেন তিনি।
যা নিইনি তা ফেরত দেব কোত্থেকে! প্রতিবাদ করল ব্যাগলে।
দেখুন মিস অ্যানা, বলল ব্র্যান্ডন, আপনাকে জানানো আমার কর্তব্য যে এরা আমাদের লোক; অনুরোধ রক্ষা করতে ছদ্মবেশে এখানে এসেছেন। অত্যন্ত উঁচু পর্যায় থেকে এদেরকে গোয়েন্দাগিরির কাজে নেয়ার জন্যে সুপারিশ করা হয়েছে। যদি বলে থাকেন যে আপনার স্পার নেননি তাহলে আসলেও নেননি। নিশ্চয়ই কোথাও কোন ভুল হচ্ছে আপনাদের।
বেশ, আগের চেয়ে অনেক শান্ত শোনাল মিস হ্যাটারের কণ্ঠস্বর। সেক্ষেত্রে আমি আশা করব রেলরোড আমার হয়ে স্পারটা খুঁজে বের করে দেবে। অনেকগুলো শেয়ারের একজন মালিক হিসেবে এটুকু দাবি আমি করতেই পারি।
অবশ্যই, সায় দিল ব্র্যান্ডন। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমাদের চেষ্টায় কোন ত্রুটি থাকবে না। বেনন, ব্যাগলে, মনে রাখবেন আপনাদের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে যেভাবেই হোক মিস হ্যাটারের সম্পত্তি উদ্ধার করা।
কিন্তু…প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে গেল ব্যাগলে। বেশ, মনে থাকবে আমাদের।
প্রসন্ন হলেন মিস হ্যাটার, বললেন, এটুকু সহযোগিতাই আমি আপনাদের কাছ থেকে আশা করেছিলাম। ভাতিজীর দিকে ফিরলেন তিনি। চলো, ডেইজি, এঁরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসবেনন; এদের আর বিরক্ত করা ঠিক নয়।
ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার আগে বেননের চোখে তাকাল ডেইজি, ধীরেসুস্থে বলল, আমার এখনও ধারণা বেচারি অ্যানা আন্টির স্পারটা তোমরাই সরিয়েছ। ভেবো না এত সহজে পার পাবে। ঠিকই তোমাদের মুখোশ খুলে দেব আমি।
আমি তোমাদের র্যাঞ্চে এসে এব্যাপারে আলাপ করব; তোমার আন্টিকে বোলো চিন্তা না করতে বলল মার্লোন ব্র্যান্ডন।
বাবার গুলি খেয়ে মরবে তাহলে। বাবা রেলরোডের লোকজনকে দেখতে পারে না। সতর্ক করার সুরে কথাটা বলে চলে গেল ডেইজি।
মেয়েটা চলে যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ব্র্যান্ড। চেহারা দেখে মনে হলো ঘোরের মধ্যে আছে। তাকে কল্পনার স্বর্গ থেকে টেনে নামাল বেনন। বিরক্তি চেপে বলল, আমি এখানে রেলওয়ের হয়ে গোয়েন্দার কাজ করতে এসেছি, মিস্টার ব্র্যান্ডন; কোন মহিলার হারানো স্পার খুঁজতে হবে এমন তো কথা ছিল না। আপনি বরং অন্য লোক দেখুন।
আঁ…? বাস্তবে ফিরে কি বিষয়ে কথা হচ্ছে কিছু বুঝতে পারল না ব্র্যান্ডন। কিছুক্ষণ পর সংবিৎ ফিরে পেয়ে বলল, আমি জানি আপনারা আমাকে হতাশ করবেন না। পাগলা হ্যাটারের প্রিয়পাত্র হবার এটাই আমাদের মোক্ষম সুযোগ। স্পার যখন আনতে বলেছে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে তার। আমরা যদি ওটা উদ্ধার করে ফেরত দিতে পারি খুশি হবে সে, জমির ব্যাপারে নিশ্চয়ই আর ঝামেলা করবে না। আমি আপনাদের স্পার খুঁজতে বলছি না, আপনারা শুধু চোখ ভোলা রাখবেন; রেলরোডের কাজের ফাঁকে যদি উদ্ধার করতে পারেন তো মহিলাকে ফিরিয়ে দেবেনন। কী, রাজি?
বেশ, ব্যাগলে আপত্তি জানাবার আগেই বলে দিল বেনন। স্পার খোঁজা, প্রধান দায়িত্ব হবে না এই শর্তে কাজটা আমরা নিচ্ছি। আজই আমি এন্ড অভ স্টীলে যাব বিগ জিমি নর্টনের সঙ্গে কথা বলতে পারলে নিজের চোখে দেখে আসব নিশাচর সেই সব অতিকায় ডায়নোসরদের।
আমিও যাচ্ছি, জানাল ব্যাগলে।
ওর কোটের হাতা ধরে টান দিল ফ্র্যাঙ্ক নোয়াক। মিস্টার ব্যাগলে, আপনি ডায়নোসর দেখতে পাবেন না বাজি ধরতে পারেন। ওরা দুইশো মিলিয়ন বছর আগেই মরে সাফ হয়ে গেছে।
গোটা ব্যাপারটাই আমাদের অতি কল্পনা নয়তো? জানালার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করল ভাউবয়েস। নিজেই উত্তর দিল, এ যুগে ডায়নোসর আসবে জ্বালাতে এ একেবারেই অবিশ্বাস্য। এটাও মনে হচ্ছে না একদল সংঘবদ্ধ লোক কোন স্বার্থ ছাড়া এভাবে রেলওয়ের কাজে বাধা দেবে। এমনও তো হতে পারে স্রেফ মজা করেছে কাউহ্যান্ডরা? ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলে মনে হয় না যে…
মনের কথা মনেই থাকল, আর একটা কথাও উচ্চারণ করার সুযোগ পেল না ভাউবয়েস। মস্ত ভুড়িতে জোর এক ঠেলা দিয়ে তাকে মেঝেতে চিতপটাং করে ফেলে দিল বেনন। নিজেও ঝাপিয়ে পড়ল ভাউবয়েসের পাশে। একই সঙ্গে বাকিদের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলল, মাটিতে শুয়ে পড়ো সবাই! বাঁচতে চাইলে মাটিতে!
বিরক্ত বোধ করায় ভাউবয়েসের কথার ফাঁকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছে ও; দেখেছে রাস্তার ওপারের একটা সেলুনের দোতলার জানালা দিয়ে এঘরের দিকে রাইফেল তাক করেছে কে যেন।
বেনন মেঝে ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল রাইফেল। টুকরো টুকরো হয়ে গেল জানালার কাচ। বাতাসে বোলতার গুঞ্জন তুলে উল্টোপাশের দেয়ালে গিয়ে বিধল বুলেট। হুলস্থুলের মাঝে কে কার আগে লাফিয়ে মেঝেতে পড়তে পারে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল ঘরের মধ্যে।
<