র্যাঞ্চ হাউসের পারলার। রাগে আগুন হয়ে আছে বেলিনডা, অবিরাম বকছে।
ঘরে আসার দেড় মিনিট পার হবার আগেই কয়েক দফা দাবি পেশ করে বসেছে বেলিনডা: ওকে ছেড়ে দিতে হবে এবং তার আগে ব্যাখ্যা করতে হবে আটকে রাখা হলো কেন; হাত পা বেঁধে দুজন কে বার্ন-এ নিয়ে যেতে দেখেছে সে, তাদের পরিচয় জানাতে হবে।
পুরোন কার্পেটের ওপর পায়চারি করছে কলিন ফোর্বস, শিগগিরই শান্ত হবে বেলিনডা, আশা করছে।
কখন যাচ্ছি এখান থেকে। এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো জানতে চাইলে বেলিনডা।
তোমার যখন ইচ্ছে, একই জবাব দিলো কলিন, কিন্তু এই রাত বিরেতে একা বেরোনো কি ঠিক হবে? সঙ্গে দেব, তেমন লোকও নেই আমার কাছে।
তোমার ধারণা এখানে নিরাপদে আছি আমি। ঝাঁঝিয়ে উঠলো। বেলিনডা, বেসিনের কেউ একমত হবে না তোমার সঙ্গে।
ধ ঝাঁকিয়ে হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করলে কলিন। তোমার যা মর্জি, বেলিনডা, আমি কিছুই বলবো না; ইচ্ছে হলে সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো নয়তে এখুনি রওনা হয়ে যেতে পারো, কেউ আটকাবে না।
বার্ন-এ কাদের আটকে রেখেছো?
দুজন লোককে জেরা করার জন্যে।
কেন?
তা জেনে কি লাভ? বলেছি তো চাইলে এখুনি চলে যেতে পারো তুমি।
মেঝেতে পা ঠুকলো বেলিনডা। কারা ওরা বলো? ওরা তোমার প্রশ্নের জবাব না দিলে কি করা হবে?
দেবে, গম্ভীর কণ্ঠে বললো কলিন, পায়চারি থামলো। আচ্ছা, আমি তো তোমাকেও সাক্ষী হিসেবে সঙ্গে রাখতে পারি।
কথাটা পছন্দ হলো কলিনের, আবার কিছু সময় পায়চারি করলো, ভাবলো।
বেলিনডা তোমাকে এখন এমন একটা কথা বলবো আমি যা এখনো বেসিনের কারো জানা নেই। মন দিয়ে শোনো। এটা তো জানো যে, মাস দুই আগে আমার বাবা প্রায় হাজার গরুর একটা পাল বিক্রির জন্য স্প্রীংগারভিলে চালান দিয়েছিলো, সেই ক্যাটল ড্রাইভে আটজন কাউহ্যানড ছিলো, ট্রেইলস ছিলো আর্নেস্ট হল। ওকে তুমি চিনতে।
হ্যাঁ, সেটা আগেও বলেছি, ভুরু কুচকে বললো বেলিনডা, বেশ পছন্দ করতাম লোকটাকে। কেন যে টাকা নিয়ে পালালো সেটা আজও এক রহস্য।
আমি বলেছিলাম, পালায়নি, বললো কলিন। আমাদের গরু স্প্রীংগারভিলে ঠিকই পৌঁছেছিলো, কিন্তু তখন আমাদের কোনো লোক ছিলো না ওগুলোর সঙ্গে। পরে ওদের খোঁজে গিয়েছিলো বাবা, স্প্রীংগারভিলের উত্তরে একদিনের দুরত্বে ট্রেইলের কাছে পাঁচটা কবর খুঁজে পায়, তিনটে কবরের খোঁজে পাওয়া যায়নি, বুঝতেই পারছো, ট্রেইল ক্রুর প্রত্যেককে হত্যা করা হয়েছিলো।
কিন্তু আমি শুনেছি—
ভুল শুনেছো। আসল ঘটনা হলো স্প্রীংগারভিলের উত্তরে একদিনের দুরত্বে ওয়ারেন রাইডাররা হামলা চালায় ওদের ওপর, গরু ছিনতাই করে ওরা এবং ট্রেইল ক্রুর সবাইকে হত্যা করে গরু নিয়ে স্প্রীংগারভিলে যায় এবং আর্নেস্ট হলের নাম ভাঁড়িয়ে গরু বিক্রির টাকা গ্রহণ করে কাসলার।
টলে উঠলো বেলিনডা, চেতনা হারাবে বলে মনে হলো।
বিশ্বাস করি না! ক্লাইভ কখনো—
ক্লাইভের সঙ্গে তোমার প্রেম আছে নাকি?
নাহ। কিন্তু—
কাসলারের সঙ্গে বিলও ছিলো।
না!
আরো দুজনের নাম বলতে পারি আমি, বললো কলিন। এখন না, সকালে প্যসির সামনে বলবো–যদি বার্নের দুই মেহমান আশানুরূপ সহযোগিতা করে।
এলোমেলো পা ফেলে চামড়া মোড়া চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেল বেলিনডা, বসে পড়লো, রুমাল বের করে কিনারে লাগানো লেসে হাত বোলালো কয়েক মুহূর্ত, তারপর আবার রেখে দিলো ওটা।
কথা থামালো না কলিন। ড্যানিয়েল ফোর্বস কেন ওয়ায়েনের গরু স্ট্যামপিড করলো, কেন ও লিনডাকে পালাতে সাহায্য করতে গেল, হ্যারলড আর অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ হলো সব ব্যাখ্যা করলো একে একে। বেলিনডা ওর কথা শুনেছে কিনা বুঝতে পারলো না। একদৃষ্টে কার্পেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটা।
বার্নের দুজন–ওরা কারা? অবশেষে জানতে চাইলে সে।
বিল ওয়ারেন এবং অ্যারন হেলার।
হেলার? ওর সাথে এসবের সম্পর্ক কি?
আমার সন্দেহ স্প্রীংগারভিলে কাসলারের কাছ থেকে সেই আমাদের গরু বিক্রির টাকা নিয়েছিলে–এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।
টোকা পড়ল দরজায়।
হনডো। বেলিনডার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করতে লাগলো সে।
বলে ফেলো, বললো কলিন, ওর সামনে বলতে অসুবিধে নেই।
বিলের মুখে খই ফুটছে, জানালো হনডে।
হেলার?
ওর পালা এখনো শুরু হয়নি।
আমি আগে আসি, তারপর শুরু করো।
মাথা দুলিয়ে বেরিয়ে গেল হন।
থাকতে চাও সকাল অবধি? বেলিনডাকে জিজ্ঞেস করলো কলিন।
আমিও বার্নে যাবো তোমার সঙ্গে।
এসব হয়তো তোমার ভালো লাগবে না। নোংরা ব্যাপার, বেলিনডা, কিন্তু কি করবো, আর কোনো উপায় নেই আমার। তুমি বরং এখানেই অপেক্ষা
না, আমি যাবো।
দরজার দিকে এগোলো কলিন। ওর সঙ্গে বেরিয়ে এলো বেলিনডা।
দমকা হাওয়া বইছে। পতপত করছে বেলিনডার স্কার্ট, উড়িয়ে নিতে চাইছে কলিনের হ্যাট। হ্যাটটা ধরে রেখে ঘাড় কাত করে আকা শের দিকে তাকালো কলিন। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, কিন্তু ঝড় আসতে এখনো ঢের দেরি। কোনো সুবিধে হবে না আমাদের-ভাবলো কলিন। অসময়ে শুরু হবে ঝড়ের তাণ্ডব।
বেলিনডাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো কলিন। বার্নের দরজা খুলে প্রথমে বেলিনডাকে ঢুকতে দিয়ে তারপর নিজে ঢুকলো। আস্তাবলের ভেতরের অবস্থা দেখামাত্র সেইদিন রাতের ওয়ারেনের আস্তাবলের কথা মনে পড়ে গেল। এখানেও সেই একই রকম ছাদের কড়িকাঠে তিনটে লণ্ঠন ঝুলছে। একটা থামের সঙ্গে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে হেলারকে। মেঝেতে শোয়া বিল ওয়ারেন, ওকে ঘিরে দাড়িয়ে রয়েছে হনডো, শেরিডান এবং হ্যারলড লেভিট, ফুলে ঢোল বিলের চোখ মুখ, রক্ত আর ধুলোয় কাদাকাদা।
নিঃশ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেল বেলিনডা, ঠেলে আসা চিৎকার টা প্রাণপণ চেষ্টায় চেপে রাখলো সে। হনডো আর শেরিডান ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো বিলের দিকে তাকিয়ে আছে আরন হেলার। বিলের ওপর ঝুঁকে রয়েছে হ্যারলড লেভিট, অনড়।
আবার শোনাও! গর্জন করে উঠলো সে।
হেলার নিয়েছে টাকাটা, দুর্বল কণ্ঠে বললে বিল, আমার সামনে ক্লাইভের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে ও।
আর কে দেখেছে?
কেউ না।
টাকাটা হাত বদল হয়েছে কোন্ জায়গায়?
স্প্রীংগারভিল কোর্ট হাউসের পেছনের গলিতে।
পিছিয়ে এলে হ্যারলড লেভিট, সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
শুনলে তো কলিন?
মাথা দোলালো কলিন। টেরি জেলারম্যান কোথায়?
বাইরে, রাস্তায় নজর রাখছে। পালা করে পাহারা দিচ্ছি আমরা, একটু পরেই ওর পালা শেষ হবে।
আমাদের প্রিয় উইলিয়াম আর কি জানালো?
সব। হত্যাকাণ্ডে অংশ গ্রহণকারী কাসলারের সব কটা সঙ্গীর নাম বলেছে। অন্ধকারে লুকিয়ে কিভাবে ক্যামপফায়ারের দিকে গেছে ওরা, প্রত্যেককেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল একজন করে হত্যা করার। পিস্তল স্থির করে অপেক্ষা করছিলো, সঙ্কেত পাওয়ামাত্র একসঙ্গে গুলি ছুড়েছে, আগুনের কাছে ফাঁকায় ছিলো আমাদের ছেলের, সহজ নিশানা, বাচার সুযোগই পায়নি, নৈশ প্রহরীরা একটা সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি; মাত্র দু-তিনজন ছিলো ওরা, তাড়া করে ওদেরও খতম করে শয়তানের বাচ্চারা।
পরিকল্পনাটা কার?
এই প্রসঙ্গে এখনো আসিনি।
সামনে এগোলো কলিন। বিলের পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো, তার পর জানতে চাইলে, পরিকল্পনাটা কার ছিলো, বিল? কার মাথা থেকে বেরিয়েছিলো বুদ্ধিটা?
জানি না, সত্যি। থেতলানো ঠোঁটের ফাঁকে বিড়বিড় করে উঠলো বিল। কোথায় যাচ্ছি না জেনেই সেদিন বেড়িয়ে পড়েছিলাম আমি।
হেলারকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো, বললে ইনডো।
উঠে দাড়ালো কলিন, ঘুরে হেলারের মুখোমুখি হলো। জানো তুমি?
নিশ্চয়ই না! বললে হেলার। তুমি বড় বাড়াবাড়ি করছে, কলিন। ওয়ারেন সম্পর্কে আমার মনোভাব তুমি জানো!
সে তো তোমার মুখে শোনা।
আমি কি মিথ্যে বলেছি? আমি—
রাখো!
কোন জিনিসটা গোপন করেছি, বলো?
বছর খানেকের মধ্যে নাকি স্প্রীংগারভিলে যাওনি তুমি? অথচ কাসলার আমাদের গরু বিক্রি করার সময় ওখানেই ছিলে তুমি।
কথাটা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। যাই হোক, আমি কি করে। জানবো যে, সেদিনই তোমাদের গরু স্প্রীংগারভিলে গেছে? অন্য কাজে ওখানে গিয়েছিলাম আমি, অ্যামিটি ক্রীক পানি বিরোধ সংক্রান্ত একটা মামলার নিষ্পত্তির ব্যাপার ছিলো।
কোর্ট হাউসের পেছনের গলিতে কাসলারের সঙ্গে দেখা হয়নি বলতে চাও?
নিশ্চয়ই! বিল মিথ্যে কথা বলেছে। ওরা বাপ-বেটা দুজনেই আমাকে ঘৃণা করে।
মেরামত শুরু করার আগে বিলও আবোলতাবোল বকছিলো, বললো হ্যারলড লেভিট।
ঘাড় ফিরিয়ে সঙ্গীদের দিকে তাকালো কলিন। দৃশ্যটা দেখা মতো, ভাবলো, একপাশে দাড়িয়ে অসহায়ের মতো হাত কচলাচ্ছে বেলিনডা, স্বেচ্ছায় এখানে এসেছে সে, ওর কিছু করার নেই
হেলারকে নিংড়ে কথা বের করার ইচ্ছা কার? জিজ্ঞেস করলো কলিন।
আমার, বললে হনডো।
আমারও, বললো শেরিডান। টস, করা যাক তাহলে, পকেট থেকে একটা রূপোর মুদ্রা বের করলো সে। বলে, ইনডো, কোন দিক?
আমিও আছি, বলে উঠলো হ্যারলড, শুরু করার আগেই তো বিল ছোঁকরা টেসে গেছে, হাতের সুখ মেটেনি আমার।
ওদের কথাবার্তার বহর দেখে ফ্যাকাসে হয়ে গেল হেলারের। চেহারা, কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলো, দাড়াও, কলিন, এক মিনিট।
আবার কি?
বিলের মতো আমার সহ্য ক্ষমতা নেই, কি জানতে চাও, বলো, সব বলছি।
সত্যি জানতে চাই আমি, হেলার।
তারপর কি করবে?
শেরিফ এবং আদালতের সামনে তোমাকে দাড় করানো হবে।
ঝুলে পড়লো হেলারের মাথা, চেহারা আড়াল হলো।
আমি–আমি তোমার সঙ্গে একটা আপোসরফায় আসতে চাই।
কি রকম?
তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দাও তাহলে ওয়ারেনের বিরুদ্ধে আদালতে তোমার পক্ষে সাক্ষী দেবো আমি।
জুতোর ডগার দিকে তাকালো কলিন ফোর্বস। নাটকীয় পরিবর্তন! ভেবে দেখার জন্যে সময় দরকার। গা বাঁচাতে হেলার ওয়ারেনকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে, সন্দেহ নেই ওতপ্রোতভাবে এসব জড়িত সে। যদি তাই হয়, তাহলে ওয়ারেনের স্রেফ প্রতি নিধি হিসেবে স্প্রিংগারভিলে যায়নিহেলার, কাসলারের কাছ থেকে টাকা নেয়াটাই তার একমাত্র কাজ ছিলো না। হামলার পরিকল্পনাটাও সম্ভবত তার মাথা থেকে বেরিয়েছিলো এবং খুব সম্ভব তার নির্দেশানুযায়ীই সব কিছু করেছে রবার্ট ওয়ারেন। নাটের গুরু?
বলে যাও, সহজ কণ্ঠে বললে কলিন, ওয়ারেনের বিপক্ষে কি সাক্ষী দেবে? কি বলার আছে তোমার?
আমি বলবো কাসলারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্যে ওয়ারেনই আমাকে স্প্রীংগারভিলে পাঠিয়েছিলো, ওই টাকা যে তোমাদের গরু বিক্রি করে পাওয়া, সেটা পরে জানতে পারি আমি!
টাকাটা নিয়ে তারপর কি করেছ?
কেন ওয়ারেনকে দিয়েছি।
আস্তাবলের বালিতে গোড়ালি দাবালে কলিন, আবার জুতোর ডগার দিকে তাকালো, তারপর বললো, উঁহু হেলার, এত অল্পে হবে না। তুমি আদালতে দাড়িয়ে উল্টো সুরে কথা বলবে না তার কি নিশ্চয়তা। আমি প্রমাণ চাই, নিরেট কিছু।
সেটা কোথায় পাবো?
আমি কি জানি। ভেবে দেখো। চিন্তা ভাবনা করে একট। কি বের করো, নইলে তোমারও বিলের দশা হবে। আধ ঘন্টা সময় দিলাম তোমাকে।
মাত্র আধ ঘণ্টা!
হ্যাঁ, মাত্র আধ ঘণ্টা। আধ ঘণ্টা পর আবার আসবো আমি, ভালো কিছু শুনতে চাই তখন, নইলে…’ কথাটা ইচ্ছে করেই অসমাপ্ত রাখলো কলিন।
হ্যারলড লেভিটের উদ্দেশে মাথা দোলালো ও। বেলিনডাকে নিয়ে যাচ্ছি আমি। কফি তৈরি হচ্ছে। তোমরা এখানে ঠিক করো আধ ঘন্টা পর আমাকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে ওর দায়িত্ব কে নেবে। তবে যা ওয়াদা করেছি, ওকে ঠিক আধ ঘণ্টা সময়ই দেবো আমরা, তারপর—কাঁধ ঝাঁকালো ও, বেলিনডার হাত ধরে বেরিয়ে এলো আস্তাবল থেকে।
পুব আকাশে ভোরের ধূসর আলো, হালকা হয়ে আসছে অন্ধকা। র্যাঞ্চ হাউসে ফেরার পথে লক্ষ্য করলো কলিন, অবাক হলো, এত তাড়াতাড়ি সকাল হবে ভাবেনি।
কাপছে বেলিনডা, বারান্দার সিঁড়িতে পৌঁছে দাড়িয়ে পড়লো সে। বিলকে নিয়ে কি করেছে ওরা?
মেরেছে।
ওকে কোনো সুযোগ না দিয়েই?
স্প্রীংগারভিলে আমাদের লোকদের হত্যা করার সময় ওরাও তাদের কোনো সুযোগ দেয়নি। তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম, এসবে ভব্যতার অস্তিত্ব খোজা অবান্তর।
তুমি যা জানতে চাইছে, যদি না বলে, হেলারকে কি করবে? ওকে—
মাথা দোলালো কলিন। আমি যতটা ভেবেছিলাম তারচেয়ে অনেক গভীরভাবে জড়িত হেলার এটাই, আমার মাথায় ঢুকছে না, ওয়ারেনের সাথে ওর সম্পর্কটা কোথায়?
হেলার রবার্ট ওয়ারেনের অ্যাটর্নি।
বেসিনের প্রায় সবারই তো অ্যাটর্নি সে। নিশ্চয়ই ম্যাকমিলানেরও অ্যাটর্নি ছিলো হেলার। ম্যাকমিলান র্যাঞ্চটা বিক্রি করে দিলো কেন?
বয়স হয়েছিলো তো, মনে হয়, ব্যাঞ্চিংয়ের খাটুনি আর সহ্য হচ্ছিলো না তার।
ওয়ারেন হঠাৎ হাজির হলো কিভাবে?
এই মানে হাজির হলো আরকি-ম্যাকমিলান র্যাঞ্চ বিক্রি হবে–খবরটা কারো কাছে শুনেছিলো হয়তো।
মাথা নাড়লো কলিন। এভাবে সমাধানে পৌঁছুনো সম্ভব নয়।
ভেতরে ঢুকলো ওরা। রান্নাঘরে চুলের আগুন উস্কে দিলো কলিন, আরো লাকড়ি দিলো। চুলোয় চাপানো পটে অবির কফি আর পানি দিলে বেলিনডা।
র্যাঞ্চে তোমার জন্যে ভাববে না তো ওরা? জিজ্ঞেস করলো কলিন।
ভাবতে পারে। অবশ্য প্রায়ই রাতের বেলা ওয়াগোনারে থাকি আমি, ওরা তা জানে।
আচ্ছা, মেরি কেমন আছে?
ভালোই, সারাক্ষণ অস্থির। বুঝলে কলিন, ওকে আসলে আরো বেশি সময় দেয়া উচিত আমার, কিন্তু র্যাঞ্চের হাজারো কাজে এত ব্যস্ত থাকতে হয়–
আবার বিয়ে করলেই পারো?
পছন্দসই ছেলে কই?
এদিকটা ভালো করে ভেবে দেখা উচিত তোমার। র্যাঞ্চের কাজ দেখাশোনার জন্যে একজন পুরুষ থাকলে মেরিকে অনেক বেশি সময় দিতে পারতে তুমি।
মৃদু হেসে মাথা নাড়লো বেলিনডা। আমার জন্যে তোমাকে অত ভাবতে হবে না। পছন্দসই ছেলে যদি পাই কখনো এবং সে রাজি হলে তখন দেখা যাবে।
কথা বলে চললো ওরা। টগবগিয়ে ফুটছে পটের কফি। এই পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে কলিনের। আস্তাবলে কিছুক্ষণ পরে কি ঘটতে যাচ্ছে ভুলে গেল ও, প্যাসি আসার পর কি করবে সেই চিন্তাও মুছে গেল মন থেকে। রান্নাঘরে একটা চেয়ারে বসে ও, মাথার পেছনে হাত। একটা কাপে কফি ঢাললো বেলিনড, চুমুক দিলো, মাথা দোলালো, সন্তুষ্ট, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো কলিন। আরেকটা কাপে কফি ঢাললো বেলিনডা, কলিনকে দিলো।
আমি বাইরে গিয়ে দুজন দুজন করে কফি খেতে পাঠিয়ে দেবো, বেলিনডাকে বললো কলিন। ইশ, রোজ এরকম তোমার বানানো কফি যদি খেতে পারতাম! তোমাকে আটকে রাখতে ইচ্ছে করছে!
আরক্ত হলে বেলিনডা। বোকার মতো কথা বলল না, কলিন।
বেরিয়ে গেল কলিন। আরো ফর্সা হয়ে এসেছে আকাশ, উত্তরে মেসকালেরে মাউনটেনসের কালো কাঠামো দেখা যাচ্ছে, তবে আরো কাছের করাতের মতো খাজ কাটা পাহাড়সারি অনেক বেশি স্পষ্ট। অনেক নিচ দিয়ে ভেসে যাচ্ছে মেঘের দল, বৃষ্টি আসবে, কিন্তু কখন?
আস্তাবলের দিকে এগিয়ে গেল কলিন ফোর্বস। কফি খাওয়ার জন্যে হ্যারলড আর হনটেকে র্যাঞ্চ হাউসে পাঠালো। শেরিডান কে বললো পাহারায় থাকতে। তারপর টেরি জেলারম্যানকে নিয়ে হেলারের কাছে এলো।
কিছু বের হলো? জিজ্ঞেস করলো। মাথা দোলালো অ্যাটর্নি। মনে হয় তোমাকে সন্তুষ্ট করতে পারবো।
কিভাবে?
তুমি নিরেট প্রমাণ চাইছে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে না–প্রতিশ্রুতি দিলে আমি তা দেবো।
কি প্রমাণ?
তোমাদের গরু বিক্রির টাকা, রবার্ট ওয়ারেন আমার কাছেই জমা রেখেছে ওগুলো; ঊনত্রিশ হাজার দুশো একাশি ডলার, প্রত্যেকটা তোড়ায় ক্যাটল-বায়ার অফিসের ছাপ মারা। টাকাটার উৎস বের করা কঠিন হবে না।
টাকাটা তোমার সেফে গেল কিভাবে?
ওয়ারেন ব্যাঙ্কে রাখতে চায়নি ওগুলো–নানা প্রশ্ন উঠত–রাঞ্চে ওর নিজস্ব একটা সেফ আছে অবশ্য, কিন্তু আমারটার তুলনায় ওটা টিনের বাক্স ছাড়া কিছু না।
তাহলে তো দেখা যাচ্ছে খুব ঘনিষ্ঠ মানুষ তোমরা? তোমাকে বিশ্বাস করে এতগুলো টাকা জমা রেখেছে।
আমি ওর অ্যাটর্নি, তাই রাখতে দিয়েছে ঘনিষ্ঠতার প্রশ্ন আসছে কেন?
বার্নের বাইরে ছুটন্ত পায়ের শব্দ পেলো কলিন। দরজা খুলে মাথা গলিয়ে দিলো শেরিডান।
ওরা আসছে! বললো সে।
প্যসি?
প্যসি বললে প্যসি। বাইরে এলো কলিন ফোর্বস। শহরমুখী রাস্তার দিকে তাকালো। একদল অশ্বারোহী আসছে,এদিকে। এগারোজন, গুণলো ও। অবশ্য সংখ্যাটা কোনো ব্যাপার নয়, ওদের সঙ্গে লড়াইতে টিকতে পারবে না কলিনরা।
কি করবো আমরা? জানতে চাইলে শেরিডান।
হেলার আর বিলকে নিয়ে র্যাঞ্চ হাউসে চলে যাও তোমরা জলদি! একদম সময় নেই।
দীর্ঘ এক মিনিট ঠায় দাড়িয়ে রইলো কলিন, মনে মনে উপায় খুজছে। সটকে পড়ার মতো সময় নেই, ওয়ারেনের নেতৃত্বাধীন প্যসির কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকিও নেয়া যাবে না; ব্যাপারটা লড়াইয়ের দিকে গড়ালে টিকে থাকার আশা নেই বললেই চলে।
আর একটা ঘণ্টা সময় যদি পেতো! হেলারের পেট থেকে সব কথা বের করে ফেলতে পারতো ও। তারপর আবার শহরে যেত ওরা। কিন্তু এখন আর এসব ভেবে ফায়দা কি?
অ্যারন হেলার আর বিল ওয়ারেনকে নিয়ে র্যাঞ্চ হাউসের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে শেরিডান আর জেলারম্যান।
ওদের অনুসরণ করলো কলিন।
<