লকহার্টের স্টোরে নির্বিঘ্নে পৌঁছাল ওরা।

উইলিয়াম লকহার্টকে আজ অন্য রকম মনে হচ্ছে-চাপা উৎকণ্ঠা লোকটার চোখে-মুখে। অন্য কোন সময় হলে যা হত, বড় ধরনের কিছু ঘটলেও সেটা তাকে স্পর্শ করত না, আজ তা নেই। এই প্রথম স্বভাববিরুদ্ধ একটা কাজে হাত দিয়েছে স্টোর মালিক, বাফেলো টাউনের একজন সচেতন অধিবাসী হিসেবে আইনকে সক্রিয় সহযোগিতা করছে।

লকহার্ট হুইস্কির বোতল এগিয়ে দিতে নিষেধ করল ব্রুকস, কিন্তু গ্যারেটরা সোৎসাহে নিল। সিগারেট ধরিয়ে মার্শালের দিকে তাকাল ও। ওরা কোথায় আছে, জ্যাক?

হবসের মনোযোগ অন্যদিকে, লোলুপ দৃষ্টিতে দেখছিল প্যাটের হাতের বোতল। সংবিৎ ফিরতে ফিরে তাকাল। কার কথা বলছ?

মন্টানা, ম্যাসন, কোলম্যান…, মন্টানা আর কোলম্যানসহ চারজন আছে সিলভার রকে। টিম আছে লঅফিসে, আমার চেয়ারটা বোধহয় ওর ভাল লাগতে শুরু করেছে। স্টিরাপকে কোথাও দেখিনি। গতকাল বেশিরভাগ সময় প্যালেসে কাটিয়েছে ও, সাথে আরও তিনজন ছিল। একটাকেও চিনি না। গ্যারেট বোতল এগিয়ে দিতে লুফে নিল সে, আগ্রহের সাথে চুমুক দিল।

দায়িত্বটা বুঝতে পারছ, জ্যাক? তোমাকে সক্রিয় হতে হবে। এভাবে গিলতে থাকলে শেষে গুলিয়ে ফেলবে সব।

আমি অভ্যস্ত, স্যাম।

অফিসে বসে সময় কাটাতে তুমি আরও বেশি অভ্যস্ত! কঠিন সুরে বলল ব্রুকস, বিরক্তি চেপে রাখার কোন চেষ্টা করল ন!। টিম ম্যাসনের পায়ে ধরে দেখো, ও হয়তো চেয়ারটা তোমাকে দিয়ে দিতে পারে।

আহত দেখাল মাশালকে। ঠিক আছে, তুমি যখন পছন্দ করছ না… শেষ না করে হতাশ ভঙ্গিতে কাঁধ উঁচাল হবস, বোতলটা ধরিয়ে দিল স্টোর মালিকের হাতে, বিড়বিড় করে কি বলল বোঝা গেল না।

ভাল করে শুনে নাও, সিলভার রকে যাচ্ছি আমরা। পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকবে ব্র্যাড। জ্যাক, তুমি সামনের দরজা দিয়ে। তোমার একটু পরে ঢুকব আমরা, ঠিক আছে?

সবাই একসঙ্গে ঢুকলে অসুবিধে কি?

আছে। সেটা করলে, আমাদের দেখেই গুলি করতে শুরু করবে ওরা। কাজটা তাতে কঠিন হয়ে যাবে।

ব্র্যাড বেরিয়ে যাওয়ার পর জ্যাক হবসকে অনুসরণ করল ব্রুকস আর প্যাট। রৌদ্রোজ্জ্বল একটা সকাল, ঠাণ্ডা বাতাস জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগাম সংবাদ। সিলভার রক সেলুনের সামনে এসে ঘুরে দাঁড়াল মার্শাল, দৃষ্টি বিনিময় হলো একটু পাশে দাড়িয়ে থাকা ব্রুকসের সাথে। মাথা ঝাকিয়ে দৃঢ় পায়ে এগোল হবস, পোর্চে উঠে গেল। একটু আগের চেয়ে ঢের আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে তাকে।

ব্যাটউইং দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল জ্যাক হবস। সবকটা চোখ ঘুরে গেল তার দিকে। বুকে লাগানো তারাটাই ওদের বেশি আকর্ষণ করছে, টের পেল মার্শাল।

বারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল স্টিভ কোলম্যান, হাতে হুইস্কির গ্লাস। অবাক হয়ে দেখছে হবসকে। বারের ওপর গ্লাস নামিয়ে রেখে এগিয়ে এল। এটা আবার কোখেকে জোগাড় করলে, জ্যাক? আমুদে গলায় জানতে চাইল। তোমাকে না বলা হয়েছে এ জিনিসটা তোমার শার্টের সাথে ঠিক মানায় না? মায়ায় পড়ে গেছ?

আড়চোখে মন্টানা কিডের দিকে তাকাল মার্শাল। কোণের একটা টেবিলে আয়েশ করে বসেছে, মুখে জ্বলন্ত সিগার। সন্তুষ্টির সাথে লক্ষ্য করল ওদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না গানম্যান। ভাবলেশহীন মুখে হাতের তাস দেখল একবার, তারপর মুখ তুলে নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তাকাল প্রতিদ্বন্দীর দিকে। আরেক বন্দুকবাজ, এল পাসো থেকে এসেছে। লোকটার পরিচয় জানা নেই হবসের। ওদের কাছেই, দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট রোল করছিল চতুর্থ লোকটা, পাশে ব্রঙ গ্যারেটের উপস্থিতি টের পেয়ে থেমে গেছে হাতগুলো!

আরাটা তোমাকে একেবারেই মানাচ্ছে না, জ্যাক, বলে চলেছে কোলম্যান, পাঁচ হ্যত দূরে এসে দাড়িয়েছে। খুলে আমার দিকে ছুঁড়ে দাও তো! নাকি আগেরবারের মত কেড়ে নিতে হবে?

ওখানেই দাঁড়াও, কোলম্যান! নিজের উপস্থিতি জানান দিল ব্র্যাড়। আর এগিয়ো না?

চরকির মত আধ-পাক ঘুরল লোকটা, দুহাতে তুলে আনছে জোড়া পিস্তল। মাঝপথে ফুটো হলো র পেট, গুলির ধাক্কায় থেমে গেল ঘূর্ণন। পিস্তল তুলে নিশানা করার চেষ্টা করল কোলম্যান। ব্র্যাভ এবার ওর কপাল ফুটো করতে হুড়মুড় করে মেঝেয় ধসে পড়ল শরীর, কয়েকটা খিচুনি দিয়ে স্থির হয়ে গেল।

দাড়িয়ে থাকা লোকটা শালি করতে যাচ্ছিল গ্যারেটকে। নির্দ্বিধায় তার বুকে দুটো বুলেট পাঠিয়ে দিল জ্যাক হবস। দেয়ালে আছড়ে পড়ল বিশাল দেহটা, হেঁচড়ে নেমে গেল। পা ছড়িয়ে বসে পড়ল এরপর, মাথা নোয়ানো। আগেই পিস্তল ছেড়ে দিয়েছে।

ব্রুকস আর প্যাট ইতোমধ্যে এসে পড়েছে।

টেবিল উল্টে ফেলে দাঁড়িয়ে পড়েছিল মন্টানা কিড, কোমরে চলে গেছে হাত। চারটা উদ্যত পিস্তল দেখতে পেয়ে আগুনে পানি পড়ল যেন, নিমেষে হাত সরিয়ে নিল। যথেষ্ট দূরত্বে এনে রাখল।

কাজ সেরে ফেলল, জ্যাক, তাগাদা দিল ব্রুকস। আমরা কাভার করছি।

দুই গানম্যানকে নিরস্ত্র করল মার্শাল।

আমার নামে কোন পোস্টার পাবে না, মনে করিয়ে দিল মন্টানা। এখানে এসেও এমন কিছু করিনি যাতে কোনভাবে আমাকে অভিযুক্ত করতে পারো তোমরা।

তাতে কিছু যায়-আসে না। আপাতত তোমাদের সেলে ভরছি। আমলনামা যদি সত্যি পরিষ্কার থাকে তো ঝামেলাটা শেষ হলে ছাড়া পাবে। নাও, এগোও এবার। কোন চালাকি করতে যেয়ো না।

বাইরে চোখ রাখছিল প্যাট গ্যারেট। ওরা টের পেয়ে গেছে, ঘোষণা করল সে।

একসাথে বেরোব আমরা। সামনে রাখো ওদের।

ব্যাপারটা পছন্দ করতে পারছে না মন্টানা কিড। আগাগোড়া একজন পেশাদার বন্দুকবাজ সে, বুঝতে পারছে পারকারের পরিকল্পনা মাফিক একতরফা ভাবে আর কিছু ঘটবে না এখন। স্যামুয়েল ব্রুকস যে শক্তপাল্লা সেটা খুব ভালভাবে প্রমাণ করেছে। একগাদা লোক লেলিয়ে দিয়েও কাজের কাজ হয়নি কিছু, বহাল তবিয়তে আছে সে। এখন আরও দুজন কঠিন লোক জুটিয়েছে সাথে এবং সম্ভবত বাফেলল টাউনের সাধারণ মানুষ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্শাল জ্যাক হবসকে পদচ্যুত না করার পরামর্শ দিয়েছিল সে, ওর কথা কানে তোলনি পারকার। ওর আশঙ্কাই ফলতে যাচ্ছে-পুনর্বহাল হয়েছে হবস, জুলিয়াস পারকারকে জড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করবে এবার। কাজটা কঠিন কিন্তু তিনজন সেরা নোক সাথে থাকায় অসম্ভব হবে না।

সুযোগ আসবেই। ওর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং আটকে রাখতে পারবে না, খুব বেশি হলে দুটো দিন। টাকা নিয়ে কাজ করেনি, আজতক এমন অপবাদ ওকে দিতে পারেনি কেউ। এবারের কাজটাও সারবে, জুলিয়াস পারকার মরে গেলেও নড়চড় হবে না। আপাতত ধৈর্য ধরতে হবে, কারণ ওরাই আছে চালকের আসনে। যে কোন মুহূর্তে ছকটা পাল্টে যেতে পারে।

টম লোগানকে পাশে নিয়ে এগোচ্ছে কিড। লোকজন কৌতূহলী হয়ে দেখছে। প্যালেসের সামনে কাউকে দেখা যাচ্ছে না, ভেতরে চার-পাঁচজনের থাকার কথা, ভাবল সে। ওরা বেরিয়ে এলেও কিছু করতে পারবে না বরং মন্টানা আর লোগানই এলোপাতাড়ি গুলির মুখে পড়বে।

ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছে গ্যারেটরা, রাস্তার দুপাশে দুভাই। মাঝরাস্তায় দুই আসামীর পেছনে মার্শাল ও ব্রুকস। দুপাশের বাড়িগুলো থেকে কেবল ওদের চারজনকে দেখা যাবে। যে কেউ চাইলে ওদের গুলি করতে পারে, এবং দুপাশ থেকে গ্যারেটরা নিমেষে সক্রিয় হয়ে উঠলে তাকে অবাক হতে হবে। সিলভার রকের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ল-অফিসে যেতে পারত ওরা, তাতে কোন ঝুঁকিও ছিল না। স্যামুয়েল ব্রুকস তা করেনি। দারুণ পরিকল্পনা করেছে লোকটা, ভাবছে মন্টানা, বার-পি রাইডারদের প্রলুব্ধ করতে চাইছে সে এবং চায় বাফেলোর তাবৎ লোকজন যাতে দৃশ্যটা দেখে সাহস পায়। কি করে লড়তে হয় জানে লোকটা, প্রশংসার সাথে নিঃসঙ্কোচে ভাবল কিড, আর এ জন্যেই সারা পশ্চিমের ট্রেইলের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে ওর নাম। শিগগিরই তার সামনাসামনি দাঁড়াবে ও, পুরানো লেন-দেনটা চুকিয়ে ফেলতে হবে।

পারকারের সেলুনের সামনে চলে এসেছে দলটা। হঠাৎ করে ব্যাটউইং দরজা ঠেলে বেরিয়ে এল দুজন। বোকা, ফাঁদে পড়ে কচুকাটা হয়ে যাবে, করুণার সাথে ভাবল মন্টানা কিড। একটু পর দেখল পোর্চের ওপর লুটিয়ে পড়ল ওরা, একটা গুলি করারও সুযোগ পায়নি।

ল-অফিসের দিকে এগোও, কিড়। তাড়া দিল মার্শাল।

মোড় নিয়ে সেদিকে এগোল দুই গানম্যান। লোগান উসখুস করছে, কিছু একটা করার জন্যে প্রাণ ফেটে যাচ্ছে ওর। চোখের সামনে দুটো লোককে মরতে দেখেও হুঁশ হয়নি। বোকার হদ্দ! বেঁচে থাকলে পরেও সুযোগ পাবে, নিচু স্বরে তাকে ধমকে উঠল মন্টানা। যা বলছে করো। দেখেছ তো পিস্তল হাতেও ওরা পাত্তা পায়নি, আর তুমি তো নিরস্ত্র।

তাই বলে সেলে ঢুকব? দ্বিগুণ তেজে চিৎকার করল সে। পেয়েছেটা কি! চারজনে মিলে সবাইকে হারাতে পারবে না নিশ্চয়ই?

লোগানের মেরুদণ্ড বরাবর পিস্তলের নল হাঁকাল ব্রুকস। তীব্র ব্যথায় ককিয়ে উঠল এল পাসোর বন্দুকবাজ, দাড়িয়ে পড়েছে। কাঁপছে সারা শরীর, মনে হলো হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবে। শোনো, স্ট্রেঞ্জার, মন্টানা ঠিকই বলেছে। পরেও সুযোগ পাবে, লোগানকে বলল ও, হাসছে। আর যদি চাও তোমাকে একটা পিস্তল দিতে পারি। সাহস থাকে তো ত্রিশ হাত দূরে গিয়ে দাঁড়াও।

ঘৃণাভরে ওকে দেখল টম লোগান, থুথু ফেলল মাটিতে। অত তাড়া দেখছি না, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, কণ্ঠে অবজ্ঞা। আমার ভাইকে খুন করেছ তুমি, ব্রুকস। মনে রেখো তোমাকে খুন না করে শান্তি নেই আমার!

এগোও, নইলে আবার মারব।

চলে এসো, টম, ডাকল মন্টানা।

মাথা ঝাঁকাল সে, আরেকবার থুথু ফেলে এগোল। কিছুক্ষণের মধ্যে টিম ম্যাসনের দেখা পাবে, ভাবছে, ম্যাসন নিশ্চয়ই ল-অফিসে আছে। ওরা ঢুকলে নিজের কাজ দেখাবে।

ভেতরে ঢোকার পর আশাহত হলো টম লোগান।

সেলে ঢোকানো হলো দুই আসামীকে। পেছনের কামরায় চলে এল হবস, ম্যাসনের পাত্তা সেখানেও নেই। এতে অবশ্য ওদের কাজ সহজ হয়ে গেছে। সমানে চলছিল লোগানের মুখ, জ্যাক হবস যখন জানাল এরকম গালাগাল করলে দুপুরের খাবার পাবে না, চুপ মেরে গেল সে। একটা সিগারেট চাইল কেবল।

ফিরে এসে কফির পানি চড়াল মার্শাল। একটু আগে বেরিয়ে গেছে ডেপুটিরা। নিজের আসনে বসে প্রশান্তি অনুভব করল সে, দরজা খোলার শব্দে তাকাল। দুই যুবককে নিয়ে ঢুকেছে উইলিয়াম লকহার্ট। শহরের একমাত্র হোটেলের মালিক ফ্রেডারিক হারপারের ছেলে জোনাথন আর লেসলি হারপার। স্বেচ্ছাসেবক। অস্ত্রে পারদশী না হলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারবে।

কটাকে ধরেছ, জ্যাক? চেয়ার টেনে বসল স্টোর মালিক। হারপাররা দুভাই জানালার কাছে সরে গিয়ে নজর রাখার দায়িত্বে থাকল।

মন্টানা আর লোগান।

কোন্ লোগান?

ম্যাট লোগানের ভাই। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রতিশোধ নিতে এসেছে।

পোস্টার আছে?

না। তবে ওদের কাউকেই ধোয়া তুলসি পাতা মনে হচ্ছে না।

কি করবে? আটকে রাখা মানেই ঝামেলা, আবার ছেড়ে দিলেও বিপদ।

সবকিছু ভালয় ভালয় শেষ হোক। ভাবছি এরমধ্যে খোঁজ নেব। মন্টানার নামে কোন পোস্টার নেই ঠিকই, কিন্তু লিয়ন সিটিতে তার করলে ওর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে মনে হয়।

তোমার ডেপুটিরা কোথায়?

তিনজনই কিছু না বলে বেরিয়ে গেছে। উঠে চুলোর কাছে গেল মার্শাল, সময় নিয়ে কফি তৈরি করল। পরিকল্পনাটা দারুণ কাজে দিচ্ছে। পারকারের নাগাল পেতে বেশি দেরি নেই আর। অর্ধেক লোক এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘোড়া ছোটাবে।

এত সহজ ভেবো না, কফিতে চুমুক দিল স্টোর মালিক। পারকার হাল ছেড়ে দেয়ার লোক নয়। এ শহরের জন্ম থেকে ওদের ইচ্ছেমাফিক হয়ে এসেছে সব। আজও যেন তার ব্যতিক্রম না হয় সে-চেষ্টাই করবে। আমি ভয় পাচ্ছি অন্য কারণে—আমরা সফল বা ব্যর্থ যাই হই না কেন, ও এটা আজীবন মনে রাখবে এবং সুযোগ পাওয়ামাত্র শোধ তুলবে।

তোমাকে ঠিক মানাচ্ছে না, বিল, খানিকটা বিস্ময় আর পরিহাসের সুরে বলল মার্শাল। পাকা ব্যবসায়ী তুমি, লাভ ছাড়া একটা পা-ও ফেললা না এবং বরাবর ভবিষ্যৎটা আগে থেকে ভেবে নাও। এবার না ভেবেই চাল দিয়ে দিলে।

ভেবেছি, বন্ধু, অমায়িক হাসল লকহার্ট। আমাকে এত বোকা ভেবো না, বুড়ো বয়সে এসে মাথাও খারাপ হয়ে যায়নি। এ ঠেলায় জুলিয়াস পারকারকে পঙ্গু করে দেব আমরা, এরপর যাতে কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।

কি করবে তুমি!?

আমি নিজে কিছুই করব না। ঘটনাগুলো দেখো, তাহলে বুঝতে পারবে। লোকটা নিজেই নিজেকে ধ্বংস করবে। ওর শত্রু হচ্ছে ওর অহঙ্কার আর জেদ। ব্রুকসের পেছনে লাগাটাই ওর কাল হয়েছে।

 

ল-অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ফুটপাথে দাঁড়াল স্যামুয়েল ব্রুকস। ফাকা রাস্তার ওপর চোখ বুলাল, নেই কেউ। সিলভারের পোর্চে দেখা যাচ্ছে কয়েকজনকে, অলস সময় পার করছে। যে কোন সময়ে গোলাগুলি শুরু হতে পারে জানে ওরা, রাস্তায় বেরিয়ে তাই ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছে নেই কারও। উল্টোদিকে একটা ক্যাফের ভেতর জানালার কাছে বসে আছে ব্র্যাড গ্যারেট, হাতে সিগার আর সামনে টেবিলের ওপর কফির মগ। ওর সহোদর আছে বিল কারভারের অফিসের বারান্দায়। উত্তরে গির্জা ছাড়িয়ে চলে গেল ব্রুকসের দৃষ্টি, বিশাল সুদৃশ্য বাড়িটার ওপর আটকে রইল, জুলিয়াস পারকারের বাড়ি। বারান্দা বা ছাদে কাউকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু ওখানেই আছে বাকি লোকগুলো, অন্তত বেশিরভাগ।

প্যালেস-এর ওপর স্থির হলো ওর দৃষ্টি। স্বল্প আলোয় আবছাভাবে চোখে পড়ছে ভেতরটা। কয়েকজন খদ্দের আছে, তাদের কেউ কেউ বার-পির ক্র-ও হতে পারে। সুযোগের অপেক্ষায় আছে হয়তো। কোন একটা ছুতোয় লোকগুলোকে বের করে আনতে হবে, নয়তো ওদেরই উদ্যোগী হয়ে পারকারের সেলুনে অথবা বাড়িতে হানা দিতে হবে। কাজটা সহজ হবে না। টিম ম্যাসনের অনুপস্থিতি ভাবাচ্ছে ওকে, তাকে সেলে পোরা দরকার। ফাঁকতালে কখন কি করে বসে ঠিক নেই।

সন্ধে পর্যন্ত যখন কিছুই ঘটল না পারকারের সেলুনে হানা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল ব্রুকস। রাস্তায় বেরিয়ে এল। আশপাশের বাড়ি আর দোকান থেকে লণ্ঠনের ম্লান আলো এসে পড়েছে পোর্চ ও ফুটপাথে। সেলুনের ভেতরটা উজ্জ্বল দেখাচ্ছে, কিন্তু কাচের দেয়ালের এপাশ থেকে ভেতরের সবকিছু ভালভাবে বোঝার উপায় নেই। হিচিং রেইলে মাত্র চারটে ঘোড়া। খদ্দেররা বোধহয় আঁচ করতে পেরেছে ঝামেলা হতে পারে এখানে, তাই এড়িয়ে চলছে বাফেলোর সবচেয়ে জমজমাট সেলুনটি।

রাস্তা পেরোনোর সময় ঠাণ্ডা বাতাস লাগল গায়ে। এবার শীত বোধহয় আগে-ভাগে এসে পড়বে, ভাবল ব্রুকস। বাথানে অনেক কাজ পড়ে আছে, শীত জাঁকিয়ে বসার আগেই ওগুলো শেষ করতে হবে। বেগার খাটুনি যাবে কয়েকটা দিন। তবে সবার আগে এ ঝামেলাটা শেষ করতে হবে।

পোর্চে উঠে এল ও। সেলুনের ভেতরে কোন হৈ-হল্লা নেই। ব্যাটউইং দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল। যে কয়েকজন খদ্দের ছিল, অলস আলাপ থামিয়ে দেখল ওকে। ন্যাকড়া দিয়ে একটা বোতল মুছছিল বারটেন্ডার ডাস্টি ফগ, থেমে গেল হাত। চোখে বিস্ময়।

লোকগুলোকে খুঁটিয়ে দেখল ব্রুকস-দুজন লেযি-এস, তিনজন বক্স-বির। নিরীহ পাঞ্চার। বারের পাশে দাঁড়ানো লোকটার ওপর থমকে গেল ওর দৃষ্টি। আয়েশ করে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে, তবে সতর্ক একটা ভাব আছে। রোদপোড়া কঠিন মুখ। সমর্থ, মজবুত শরীর। কাউকে খুঁজছ নাকি, ব্রুকস? শান্ত স্বরে জানতে চাইলেও শীতল ভাবটুকু গোপন থাকল না।

ব্রনসন, স্টিরাপ বা অন্য কেউ, যারা তোমার মতই পারকারের দলে নাম লিখিয়েছে। একটা ফাঁদ! স্পষ্ট অনুভব করছে ব্রুকস।

পুঁচকে ট্রাউটগুলোকে খুঁজছ দেখছি! হাসালে আমাকে, ব্রুকস, হাসির ছিটেফোঁটাও নেই তার মুখে। নাম কিনছ তাহলে? তবে স্বীকার করতেই হবে ওদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পেরেছ। পারকারের কোলে গিয়ে ঠাই নিয়েছে সবাই। পুরুষ মানুষের মুরোদ কারও নেই। চাপা দম্ভ প্রকাশ পেল তার কণ্ঠে।

বোধহয় একটু বৈশি টেনে ফেলেছ?

দুই ঢোক গিলেছি কেবল। সেই দুপুর থেকে তোমার অপেক্ষায় আছি।

বেরিয়ে গিয়ে ডাকলেই পারতে।

চাইনি ভয় পেয়ে তুমি আবার পালিয়ে যাও।

বারের কাছে এসে দাঁড়াল ব্রুকস, সতর্ক দৃষ্টিতে মাপছে লোকটির প্রতিটি নড়াচড়া-আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই, দেহের পাশে শিথিলভাবে পড়ে আছে হাতগুলো; লম্বা আঙুল উরুতে বাধা হোলস্টার থেকে পিস্তলজোড়া যে কোন মুহূর্তে তুলে নিতে পারে। নিঃসন্দেহে কঠিন লোক। স্মৃতি হাতড়েও চিনতে পারল না ও। অবশ্য সব ফাস্টগানকে চেনার আগ্রহ ওর কোন দিনই ছিল না। নিজেকে রক্ষা করার জন্যে পিস্তল ব্যবহার করে ও, নাম কেনার জন্যে নয়। বিশাল এ দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিস্তলই আইন এবং নিরাপত্তার অবলম্বন। সুতরাং ওটার ব্যবহার যে যত ভাল জানবে সে তত বেশিদিন বাঁচবে। সেজন্যে সবার চেষ্টা থাকে পিস্তলে কি করে দ্রুত ও লক্ষ্যভেদী হওয়া যায়।

ব্রুকস নিশ্চিত এখানে একটা কিন্তু আছে। এত আত্মবিশ্বাসী হলে লোকটা নিজেই ওকে খুঁজে নিতে পারত। পেছনের দরজার ওপর নজর বুলাল, খানিক ফাঁক হয়ে আছে কবাটজোড়া, পেছনে অন্ধকার। হয়তো ওখানে পিস্তল হাতে তৈরি আছে কেউ। পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই, ঝুঁকিটা নিতেই হবে। দারুণ পরিকল্পনা করেছে লোকটা। ভেতরে ভেতরে ঘেমে উঠেছে ও। পিস্তলের কালো একটা নল হয়তো ধরা আছে বুক বরাবর, ইচ্ছে করলে দরজার পেছনের লোকটা গুলিও করতে পারে। কিন্তু সেটা বোধহয় এখুনি করবে না, নিরপেক্ষ তোক উপস্থিত আছে এখানে। অস্বস্তিবোধ করলেও আচরণে তা প্রকাশ পেতে দিল না ব্রুকস। দুজনে মিলে সাজানো আয়োজনটাকে একটা ফেয়ার ডুয়েলের রূপ দিতে চাইছে, খ্যাতির স্বপ্নে বিভোর-জন ওয়েসলি হারডিনকে যে লোক ডুয়েলে হারাতে পারবে, এক সপ্তাহে সারা পশ্চিমে বিখ্যাত হয়ে যাবে সে।

তোমার এত নাম-ডাক শুনেছি, অবজ্ঞা লোকটার গলায়, সিগার ধরিয়েছে। কিন্তু এমন কাউকে আমি পাইনি যে সরাসরি ডুয়েল লড়তে দেখেছে তোমাকে, এমন একটা কবরও দেখিনি যার ফলকে হত্যাকারী হিসেবে তোমার নাম লেখা। হয়তো একেক শহরে একেক পরিচয় দাও। কিন্তু আমার ধারণা একটা ফালতু লোক তুমি, স্রেফ ভাগ্যগুণে নাম কিনেছ।

হতে পারে। তোমার মত আরেকজন হয়তো এরকমই বলবে আরেকটা শহরে, অন্য কোন দিন। পেছনের লোকটা কেবল ওকেই দেখতে পাচ্ছে, ভাবছে ব্রুকস, দুজনের ওপর একসঙ্গে চোখ রাখা সম্ভব নয়। সে-চেষ্টাও করবে না। কারণ ডুয়েলের সময় প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ, এক লহমায় সবকিছুর কিনারা হয়ে যেতে পারে। অচেনা এ বন্দুকবাজ একটা সঙ্কেত দেবে, খুব সম্ভব নিজে যখন পিস্তলের দিকে হাত বাড়াবে। এবং নিশ্চিতভাবে ওর আগেই ড্র করবে। সঙ্কেত শোনামাত্র গুলি করবে অন্যজন। সিগন্যালটা কি হবে? বোঝা যাচ্ছে না, তবে এটুকু পরিষ্কার, কিছু একটা বলবে সে।

তোমার জন্যে দুঃখ হচ্ছে, ব্রুকস, প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া সিগার মেঝেতে ফেলল সে, বুট দিয়ে মাড়ানোর সময় সিধে হলো। টানটান হয়ে গেছে শরীর, ক্ষিপ্র বেগে পিস্তলগুলো তুলে আনার জন্যে হোলস্টারের কাছে চলে গেছে হাত, এত কাছে যে প্রায় বাট ছুঁয়েছে। মুহূর্তটা উপস্থিত, যে কোন সময়ে ড্র করবে সে। যাকগে, মরার আগে আমার নামটা শুনে নাও, হাসল বন্দুকবাজ, তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বেঁকে গেল ঠোঁটের কোণ। নইলে মরেও শান্তি পাবে না যে কার হাতে মারা পড়লে।

গলার স্বরে আকস্মিক পরিবর্তন আর প্রসঙ্গটা বাতলে দিল সবকিছু। নিজের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে ড্র করবে আগন্তুক। চোখ তুলে তার শীতল চোখের দিকে তাকাল ব্রুকস, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে বন্দুকবাজকে। এবং উল্লসিত। বলে যাও, ধীরে ধীরে বলল ও। কবরের ফলকে নামটা তো লিখে রাখতে হবে, তাই না?

মুহূর্তের জন্যে থমকে গেল লোকটা, বোধহয় খানিক অস্বস্তি হলো প্রতিপক্ষের দৃঢ়তা লক্ষ করে। লম্বা করে শ্বাস টানতে নাকের পাটা ফুলে উঠল। তুমি রব কোহেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছ, হারডিন! নিচু স্বরে কথাগুলো বলল সে, বিদ্যুৎ বেগে ছোবল মেরেছে হোলস্টারে। চোখের নিমেষে খাপমুক্ত হলো পিস্তলজোড়া, কোমরের কাছ থেকে গুলি করল।

একসাথে দুটো গুলি করেছে ব্রুকস, শব্দ শুনে মনে হলো একটাই। ইঞ্চিখানেক ফাঁক হয়ে ছিল দরজার কবাটদুটো, সেই ফাঁক দিয়ে পাঠাল প্রথম বুলেট। নরম কিছুতে গুলি বেঁধার ভোতা শব্দ হলো প্রথমে, তারপর ক্ষীণ কাতরধ্বনি, সবশেষে দরজার ওপর সশব্দে ভারী কিছু হুমড়ি খেয়ে পড়ার আওয়াজ। কবাটজোড়া লেগে গেল। ঠিক সময়ে গুলি করেছিল লোকটা, কিন্তু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ব্রুকস, ডুয়েলের সময় বরাবর যা করে, সেটাই ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ওর হ্যাট তুলে নিয়ে চলে গেছে বুলেট। এর পরপরই ঝাপ দিয়েছে পাশে, মাঝপথে গুলি করল রব কোহেনকে, দুটো পিস্তল থেকে একসঙ্গে। বারের ওপর ছিটকে পড়ল সে, শেষ চেষ্টায় ট্রিগার টিপেছিল, ছাদ ফুটো করল কেবল।

শুয়ে থেকে শেষ বুলেটটা পাঠাল ব্রুকস, রব কোহেনের কপালে টিপ পরিয়ে দিল। ধীরে উঠে দাঁড়াল, দেখছে কোহেনকে। চরম বিস্ময় লেগে আছে বন্দুকবাজের চোখে। মেঝেতে পড়ার সময় ঘাড় থেকে শরীরের নিচের অংশ বিশ্রীভাবে বেঁকে গেছে। মৃত্যুটা এমনিতেই হত, শেষ গুলিটা অযথা খরচ হলো। বন্ধ দরজার দিকে তাকাল ও, যদিও ওদিক থেকে বিপদের আশঙ্কা নেই। জলদি দরজাটা খোললা, ডাস্টি! শীতল কণ্ঠে আদেশ করল বারকিপকে।

ছুটল ডাস্টি ফগ। দরজা ঠেলে দিতে গড়িয়ে পড়ল শরীরটা। আবছা আলোয় লোকটাকে দেখল ব্রুকস, অচেনা। রব কোহেনের কোন দোস্ত বা স্যাঙাৎ হবে বোধহয়।

পিস্তলে টোটা ভরার সময় বারকিপারের দিকে ফিরল ও। আর একটা মুহূর্তও নয়, ডাস্টি! এখুনি বাফেলল টাউন ছাড়ছ তুমি।

আমার দোষ কি, মি. ব্রুকস?

পিস্তলের নল চালাল ও। আর্তনাদ করে দুহাতে নাক চেপে ধরল ডাস্টি, রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। জঘন্য একটা লোক তুমি! পরকারের কোন চামচা এ শহরে থাকতে পারবে না।

আমার পরিবার, ওরা… সন্ত্রস্ত গলায় বলার চেষ্টা করল বারকিপ, কিন্তু তাকে থামিয়ে দিল ব্রুকস।

দেরি করলে ওদের দেখা কোনদিনই পাবে না।

যাচ্ছি, মি. ব্রুকস, যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে বলল সে। নাক থেকে সরিয়ে চোখের সামনে তুলে দেখল রক্তাক্ত হাত। বারের ওপাশে গিয়ে গায়ের অ্যাপ্রন খুলে নাকমুখের রক্ত মুছল।

আমাকে একটা ড্রিঙ্ক দাও। হোলস্টারে পিস্তল ভরে একটা টুলে বসল ব্রুকস।

শিওর, মি. ব্রুকস, দ্রুত হাত চালাল ডাস্টি, গ্লাসে হুইস্কি ঢালার সময় বারের ওপর ছলকে পড়ল খানিকটা। কাঁপা হাতে বাড়িয়ে দিল গ্লাস।

সেলুনে ঢুকল ব্র্যাড গ্যারেট, হাতে ভোলা পিস্তল। ভেতরের পরিস্থিতির ওপর নজর বুলিয়ে হোলস্টারে অস্ত্র ফেরত পাঠাল। এগিয়ে এসে পাশে বসল টেক্সান। ওহে, ফগের বাচ্চা, আমাকেও এক গেলাস দাও। হবসের ছাইপাঁশ খেয়ে কি আর তেষ্টা মেটে? ব্রুকসের দিকে ফিরল এবার। সাজানো একটা নাটকের গন্ধ পাচ্ছি যেন? তুমি বাপু সবটা একাই মেরে দিলে!

একা থাকায়ই ভাল হয়েছে, হুইস্কিতে চুমুক দিল ব্রুকস, তোমরা সাথে থাকলে ঢোকার পরপরই গুলি করত ওরা। অনুভব করছে তরল আগুন ওর উত্তেজিত স্নায়ুগুলোকে বশে আনছে। ডাস্টি ফগের দিকে তাকাল, হতাশায় স্নান দেখাচ্ছে বারকিপকে। তার প্রতি আচরণটা রূঢ় হয়ে গেছে, ভাবল ও। এমন একটা মুহূর্ত এইমাত্র পেরিয়ে এসেছে যা ওকে আগ্রাসী হতে বাধ্য করেছিল। সাজানো নাটকের অসহায় শিকার ছিল ও, পিছিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না, বাধ্য হয়ে ওদের খেলায় যোগ দিতে হয়েছে। ব্যর্থতার আশঙ্কা ছিল এবং তা পেরিয়ে এসেও ওর উৎকণ্ঠা কাটেনি। হুট করে এখানে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে বিরক্তিবোধ করছিল। সব মিলিয়ে নিজের ওপর ওর নিয়ন্ত্রণ ছিল কমই। ডাস্টি ফগ হয়তো এ ষড়যন্ত্রের সহযোগী নয়, সেরকম হলে সত্যি বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে।

বড্ড ঝুঁকি নিয়েছিলে। মৃদু স্বরে মন্তব্য করল ব্র্যাড।

উপায় নেই, ওরা দলে,ভারী, সংখ্যাটা কমাতে হলে কিছু ঝুঁকি তো নিতেই হবে। ভাবছি পারকার কবে টলি-তলোয়ারবিহীন হবে।

খুব শিগগির। ব্যাটার আবার ধৈর্য কম। এখনও আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আছে ওরা। হবসের মেহমানখানায় আরও কয়েকটাকে ঢোকাতে পারলে অবশ্য মন্দ হত না, কয়েকজন তো সটকে পড়তই।

আমি সেরকম ভাবছি না।

বুঝলে, স্যাম, তারাটা আমার কাছে ভালই লাগছে, বুকের ব্যাজের দিকে ইঙ্গিত করল ব্র্যাড। একেবারে মন্দ নয়। ভাবছি যদ্দিন পারি ডেপুটি থেকে যাব কি-না। তোমার বাথানে গাধার খাটুনির চেয়ে ডেপুটির কাজটা অনেক আরামের, তাই না?

তা ঠিক, তবে সমস্যাও আছে। প্রায়ই বেয়াড়া কিছু বুলেটকে সামাল দিতে হবে। তাছাড়া বাফেলোর লোকজন যখন জানবে তোমরা টেনেসীর দুই বিখ্যাত যমজ ভদ্রলোক, তখন খেপে গিয়ে তোমাদের টিকির সন্ধান করতে পারে।

তুমি দেখছি দারুণ অকৃতজ্ঞ! শূন্য গ্লাস বারের ওপর নামিয়ে রাখল গ্যারেট, কৃত্রিম সন্দেহের চোখে তাকাল ওর দিকে। তোমার উদ্দেশ্য ভাল মনে হচ্ছে না, স্যাম। বেতন না দেয়ার মতলব করছ না তো? শেষে হয়তো আমাদের ধরিয়ে দেবে, আর বেঁচে যাওয়া টাকায় বিয়ের জন্যে একটা দামী কোট বানাবে।

ভাল বুদ্ধি বাতলেছ, ধন্যবাদ! হেসে উঠল ব্রুকস, পকেট থেকে রূপোর ঈগল বের করে বারের ওপর রাখল, কিন্তু ডাস্টি তা না নিতে অবাক হলো। কি ব্যাপার, খাতির করছ যে?

মি. ব্রুকস, ওরা আমাকে বাধ্য করেছিল। আমি চাইনি এরকম সাজানো একটা ডুয়েল হোক। বিশ্বাস না হলে ওদের জিজ্ঞেস করে দেখো। বক্স-বি পাঞ্চারদের দেখাল সে, করুণ মুখে আবেদন ঝরে পড়ছে।

বারকিপকে দেখল ব্রুকস, ভয়ে কেঁচো হয়ে গেছে লোকটা। মিথ্যে বলছে না বোধহয়।

পরিবার নিয়ে বিপদে পড়ে যাব আমি। দয়া করে তোমার আদেশটা যদি তুলে নিতে…সেলুনটাতে আমার শেয়ার আছে, এখন চলে গেলে পারকার আমাকে একটা পয়সাও দেবে না। তাছাড়া আমার বউয়ের বাচ্চা হবে। এসময় যাত্রার ধকলটা…

হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিল ব্রুকস। ঠিক আছে, ডাস্টি। কিন্তু মনে রেখো এটাই তোমার শেষ সুযোগ। আর…আমারও ভুল হয়েছে, মাথার ঠিক ছিল না, দুঃখিত। এখন ডাক্তারের কাছে যাও। উক্ হেনরিকে বলল ওর বিল আমিই দেব।

খুশিতে উজ্জ্বল দেখাল লোকটার মুখ যদিও তা রক্তাক্ত। ইতোমধ্যে নীল হয়ে গেছে নাকের গোড়া। ধন্যবাদ, মি. ব্রুকস! অস্ফুট স্বরে বলল বারকিপার, দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতা।

তুমি তো দেখছি দারুণ লোক হে! সকৌতুকে মন্তব্য করল ব্র্যাড। বেয়াড়া লোকগুলোকে পিস্তল ছাড়াই কাৎ করে ফেলতে পারো। কসম, এরকম আর দেখিনি, শুনিওনি! মার খেয়েও কেউ ভুলে যায় তা এই প্রথম দেখলাম!

<

Super User