ঘটনার আকস্মিকতায় বড় বড় চোখে স্বামীর দিকে চাইল ডালিয়া। রাইফেল হাতে কেলভিন জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনাগুলো বিচার করে আপাতত নিষ্ক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিল। তাকে রাইফেল ঘুরিয়ে ট্রিগার খুঁজে নিয়ে কক্ করে তবে গুলি করতে হবে-না, কোন উপায় নেই তার।
কী ব্যাপার, জেকব? আমি তো ভেবেছিলাম আমরা পরস্পরের বন্ধু।
এখনও তাই। আমার চেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তোমার কোনদিন ছিল না। কিন্তু সোনার নেশায় তোমার বিচার বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তুমি এখন নীচে গেলে তোমাকে দেখতে পাবে ওরা-কিংবা তোমার চিহ্ন দেখতে পেয়ে বুঝে নেবে এদিকে তুমি কী খুঁজছ। সবাই মিলে এসে হাজির হবে এখানে। আর ওরা এখানে এসে পৌঁছলে আমাদের ধরা পড়তে হবে। এই কারণেই তোমাকে বাধা দিচ্ছি।
আশ্বস্ত হলো কেলভিন। তাই সলো। তুমি তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে আমাকে, ভেবেছিলাম ওই সোনা তুমি নিজেই নেয়ার তালে আছ। অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে জেকবের দিকে চাইল সে। সেরকম কোন মতলব নেই তো তোমার?
ঘোড়া ছাড়া এদিকে আর কিছুর ওপর আমার নজর নেই।
ঠিক আছে, পিস্তল নামিয়ে নিতে পারো তুমি। ওরা চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের সাথেই থাকব। তবে ওদের কেউ যদি ওই সোনা খুঁজে পায়। তখন কিন্তু আমি আর কোন চুক্তি মানব না।
সেটা মেনে নিতে আমার আপত্তি নেই, কেলভিন। ওই সোনার খোঁজে তুমি এতকাল যেভাবে হন্যে হয়ে ঘুরেছ, কষ্ট করেছ, তাতে আমার মতে তোমার একটা দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। ঘটনা সেরকম দাড়ালে তুমি গুলি ছুড়তে ছুড়তে সোনা উদ্ধার করতে ছুটে যেয়ো…আমরাও নিজের পথ দেখব।
একটা গাছের ছায়ায় বসে কেলভিন নিজের রাইফেলটা দ্রুত ব্যবহারের জন্য কোলের বা পাশেই মাটিতে শুইয়ে না রেখে গাছের সাথে ঠেকা দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখল। অভিজ্ঞ লোক, কোন ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ রাখার পাত্র সে নয়।
জেকবের দিকে চেয়ে সে বলল, তুমি ঝট করে নিমেষে কোথা থেকে যে পিস্তলটা বের করলে-ব্যাপারটা যাদুমন্ত্রের মত লাগল আমার কাছে। আমার ধারণাই ছিল না কোল্ট ব্যবহারে তোমার হাত এত চালু।
কাঁধ ঝাঁকাল জেকব। প্র্যাকটিস করলে সবই হয়-কারও জলদি হয়, কারও দেরিতে।
পিস্তলের বাঁটে কয়টা আঁচড় পড়েছে?
যাদের বড়াই করা অভ্যাস, তারাই ওসব করে। নেহাত দায়ে না পড়লে পিস্তল ব্যবহার করি না আমি।
চুপচাপ বসে আছে ডালিয়া। ভয়ে ওর মুখ ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। এখনকার মত মেঘ কেটে গেলেও ওদের চারপাশ থেকে বিপদ ঘনিয়ে আসছে বুঝে ফেলেছে সে। কেলভিনের তরফ থেকেও বিপদ আসতে পারে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোর করে আটকে রাখাটাকে কী সহজ ভাবে নিতে পারবে সে?
প্রতীক্ষার মধ্যে দিয়ে কয়েকটা ঘণ্টা কেটে গেল। গাছের তলায় মৌমাছির গুঞ্জন ছাড়া আর কোন শব্দ নেই..প্রায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। মাঝে মধ্যে ঘোড়াগুলো মাটিতে পা ঠুকছে বা লেজ নেড়ে মাছি তাড়াচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।
ওরা কি এতক্ষণে চলে গেছে, জে? প্রশ্ন করল ডালিয়া
না।
অন্তত মন্টি যে এত সোনা ফেলে কিছুতেই বেশিদূর নড়বে না, একথা নিশ্চিত হয়ে বলা যায়, বলল কেলভিন।
মাথার পিছনে দুই হাত রেখে গা এলিয়ে ক্লিফলোর দিকে চেয়ে ভাবছে কেলভিন। সোনা কোথায় লুকানো থাকতে পারে? ওদের হাতে সময় ছিল কম, তা ছাড়া এমন জায়গাতেই ওরা গিয়েছিল সেখানে ঘোড়ার পিঠে করে সোনা বয়ে নেওয়া যায়। এই এলাকায় মাত্র কয়েকটা নির্দিষ্ট দিক ছাড়া আর যাবারই উপায় নেই।
লোকগুলো যে কতক্ষণ সময় নিয়েছিল সেটা জানতে পারলেও…মন্টি নিশ্চয়ই সেটা জানে। উল্টো দিকের ক্লিফে যায়নি ওরা-পিউটে মেসা অনেক উঁচু। না, ওটার পিছনে নাকিয়া মেসাতেই কোথাও সোনা লুকিয়ে রাখার সম্ভাবনাই বেশি।
জেকবেরও তাই ধারণা, কিন্তু সে এখন ভাবছে কেলভিনের কথা। ওই এলাকাতেই কোথাও রয়েছে নিকোলাস, মন্টি আর অন্য লোকটা। লী আর তার সঙ্গের লোকজনও এখানেই কোথাও আছে। ক্লাইভ আর বাটও যোগ দিয়েছে। ওদের সাথে।
খিদে পেলেও কেউ আর খাবার কথা তুলছে না। আগুন জ্বালালেই ধোয়া উঠবে-ওদের অবস্থান জেনে ফেলবে সবাই
কেলভিন চিনতে পেরেছে মন্টিকে। জেকবের মনে হঠাৎ খটকা লাগল। কথাটা মনে মনে উল্টেপাল্টে বিচার করে দেখল সে-সমাধান মিলছে না। মন্টিকে কী করে চিনল কেলভিন?
তা হলে হয় সে ওই সতেরো জনের একজন, নয়তো সান্তা ফে শহরে মন্টিকে দেখেছে সে।
জেকবের চারদিকেই ছড়িয়ে রয়েছে শত্রু। তার নিজের ক্যাম্পেরই একজন হয়তো তার শত্রু। যা-ই ঘটুক কেলভিনের কথা ভোলা চলবে না তার।
জে…?
মুখ ফিরিয়ে চেয়ে দেখল ডালিয়া সামনের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। রুদ্ধশ্বাসে সে চেয়ে দেখল সেই সোনালী স্ট্যালিয়নটা তার দলবল নিয়ে হাজির হয়েছে নীচের খোলা জায়গায়।
চেয়ে দেখো, কেলভিন। সব ভুলে গেল জেকব। পৃথিবীর সব সোনা তুমি নিতে পারো-কিন্তু ওই ঘোড়াটা আমার চাই।
ওদের থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে পাহাড়ের একটা সরু ফাটলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গেল ঘোড়াগুলো
সত্যি, লর্ড হ্যারির কসম, সম্ভ্রমের সাথে বলল কেলভিন। তোমার দোষ নেই, লোভ লাগার মতই ঘোড়া বটে!
হঠাৎ উত্তেজিতভাবে সে আবার বলে উঠল, ওই পিছনের মেয়ারটা…যেটার কাঁধে ক্ষত দাগ আর পায়ে তিনটে সাদা মোজার মত ছোপ…ওটার কিন্তু বয়স হয়েছে।
তাতে কী? ওই দলে অনেক নবীন ঘোড়াও আছে।
ঘোড়া ছাড়া আর কিছু ভাববার অবসর ওর এখন নেই। কিন্তু হঠাৎ ঘোড়ার প্রতি কেলভিনের এত আগ্রহ দেখে অবাক হয়ে ডালিয়া খেয়াল করল, ওই সোনালী স্ট্যালিয়নটার দিকে মোটেও নজর নেই ওর-পিছনের বুড়ো মেয়ারটাকেই বিস্ফারিত চোখে দেখছে সে।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করব আমরা, বলল জেকব। ওরা বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে পরে ওদের পিছু নেব। আমি দেখতে চাই ওরা কোথায় যায়।
.
উত্তর দিকে যেতে যেতে ইন্ডিয়ানদের দেখে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল লী। একজন ইন্ডিয়ান মহিলা আর দু’জন বাচ্চা সহ মোট পাঁচজন। পুরুষ দুজনের মধ্যে কমবয়সী লোকটা লী-র পরিচিত। সব সময়েই তার গায়ে পড়ে সস্তায় কাজ করে দেওয়ার আগ্রহ দেখে লী ওর নাম দিয়েছে সস্তা জনি। একসময়ে লী-র র্যাঞ্চে কাজও করেছে সে। খুব খাটতে পারে লোকটা। লী নিজেও যেমন খাটে, তার প্রত্যেকটা কাজের মানুষকেও সে তেমনি হাড়ভাঙা খাটুনি খাটিয়ে নেয়। তবে এটা সত্যি, এই এলাকায় তারচেয়ে ভাল খাবার কেউ কর্মচারীদের খাওয়ায় না।
জনি, ট্র্যাকিং-এর একটা কাজ করবে তুমি? জিজ্ঞেস করল লী।
নাভাজো লোকটা মাথা নাড়ল। টিউবা সিটিতে যাচ্ছি আমি। একে একে সবাইকে দেখে নিয়ে আবার লী-র দিকে চাইল জনি। তোমরা শিকারে বেরিযেছ?
আমাদেরই একজন মানুষকে খুঁজছি-ওর সাথে হয়তো একটা মেয়ে থাকতে পারে।
একটু ইতস্তত করল জনি। সেধে কাউকে কিছু জানানো ইন্ডিয়ানদের ধর্ম নয়। কিন্তু এই লোকটা তার পরিচিত। বন্ধুও বলা যায়, কারণ সাদা চামড়ার লোকেরা সাধারণত ইন্ডিয়ানদের কাজে নিতে চায় না।
ওই দিকে, পিউটে মেসার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করল সে। চিহ্ন দেখেছি আমি-পাঁচ-ছয়টা পশু, দু’জন আরোহী।
ওরা চলে যেতেই উল্লসিত হয়ে লী বলল, শুনলে তো? এবার ওদের বাগে পেয়েছি আমরা।
ইউজিন মুখ খুলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত চেপে গেল। এখন কিছু বলে লাভ নেই। যা বলার তা সে সময় মতই বলবে।
সে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল, শক্ত-পাল্লাকে কি লী তার স্ত্রীর সামনেই ফাঁসিতে ঝুলাবে? কিন্তু ওকে যে ওরা ধরতে পারবে তাই বা কী করে বলা যায়? এখন পর্যন্ত সামনাসামনি হয়নি লোকটা, কিন্তু এবার যে সে রুখে দাঁড়াবে না তাই বা কে জানে? সবারই ধৈর্যের একটা সীমা আছে।
দূরে ক্লিফের ধারে খানিকটা ধুলো উড়তে দেখা গেল। খুব বেশি নয়, তবে একসাথে বেশ কয়েকটা ঘোড়া চলছে বোঝা যায়।
ইউজিন, তোমার কী মনে হয়? প্রশ্ন করল লী।
বুনো ঘোড়া। ওদের মধ্যে ইউজিনেরই দৃষ্টি সবার চেয়ে তীক্ষ্ণ। বেশ বড় একটা দল, ধীর গতিতে চলেছে।
আরও আধঘণ্টা পরে লী দেখতে পেল ওদের।
কয়েকটা গাধা সহ তিনজন মানুষ ঘোড়ার পিঠে চড়ে যাচ্ছে। ঘোড়াগুলো যেদিকে গেছে সেদিকেই এগোচ্ছে ওরা।
এবারে ওদের হাতের মুঠোয় পেয়েছি! উত্তেজনা চাপার বৃথা চেষ্টা করে বলে উঠল লী। ওই যে, দেখা যাচ্ছে ওদের!
ওখানে তো তিনজন মানুষ দেখা যাচ্ছে, প্রতিবাদ করল ইউজিন। ওদের দু’জন যদি শক্ত-পাল্লা আর তার স্ত্রী হয় তবে তৃতীয় লোকটা কে?
ওর কথার জবাব দিল না কেউ। ওদের পিছু নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে লী বারবার আউড়ে চলল, এইবার! খোদার কসম, এইবার!
টিউবা সিটিতে জেকবের সতর্ক বাণীর কথা বার্টের মনে পড়ে গেল। একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ওর শিরদাঁড়া বেয়ে। ভিতরটা কেমন যেন কুঁকড়ে আসছে। লোকটা স্পষ্ট কথায় জানিয়ে দিয়েছে এর পরে ওরা পিছু নিলে ওদের ভাগ্যে কী ঘটবে।
ওকেই আগে শেষ করতে হবে আমার, মনে মনে ভাবল বার্ট। আমাকে মারার আগেই মারব শালাকে-গুষ্টি মারি ফাঁসির-আগেই গুলি করব আমি।
পিছিয়ে ক্লাইভের পাশে চলে এল বার্ট। লোকটা মিথ্যা ভয় দেখায়নি, ক্লাইভ! যা বলেছে তাই করবে সে।
তা হলে এখন উপায়?
ওকেই আগে শেষ করতে হবে-প্রথম সুযোগেই গুলি করব আমরা।
কিন্তু লী যে ওকে ফাঁসি দিতে চায়; দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সে।
বাদ দাও ওর কথা।
তা হলে কী করতে চাও?
লোকটার সাথে মেয়েলোক আছে। মেয়েটাকে বাঁচাতে কথা বলতে চাইবে ও। লী-কে কথা বলতে পাঠিয়ে পিছন থেকে গুলি করব আমরা।
নিকোলাস এখানে থাকলে ভাল হত, বলল ক্লাইভ।
বার্টের মনে ছিল না ওর কথা, কিন্তু এখন আর সে কথা ভেবে লাভ নেই। ও যখন নেই, যা করার আমাদেরই করতে হবে।
পাঁচজনে ট্রেইল ধরে এগিয়ে চলেছে ওরা। সারারাত ঠাণ্ডার পর সকালের রোদটা বেশ লাগছে। কীথের পিছনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউজিন। তার উপর বিপদ ঘনিয়ে আসছে জানে সে। প্রতিবাদ জানানো সোজা-কিন্তু কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে হয়তো সশস্ত্র মানুষের মোকাবিলা করতে হতে পারে। লী-র যা মনোভাব তাতে তাদের মধ্যে গোলাগুলি হওয়াও বিচিত্র নয়। কথাটা। ভেবে মনে মনে একটু দমে লে ইউজিন। এখানেই তার দুর্বলতা। মিথ্যা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চায় সে। কিন্তু কাউকে মারতে গেলে দ্বিধা বোধ করবে ও, অথচ অন্ধবিশ্বাসী লোকের কোন বিকারই হবে না।
কীথের দিকে চাইল ইউজিন। ও কোন পক্ষ নেবে? শক্তসমর্থ লোক কীথ। একমাত্র ওর পক্ষেই লী-কে ঠেকানো সম্ভব। অতীতে এটা প্রমাণও হয়েছে।
ক্লিফের উপর দিয়ে চলেছে ওরা। ঘোড়ার পায়ে লেগে একটা নুড়ি পাথরে বাড়ি খেতে খেতে গড়িয়ে নীচে পড়ল। আর একধাপ নেমে ক্যানিয়নের তলায় পৌঁছে গেল সবাই। বুটের গোড়ালিতে বাঁধা স্পারের খোঁচা খেয়েই লী-র ঘোড়াটা লাফিয়ে উঠে উপত্যকার ভিতর দিয়ে উত্তর দিকে ছুটল। ওদের বামে উঁচু দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে আছে পিউটে মেসা। ডান দিকে নাকিয়া ক্যানিয়ন, আরও সামনে নো ম্যানস্ মেসা তার কালো অশুভ চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
রাশ টেনে ঘোড়ার গতি কমাল জেকব। বুনো ঘোড়াগুলোর কাছাকাছি এসে পড়েছে ওরা। ওগুলোকে ভয় পাইয়ে ক্লিফের ওপাশে স্যান জুয়ানে চলে যেতে বাধ্য করতে চায় না জেকব। সে দেখতে চায় নিজের ইচ্ছায় ওরা কোথায় যায়।
ভিতরে ভিতরে কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করছে ও। অস্বস্তিটা ঘোড়ার ব্যাপারে নয়। পিছন ফিরে চাইল সে।
কিছুই না
তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো? ডালিয়ার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল জেকব।
মাথা নাড়ল সে। কিন্তু ওর শান্ত সুন্দর মুখে একটা দুশ্চিন্তার ছায়া দেখতে পেল জেকব। ডানদিকে একটা ছোট শাখা ক্যানিয়ন দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় চিন্তা না করে হঠাৎ মোড় নিয়ে ওর ভিতরে ঢুকে পড়ল সে। অন্যেরা অনুসরণ করল তাকে।
এদিকে এলে কেন? প্রশ্ন করল কেলভিন। ঘোড়াগুলোর কী হবে?
বিপদের গন্ধ পাচ্ছি।
নীরবেই ওর দিকে একবার চাইল ডালিয়া। কিন্তু কেলভিন আপত্তি তুলল, ঘোড়াগুলোর পিছনে এতদূর এসে এখন ছেড়ে দেয়ার কী মানে থাকতে পারে?
ওর কথায় কোন জবাব না দিয়ে ওখান থেকে বেরুবার আর একটা পথ খুঁজল জেকব। তাড়াহুড়ায় অন্ধ-গলির মত ক্যানিয়নে ঢুকে পড়ছে কিনা দেখে নিচ্ছে সে। ক্যানিয়নটা মনে হয় নো ম্যানস্ মেসা পর্যন্ত চলে গেছে। ধীরে এগিয়ে চলছে ওরা। দক্ষিণের দেয়ালটা যেখানে বেশ নিচু হয়ে এসেছে সেখানে ওদের অপেক্ষা করতে বলে আবার ক্যানিয়নের মুখের দিকে ফিরে গেল জেকব
মোড় নিয়ে ওরা এই পথে চলে আসার কিছু চিহ্ন রয়েছে সেখানে। বেশি কিছু করা সম্ভব হলো না, তবু, যতদূর পারা যায় চিহ্নগুলো মিটিয়ে দিয়ে ফিরে এসে দেয়ালের খাড়া ধার বেয়ে সাবধানে পথ দেখিয়ে উপরে উঠতে শুরু করল জেকব।
এতে তোমার খুব একটা সুবিধা হবে না, মন্তব্য করল কেলভিন। এখন ওই ক্যানিয়নটা রইল তোমার পিছনে, আর একটা ক্যানিয়ন রয়েছে দক্ষিণে। এখান থেকে বেরুবার একটাই পথ আমার জানা আছে-সেটা হচ্ছে নাকিয়ার ভিতর দিয়ে।
থামল ওরা। আশেপাশে সামান্য কিছু মরু অঞ্চলের গাছপালা আর দু’একটা ভাঙা পাথরের চাই আছে, কিন্তু ভাল কোন আশ্রয় নেই। জমিটা ধীরে ধীরে নো ম্যানস মেসার দিকে উঠে গিয়ে বিরাট উঁচু ক্লিফের ধারে হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেছে।
এই সময়ে ওদের দেখতে পেল সে। একই সাথে ওই দলের সামনের লোকটাও মুখ তুলে উপর দিকে চেয়ে জেকবদের দেখল। চমকে উঠে সে এত জোরে লাগাম টেনে ধরল যে ঘোড়াটা পিছনের দু’পায়ে ভর দিয়ে লাফিয়ে উঠে থেমে দাঁড়াল। দলের সবাই চেয়ে দেখল ওদের।
ডালিয়া…ওকে বাচাতেই হব।তোমরা এখানেই দাঁড়াও, দৃঢ় কণ্ঠে নির্দেশ দিল সে। যাবার আগে ডালিয়াকে বলল, গোলাগুলি শুরু হলে আর এখানে থেকো না। কোথায় দেখা হবে তা আগেই বলেছি-সোজা ওখানেই চলে যেয়ো তুমি। তারপর বাকস্কিনটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে ওদের সাথে বোঝাপড়া করতে আবার নীচে নামতে শুরু করল জেকব।
<