পশ্চিমে গ্রীষ্মকালীন রাতগুলো স্বল্পায়ু, তাড়াতাড়ি দিনের আলো ফুটে ওঠে। রাতের কালো মখমল আকাশে হালকা আলোর ছোয়া লাগে প্রথমে, ধীরে ধীরে ধূসর থেকে ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়। সূর্য ওঠে পুর দিগন্তে, তার ছোঁয়ায় গোলাপি আভা লাগে ভাসমান মেঘের গায়ে। তারপর আবার বদলে যায় রঙ, কমলা আর সোনালির খেলা চলে দূর আকাশে। সবার আগে প্রথম আলোর পরশ পায় গ্রে-বাট-এর সুউচ্চ চূড়া। এরপর ভোরের নরম আলোয় আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে নীচের ঘুমন্ত বসতি।
সকালে সূর্যের আলো গ্রে বাট-এর সর্বোচ্চ বিন্দু ছুঁতেই দুই ভাইকে নিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে এল ম্যাট রেগান। স্যাডল থেকে নামল ওরা, ক্যাম্প করল রাস্তার পাশে। অপেক্ষা করতে লাগল। সিগারেট আর হুইস্কি খাওয়ার, ফাঁকে ফাঁকে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে পালা করে।
আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি নেই ম্যাটের, তবু এই মুহূর্তে কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত সে। বোতলে মুখ লাগিয়ে এক ঢোক হুইস্কি খেয়ে ওর দিকে বোতল বাড়িয়ে ধরল জনি। না দেখার ভান করল ম্যাট।
কাজটা ল্যুকের, ম্যাট? জিজ্ঞেস করল জনি। অবশ্যই। এটাই তো প্রথম নয়।
এক শ্যাইয়্যান মেয়ের কথা আজও মনে আছে ম্যাটের, বেঁচে থাকার সৌভাগ্য বেচারির হয় নি; ল্যুককে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল, তাতেই খেপে ওঠে সে, মারা যায় হতভাগিনী।
আরও কয়েকজন মেয়ের দুর্ভাগ্যের কথা জানে ম্যাট, অজানা আরও ঘটনাও আছে নিশ্চয়ই! ল্যুক আপন ভাই না হলে…
কিন্তু সে ওরই সহোদর ভাই, যেভাবে হোক তাকে ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা করতেই হবে।
হোক না ভাই; তবু অস্বীকার করার জো নেই, ল্যুক একটা পাগলা কুকুর। উঠে দাঁড়াল ম্যাট, বিরক্তির সঙ্গে একটা পাথরে লাথি হাঁকাল, বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল সামনের দিকে! দূরে ধুলোর মেঘ দেখা গেল না? নিশ্চিত হতে পারল না ও। আরও কিছু মুহূর্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেদিকে।
আচমকা পাই করে ঘুরল ম্যাট, ভারি চেহারায় একবার গ্রে বাট শহর আর একবার আকাশ ছোঁয়া বিশাল পাহাড়ের দিকে তাকাল। একটা বুদ্ধি বের করা দরকার। আবার শহরে ফেরার আগেই পরিকল্পনা খাড়া করতে হবে। দুর্ধর্ষ নির্মম, কঠিন হলেও মাত্র পাঁচজনের একটা দলের পক্ষে গোটা শহরের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। গ্রে বাট-এর মতো একটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে তো প্রশ্নই ওঠে না
কিন্তু শহরবাসীর সঙ্গে লড়তে এখানে আসে নি ওরা, এসেছে, ল্যুককে জেল থেকে বের করে নিয়ে যেতে।
অথচ মাথায় কিছু খেলছে না। কী করা যায়? গ্রে বাট পাহাড়ের দিকে তাকাল সে আবার। এরকম বিশাল পাহাড়ের নীচে কেন শহর গড়ে তুলতে গেল এরা? শীতের শেষে বরফ গলার সময় নিশ্চয়ই পাথর-ধস নামে… সেটাই স্বাভাবিক সোজা শহরের রাস্তায় গিয়ে পড়ার কথা ধসের…
চট করে বুদ্ধিটা পেয়ে গেল ম্যাট। ক্রুর হাসি ফুটে উঠল তার ঠোঁটে, দৃষ্টিতে হিংস্রতা। হতচ্ছাড়া পাহাড়টার চূড়ায় ওঠা যায় না?
গ্রে বাট-এর দিকে তাকাল মার্ক আর জনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে মার্ক সবার ছোট। ঘোড়ায় চেপে ওই ঢালটার শেষ মাথায় যেতে পারলে আর অসুবিধে হবে না। দেখে তো মনে হচ্ছে গা বেয়ে ওঠা সম্ভব। কেন?
এমনি। চূড়ায় ওঠার দরকার কী?-ভাবছে ম্যাট-পাহাড়ের খানিকটা উঁচুতে উঠলেই তো চলে। ঘোড়ার পিঠে ঢাল বেয়ে ক্লিফের গোড়ায় যেতে পারলে শহরবাসীরা ওদের মতলব টের পাবার আগেই কাজ হাসিল করা যাবে।
পাহাড়ের দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে রইল ম্যাট। আনুমানিক দুই তৃতীয়াংশ উচ্চতায় একটা তাক মতো দেখা যাচ্ছে, খাড়া পাহাড়ী দেয়ালের গোড়ায় খাজ-টাজ পেলে ওখানে ওঠা কঠিন হবে না।
ওই চাতালেই উঠতে হবে, স্থির করল ম্যাট। অন্ধকারে উঠলে শহরের লোকেরা দেখতে পাবে না, অবশ্য দিনেই বা কে খেয়াল করতে যাচ্ছে? কয়েক বাক্স ডিনামাইট নিয়ে দুজন ওই তাকে উঠে বসলে…
আপনমনে হাসল ম্যাট,. ঘুরে আবার রাস্তার দিকে তাকাল। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন ধুলোর মেঘ, ঠিক সামনে দুজন অশ্বারোহীকেও দেখতে পেল সে।
এতদূর থেকে চেনার কথা নয়, কিন্তু ম্যাট জানে ওদের পরিচয়। ওরই, দুভাই জেস আর লিন্স আসছে।
দশ মিনিট পেরিয়ে গেল।
ঠিক আছে, হঠাৎ বলে উঠল ম্যাট।ঘোড়ায় চাপ তোমরা?
সবার আগে স্যাডলে উঠে বসল সে। হুইস্কিটুকু এক নিঃশ্বাসে শেষ করে বোতলটা ছুঁড়ে ফেলল জনি। পাথরে বাড়ি খেয়ে ভেঙে চুরচুর হয়ে গেল ওটা।
জেস আর লিন্স এসে যোগ দিল ওদের সঙ্গে। পাঁচ অশ্বারোহী একসঙ্গে ধীর গতিতে শহরের পথ ধরল। দীর্ঘদেহী, একহারা গড়নের জেস, খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ভর্তি গাল চুলকে পথের পাশে একটা ছুটন্ত গিরগিটির গায়ে তামাকের পিক ফেলল, ভাইদের মধ্যে সে-ই সবার বড়। ল্যুক আবার কী করল? জানতে চাইল নরম গলায়।
এখানকার একটা মেয়েকে রেপ করেছে।
সশব্দে অসন্তোষ প্রকাশ করল জেস; অবশ্য তাকে অবাক হতে দেখা গেল। তা ওকে বের করবে কী করে?
এখন সোজা জেনারেল স্টোরে যাচ্ছি আমরা, ডিনামাইটের কয়েকটা বাক্স নিতে হবে। স্বভাবতই বিক্রি করতে চাইবে না ওরা, সুতরাং কেড়ে নেব। ডিনামাইটের বাক্সসহ গ্রে-বাট পাহাড়ে উঠে যাবে আমাদের দুজন, ঘোড়া নিয়ে নীচে অপেক্ষা করবে আরেকজন, দুজন থাকবে শহরে। তারপর শহরবাসীদের বলব আমাদের দাবী মেনে নিতে, নইলে পুরো পাহাড়টা ধসিয়ে দেব ওদের মাথার ওপর।
চমৎকার, সায় দিল জেস। কসম খোদার, ম্যাট, তোমার বুদ্ধির তুলনা নেই।
ডেলহ্যান্টিস মারকেন্টাইলের সামনে ঘোড়া থামিয়ে স্যাডল থেকে নামল ম্যাট রেগান। জেস আর লিন্স থাকো এখানে। জনি, তুমি আর মার্ক এসো আমার সঙ্গে।
সিঁড়ি বেয়ে সংকীর্ণ বারান্দায় উঠে এল ওরা, তারপর দোকানে ঢুকল।
দোকান খুলেছে বেশিক্ষণ হয় নি। খদ্দের দেখে বুড়ো দোকানি ডেলহ্যান্টি বিশাল বপু নিয়ে এগিয়ে এল।
আমাদের কিছু ডিনামাইট চাই বলল ম্যাট। এই ধরো, পাঁচ বাক্স ফিউজ আর ক্যাপও দিয়ো।
সন্দেহভরা চোখে ম্যাটের দিকে তাকাল, ডেলহ্যান্টি। তোমরা এখানে নতুন?
হ্যাঁ।
ডিনামাইট দিয়ে কী করবে?
হোলস্টার থেকে চট করে পিস্তল বের করল ম্যাট রেগান; প্রেছনে নিয়ে এল হ্যামার। ফিউজ আর ক্যাপসহ পাঁচ বাক্স ডিনামাইট চাই, কত দিতে
ডিনামইট কিনতে হলে শেরিফের অনুমতি লাগবে।
তা হলে, জোর করেই নিতে হচ্ছে। রেখেছ কোথায়?
জবাব দিল না, ডেলহ্যান্টি, একগুয়ে ভাব ফুটে উঠল তার চেহারায়।
গায়ে হাত তুলতে, আমাকে বাধ্য করো না, মিস্টার, নরম গলায় বলল ম্যাট রেগান।
ম্যাটের বিরক্ত চেহারার দিকে তাকাল ডেলহ্যান্টি, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলুল; বেশ, দৈাকানের পেছনে চলো।
মার্ক, তুমি এখানে থাক, বলল ম্যাট।
আচ্ছা।
আবার ডেহ্যান্টির দিকে তাকাল ম্যাট চাবি নাও,…চলো।
মালপত্রে ভর্তি একটা কামরায় ঢুকল ওরা, গোটা ছয়েক চটের খালি বস্তা তুলে নিল ম্যাট, ডেলহ্যান্টির পিছু পিছু আরেকটা ছোট কামরার সামনে এসে দাঁড়াল।
বস্তাগুলো জনির হাতে দিল ম্যাট, চকিতে একবার ওর দিকে তাকাল ডেলহান্টি, তারপর তালা খুলে দিল দরজার।
বাক্স বের করে আনো, আদেশ করল ম্যাট।
নীরবে নির্দেশ পালন করল দোকানি।
ফিউজ আর ক্যাপ কোথায়, দোকানে? জানতে চাইল ম্যাট।
হ্যাঁ।
আচ্ছা। বাক্সগুলো ভেঙে ফেলো দেখি?
আবার ঘরে ঢুকল, ডেলহ্যান্টি, কয়েক সেকেন্ড পর একটা পিঞ্চ বার হাতে ফিরে এল। ওটার সাহায্যে একে একে খুলে ফেলল বাক্সগুলো। ম্যাটও হাত লাগাল। বক্স খোলার পর ডিনামাইটগুলো সঙ্গে আনা চটের বস্তায় ভরে ফেলল। লাথি মেরে, দূরে সরিয়ে দিল খালি বাক্স। দরজায় তালা মারল ডেলহ্যান্টি।
তুমি দুটো বস্তা নাও, স্টোরকীপার, বলল ম্যাট। জনি, তুমি দুটো নাও। বাকি দুটো আমি নিচ্ছি।
ডেলহ্যান্টি আর জনি চারটে ডিনামাইটের বস্তা কাঁধে তুলে নিল। ডানহাতে পিস্তল উঁচিয়ে রেখে বাঁহাতে দুটো বস্তা নিল ম্যাট। আবার দোকানের মূল অংশে ফিরে এল ওরা। মার্ক অপেক্ষা করছিল, ম্যাট তাকে বলল, মার্ক, তুমি আর জনি এগুলো বাইরে নিয়ে যাও। আমি ফিউজ আর ক্যাপ নিয়ে একটু পর আসছি।
বস্তাসই বেরিয়ে গেল দুভাই। ডেলহ্যান্টির দিকে চোখ ফেরাল ম্যাট। এবার ফিউজ আর ক্যাপ, জলদি!
জবাব না দিয়ে পথ দেখিয়ে ম্যাটকে দোকানের পেছন দিকে নিয়ে এল ডেলহ্যান্টি দেয়ালের সঙ্গে লাগানো বুক সমান উঁচু একটা বাক্সের তালা খুলে ম্যাটকে,বড় আকারের একটা ফিউজের কয়েল আর ক্যাপের খুদে বাক্স বের করে দিল! তালা লাগানোর জন্যে, ঘুরে দাড়াল সে। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল ম্যাট, পিস্তলটা উল্টো করে ধরে সজোরে দোকানির মাথায় নামিয়ে আনল বাঁটটা।
জ্ঞান হারিয়ে নিঃশব্দে ম্যাটের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল ডেলহ্যান্টি। নিমেষে পিস্তল হোলস্টারে রেখে ঘুরে দাঁড়াল ম্যাট, দোকান ছেড়ে বেরিয়ে এল। চল; যাওয়া যাক, ভাইদের বলল।
স্যাডলে চেপে বসল ম্যাট। বাট স্ট্রীট ধরে এগোল পাঁচ ঘোড়সওয়ার। রাস্তাটা যেখানে দুভাগ হয়েছে, ওখান থেকে আঁকাবাঁকা সংকীর্ণ একটা ট্রেইল পাহাড়ের খাড়া ঢালের দিকে গেছে। সরলরেখার ট্রেইল ধরে এগিয়ে চলল ওরা।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পাহাড়ী দেয়ালের পাদদেশে পৌঁছে গেল পাঁচজন। ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল।
রাইফেলটা বের করো, লিন্স, বলল ম্যাট। আমি যতক্ষণ না আসছি, শহরের দিকে কড়া নজর রাখবে।
ফিউজের কয়েল একটা বস্তায় ঢোকাল ম্যাট, দড়ির গোছা খুলে নিল স্যাডল থেকে। তারপর একটা পাহাড়ী খাঁজ বেয়ে উঠতে শুরু করল।
কোথাও এক ফুট কোথাও তিনফুট প্রশস্ত খাজটা, জায়গায় জায়গায় মসৃণ পাথর মানুষের আনাগোনার প্রমাণ দিচ্ছে। শহরের ছোট ছেলেমেয়েরা সম্ভবত খেলতে আসে এখানে, ভাবল ম্যাট।
অল্প আয়াসে খুঁজ বেয়ে উঠে চলল সে, মিনিট দশেক বাদে সে-ই চাতালে পৌঁছুল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল, তারপর কাঁধ থেকে দড়ি নামিয়ে ওটার প্রান্ত ছেড়ে দিল নীচে, পঁয়ত্রিশ ফুট দীর্ঘ দড়ি সরসর করে নেমে গেল। ডিনামাইটের বস্তা বেঁধে দিতে পারবে ওরা সহজেই।
একটা বস্তা ওপরে তুলল ম্যাট, তারপর আরেকটা, সাত আট মিনিট লাগল সবগুলো বস্তা, পাহাড়ী চাতালে তুলতে।
চিৎকার করে জনির উদ্দেশে ম্যাট। বলল, তুমি আর মার্ক উঠে এসো, জনি! তোমরা, এখানে থাকবে। পরে তোমাদের খাবার আর পানি দিয়ে যাব!
জনি আর মার্ক চাতালে উঠে এল। যদূর সম্ভব সতর্কতার সঙ্গে ডিনামাইট বসানো শুরু করল ম্যাট। চটের বস্তার সাহায্যে প্রথমে খাজের ভেতর বিস্ফোরক বসানোর জায়গা তৈরি করল, সযত্নে তার ওপর সবগুলো ডিনামাইট রাখল। একটা ক্যাপ-এ ফিউজের প্রান্ত ঢুকিয়ে দাঁতে চেপে শক্ত করে আটকে দিল, নরম ডিনামাইটের একটা শলায় ঢোকাল ক্যাপটা.. স্তূপীকৃত ডিনামাইটের সঙ্গে পাথরচাপা দিয়ে ফিউজযুক্ত ডিনামাইটটা রাখল। চাতালের ওপর তার ছড়িয়ে দশ মিনিট আন্দাজ সময় স্থির করল। ভেবেচিন্তে সময় নির্ধারণ করেছে সে। ফিউজে আগুন জ্বালানোর পর বিস্ফোরণের আগেই কেটে পড়তে পারবে মার্ক আর জনি, কিন্তু ওরা নামার পর আগুন নেভানোর সুযোগ পাবে না কেউ।
পিছিয়ে এসে ফিউজের তার যেখানে খাজ থেকে বেরিয়ে এসেছে, সেখানে তারের ওপর পাথর চাপা দিল, ম্যাট-অপ্রত্যাশিতভাবে খুলে আসবে না ওটা। জনির দিকে তাকাল সে এবার। ম্যাচ আছে? জিজ্ঞেস করল।
মাথা দোলাল জনি।
পরপর তিনবার গুলি ছুঁড়ে একটু থেমে আবার দুবার গুলি করব আমি, বলল ম্যাট, তাহলেই বুঝবে ফিউজে আগুন দিতে বলছি। আগুন জ্বেলেই নেমে যাবে তোরা। সোজা স্যান্তা রোসায় চলে যাবে, অপেক্ষা করবে, আমাদের জন্যে।
ঘোড়া?
তিনটে ঘোড়া নিয়ে লিন্স থাকবে নীচে।
ওঁ, হ্যাঁ।
খাঁজ বেয়ে নামতে শুরু করল রেগান। সঙ্কেত দেয়ার দরকার নাও হতে পারে। তবু বলা যায় না, হাতের কাছে দেশলাই তৈরি, রেখো।
আচ্ছা।
নীচে নেমে এল ম্যাট। লিন্স, তুমি ঘোড়া নিয়ে এখানে অপেক্ষা কর। যদি দেখ শহর থেকে কেউ পালাতে যাচ্ছে, তার পায়ের সামনে কয়েকটা গুলি ছুঁড়বি, সাবধান করার জন্যে, তাতে না থামলে দেবে খতম করে।
মাথা দুলিয়ে সায় দিল লিন্স।
খাবার আর মদের বোতলের ব্যবস্থা করছি আমি।
তোফা, ম্যাট।
জেসের উদ্দেশে মাথা দোলাল ম্যাট। চলো, জেস। এবার আরেকবার দেখা করতে হয় ভদ্রলোকের সঙ্গে।
ঘোড়ায় চাপল দুভাই। সর্পিল ট্রেইল ধরে নীচে নেমে এল, দুলকি চালে এগোল জেলহাউসের দিকে। শেরিফের অফিসের সামনে ঘোড়া থামাল ম্যাট, চিৎকার করে ডাকল, শেরিফ! ডেপুটি! কই, বাইরে এসো! কথা আছে!
জেল থেকে বেরিয়ে সতর্ক ভঙ্গিতে রাস্তায় নেমে এল স্টোন আর ক্লিফ ফ্যারেল।
গ্রে বাট পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করল ম্যাট। ওদিকে দেখো। পাঁচ বাক্স ডিনামাইট আগলে আমার দুভাই বসে আছে, নীচে অপেক্ষা করছে লিন্স।
ছাইয়ের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেল স্টোনের চেহারা, প্রায় কেঁদে ফেলল সে। ইয়া খোদা! তোমরা কী…।
পিশাচের মতো হেসে উঠল ম্যাট। এক সাথে পাঁচ বাক্স ডিনামাইট ফাটলে কী হবে জানো। পুরো পাহাড়টা সরসর করে নেমে আসবে। ঠিক বলেছি কিনা, শেরিফ? ঠিক শহরের ওপর পড়বে আস্ত পাহাড়!
তোমরা…
পারব না বলছ?ম্যাটের চোখে ঠাণ্ডা দৃষ্টি। ভালো করেই জানো তুমি, পারব।
।দাঁতে দাঁত চাপল ক্লিফ ফ্যারেল। চাও কী তোমরা?
বলে দিতে হবে? ল্যুকের মুক্তি। চাই চব্বিশ ঘণ্টা বিনা বাধায় এগোনোর সুযোগ।
আমরা কী করে, তার নিশ্চয়তা দেব? শহরের লোকজন…
আবার কর্কশ স্বরে হেসে উঠল ম্যাট রেগান। মাথার ওপর এতগুলো ডিনামাইট নিয়ে কেউ আমাদের ধাওয়া করতে যারে বলে মনে হয় না। হঠাৎ নতুন একটা ধারণা খেলে গেল তার মাথায়, ল্যুককে বরং আদালতেই সোপর্দ করো, বলল সে, এই অবস্থায় বেকুসর খালাস পেয়ে যাবে। তা জাজ। আসছে কখন?
আজ রাতে কিংবা কাল ভোরে। কাল সকাল দশটায় কোর্ট কাজ শুরু করবে।
তাহলে আমাদের কথাটা সবাইকে জানিয়ে দিয়ো। শহরবাসী বাস্তব অবস্থা জানুক। কয়েকজনের নায়ক হবার খায়েশ বা বোকামির কারণে ডিনামাইট ফাটাতে হলে দুঃখের আর শেষ থাকবে না।
ম্যাট রেগানের দিকে তাকাল ক্লিফ, নরম গলায় বলল, এভাবে পার পাবে, না, রেগান! জানি না কীভাবে, কিন্তু তোমাকে আমি রুখবই।
চেষ্টা করতে থাকো, ডেপুটি, সেই সঙ্গে মাথার ওপর ওই পাহাড়টার কথাও মনে রেখো। চলি, আবার দেখা হবে।
<