সন্ধ্যার আগেই নগ্ন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল গ্রে বাট শহরে। বিরান হয়ে গেল পথ ঘাট। দুএকজন রাস্তায় নামছে নেহাত প্রয়োজনবশত, মাটির দিকে চেয়ে হাঁটছে, মাঝে মাঝে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে মূর্তিমান বিভীষিকা আকাশছোঁয়া পাহাড়টার দিকে।
সন্ধ্যা নামল। পাহাড়ের ওপর জ্বলে উঠল অগ্নিকুণ্ড, জানিয়ে দিল রেগানের ভাইয়েরা এখানেও আছে, বহাল রয়েছে তাদের হুমকি। রাত আটটায় পৌঁছুল স্টেজ কোচ, হোটেলের সামনেই থামল। একমাত্র যাত্রীটি নেমে ক্লিফের মুখোমুখি হল।
নবাগতের সঙ্গে করমর্দন করল ক্লিফ ফ্যারেল! হ্যালো, জাজ! তুমি আসায় খুবই খুশি হলাম।
দীর্ঘ একহারা গড়ন জাজ কেনেডির, সত্তরের কাছাকাছি বয়স, চিবুকে কাঁচা-পাকা দাড়ি আর ক্যাভালরি ধাঁচের গোঁফ চেহারায় আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে। শাদা শার্ট, কালো কোট আর টাই পরেছে ভদ্রলোক, চমকার মানিয়েছে। ড্রাইভারের কাছ থেকে কার্পেট ব্যাগ নিয়ে হোটেলের দিকে পা বাড়াল সে।
হোটেলের জানালা গলে বেরোনো ম্লান আলোয় ক্লিফকে জরিপ করল। জাজ কেনেডি। মারাত্মক কোনও গোলমাল হয়ে গেছে নাকি?
করুণ হাসি হাসল ফ্যারেল। তুলকালাম কাণ্ড বলতে পার, জাজ।
ওপরে এসো, সব খুলে বলো আমাকে। অবশ্যই, কেনেডির সঙ্গে হোটেল ডেস্কে এল ক্লিফ। রেজিস্টার খাতায় নাম লিখিয়ে চাবি গ্রহণ করল জাজ। তারপর দোতালার নির্দিষ্ট কামরায় উঠে এল দুজন আলো জ্বেলে দরজা বন্ধ করল ক্লিফ।
এবার বলল, বলল জাজ।
বলছি, তোমাকে টেলিগ্রাম করার কিছুক্ষণ আগে শহরবাসীরা আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল।
কিন্তু এখন দেখছি চারদিক একেবারে শান্ত, তারপর কী ঘটল?
আমাদের প্রতিরোধের মুখে শহরবাসীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। হয়তো শেষ রক্ষা হত না, কিন্তু হঠাৎ আসামীর পাঁচ ভাই এসে হাজির হলো। ডেলহ্যান্টির দোকান থেকে পাঁচ বাক্স ডিনামাইট ছিনিয়ে নিয়েছে ওরা, তারপর গ্রে বাট-এর চাতালে উঠে বসেছে, হুমকি দিয়েছে ক রেগান, মানে আসামীকে না ছাড়লে পুরো পাহাড় ধসিয়ে দেবে। শহরের লোকজন ভয়ে। সিঁটিয়ে গেছে। আসামীকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে চাপ দিচ্ছে এখন।
কিন্তু তুমি ছাড়ো নি?
না।
কেন?
কেন ছাড়ব? ডিনামাইট ফাটানোর হুমকি কিছুতেই বাস্তবায়ন করতে চাইবে না ওরা। অবশ্য এটা ঠিক, কের বিরুদ্ধে রায় দেবার মতো লোক এখন পাওয়া যাবে না এখানে।
মেয়েটা কে?
সোনিয়া।
সোনিয়া ম্যাকনেয়ার? হায় খোদা! তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্লিফের দিকে তাকাল কেনেডি। তোমাদের দুজনের না বিয়ের কথা ছিল?
হ্যাঁ, এখনও আছে। ঝামেলাটা চুকে গেলেই…
ল্যুকের বিরুদ্ধে কী কী প্রমাণ আছে?
ঘটনার রাতে মাত্র দুজন আগন্তুক ছিল এখানে-সোনিও বলেছে অপরিচিত লোক আক্রমণ করেছে ওকে-এদের একজন পালানোর চেষ্টা চালায়, অপরজন লিভারি বার্ন-এ ছিল। পলাতক লোকটার পিছু নেই আমি, গ্রেফতার করার সময় সে বাধা দেয়।
মামলা চালানোর জন্যে খুবই দুর্বল প্রমাণ।
তা ঠিক, কিন্তু ল্যকের চোখেমুখে আঁচড়ের দাগ ছিল, আমার ধারণা সোনি ওকে শনাক্ত করতে পারবে।
কীভাবে, তখন অন্ধকার ছিল না?
হ্যাঁ, স্যাটারলিদের পুরোনো বাড়িটায় ঘটেছে ব্যাপারটা।
তাহলে ও শনাক্ত করবে?
আমার মনে হয় পারবে।
আর কোনও প্রমাণ নেই?
ক্লিফ উপলব্ধি করল, ল্যুকের বিরুদ্ধে ওর অভিযোগ কত দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। না, আর কোন প্রমাণ নেই, বলল ও।
তাহলে লোকটাকে ছেড়ে দাও, বলল কেনেডি, এ নিয়ে ওর বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। কোনও জুরী…
আমাকে একটু সময় দাও, জাজ, হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল ক্লিফ। কাল সকাল দশটার আগেই প্রমাণ যোগাড় করছি…
যাই করো, বুঝেশুনে করো।
আচ্ছা।
তাহলে কাল সকালে দেখা হবে, কেমন?
ঠিক আছে, জাজ।
হোটেল থেকে বেরিয়ে এল ক্লিফ ফ্যারেল। রেগানের বিরুদ্ধে প্রমাণ যোগাড়ের একটা পথই খোলা আছে: ওর স্বীকারোক্তি আদায়।
স্বাভাবিক অবস্থায় কোনওমতেই দোষ স্বীকার করত না রেগান, জানে ও, কিন্তু এটাকে স্বাভাবিক অবস্থা বলা যায় না। রেগান জানে, ডিনামাইটসহ পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে তার ভাইয়েরা; ওকে ছেড়ে দেবার জন্যে শেরিফ আর ডেপুটির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে শহরবাসী; প্রমাণ মিলুক না মিলুক বেকসুর খালাস পেতে যাচ্ছে সে। সুতরাং, এই সময় রেগানের আত্মবিশ্বাস হবে প্রবল, রূপ হবে উদ্ধত। কোনওভাবে যদি তাকে খেপিয়ে তোলা যায়।
রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল ক্লিফ। কাল আদালতে রেগান দোষী প্রমাণিত হলেও ডিনামাইটের ভয়ে তাকে খালাস দেবে জুরীরা, প্রয়োজনে জাজ কেনেডির আদেশও তারা অমান্য করবে।
এসব কথা আর ভাবতে চায় না ফ্যারেল। যেভাবে হোক ল্যুক রেগানের বিরুদ্ধে নিরেট প্রমাণ যোগাড় করতে হবে। স্টোনকে বলেছিল ও, পরিস্থিতি বদলাবে, বদলানো প্রয়োজন।
হাঁটার গতি বাড়াল ক্লিফ, বাঁক নিয়ে জ্যাকব ফ্যারেলের বাড়ির পথ ধরল। ওখানে পৌঁছে বাবাকে ওর উদ্দেশ্য জানাল। রেগানের স্বীকারোক্তি আদায় সম্ভব হলে তার জন্যে সাক্ষী লাগবে। বাবা রাজি হলে হেলম্যানসহ চারজন দাঁড়াবে সাক্ষীর সংখ্যা-যথেষ্ট।
রাজি হলো জ্যাকব ফ্যারেল। একসঙ্গে আবার পথে নামল বাপ-বেটা। হাঁপাতে হাঁপাতে ক্লিফের পাশাপাশি এগিয়ে চলল বুড়ো ফ্যারেল।
রেগানরা পাহাড়ে উঠতেই সবার কথার ঢঙ পাল্টে গেছে, না?
হ্যাঁ। ভুরু কুঁচকে ভাবছে ক্লিফ, অপরাধ স্বীকার করাতে কীভাবে খেপানো যায় রেগানকে?
জেলহাউসে পৌঁছে ভেতরে ঢুকল ওরা।
জাজ কেনেডি এসে গেছে, স্টোমকে বলল ক্লিফ।
কাঁধ ঝাঁকাল স্টোন, ডেস্কের ওপর পা তুলে বসে রয়েছে সে।
রেগানের সঙ্গে একটু কথা বলব, বলল ক্লিফ।
যাও!
একটা হারিকেন, তুলে নিয়ে সেলকের দিকে এগিয়ে গেল ক্লিফ, দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে একটু ফাঁক করে রাখল দরজাটা।
বাংকের এক ধারে দুহাতে মাথা রেখে বসে আছে হেলম্যান। নিজের বাংকে শুয়েছিল রেগান, উঠল না, বিদ্রূপ মেশানো দৃষ্টিতে ক্লিফের দিকে তাকাল। আমি তো এখন মুক্ত মানুষ।
এখনও ছাড়া পাও নি।
সত্যি কথাটা মেনে নিচ্ছে না কেন? হেরে গেছ তুমি। আমার ভাইদের বোমা ফাটাতে নিশ্চয়ই বাধ্য করবে না?
তার আগে ওদের জেলে ভরব আমি।
কোন অপরাধে?
সশস্ত্র ডাকাতি, মানহানি, হত্যার অপচেষ্টা-আরও লাগবে?
কী আবোলতাবোল বকছ?
পয়সা দিয়ে ডিনামাইট কেনে, নি তোমার গুণধর ভাইয়েরা, অস্ত্রের মুখে কেড়ে নিয়েছে, আহত করেছে দোকানিকে, সস্ত্রীক এড ব্রনসনকে খুন করতে চেয়েছে!
বিরস হাসি হাসল ল্যুক। ম্যাট বড় ভয়ঙ্কর লোক, কী বলো?
সাহসী-ঐ কথা বলা যায়, তোমার মতো কাপুরুষ নয়। তোমাকে আটকে ভুল হলো কিনা তাই ভাবছি এখন। মনে হচ্ছে হেলম্যানই অপরাধী, তুমি নও।
হঠাৎ একথা মনে হওয়ার কারণ?
কারণ সে তোমার চেয়ে সাহসী। তুমি একটা ভীতুর ডিম, আপাদমস্তক কাপুরুষ, মেয়েমানুষের গায়ে হাত দেয়ার সাহস রাখো কিনা সন্দেহ।
অদৃশ্য হলো রেগানের হাসি। আগে বেরোই, তারপর দেখো সাহস কাকে বলে!
নিতান্ত অবহেলার সঙ্গে ঠোঁট বাঁকাল ক্লিফ।
হঠাৎ ক্রোধে জ্বলে উঠল রেগান, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ক্রুর হাসি হাসল। ভাবছি তোমাকে খুন না করে যাবার সময় তোমার হবু বউটাকে সঙ্গে নিয়ে যাব, বুঝলে, ডেপুটি?
তবে রে, হারামখোর…! দুহাতে গরাদ ধরল ক্লিফ, রক্ত সরে শাদা হয়ে গেল আঙুলগুলো। পাকস্থলীর ভেতরটা গুলিয়ে উঠল, আর শুনতে পারছে না, কিন্তু সরল না ও, চোখ রাঙিয়ে রেগানের দিকে তাকাল।
হাসল ল্যুক রেগান। হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে, সঙ্গে নিয়ে যাব ওকেএরপর হয়তো স্বেচ্ছায়ই… হঠাৎ থেমে গেল সে।
ক্লিফের অগ্নিদৃষ্টির সামনে ভড়কে গেল, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার ছাড়ল, তোমাকে ভয় পাই ভেবেছ? আমি কাপুরুষ, না? আরে, আমি যদি এইখানে দাঁড়িয়ে বলি, হ্যাঁ, তোমার হবু বউকে বেইজ্জত করেছি, কী করার আছে তোমার? আমাকে স্পর্শ করতে পারবে। তোমার সে সাহস নেই। আমার কিছু হলে এই শহর ধুলোয় মিশে যাবে না!
গরাদের শিক ছাড়ল না ক্লিফ, এখন হাত মুক্ত করলেই পিস্তলের দিকে এগিয়ে যাবে, খুন হয়ে যাবে ল্যুক রেগান। পেছনের মৃদু নড়াচড়ার শব্দে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ও। জ্যাকব ফ্যারেল এসেছে। চট করে ওর হোলস্টার থেকে পিস্তলটা বের করে নিল জ্যাকব। এবার হাত আলগা করতে পারো, বলল সে। নিজের মুখে স্বীকার গেছে রেগান, স্টোন আর আমি শুনেছি, ওই হেলম্যানও শুনেছে-তাই না?
হ্যাঁ, বলল হেলম্যান।
চেঁচিয়ে উঠল ল্যুক। শুনেছে তো হয়েছে কী? কিস্যু করতে পারবে না। কালই ভাইদের সাথে এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
কাল পরপারে যাচ্ছ তুমি, একা, বলল ক্লিফ।
ল্যুক রেগান দোষ স্বীকার করেছে কেন, বুঝতে পারছে ও। বিদ্রূপ আর তাচ্ছিল্যে ওর ওপর খেপে গেছে লোকটা, চরমে পৌঁছেছে ক্লিফের প্রতি তার ঘৃণা, ওকে মানসিক আঘাত দিয়ে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে, ফলে মুখ ফস্কে সত্যি কথা বেরিয়ে এসেছে।
হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল ক্লিফ, ছুটে বেরিয়ে এল অন্ধকার রাস্তায়। রেগান দোষী, নিঃসন্দেহ ছিল ও, কিন্তু তার সদম্ভ স্বীকারোক্তি শোনা…
শহরের শেষ প্রান্তে আসার পর হুঁশ হলো ক্লিফের। দাঁড়িয়ে পড়ল, বুক ভরে ঠাণ্ডা বাতাস টেনে নিল। কাঁপা হাতে কাগজ তামাক বের করে সিগারেট বানিয়ে ধরাল, কয়েক টানেই শেষ হয়ে গেল ওটা। সিগারেটের অবশিষ্টাংশ মাটিতে ফেলে গোড়ালি দিয়ে পিষে ভোল।
হঠাৎ একটা জিনিস উপলব্ধি করল ও, এরপর রেগানকে কোনওমতেই রেহাই দেয়া যাবে না। চাপের মুখে যদি ছাড়তে হয়, তাতেই শেষ হবে না ঘটনার, হতে পারে না…পিছু নিয়ে রেগানকে হত্যা করে আসবে…সেজন্যে যদি সারাজীবন লাগে, পরোয়া করে না।
।আঘাতে আঘাতে ওকে জর্জড়িত করেছে রেগান, তবে সেই সঙ্গে নিজেরও সর্বনাশ ডেকে এনেছে।
.
সকাল। সূর্যের প্রথম আলো গ্রে-বাট-এর চূড়া স্পর্শ করল, হামাগুড়ি দিয়ে নেমে এল নীচের ঘুমন্ত শহরের বুকে।
গ্রে বাট-এর চাতাল। একটা খুদে অগ্নিকুণ্ড থেকে ধোয়ার ক্ষীণ রেখা উঠে যাচ্ছে আকাশে। নাশতা তৈরি করছে ল্যুকের দুভাই। ঘুম থেকে জেগে উঠছে নীচের জনপদ, ভীত সন্ত্রস্ত লোকদের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে, নগ্ন আতঙ্কভরা চোখে বারবার এদিকে তাকাচ্ছে তারা।
শহরে নির্দিষ্ট আদালত ভবন নেই, তাই ডেলহ্যান্টির দোকানের দোতালার একটা কামরায় বিচারের কাজ হয়ে থাকে। মাসিক দশ ডলারে কামরাটা ডেলহ্যান্টির কাছ থেকে ভাড়া করেছে কাউন্টি কমিটি।
হোটেলে বসে এক কাপ কফি খেয়ে ডেলহ্যান্টির দোকানে এল ক্লিফ, বাইরের সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠে কোর্টরুমের তালা খুলল। গত এক বছরে এইখানে কারও বিচার হয় নি, পুরু ধুলোর আস্তরণ পড়েছে প্রতিটি কোণে।
ঘরটা ভালো করে আঁট দিল ক্লিফ। তারপর একপাশে ঈষৎ উঁচু প্ল্যাটফর্মের সামনে ফোল্ডিং চেয়ার পাতল লাইন করে। একটু আগে ছটা বেজেছে, বিচারের এখনও চার ঘণ্টার মতো দেরি।
ঘর সাফ করে চেয়ার বসাতে ঘণ্টাখানেক লাগল। রাস্তার দিকে জানালাগুলো খুলে দিল ক্লিফ, আলোয় ভেসে গেল পুরো কামরা।
এবার কিছুটা অনিচ্ছার সঙ্গেই নীচে নেমে এল ও, হোটেল থেকে দুই ট্রে নাশতা নিয়ে জেলে ফিরল।
এখন আর কোনওরকম দ্বিধা নেই ওর, কী করতে হবে জানে। ঠিক দশটায় রেগানকে আদালতে হাজির করবে, অভিযোগ দাখিল করবে তার বিরুদ্ধে, যেমন আর দশজন কয়েদীর বেলায় করত। তারপর শহরের নাগরিকরা স্থির করবে রেগান সাজা পাবে না খালাস।
তবে তাকে যদি মুক্তি দেয়া হয়বিবেকের কাছে আর আটকা পড়ে থাকবে না ক্লিফ। মোনিকে অপমান করার কথা স্বীকার গেছে ল্যুক, সে অপরাধী, মরতে তাকে হবেই..ফাঁসিতে কিংবা গুলি খেয়ে। না জেনে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে ল্যুক, পাঁচ কেন পঞ্চাশটা ভাই এলেও এখন তাকে বাঁচাতে পারবে না।
ঘুম থেকে উঠেছে জেস স্টোন। দেয়ালে টাঙানো ভাঙা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গালে সাবান লাগাচ্ছে, শেভ করবে। ক্লিফ ঢুকতেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। এসেছ? সযত্নে এক গালের দাড়ি কামাল সে, তারপর বলল, এবার হেলম্যানকে ছেড়ে দেয়া যায়, বেচারার যখন কোনও দোষ নেই।
বিচার শেষ হলেই ছেড়ে দেব, সে-ও তো সাক্ষীদের একজন, পালিয়ে গেলে অসুবিধে হবে।
তা ঠিক। দাড়ি কামিয়ে ভোয়ালে টেনে নিয়ে গাল মুছল স্টোন। সাবানগোলা পানি পেছনের উঠোনে ফেলে এল। ডেস্কে বসল নাশতা করতে।
খিদে নেই, তবু জোর করে খেলো ক্লিফ। সেলে গর্বের হাসি হাসছে ল্যুক, মনে পড়লেই পেট উল্টে বমি, আসতে চাইছে।
নাশতা শেষ করার একটু আগে দরজা খুলে ভেতরে এল ম্যাট আর জেস রেগান।
বিজয়ীর ছাপ ম্যাটের চেহারায়। লককে ছেড়ে দিচ্ছ, নাকি বিচার শেষ, হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?
বিচার তো হোক, তারপর দেখা যাবে, বলল স্টোন।
হাসল ম্যাট। সে-ই ভালো। বেকসুর খালাস পেলেই বরং সুবিধে।
কিছু বলল না ক্লিফ। হাসি মুখে ওর দিকে তাকাল ম্যাট। তোমাকে বেশ ঠাণ্ডা মনে হচ্ছে, ডেপুটি? শেষমেশ হার মানলে?
না, এখনও নয়। যাও, ভাগো।
ল্যুককে দেখতে এসেছি, আমাদের সে অধিকার আছে…
উঠে দাঁড়াল ফ্যারেল, মেজাজ তেতে উঠছে। তোমাদের আমি যেতে বলেছি! ল্যুকের সঙ্গে দেখা হবে না। তোমাদের কোনও অধিকার, আমি স্বীকার করি না, এখানে বেআইনি কাজ করেছ তোমরা।
আমাদের আবার গ্রেপ্তার করবে না তো, ডেপুটি?
চলে যাও, নইলে তোমাদের ডিনামাইট ফাটাতে হতে পারে, যেটা আমরা কেউই চাই না!
ভুরু কোঁচকাল ম্যাট রেগান। চলো, জেস, বলল সে, তারপর বেরিয়ে গেল জেল থেকে। নীরবে তাকে অনুসরণ করল জেস রেগান।
<